তোফায়েল ও মেনন মন্ত্রিত্ব নিলেন না যেসব কারণে by পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য
আমন্ত্রণ পেয়েও মন্ত্রিত্ব প্রত্যাখ্যান করলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং মহাজোটের অন্যতম শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ থেকে তোফায়েল আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। এমনকি রাষ্ট্রপতির অনুরোধেও সাড়া দেননি তিনি। অন্যদিকে নিজ দলের চাপে পড়ে আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করতে হয়েছে মেননকে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর নতুন মন্ত্রীদের শপথের চেয়ে বেশি আলোচিত ছিল তোফায়েল-মেননের বিষয়টি।
গত বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ দুজন ছাড়াও আরো পাঁচজনকে মন্ত্রিত্বের শপথ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। তবে সেই আমন্ত্রণে সাড়া দেননি তোফায়েল আহমেদ ও রাশেদ খান মেনন। এ পরিস্থিতিতে শেষ মুহূর্তে দিনাজপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদকে শপথের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।
তোফায়েল আহমেদের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, মূলত বিগত কাউন্সিলে দলের সভাপতিমণ্ডলী থেকে বাদ পড়া এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অবহেলার কারণেই তোফায়েল মন্ত্রী হওয়ার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। এ ছাড়া শেষ সময়ে এসে তিনি সরকারের ব্যর্থতার কোনো দায়ভার নিতেও রাজি নন।
যোগাযোগ করা হলে তোফায়েল আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সরকারের শেষ সময়ে মন্ত্রিসভায় যোগদান করে কিছুই করতে পারব না।' এ ছাড়া নিজেকে দলের একনিষ্ঠ কর্মী উল্লেখ করে তিনি আজীবন আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। তোফায়েল বলেন, 'আমি আমার দলকে ভালোবাসি। দলের মাধ্যমেই কিন্তু আমাদের সরকার। মন্ত্রিত্ব থেকে দল অনেক বড়। একজন সাধারণ কর্মী থেকে আমি যদি দলের জন্য কাজ করে যেতে পারি, তবে নিজেকে ধন্য মনে করব।' আওয়ামী লীগের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত আছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ সচিবই গতকাল সংশ্লিষ্ট সবাইকে মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার আমন্ত্রণ জানান। একপর্যায়ে তিনি মন্ত্রিত্বের শপথ নেওয়ার জন্য তোফায়েল আহমেদকে ফোন করেন। তোফায়েল আহমেদের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, সচিব ফোন করার আগে দলের শীর্ষ পর্যায়ের কেউ তোফায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তাই সরাসরি সচিবের ফোন করাকে সম্মানজনক মনে করেননি আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা।
সূত্র জানায়, গতকাল নতুন মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণের ১৫ মিনিট আগে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান নিজে টেলিফোন করে তোফায়েল আহমেদকে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু তাতে সাড়া দেননি আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা।
বিভিন্ন সূত্র মতে, দলে এবং পরবর্তী সময়ে সরকারের সাড়ে তিন বছর তোফায়েল আহমেদ উপেক্ষার শিকার হয়েছেন। সরকারের শেষ সময়ে এসে মন্ত্রিত্ব গ্রহণের বিষয়টি কারো কারো কাছে দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনুগ্রহ মনে হতে পারে। তোফায়েল আহমেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে এ কারণটিও ছিল। এ ছাড়া সংস্কারপন্থী বলে খ্যাত দলের অনেকেই তোফায়েল আহমেদকে মন্ত্রিত্ব না নেওয়ার পরামর্শ দেন বলেও জানা গেছে। পাশাপাশি সংস্কারপন্থী হয়েও মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ভবিষ্যৎ তোফায়েলকে এ সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
২০০৭ সালের এক-এগারোর পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংস্কারপন্থী হিসেবে আখ্যায়িত হন আওয়ামী লীগের প্রবীণ অনেক নেতার সঙ্গে তোফায়েল আহমেদও। এর পর থেকে দলে উপেক্ষার শিকার হন তাঁরা। পরে ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই সর্বশেষ কাউন্সিলে দলের মূলধারা থেকে বাদ পড়েন তোফায়েল আহমেদ। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য থেকে বাদ পড়ার পর তাঁকে দলের উপদেষ্টামণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে এ অন্তর্ভুক্তিতে খুশি ছিলেন না তিনি। এ কারণে উপদেষ্টামণ্ডলীর কোনো সভায় অংশ নেননি তোফায়েল।
