দেখার কেউ নেই! রাজধানী জুড়ে আবর্জনার ভাগাড় by মুনিফ আম্মার
ক্রমেই আবর্জনার দখলে চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা। আবর্জনা ফেলার নির্ধারিত স্থান ছাপিয়ে এখন রাস্তা-ঘাটেও প্রতিনিয়ত জমা হচ্ছে আবর্জনা। পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রায় রাস্তার ওপরেই গড়ে তোলা হয়েছে আবর্জনা ট্রান্সফার স্টেশন।
ফলে যান চলাচলে যেমন বিঘ্ন ঘটছে, তেমনি দুর্গন্ধে নগরবাসীর দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থা সৃষ্টি করছে স্বাস্থ্য সমস্যারও। সনাতন নিয়মে রাস্তা জুড়ে কন্টেইনার জমা করে আবর্জনা খালাস ও পরিষ্কার করার ফলে নগরীতে ছড়াচ্ছে নানা রোগ জীবাণু। ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়াসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক রোগে ভুক্তভোগী অনেকেই এর কারণ হিসেবে রাস্তার পাশে অপরিকল্পিতভাবে আবর্জনা ফেলে রাখাকেই দায়ী করেছেন। তারা বলেন, এতো জায়গা থাকতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন রাস্তায় আবর্জনা জমা করে। এসব আবর্জনা কাক ও কুকুরের মাধ্যমে আবারো এলাকার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। আর সেইসঙ্গে ছড়ায় মারাত্মক অসুস্থতা।
রাস্তাজুড়ে আবর্জনার এসব ট্রান্সফার স্টেশনের ফলে যানজট লেগে থাকার পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে রাস্তার সৌন্দর্য। সেইসঙ্গে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে মারাত্মক দুর্গন্ধ। কোথাও কোথাও আবর্জনায় রাস্তা পুরোপুরি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, মহল্লার বিভিন্ন স্থান থেকে কুড়িয়ে আনা আবর্জনা কন্টেইনারে তোলার জন্য প্রথমে সরাসরি রাস্তাতেই ফেলা হয়। পরে এসব আবর্জনা কন্টেইনারে তোলা হলেও রাস্তার সঙ্গে থেকে যাচ্ছে অনেক আবর্জনা। স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়া এসব আবর্জনা ক্রমশ সড়ককে চলাচলের অনুপযোগী করে তুলছে।
রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রধান সড়কের একটি বড় অংশ জুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে বিস্তর আবর্জনা। দিনভর বাড্ডার বিভিন্ন মহল্লা থেকে এসব আবর্জনা এনে জমা করা হয় প্রধান সড়কের পাশেই। রাস্তা দখল করে আবর্জনার এ ট্রান্সফার স্টেশন বাড্ডা এলাকায় প্রতিদিন সৃষ্টি করছে দীর্ঘ জট। আর একটু বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। আবর্জনায় পুরো সড়ক একাকার হয়ে পড়ে। পথচারীদেরও পোহাতে হয় ভীষণ কষ্ট।
মধ্য বাড্ডার বাসিন্দা আসাদুর রহমান পলাশ বাংলানিউজকে অভিযোগ করে বলেন, “এমনিতেই এই রাস্তাটি জনবহুল। প্রতিদিন অনেক গাড়ি এখান দিয়ে চলাচল করে। রাস্তাজুড়ে আবর্জনা ফেলে রাখার ফলে আমরা যে কী দুর্ভোগে আছি, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। দুর্গন্ধে বাসায় থাকা দায় হয়ে পড়ে।”
একই চিত্র দেখা গেছে নতুনবাজার এলাকা পেরিয়ে বারিধারার ডিপ্লোমেটিক জোন ঘেঁষা সড়কেও। সকাল থেকে রাত অবধি আশপাশের সব আবর্জনা জমা করা হয় প্রধান এ সড়কটিতে। আবর্জনার ফলে পুরো সড়কটিই যেন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধজাত অসহণীয় দুর্ভোগে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন আশেপাশের বাসিন্দা ও দোকানিরা।
বারিধারার বাসিন্দা সায়েমুল হাসান বাংলনিউজকে বলেন, “রাস্তায় আবর্জনা জমা করে রাখা একটা অদ্ভূত ব্যাপার। বিশ্বের উন্নত সব দেশে রাস্তাকে পরিস্কার রাখা হয়, আর আমাদের দেশে সিটি কর্পোরেশন থেকেই আবর্জনা জমা করার জন্য রাস্তা ব্যবহার করা হয়। ভাবতে খুবই অবাক লাগে!”
