হৈ-হুল্লোড়, চুটিয়ে আড্ডা রাত জেগে চ্যাটিং ভাল থেকো বন্ধু...- বিশ্ব বন্ধু দিবস by মোরসালিন মিজান

এক জীবনে হাজারো চাওয়া মানুষের। টাকা চাই। বাড়ি-গাড়ি থাকা চাই। তবে একটি চাওয়া খুব নীরবে বুকের ভেতর ঘুমিয়ে থাকে। চাওয়াটির নামÑ বন্ধু। কারও সঙ্গে রাত জেগে চ্যাট হয়। রাস্তার ধারে বসে চুটিয়ে আড্ডা হয় কারও কারও সঙ্গে। চলে চা-চক্র। হা হা করে হেসে ওঠা হয়।


হৈ হুল্লোড়, এমনকি কিলঘুসি চলে। কিন্তু এর পরও সেই প্রশ্নÑ এদের ক’জন প্রকৃত বন্ধু? জবাবটি অনেকেরই জানা। বন্ধু সকলে হয় না। সকলের বন্ধু হওয়া যায় না। সব মিলিয়ে এ বড় জটিল সমীকরণ। তাই নানারূপে বন্ধুতা বেঁচে থাকে।
বন্ধুতাকে ঘিরে আছে বিশেষ একটি দিনও। প্রতিবছর আগস্ট মাসের প্রথম রবিবার পালিত হয় বিশ্ব বন্ধু দিবস হিসেবে। জানা যায়, ১৯৩৫ সালে মার্কিন কংগ্রেস দিবসটিকে জাতীয় বন্ধু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এর পর থেকে সেটি ছড়িয়ে পড়তে থাকে সারাবিশ্বে। গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় রবিবার উদ্যাপিত হয়েছে বাংলাদেশেও। রাজধানীর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, উদ্যান, রাস্তার ধারে বসেছিল প্রাণোচ্ছল আড্ডা। ফুলের দোকান আর গিফটশপগুলোতে ভিড় করেছিলেন তরুণ তরুণীরা। ফেসবুক, ট্যুইটার, এফএম রেডিওর কথা তো বলাই বাহুল্য। সারাদিন এসবে অনুষ্ঠান আয়োজন ছিল।
একদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলেও টিএসসি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন অনেক বন্ধু। কোথাও ছেলেরা ছেলেরা। কোথাও শুধু মেয়েরা দল বেঁধে গল্প করছেন। তবে বেশিরভাগ আড্ডায় ছেলেমেয়ে উভয়কেই দেখা গেল। এমন আড্ডা এখানে প্রতিদিনই হয়। তবে বিশ্ব বন্ধু দিবসে যেন নতুন প্রাণ পায় সব আড্ডা। কিছু আনুষ্ঠানিকতা যোগ হয়। অনেকেরই হাতে তাই গোলাপ গুচ্ছ উঁকি দিচ্ছিল। চোখে পড়ছিল র‌্যাপিং করা গিফট বক্স। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনটির জন্য তাঁরা প্রতীক্ষা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এনথ্রোপলজি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রুহুল আমিন বললেন, স্কুলে পড়ার সময় থেকেই এ দিনটির কথা জানি। তখন অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। খুব বেশি সেলিব্রেট করা যেত না। তবে এখন তো প্রতিদিনই বন্ধু দিবস। ক্যাম্পাসে সারাদিন বন্ধুদের সঙ্গেই কাটে। একই বিভাগের শাহাদাত বললেন, শুধু ক্যাম্পাসে নয়, গ্রামের বাড়ি বগুড়ায়ও তাঁর অনেক বন্ধু আছে। তাঁর মতো এমন কয়েকজনকে পাওয়া গেল যারা অনেক বন্ধু আছে বলতে পেরে দারুণ খুশি। তবে পাশের আরেকটি আড্ডায় অন্য সুর। রুমেল নামের একজন বললেন, বন্ধু অনেকেই আছে। আবার নেই। জীবনের যে মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি বন্ধুর দরকার হয় সে মুহূর্তে কাউকে আমি পাইনি।
ছেলেমেয়েতেও এখন চমৎকার বন্ধুতার সম্পর্ক গড়ে উঠছে। উভয়ের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া। একজন অন্যজনকে বেশ বুঝতে সক্ষম। তবে বিপত্তিও মাঝে মধ্যে দেখা দিচ্ছে। একটু ঘনিষ্ঠ হতে না হতেই মেয়ে বন্ধুকে প্রেম নিবেদন করে বসছেন ছেলেরা। কোন কোন ক্ষেত্রে মেয়ে বন্ধুটি অকারণে অভিমানী হয়ে উঠছেন। জেদ ধরছেন। শর্ত দিচ্ছেন। এভাবে বন্ধুতার ফ্রেম ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসতে চাইছে সম্পর্কটি।
এ সবের বাইরে বন্ধুদের বড় একটি প্লাটফর্ম এখন ইন্টারনেট দুনিয়া। ফেসবুক টুইটারে হাজার হাজার বন্ধু ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নামের ওপর ক্লিক করলেই নিজের হয়ে যাচ্ছেন। আর তাই কয়েকদিন বয়সী ফেসবুক এ্যাকাউন্টে কয়েক হাজার বন্ধুও জুটে যাচ্ছে। এফএম রেডিওর বেলায়ও তাই। একটু অনুষ্ঠান শুনলে, টেক্সট পাঠালে টিনেজার শ্রোতাটি বন্ধু হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আসলেই কি বন্ধু এরা? কিংবা আপনি নিজেই কি শুদ্ধ বন্ধুটি হতে পেরেছেন কারও? না হলে সক্রেটিসের পরামর্শটি শুনুনÑ ‘বন্ধুত্ব করার সময় খুব ধীর গতিতে এগোতে হবে এবং যখন বন্ধুত্ব হয়ে যাবে তখন সেটা স্থায়ী করতে হবে। কতটা আর কেমন স্থায়ী হবে?’ এরিস্টটলের কথা শুনুন। তিনি বলছেনÑ ‘বন্ধুত্ব হলো দুই দেহে এক আত্মা। আসুন সে বন্ধুর সন্ধান করি।’

No comments

Powered by Blogger.