জানা যায়, সভাপতিমণ্ডলী থেকে ছিটকে পড়ার পর তোফায়েল কয়েকবার দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে বলেছেন, মন্ত্রিত্ব নয়, দলে তাঁর হৃতমর্যাদাই তিনি ফিরে পেতে চান। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও ওবায়দুল কাদেরকে মন্ত্রী করার সময়ও তোফায়েলকে মন্ত্রিসভায় যোগদানের আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু তোফায়েল তা প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, তিনি আগে দলের সভাপতিমণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত হতে চান।
গতকাল নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তোফায়েল মন্ত্রিত্ব নেওয়ার প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করা প্রসঙ্গে বলেন, 'আমার মধ্যে কোনো ক্ষোভও নেই, হতাশাও নেই। এই মুহূর্তে মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে আমি কিছুই করতে পারব না। তাই মন্ত্রিসভায় যোগ দিইনি।' তা ছাড়া এ মুহূর্তে তিনি রাজনৈতিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নন বলেও মন্তব্য করেন।
তবে তোফায়েল আহমেদের মন্ত্রিত্ব না নেওয়ার সিদ্ধান্তটি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যেও গতকাল দুই ধরনের আলোচনা ছিল। দলের অনেকে মনে করেন, শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করা ঠিক হয়নি তোফায়েল আহমেদের, এর জন্য তাঁকে মূল্য দিতে হতে পারে। তোফায়েলের এ সিদ্ধান্তের জন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়বে বলেও মনে করেন তাঁরা।
আবার দলের অন্য অংশের নেতারা মনে করেন, তোফায়েল আহমেদ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তোফায়েলসহ অন্য যাঁরা দলে উপেক্ষার শিকার হয়েছেন, তাঁদের পক্ষ থেকে এমন একটা জবাব প্রত্যাশিতই ছিল।
তবে তোফায়েল আহমেদ মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা। মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, 'মন্ত্রিসভায় যোগদানের জন্য আমি ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁদের ডাকা হয়নি। ডেকেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে তোফায়েল আহমেদ শপথ না নিলেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়নি।' শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি তো পার্টির প্রেসিডেন্ট। আমি তাঁকে ফোন করিনি। ক্যাবিনেট থেকে ফোন করা হয়েছিল। আর ক্যাবিনেট থেকে তো অনেককেই ফোন করা হয়েছে। সাতজনকে মন্ত্রী করার কথা ছিল। সাতজনকেই করা হয়েছে।'
অন্যদিকে সরকারের শেষ মেয়াদে এসে শরিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের। শরিক দলগুলো মনে করে, সরকার পরিচালনায় তাদের কোনো ভূমিকা নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে নতুন বলয় গঠনের একটা প্রক্রিয়া চলছে। গত কয়েক দিন এ উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাম ঘরানার শরিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এমন এক পরিস্থিতিতে সরকারের অংশ হওয়ার প্রস্তাব আসে এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন তা প্রত্যাখ্যান করেন।
জানা গেছে, মেনন ও তাঁর দল ওয়ার্কার্স পার্টি সরকারের প্রথম থেকেই মন্ত্রিত্ব পাওয়ার আশা করলেও সেই আশা পূরণ হয়নি। এখন এই শেষ বেলায় সরকারের ব্যর্থতার ভাগ নিতে তারা রাজি নয়।
দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব বা এ নিয়ে মেননের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি আওয়ামী লীগ। হঠাৎ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের ফোনকে অপমানকর হিসেবেই নিয়েছে দলটি। তবে এ ক্ষেত্রে মেনন কিছুটা নমনীয় হলেও শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তের পক্ষেই অবস্থান নেন।