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পুরো রাজধানীর অন্তত দুই ডজন স্থানে রাস্তা জুড়ে আবর্জনার ট্রান্সফার স্টেশন আছে। নগরীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, আজিমপুর, গুলিস্তান, লালবাগ, পল্টন, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মালিবাগ, রামপুরা ও বাড্ডায় ট্রান্সফার স্টেশনের দেখা পাওয়া গেছে। রাস্তাজুড়ে আবর্জনার ট্রান্সফার স্টেশন মোটেও কাম্য নয় বলে অভিযোগ করেছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারি প্রকৌশলী এএইচএম আব্দুল্লাহ হারুণ বাংলানিউজকে বলেন, “আমরাও স্বীকার করছি, এতে করে জনগণের অনেক সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু জায়গার অভাবে ট্রান্সফার স্টেশন স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে রাস্তায় ট্রান্সফার স্টেশনের কাজ সারতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “রাজউকের কাছে আমরা প্রস্তাব করেছি, শহরের নতুন পরিকল্পনার সময় যেন ট্রান্সফার স্টেশন কিংবা আবর্জনার জন্য জায়গা রাখা হয়। তবুও উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে ১২টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে করে নগরীতে রাস্তাজুড়ে আবর্জনার এই চিত্র আর চোখে পড়বে না।”
নতুন উদ্যোগে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনগুলোর বাইরের দিকে ফুলবাগান, ফোয়ারা ও বসার স্থান থাকবে বলেও জানা যায়। আধুনিকভাবে স্থাপন করা এসব ট্রান্সফার স্টেশন বাইরে থেকে দেখতে কোনোভাবে দৃষ্টিকটু কিংবা এসব স্টেশন থেকে দুর্গন্ধ ছড়াবে না বলেও দাবি করা হয়।
তবে এ বিষয়ে বুয়েটের নগর পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমন কুমার মিত্র বাংলানিউজকে বলেন, “এতো বড় নগরীর জন্য ১২ টি ট্রান্সফার স্টেশন স্থাপনের আগে অবশ্যই ভালোভাবে স্টাডি করে নেওয়া উচিত। এতো বড় জায়গায় এতো অল্প ট্রান্সফার স্টেশন আপাতদৃষ্টিতে অপ্রতুল মনে হওয়াই স্বাভাবিক। তবে ডিসিসি যদি এ বিষয়ে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে আবর্জনার এই ভাগাড় থেকে নগর কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে।”
আবর্জনার ভাগাড়মুক্ত রাজধানী নগরবাসীর একান্ত চাওয়া। যত দ্রুত এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় নগরীর জন্য ততোটাই মঙ্গল হবে বলে মনে করছেন তারা। শীঘ্রই রাজধানীর রাস্তা-ঘাট আবর্জনামুক্ত করার জন্য উত্তর-দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দুই প্রশাসকের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন নগরবাসী।
রাস্তাজুড়ে আবর্জনার এসব ট্রান্সফার স্টেশনের ফলে যানজট লেগে থাকার পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে রাস্তার সৌন্দর্য। সেইসঙ্গে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে মারাত্মক দুর্গন্ধ। কোথাও কোথাও আবর্জনায় রাস্তা পুরোপুরি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, মহল্লার বিভিন্ন স্থান থেকে কুড়িয়ে আনা আবর্জনা কন্টেইনারে তোলার জন্য প্রথমে সরাসরি রাস্তাতেই ফেলা হয়। পরে এসব আবর্জনা কন্টেইনারে তোলা হলেও রাস্তার সঙ্গে থেকে যাচ্ছে অনেক আবর্জনা। স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়া এসব আবর্জনা ক্রমশ সড়ককে চলাচলের অনুপযোগী করে তুলছে।
রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রধান সড়কের একটি বড় অংশ জুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে বিস্তর আবর্জনা। দিনভর বাড্ডার বিভিন্ন মহল্লা থেকে এসব আবর্জনা এনে জমা করা হয় প্রধান সড়কের পাশেই। রাস্তা দখল করে আবর্জনার এ ট্রান্সফার স্টেশন বাড্ডা এলাকায় প্রতিদিন সৃষ্টি করছে দীর্ঘ জট। আর একটু বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। আবর্জনায় পুরো সড়ক একাকার হয়ে পড়ে। পথচারীদেরও পোহাতে হয় ভীষণ কষ্ট।
