আরো নাটকীয়তার অপেক্ষা! by আশরাফুল হক রাজীব

মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে রচিত হয়েছে আরো কিছু চমক কিংবা নাটকীয়তার প্রেক্ষাপট। মন্ত্রিসভায় নতুন সাত সদস্য যোগ দেওয়ায় পুরনোদের অনেকেই এখন দপ্তর হারানোর শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। দায়িত্ব খর্ব হতে পারে- এমন খবরে অনেক মন্ত্রী ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কোন দপ্তর ছেড়ে কোনটা রাখবেন, এর হিসাব মেলাতে।


নতুন সাতজনের দপ্তর বণ্টনে যত দেরি হচ্ছে পুরনো মন্ত্রীদের দুশ্চিন্তা ততই বাড়ছে। তাঁদের এই দুশ্চিন্তা আগামী রবিবার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত থাকবে। কারণ ওই দিনের আগে মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন বা পুনর্বণ্টন হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদের জ্যেষ্ঠ সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। তিনি বলেছেন, কাকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত হয়তো আগেই হয়ে যাবে, তবে গেজেট রবিবারে প্রকাশিত হবে।
জানা গেছে, নতুন সাতজনকে দপ্তর দেওয়া ছাড়াও মন্ত্রিসভায় আরো চমক আসতে পারে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে ঘিরে দেখা যেতে পারে সবচেয়ে বড় চমকটি। সরকারি সফরে তিনি বর্তমানে চীনে রয়েছেন। চীনে যাওয়ার আগে তিনি আর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে চান না বলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের জানিয়েছেন। তা ছাড়া বিশ্বব্যাংক-সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে তিনি সহকর্মীদের তোপের মুখে রয়েছেন। গত ৩ সেপ্টেম্বরের মন্ত্রিসভার বৈঠকে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। তিনি পদত্যাগ করলে কাকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হবে- এ নিয়ে মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তিনি ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকারে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অর্থমন্ত্রী পদত্যাগ করলে তাঁর বিকল্প হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নাম বিবেচনায় ছিল। কিন্তু এ উপদেষ্টা এরই মধ্যে পদ্মা সেতুর বিষয়ে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। তাঁকে নতুন করে কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হবে না বলে জানা গেছে।
খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে তাঁর দায়িত্ব খর্ব হওয়ার আভাস পেয়েছেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। গতকাল তিনি নিজেও ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। দপ্তর ভাগ হলে তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে আগ্রহী বলে জানা গেছে। ড. রাজ্জাক বর্তমানে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে খাদ্য এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নামের দুটি বিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন। গত বছর সরকার এ দুটি বিভাগ আলাদা করে দুজন সচিবকে দায়িত্ব দেয়। এ দুটি বিভাগকে আলাদা দুটি মন্ত্রণালয় করা হবে।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, খাদ্য এবং ত্রাণ সব সময়ই আলাদা দুটি মন্ত্রণালয় ছিল। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর চারদলীয় জোট সরকার পৃথক দুটি মন্ত্রণালয়কে একত্র করেছে। কোনো কারণ ছাড়াই মন্ত্রণালয় দুটিকে একটি করা হয়েছে। সরকার যদি এ দুটি মন্ত্রণালয়কে আবার আলাদা করে দুজন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেয় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ দুটি বিভাগের কাজের ধরন আলাদা। আর ত্রাণ মন্ত্রণালয়টি সব সময়ই প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিল।
এভাবে বিভাগ অনুযায়ী মন্ত্রণালয় ভাগ করা হলে মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে কি না এবং এসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব একেকজন মন্ত্রীকে দিলে তা চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে কি না জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, 'চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিল ৬০ জন। আমরা তা থেকে এখনো অনেক দূরে। বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা ৫০।'
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মন্ত্রিসভায় সাতজনকে অন্তর্ভুক্ত করার কারণে মন্ত্রীদের দপ্তর পুনর্বণ্টন করতেই হবে। কারণ মাত্র চারজন মন্ত্রীর হাতে দুটি করে মন্ত্রণালয় রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী। আবুল কালাম আজাদ তথ্য মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। এ ছাড়া ওবায়দুল কাদের ও ইয়াফেস ওসমানও তাঁদের মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি একটি করে অতিরিক্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। যাঁদের হাতে দুটি করে মন্ত্রণালয় রয়েছে তাঁদের দায়িত্ব কমানো হতে পারে।
কবে মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন হবে তা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এটি সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ যেকোনো সময় গেজেট করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আগামী রবিবার বা এর আগেও দায়িত্ব বণ্টনের গেজেট হতে পারে।'

No comments

Powered by Blogger.