দাবি বাস্তবায়নে এবার আন্দোলনে নামছে শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট- স্থায়ী শিক্ষা কমিশন ও বেসরকারী শিক্ষক নিয়োগে স্বতন্ত্র কমিশন গঠন দাবি

দাবি বাস্তবায়নে এবার সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনে নামছে সরকার সমর্থক বেসরকারী বড় শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনগুলো। তাদের অভিযোগ, দু’একটি ছোট প্রাপ্তি ছাড়া বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের কোন দাবিই পূরণ হচ্ছে না।


আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে পড়েছে শিক্ষানীতি-২০১০-এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের স্বাভাবিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে। এক বছর ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে শূন্য ও প্যাটার্নভুক্ত পদে এমপিওভুক্তি। শিক্ষা প্রশাসন দুর্নীতিগ্রস্ত ও অদক্ষ আমলাতন্ত্রের কাছে জিম্মি বলেও শিক্ষক নেতারা অভিযোগ করেছেন। নেতাদের দাবিÑ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে শিক্ষক-কর্মচারীদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করছেন অদক্ষ আমলা। এদিকে রবিবার সংবাদ সম্মেলন করে স্থায়ী শিক্ষা কমিশন ও বেসরকারী শিক্ষক নিয়োগে স্বতন্ত্র কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট। শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন পরিস্থিতি সম্পর্কে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান উর রশিদ বলেন, এ সরকারের আমলেই বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে। ১ হাজার ৬শ’র বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। কলেজ শিক্ষকদের টাইমস্কেল দেয়া হয়েছে। শিক্ষা ভবনে শিক্ষকবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। এমপিও’সহ বিভিন্ন কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবার ৩৪টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আগে শিক্ষাভবন নিয়ন্ত্রণ করত গুটিকয়েক কর্মচারী। এখন শিক্ষা ভবনে সেই সিন্ডিকেটের অস্তিত্বই নেই। তার পরেও শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্বোচ্চ সুযোগ ও মর্যাদা দেয়ার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। রবিবার সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষানীতি-২০১০-এর আলোকে স্থায়ী শিক্ষা কমিশন ও বেসরকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য স্বতন্ত্র কমিশন গঠন, স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রবর্তন, অনার্স-মাস্টার্স পাঠদানকারী কলেজে তৃতীয় শিক্ষকের এমপিওভুক্তি চালু, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় শূন্যপদে নিয়মিত এমপিও সুবিধা প্রদানসহ বিভিন্ন দাবিতে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করেছে সরকার সমর্থক সবচেয়ে বৃহৎ শিক্ষক সংগঠন ‘জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট’। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ দাবি আদায়ে বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্মীদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা না দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব নয়। সরকারের মধ্যে প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তাচেতনায় বিশ্বাসী একটি চক্রই শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে আন্দোলনে ঠেলে দিচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফ্রন্টের আহ্বায়ক মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, অধ্যাপক আসাদুল হক, বাংলাদেশ কারিগরি কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও শ্যামলী আইউডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ এমএ সাত্তার, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাহবুব-উল-আলম তালুকদার, এসএমএ জলিল, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, অধ্যাপক রাকিবুল হক, হাবিবুর রহমান হাবিব ও এম আরজু। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে একই সঙ্গে বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরের বয়স ৬৫ বছরে উন্নীত করা, চিকিৎসা ভাতা, বাড়ি ভাড়া বাড়ানো, পার্বত্য এলাকার শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য ৩০ শতাংশ পাহাড়ী ভাতা চালুসহ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের জন্য আট দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার উন্নয়নে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির সংস্কারসহ সংবাদ সম্মেলনে সাত দফা সুপারিশও তুলে ধরা হয়। শিক্ষক নেতারা বলেন, এসব দাবি আদায়ে আগামী ১১ আগস্ট উপজেলা সদরে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, পেশাজীবী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়, ১৪ আগস্ট জেলা সদরে স্থানীয় অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়, ১ সেপ্টেম্বর জেলা সদরে সংবাদ সম্মেলন, ৯ ও ১১ সেপ্টেম্বর উপজেলা ও জেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল এবং প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান, ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা সদরে অবস্থান ধর্মঘট ও প্রতীকী অনশন, ২০ সেপ্টেম্বর সব বিভাগে শিক্ষক-কর্মচারী মহাসমাবেশ এবং দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জাতীয় মহাসমাবেশ কর্মসূচী পালন করবে শিক্ষক-কর্মচারী সমাজ। এর আগে গত ৩০ জুলাই সরকার সমর্থক অন্য শিক্ষক সংগঠন ‘শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ’ রাজধানীতে একটি সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছেন, শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ, শিক্ষানীতি-২০১০ দ্রুত বাস্তবায়ন, বাড়িভাড়া ও মেডিক্যাল ভাতা বৃদ্ধি, সরকারী-বেসরকারী বৈষম্য দূর করাসহ ১৭ দফা দাবিতে তাঁরা আগামী ৮ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর লাগাতার ধর্মঘট পালন করবেন। জানতে চাইলে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ সরকারের আমলে যেসব শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ পেয়েছে তাঁরা নিশ্চয়ই এ সরকারের সমর্থক। কিন্তু তাঁরাও বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, বেসরকারী শিক্ষকরা আজ চরম অবহেলিত। সরকারী শিক্ষকদের সঙ্গে বেসরকারী শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধার ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে। আমরা আশা করি, সরকার আমাদের ন্যায়সঙ্গত দাবিগুলো পূরণ করবেন। তবে দাবি বাস্তবায়ন না হলে শিক্ষক সমাজ কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবে।

No comments

Powered by Blogger.