গতকাল সকালে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর জরুরি সভায় সবাই মন্ত্রিত্ব গ্রহণের বিপক্ষে অবস্থান নেন। বৈঠকে নেতারা বলেন, সরকার মন্ত্রিসভা গঠনসহ রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো ক্ষেত্রেই ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ১৪ দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী অথবা আওয়ামী লীগের এযাবৎ কোনো আলোচনা হয়নি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মেনন বলেন, 'মন্ত্রিসভায় আমার শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পলিটব্যুরো। এ জন্য আমি শপথ নিচ্ছি না।' এর আগে ২০১১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় বর্তমান পরিস্থিতিতে মন্ত্রিসভায় ওয়ার্কার্স পার্টির যোগদান না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ দুজন ছাড়াও আরো পাঁচজনকে মন্ত্রিত্বের শপথ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। তবে সেই আমন্ত্রণে সাড়া দেননি তোফায়েল আহমেদ ও রাশেদ খান মেনন। এ পরিস্থিতিতে শেষ মুহূর্তে দিনাজপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদকে শপথের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।
তোফায়েল আহমেদের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, মূলত বিগত কাউন্সিলে দলের সভাপতিমণ্ডলী থেকে বাদ পড়া এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অবহেলার কারণেই তোফায়েল মন্ত্রী হওয়ার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। এ ছাড়া শেষ সময়ে এসে তিনি সরকারের ব্যর্থতার কোনো দায়ভার নিতেও রাজি নন।
যোগাযোগ করা হলে তোফায়েল আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সরকারের শেষ সময়ে মন্ত্রিসভায় যোগদান করে কিছুই করতে পারব না।' এ ছাড়া নিজেকে দলের একনিষ্ঠ কর্মী উল্লেখ করে তিনি আজীবন আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। তোফায়েল বলেন, 'আমি আমার দলকে ভালোবাসি। দলের মাধ্যমেই কিন্তু আমাদের সরকার। মন্ত্রিত্ব থেকে দল অনেক বড়। একজন সাধারণ কর্মী থেকে আমি যদি দলের জন্য কাজ করে যেতে পারি, তবে নিজেকে ধন্য মনে করব।' আওয়ামী লীগের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত আছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ সচিবই গতকাল সংশ্লিষ্ট সবাইকে মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার আমন্ত্রণ জানান। একপর্যায়ে তিনি মন্ত্রিত্বের শপথ নেওয়ার জন্য তোফায়েল আহমেদকে ফোন করেন। তোফায়েল আহমেদের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, সচিব ফোন করার আগে দলের শীর্ষ পর্যায়ের কেউ তোফায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তাই সরাসরি সচিবের ফোন করাকে সম্মানজনক মনে করেননি আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা।
সূত্র জানায়, গতকাল নতুন মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণের ১৫ মিনিট আগে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান নিজে টেলিফোন করে তোফায়েল আহমেদকে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু তাতে সাড়া দেননি আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা।
বিভিন্ন সূত্র মতে, দলে এবং পরবর্তী সময়ে সরকারের সাড়ে তিন বছর তোফায়েল আহমেদ উপেক্ষার শিকার হয়েছেন। সরকারের শেষ সময়ে এসে মন্ত্রিত্ব গ্রহণের বিষয়টি কারো কারো কাছে দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনুগ্রহ মনে হতে পারে। তোফায়েল আহমেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে এ কারণটিও ছিল। এ ছাড়া সংস্কারপন্থী বলে খ্যাত দলের অনেকেই তোফায়েল আহমেদকে মন্ত্রিত্ব না নেওয়ার পরামর্শ দেন বলেও জানা গেছে। পাশাপাশি সংস্কারপন্থী হয়েও মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ভবিষ্যৎ তোফায়েলকে এ সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
২০০৭ সালের এক-এগারোর পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংস্কারপন্থী হিসেবে আখ্যায়িত হন আওয়ামী লীগের প্রবীণ অনেক নেতার সঙ্গে তোফায়েল আহমেদও। এর পর থেকে দলে উপেক্ষার শিকার হন তাঁরা। পরে ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই সর্বশেষ কাউন্সিলে দলের মূলধারা থেকে বাদ পড়েন তোফায়েল আহমেদ। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য থেকে বাদ পড়ার পর তাঁকে দলের উপদেষ্টামণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে এ অন্তর্ভুক্তিতে খুশি ছিলেন না তিনি। এ কারণে উপদেষ্টামণ্ডলীর কোনো সভায় অংশ নেননি তোফায়েল।
