সাবেক দুই আমলার হঠাৎ মন্ত্রিত্ব নিয়ে কিছু প্রশ্ন by রেজা রায়হান

আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের মন্ত্রিত্ব গ্রহণে অস্বীকৃতির পর গতকাল তাৎক্ষণিক ডাকে যে দুজন সংসদ সদস্য মন্ত্রিত্বের শপথ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে বেশ কিছু মিল রয়েছে। তাঁরা দুজনই পররাষ্ট্র ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত। দুজনই অবসর গ্রহণের পর আওয়ামী লীগে


যোগ দিয়ে ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা হলেন দিনাজপুরের এ এইচ মাহমুদ আলী ও যশোরের মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ।
এ দুজন দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় কমিটির সভাপতি। মাহমুদ আলী শুরু থেকেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি, আর মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ এক বছরেরও কম সময় আগে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হয়েছেন।
ফারুক মোহাম্মদ যোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী (পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের চাপে পদত্যাগী) সৈয়দ আবুল হোসেনের নামে প্রতিষ্ঠিত সাকোর (সৈয়দ আবুল হোসেন অ্যান্ড কম্পানি) চেয়ারম্যান। গত বছরের ডিসেম্বরে আবুল হোসেনকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়ার কিছুদিন পরেই সাতক্ষীরার এমপি শেখ মুজিবুর রহমানকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি থেকে সরিয়ে দিয়ে সাকোর চেয়ারম্যান মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে সময় এ নিয়োগকে কাকতালীয় বিষয় মনে করা হয়নি।
গতকাল তোফায়েল-মেননের বিকল্প হিসেবে এ দুজন সাবেক রাষ্ট্রদূত সংসদ সদস্যকে তাৎক্ষণিকভাবে ডেকে এনে মন্ত্রিত্ব প্রদানের ফলে যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হচ্ছে, মন্ত্রিসভায় কি সাতটি পদ শূন্য ছিল এবং তা পূরণের কি কোনো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল? তোফায়েল-মেননকে কি কেবল সংসদ সদস্য হিসেবে মন্ত্রিত্বের জন্য ডাকা হয়েছিল? বাস্তবে দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার অধিকারী এ দুই রাজনীতিককে অন্য পাঁচজনের সঙ্গে মন্ত্রিত্বের জন্য ডাকা হয়। তাঁরা মন্ত্রিত্ব না নেওয়ায় সরকারের এমন কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না যে, তাঁদের পরিবর্তে দুজন সাবেক রাষ্ট্রদূত তথা সাবেক আমলাকে মন্ত্রী করতে হবে। তা ছাড়া মন্ত্রিসভায় সুষম ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্বের জন্য যে এ দুজনকে মন্ত্রী করা হয়েছে তা-ও কিন্তু নয়। দিনাজপুরের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান আগে থেকেই ভূমি প্রতিমন্ত্রী। বৃহত্তর দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁওয়ের রমেশ চন্দ্র সেন আগে থেকেই পানিসম্পদ মন্ত্রী। ফলে মন্ত্রিসভায় ওই অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব ছিল। যশোরে আগে মন্ত্রী না থাকলেও প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় হুইপ হিসেবে রয়েছেন শেখ আবদুল ওহাব। বৃহত্তর যশোরের ঝিনাইদহের মো. আবদুল হাই গতকাল প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। ফলে মন্ত্রিসভায় ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্বের কারণে ফারুক মোহাম্মদকে মন্ত্রী করতে হয়েছে- এ ধারণার ভিত্তি নেই। তা ছাড়া নিজ জেলার রাজনীতিতে নতুন দুই মন্ত্রীর এমন শক্ত কোনো অবস্থানও নেই যে, দলীয় নেতৃত্বের ভারসাম্যের কারণে তাঁদেরকে মন্ত্রী করতে হয়েছে।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর এমন দুজন উপদেষ্টা রয়েছেন, যাঁরা পররাষ্ট্র বিষয়েই কাজ করেন। অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান মূলত উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা নিয়ে কাজ করেন, যা মূলত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরই কাজ। আরো রয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। ফলে মাহমুদ আলী ও ফারুক মোহাম্মদকে গতকাল মন্ত্রী নিয়োগের ফলে বাংলাদেশের মতো একটি দেশে সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ে কতজন বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন সে প্রশ্নটিও এখন উঠবে।
মন্ত্রিসভার নতুন সম্প্রসারণের আগে ৪৪ জন মন্ত্রী থাকলেও দেশের অনেক বৃহত্তর জেলা থেকে একজনও মন্ত্রী ছিলেন না। আবার কোনো কোনো জেলা থেকে একাধিক মন্ত্রীও রয়েছেন। গতকাল মন্ত্রিসভায় সাতজন নতুন মন্ত্রীর অন্তর্ভুক্তির পরেও ৫১ সদস্যের মন্ত্রিসভায় আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে শুধু ৬৪টি জেলা নয়, বৃহত্তর জেলা হিসেবেও সমতা আসেনি।

No comments

Powered by Blogger.