মুমিনের ভরসাস্থল আল্লাহ by মাওলানা শাহ আবদুস সাত্তার
তাওয়াক্কুল অর্থ আল্লাহতায়ালার ওপর নির্ভরতা। মানুষের চলমান জীবনের পদে পদে আপদ-বিপদ, সমস্যা, সংকট, দুর্যোগ, অভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বিবিধ রোগব্যাধি, কষ্টে দিশেহারা হয়ে নৈরাশ্যের মধ্যে হাবুডুবু খাওয়া যেমন অপরাধ, তেমনি পাপের ভাগীদার হওয়া অবশ্যম্ভাবী।
এ জন্যই আল্লাহ কোরআনে জানিয়ে দিয়েছেন যে, 'আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।' এ জন্য আল্লাহ পাকের রহমত কামনায় মোনাজাত করা অপরিহার্য। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, 'তোমরা যদি প্রকৃত মুমিন (বিশ্বাসী) হও, তাহলে কায়মনে অতি তাওয়াক্কুলের সঙ্গে মহান আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ সমর্পণ করে দাও। আল্লাহতায়ালা সবকিছু আনজাম করে দেবেন। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলে মকবুল (সা.) বলেছেন, কোনো মানুষ যদি অন্তর দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওপর তাওয়াক্কুল করে নিঃসন্দেহে মহান রব তার সমুদয় কাঙ্ক্ষিত মনের আশা পূরণ করে দেন। পবিত্র কোরআনে অসংখ্য আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। তাওয়াক্কুল ও কাজ, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। তাওয়াক্কুলের পাশাপাশি কাজ করারও তাগিদ ইসলামে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ পাক দুনিয়ার চলমান জীবনে কাজকর্মের জন্য কিছু নিয়মনীতি তৈরি করে দিয়েছেন। অবলম্বন সৃষ্টি করেছেন, যা পরিহার করা আদৌ উচিত নয়। মানুষ এ কথা ভালো করেই জানে যে, হাত দিয়ে কোনো কাজ না করা পর্যন্ত তা হওয়া নয়, এখানে হাত নেড়ে ভরসা করার মধ্যে তাওয়াক্কুল রয়েছে। রুটি বানিয়ে মুখে না দিয়ে বসে থেকে তাওয়াক্কুল করার কোনো মানে নেই। তাওয়াক্কুল সম্পর্কিত আলোচনা পবিত্র কোরআন-হাদিসে অসংখ্যবার উল্লেখ করা হয়েছে। স্মরণ রাখতে হবে, মানুষের সব ধরনের কাজকর্ম বাস্তবায়নের জন্য আল্লাহ পাক অগণিত নিয়মবিধি করে দিয়েছেন। তা অবলম্বন করেই তাওয়াক্কুল করতে হবে। কেননা স্বাভাবিক বাহ্যিক কার্যক্রম, আল্লাহ পাকের প্রদত্ত শক্তি তারই রাজি-খুশি-মর্জি-আদেশে কার্যকর হয়। সবই আল্লাহ পাকের, আবার সবকিছুই তাঁর ব্যবস্থাধীন। জাহাজে, ট্রেনে, গাড়িতে বা বিমানে যাত্রা করলেই যে গন্তব্যস্থলে পেঁৗছে যাবে, তার নিশ্চয়তা আছে কি? যদি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পেঁৗছান, তাহলেই তো পেঁৗছা যাবে। পেঁৗছা সম্ভব। আবার জাহাজ, গাড়ি, নৌকা দুর্ঘটনা বা ডুবে গেলে যে মরে যাবে, তার নিশ্চয়তা আছে কি? আল্লাহ পাক যদি চান বা ইচ্ছা করেন, তাহলে বেঁচে যেতেও পারে। এ কথা ভুললে চলবে না, এই পার্থিব জগতে যত রকম উপায়-উপকরণ, পদ্ধতি আছে, তা যান্ত্রিক উপলক্ষ মাত্র। বস্তুত প্রতিটি বিন্দুতে কেবল মহান আল্লাহতায়ালার রাজি-খুশিই কার্যকর হবে। সদাসর্বদা আল্লাহ পাকের ওপর তাওয়াক্কুল করতে হবে এবং নিজেকে যার যার পরিবার-পরিজনসহ সবাইকে আল্লাহপাকের ওপর হাওয়ালাভাবে (আত্মসমর্পিত) ছেড়ে দিতে হবে এবং সব অবস্থায় সব ভালোমন্দে আল্লাহপাকের শুকরিয়া অর্থাৎ আলহামদুলিল্লাহ বলতে হবে। এটাই সত্যিকার ইমানের পরীক্ষা ও শিক্ষা। এতেই প্রত্যেক মানুষের জন্য রয়েছে ইহকাল ও পরকালের শান্তি, মুক্তি ও সফলতা।
No comments