মৃতদের জন্য আমাদের করণীয় by মুফতি মাহ্ফূযুল হক

অনেকেই বিশ্বাস করেন, 'বাড়ির কেউ মারা গেলে তৃতীয়, পঞ্চম, সপ্তম ও ৪০তম দিবসে কয়জন মুন্সী খাওয়াতেই হয়। না খাওয়ালে মৃতের কষ্ট হয়, অভিশাপ দেয়।' আর অনেক পাড়া-পড়শি, গ্রামবাসী, আত্মীয় ও বন্ধু মহল এ খাওয়াকে নিজেদের হক মনে করে অধীর অপেক্ষায় থাকেন।


মহানবীর (সা.) জীবদ্দশাতে স্ত্রী খাদিজা (রা.), চাচা হামজা (রা.), দুই পুত্র আবদুল্লাহ, ইবরাহীম, দুই কন্যা রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম (রা.), এক দৌহিত্র আলী ইবনে জয়নব (রা.) মৃত্যুবরণ করেছেন। হাদিস ও সিরাতের বিশাল ভাণ্ডারের কোথাও পাওয়া যায় না যে, মহানবী (সা.) নিজের স্ত্রী, চাচা, পুত্র, কন্যা, দৌহিত্রের মৃত্যু উপলক্ষে গ্রামবাসীদের, আত্মীয়দের দাওয়াত খাওয়ান। আবহমানকালের মানব স্বভাব, আনন্দে উল্লসিত মানুষ পরিচিত মহলকে নিমন্ত্রণ করে থাকে। নতুন বাড়ি, নতুন চাকরি, নতুন ব্যবসা, প্রমোশন, পরীক্ষার ভালো ফল পেলে সেই চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ীই মানুষ দাওয়াতের আয়োজন করে। সাধ্যে না কুলালে মিষ্টিমুখ করায়। মানুষের এ স্বভাবজাত চাহিদার রেয়াত করে স্বভাবের সর্বাধিক অনুকূল ধর্ম ইসলাম বিবাহ-উত্তর ওলিমাকে ও সন্তান প্রসবের সপ্তম দিবসে আকিকাকে সুন্নত করেছে। বাপ-মা মারা গেলে আমরা গ্রামবাসী ও বন্ধু মহলকে নিমন্ত্রণ করি_ এটা কোন উল্লাসে? তবে কি এটা ওয়ারিস সূত্রে নতুন মালিকানা বুঝে পাওয়ার উল্লাসচিত্র? সদ্য আপনজনহারা মানুষটির থেকে দাওয়াত পাওয়ার সামাজিক চাপ নিষ্ঠুরতা, বিবেকহীনতা বললে ভুল হবে কি? শোকাহত মানুষ তো নিজেই খেতে পারে না, সে অন্যকে কীভাবে খাওয়াবে?
প্রাপ্ত বয়স্ক মৃতদের জন্য আমাদের করণীয় দুটি_ যথা ১. দোয়া করা, ২. সওয়াব পাঠানো। সওয়াব পাঠানোর শর্ত ৪টি। যথা_ ১. সওয়াবের আশায় এমন কাজ করা যা মাধ্যম বা ব্যাখ্যা ব্যতিরেকে সরাসরি ইবাদত। অভাবী-অনাহারীকে খাওয়ানো সরাসরি ইবাদত। সামর্থ্যবানকে খাওয়ানো সরাসরি ইবাদত নয়। এটা সম্পর্ক চর্চা ও আতিথেয়তার মাধ্যম ইবাদত। অজু করলে সওয়াব হয় কিন্তু অজু সরাসরি ইবাদত নয় বরং নামাজের মাধ্যম ইবাদত অজুর সওয়াব, সামর্থ্যবানকে খাওয়ানোর সওয়াব মৃতের জন্য পাঠানো যায় না। ২. যশের আশা বা নিন্দা এড়ানোর চেষ্টা ব্যতীত শুধু আল্লাহর ওয়াস্তে ইবাদত করা। ৩. হুবহু নবীজির (সা.) সুন্নতমতো করা। ৪. হাদিয়া দিয়ে না করানো। মৃতদের জন্য যখনই সুযোগ ও ইচ্ছা হবে নিজেই নামাজ, জিকির, কোরআন তেলাওয়াত, দান-খয়রাত করে সওয়াব পাঠানোর নিয়ত করব। এগুলো তাদের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন অল্প অল্প করেও করতে পারি। সঙ্গতি থাকলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিতে পারি।

No comments

Powered by Blogger.