জানা যায়, সভাপতিমণ্ডলী থেকে ছিটকে পড়ার পর তোফায়েল কয়েকবার দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে বলেছেন, মন্ত্রিত্ব নয়, দলে তাঁর হৃতমর্যাদাই তিনি ফিরে পেতে চান। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও ওবায়দুল কাদেরকে মন্ত্রী করার সময়ও তোফায়েলকে মন্ত্রিসভায় যোগদানের আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু তোফায়েল তা প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, তিনি আগে দলের সভাপতিমণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত হতে চান।
গতকাল নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তোফায়েল মন্ত্রিত্ব নেওয়ার প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করা প্রসঙ্গে বলেন, 'আমার মধ্যে কোনো ক্ষোভও নেই, হতাশাও নেই। এই মুহূর্তে মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে আমি কিছুই করতে পারব না। তাই মন্ত্রিসভায় যোগ দিইনি।' তা ছাড়া এ মুহূর্তে তিনি রাজনৈতিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নন বলেও মন্তব্য করেন।
তবে তোফায়েল আহমেদের মন্ত্রিত্ব না নেওয়ার সিদ্ধান্তটি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যেও গতকাল দুই ধরনের আলোচনা ছিল। দলের অনেকে মনে করেন, শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করা ঠিক হয়নি তোফায়েল আহমেদের, এর জন্য তাঁকে মূল্য দিতে হতে পারে। তোফায়েলের এ সিদ্ধান্তের জন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়বে বলেও মনে করেন তাঁরা।
আবার দলের অন্য অংশের নেতারা মনে করেন, তোফায়েল আহমেদ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তোফায়েলসহ অন্য যাঁরা দলে উপেক্ষার শিকার হয়েছেন, তাঁদের পক্ষ থেকে এমন একটা জবাব প্রত্যাশিতই ছিল।
তবে তোফায়েল আহমেদ মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা। মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, 'মন্ত্রিসভায় যোগদানের জন্য আমি ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁদের ডাকা হয়নি। ডেকেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে তোফায়েল আহমেদ শপথ না নিলেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়নি।' শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি তো পার্টির প্রেসিডেন্ট। আমি তাঁকে ফোন করিনি। ক্যাবিনেট থেকে ফোন করা হয়েছিল। আর ক্যাবিনেট থেকে তো অনেককেই ফোন করা হয়েছে। সাতজনকে মন্ত্রী করার কথা ছিল। সাতজনকেই করা হয়েছে।'
অন্যদিকে সরকারের শেষ মেয়াদে এসে শরিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের। শরিক দলগুলো মনে করে, সরকার পরিচালনায় তাদের কোনো ভূমিকা নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে নতুন বলয় গঠনের একটা প্রক্রিয়া চলছে। গত কয়েক দিন এ উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাম ঘরানার শরিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এমন এক পরিস্থিতিতে সরকারের অংশ হওয়ার প্রস্তাব আসে এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন তা প্রত্যাখ্যান করেন।
জানা গেছে, মেনন ও তাঁর দল ওয়ার্কার্স পার্টি সরকারের প্রথম থেকেই মন্ত্রিত্ব পাওয়ার আশা করলেও সেই আশা পূরণ হয়নি। এখন এই শেষ বেলায় সরকারের ব্যর্থতার ভাগ নিতে তারা রাজি নয়।
দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব বা এ নিয়ে মেননের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি আওয়ামী লীগ। হঠাৎ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের ফোনকে অপমানকর হিসেবেই নিয়েছে দলটি। তবে এ ক্ষেত্রে মেনন কিছুটা নমনীয় হলেও শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তের পক্ষেই অবস্থান নেন।
গতকাল সকালে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর জরুরি সভায় সবাই মন্ত্রিত্ব গ্রহণের বিপক্ষে অবস্থান নেন। বৈঠকে নেতারা বলেন, সরকার মন্ত্রিসভা গঠনসহ রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো ক্ষেত্রেই ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ১৪ দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী অথবা আওয়ামী লীগের এযাবৎ কোনো আলোচনা হয়নি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মেনন বলেন, 'মন্ত্রিসভায় আমার শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পলিটব্যুরো। এ জন্য আমি শপথ নিচ্ছি না।' এর আগে ২০১১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় বর্তমান পরিস্থিতিতে মন্ত্রিসভায় ওয়ার্কার্স পার্টির যোগদান না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
No comments