অবৈধ ভিওআইপি-দায়ীদের শাস্তি হোক
ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) নিয়ে যে কাণ্ড চলছে তাকে তেলেসমাতি বললে কম বলা হবে। প্রকাশ্য দিবালোকে দিনের পর দিন টেলিফোন সেক্টরে লুটপাট চলছে। আর নানা টালবাহানা, সময়ক্ষেপণের মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে দুর্নীতিগ্রস্ত একটি ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে দায়িত্বশীল কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
অবৈধ ভিওআইপি নিয়ে পত্রপত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। এ ব্যবস্থায় দেশের বাইরে থেকে কেউ ফোন করলে ইন্টারনেট সংযোগের মধ্য দিয়ে কথাগুলো দেশের ভেতরে গ্রাহকের ফোনে স্থানান্তরিত হয়। এই ফোনকল গ্রাহকের কাছে পেঁৗছে দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের কোনো পিএসটিএন বা মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করা হয়। দেশ থেকে বাইরে ফোন করার ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসৃত হয়। নিয়ম অনুসারে অনুমতিপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোই এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজস্ব ব্যবস্থায় ভয়েস ট্রান্সফার করতে পারে এবং সরকার এই কোম্পানিগুলোর কাছ থেকেই কলপ্রতি কর আদায় করতে পারে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বৈধ কোম্পানিগুলোর বাইরে অনেকেই সরকারকে কর না দিয়ে গোপনে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করছে। এতে সরকার শত শত কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। ভিওআইপি যে প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করে, তা ছোটখাটো অপরাধীদের পক্ষে প্রস্তুত, রক্ষণাবেক্ষণ ও অব্যাহত রাখা কঠিন। বস্তুত সরকারি সংস্থা ও মোবাইল ফোন অপারেটরদের সমর্থন না পেলে কারও পক্ষেই এ ব্যবসা দীর্ঘদিন চালিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। অতীতে অবৈধ ভিওআইপির বিরুদ্ধে সময়ে সময়ে অভিযানে চুনোপুঁটিরা ধরা পড়ত। রাঘববোয়ালরা থাকত ধরাছোঁয়ার বাইরে। এখন ছোটখাটো অভিযানের দেখাও মেলে না। এখন অভিযোগের আঙুল উত্তোলিত সরকারের বিভিন্ন সংস্থার দিকে। মূল অভিযোগ বিটিসিএল ও টেলিটকের বিরুদ্ধে। কল ট্রান্সফারের অধিকাংশ ঘটনা ঘটছে এই দুটি সংস্থার মাধ্যমে। বিটিসিএল ও টেলিটক বিটিআরসির অধীনে পরিচালিত দুটি বাণিজ্যিক সংস্থা। একটি ল্যান্ডফোন, অন্যটি মোবাইল ফোনের । মজার ব্যাপার হলো, অবৈধ ভিওআইপি প্রতিরোধের দায়িত্বও ন্যস্ত এই দুটি সংস্থার তদারকি প্রতিষ্ঠান বিটিআরসির ওপর। বলতে গেলে, বিটিআরসির অধীন প্রতিষ্ঠানের লোকেরা সর্প হয়ে দংশন করছে, ওঝা হয়ে বিষ নামানোর দায়িত্বও তাদের। কিন্তু বিষ নামানোর কাজটি কতটা হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়। কেননা, দিন দিন এ খাতের রাজস্ব শোচনীয় হারে কমছে। বিটিআরসি আবার টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। মন্ত্রণালয়ের কাছে বিহিত চাইলে তারা বিটিআরসিকে দেখিয়ে দেয়। বিটিআরসিকে জিজ্ঞেস করলে সমস্যা স্বীকার করেও ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা নিষ্ক্রিয়। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, অবৈধ ভিওআইপি প্রতিরোধের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দেখে বোঝা যায়, দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিলেও দুর্নীতির ফলভোগী অনেকেই। ফলে বিপুল রাজস্ব ক্ষতি সত্ত্বেও ব্যবস্থা হচ্ছে না অবৈধ ভিওআইপি প্রতিরোধের। প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো ব্যবসাটিকে অল্প কয়েকটি কোম্পানির মধ্যে সীমিত না রেখে যদি বেশ কিছু কোম্পানির কাছে স্বল্পমূল্যে ভিওআইপির লাইসেন্স দেওয়া যায়, তবে বৈধ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে কলপ্রতি কর আদায়ের হার বহুগুণে বেড়ে যাবে। এর বৈধ ব্যবসা যেমন একচেটিয়া থাকবে না, তেমনি অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসাও বন্ধ হবে। এ কারণে ভিওআইপি ব্যবস্থা উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়াটি দ্রুত হওয়া উচিত। পাশাপাশি, সাম্প্রতিককালে অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে রাষ্ট্রকে যারা ক্ষতিগ্রস্ত করলেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ ক্ষমার অযোগ্য। সংস্থাগুলোর স্বার্থেই এর সুবিধাভোগী দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
No comments