নতুন মন্ত্রী দিয়েও শেষ রক্ষা হবে না : ফখরুল
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকারের সময় প্রায় শেষ। মেয়াদের শেষে এসে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ- এ জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক ও কোরামিন দিয়ে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার।
তিনি বলেন, মূলত মহাজোটে বিদ্রোহ ঠেকাতেই শরিকদের নিয়ে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করছে সরকার।
গতকাল বৃহস্পতিবার শেরে বাংলানগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত শেষে মন্ত্রিসভার সর্বশেষ সম্প্রসারণের বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন ফখরুল।
নতুন সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিবের নেতৃত্বে ছাত্রদল নেতারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে নিয়ে জিয়ার কবর জিয়ারত করেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাত্রদলের পুরনো কমিটি বিলুপ্ত করে ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠনের অনুমোদন দেন।
কবর প্রাঙ্গণে নেতা-কর্মীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। তবে জিয়ারত করা নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব রহমানের সমর্থকরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। মাথায় হলুদ ফিতা বাঁধা এসব কর্মী তাদের সঙ্গী এক কর্মীকে কিলঘুষি মারতে শুরু করলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
জিয়ার কবর জিয়ারতের সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি এমপি, নিলুফার ইয়াসমীন চৌধুরী মনি এমপি, হেলেন জেরিন খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, সাবেক ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু এবং ছাত্রদলের নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নতুন কমিটির নেতারা।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের সময় শেষ হয়ে গেছে। জনপ্রিয়তা ও জন-আস্থা হারিয়ে ফেলেছে সরকার। এখন মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ করে বাঁচার শেষ চেষ্টা করছে তারা। এটা খড়কুটো আঁকড়ে বাঁচার চেষ্টা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গতকাল নতুন সাতজন মন্ত্রী শপথ নিয়েছেন। মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ সম্পর্কেই মন্তব্য করছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, মহাজোটের মধ্যে বিদ্রোহ প্রশমিত করার জন্যই জোটের শরিকদের মন্ত্রিসভায় নেওয়া হচ্ছে। কয়েক দিন আগে বাম নেতারা পৃথক বৈঠক করে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করেছিলেন। তাঁদের সান্ত্বনা দিতে এবং ব্যর্থতার অংশীদার করতেই মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়েছে।
ফখরুল বলেন, সরকার যদি মনে করে মহাজোটের শরিকদের মন্ত্রী বানিয়ে হারানো জনসমর্থন ফিরে পাবে, তাহলে তারা ভুল করবে। কারণ জনগণ ইতিমধ্যে তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, 'যারা মন্ত্রী হচ্ছেন, তাঁদের সম্পর্কে জনগণের কতটুকু আস্থা আছে, তা আমরা জানি। তাই জনগণের পক্ষ নিয়ে আমাদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে অন্যান্য দলের মতো মহাজোটের শরিকদের কেউ কেউ চলে এলে আমরা বিস্মিত হব না। কারণ এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।'
সরকার আগাম নির্বাচনের কথা ভাবছে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, সরকার এমন চিন্তা করলে ভুল করবে। দেশবাসী নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না।
১৮ দলীয় জোটে মহাজোটের শরিক কোনো দলের যোগ দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। এ দাবির সমর্থনে দলমত নির্বিশেষে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। ইতিমধ্যে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আশা করছি আরো সাড়া পাব।'
ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত দুই দিনে ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'ছাত্রলীগের এ ধরনের আক্রমণ সভ্যতা-ভব্যতাকে হার মানিয়েছে। শিক্ষাঙ্গনকে তারা কলুষিত করেছে। আমরা এ রকম ঘটনার দায়ে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করছি।'
No comments