মধ্য বাড্ডার বাসিন্দা আসাদুর রহমান পলাশ বাংলানিউজকে অভিযোগ করে বলেন, “এমনিতেই এই রাস্তাটি জনবহুল। প্রতিদিন অনেক গাড়ি এখান দিয়ে চলাচল করে। রাস্তাজুড়ে আবর্জনা ফেলে রাখার ফলে আমরা যে কী দুর্ভোগে আছি, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। দুর্গন্ধে বাসায় থাকা দায় হয়ে পড়ে।”
একই চিত্র দেখা গেছে নতুনবাজার এলাকা পেরিয়ে বারিধারার ডিপ্লোমেটিক জোন ঘেঁষা সড়কেও। সকাল থেকে রাত অবধি আশপাশের সব আবর্জনা জমা করা হয় প্রধান এ সড়কটিতে। আবর্জনার ফলে পুরো সড়কটিই যেন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধজাত অসহণীয় দুর্ভোগে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন আশেপাশের বাসিন্দা ও দোকানিরা।
বারিধারার বাসিন্দা সায়েমুল হাসান বাংলনিউজকে বলেন, “রাস্তায় আবর্জনা জমা করে রাখা একটা অদ্ভূত ব্যাপার। বিশ্বের উন্নত সব দেশে রাস্তাকে পরিস্কার রাখা হয়, আর আমাদের দেশে সিটি কর্পোরেশন থেকেই আবর্জনা জমা করার জন্য রাস্তা ব্যবহার করা হয়। ভাবতে খুবই অবাক লাগে!”
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পুরো রাজধানীর অন্তত দুই ডজন স্থানে রাস্তা জুড়ে আবর্জনার ট্রান্সফার স্টেশন আছে। নগরীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, আজিমপুর, গুলিস্তান, লালবাগ, পল্টন, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মালিবাগ, রামপুরা ও বাড্ডায় ট্রান্সফার স্টেশনের দেখা পাওয়া গেছে। রাস্তাজুড়ে আবর্জনার ট্রান্সফার স্টেশন মোটেও কাম্য নয় বলে অভিযোগ করেছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারি প্রকৌশলী এএইচএম আব্দুল্লাহ হারুণ বাংলানিউজকে বলেন, “আমরাও স্বীকার করছি, এতে করে জনগণের অনেক সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু জায়গার অভাবে ট্রান্সফার স্টেশন স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে রাস্তায় ট্রান্সফার স্টেশনের কাজ সারতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “রাজউকের কাছে আমরা প্রস্তাব করেছি, শহরের নতুন পরিকল্পনার সময় যেন ট্রান্সফার স্টেশন কিংবা আবর্জনার জন্য জায়গা রাখা হয়। তবুও উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে ১২টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে করে নগরীতে রাস্তাজুড়ে আবর্জনার এই চিত্র আর চোখে পড়বে না।”
নতুন উদ্যোগে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনগুলোর বাইরের দিকে ফুলবাগান, ফোয়ারা ও বসার স্থান থাকবে বলেও জানা যায়। আধুনিকভাবে স্থাপন করা এসব ট্রান্সফার স্টেশন বাইরে থেকে দেখতে কোনোভাবে দৃষ্টিকটু কিংবা এসব স্টেশন থেকে দুর্গন্ধ ছড়াবে না বলেও দাবি করা হয়।
তবে এ বিষয়ে বুয়েটের নগর পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমন কুমার মিত্র বাংলানিউজকে বলেন, “এতো বড় নগরীর জন্য ১২ টি ট্রান্সফার স্টেশন স্থাপনের আগে অবশ্যই ভালোভাবে স্টাডি করে নেওয়া উচিত। এতো বড় জায়গায় এতো অল্প ট্রান্সফার স্টেশন আপাতদৃষ্টিতে অপ্রতুল মনে হওয়াই স্বাভাবিক। তবে ডিসিসি যদি এ বিষয়ে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে আবর্জনার এই ভাগাড় থেকে নগর কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে।”
আবর্জনার ভাগাড়মুক্ত রাজধানী নগরবাসীর একান্ত চাওয়া। যত দ্রুত এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় নগরীর জন্য ততোটাই মঙ্গল হবে বলে মনে করছেন তারা। শীঘ্রই রাজধানীর রাস্তা-ঘাট আবর্জনামুক্ত করার জন্য উত্তর-দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দুই প্রশাসকের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন নগরবাসী।
No comments