তেজগাঁওয়ে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম-ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া খুঁজছে সরকার by অমিতোষ পাল
রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে মহাখালী যাওয়ার পথে পূর্ব পাশের লাভ লেন ধরে শ দুয়েক গজ এগোলে রাস্তাটি বাঁয়ে মোড় নিয়েছে। সেই মোড় থেকে সামান্য এগিয়ে ডান দিকে একটি রাস্তা হাতিরঝিল সংযোগ সেতুর মাধ্যমে মধুবাগ হয়ে মগবাজার সড়কে মিলিত হওয়ার কথা ছিল। স্থাপত্য অধিদপ্তরে নকশায় সে রকমই উল্লেখ আছে।
কিন্তু সেই রাস্তা না করে সেখানে করা হয়েছে প্লট। বিগত জোট সরকারের আমলে ২০০৬ সালের জুনে অত্যন্ত চুপিসারে চারটি প্লট তৈরি করা হয়। দুজন প্রতিমন্ত্রী ও আরেক প্রতিমন্ত্রীর ছেলেকে গোপনে তিনটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্লটের নম্বর দেওয়া হয় ১৩৬/১, ১৭১/১ ও ১৭১/২ তেজগাঁও শিল্প এলাকা। খালি থাকা ১৩৩/১ নম্বর প্লটটি বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপর মহাজোটের একজন সংসদ সদস্য বরাদ্দ নিয়ে নেন। এসব ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি কিছুই অনুসরণ করা হয়নি। যেকোনো প্লট বরাদ্দ দিতে হলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বরাদ্দের নিয়ম থাকলেও তাও করা হয়নি।
কেবল এ চারটি প্লটই নয়, তেজগাঁও শিল্প এলাকায় স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে শতাধিক প্লট নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে পানির দামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা পেয়েছেন, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি বা রাজনীতিবিদ। দলীয় বিবেচনায় এসব বরাদ্দের ঘটনা ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করার ষোলকলাই পূর্ণ করা হয়েছে। এসব প্লটের বেশির ভাগেই শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আবার কিছু প্লট এখনো খালি। তবে যে খাতে বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে সেটা না করে অন্য কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু প্লট বরাদ্দ নেওয়ার পর অনেকে বিক্রিও করে দিয়েছেন। বিভিন্ন সময় সরকার এ ধরনের কিছু প্লটের বরাদ্দ বাতিলের উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে রূপ পায়নি।
২০১০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কালের কণ্ঠে 'রাস্তাকে প্লট বানিয়ে ভাগাভাগি/জোট আমলে পানির দরে বরাদ্দ, নতুন প্লট পাওয়ার চেষ্টা মহাজোট এমপির' শীর্ষক প্রতিবেদনটি সম্প্রতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোর্শেদ আদালতের নজরে আনেন। নতুন করে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। পূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউকের কাছে এ-সংক্রান্ত নথিপত্র চান আদালত। এ নিয়ে গঠিত হয় তেজগাঁও বেগুনবাড়ী হাতিরঝিল এলাকায় প্লট বরাদ্দে অনিয়মবিষয়ক তদন্ত কমিটি। গত বুধবার কমিটি প্লটের বরাদ্দ-সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করে তুঘলকি সব কাণ্ড দেখতে পায়।
কমিটি দেখতে পায়- হাতিরঝিল, বেগুনবাড়ী ও তেজগাঁও শিল্প এলাকায় অসংখ্য প্লট বরাদ্দে প্রচলিত নিয়ম-নীতি মানা হয়নি। ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক বিবেচনায় নীতিমালা তৈরি করে সরকারের জমি ব্যক্তিবিশেষ বা প্রতিষ্ঠানকে পানির দামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১৯৫৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত শত শত বিঘা জমি এভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তেজগাঁও এলাকায় এক কাঠা জমির দাম বর্তমানে প্রায় কোটি টাকা হলেও এসব জমি প্রতি কাঠা মাত্র এক-দেড় লাখ টাকায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বরাদ্দ দেওয়া এসব প্লট বর্তমানে ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া খুঁজছে সরকার। কমিটির প্রধান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটিয়ে পারস্পরিক যোগসাজশে দুই শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে এসব জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি বা প্রযোজ্য শর্ত পূরণ করা হয়েছে কি না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে।
কমিটির অন্য সদস্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান বলেন, বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রচলিত নীতিমালা না মেনে মন্ত্রীর ইচ্ছানুসারে কোটি কোটি টাকার জমি নামমাত্র দামে দেওয়া হয়েছে। বিগত জোট সরকারের আমলে ১১টি সংবাদমাধ্যমকেও একই কায়দায় প্লট দেওয়া হয়। এগুলো হস্তান্তরের ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচারের নিয়ম থাকলেও সেটা করা হয়নি। জমির দামও সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়নি।
জানা গেছে, টেলিকম, তৈরি পোশাক কারখানা, ময়দার কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে এসব প্লট অত্যন্ত গোপনে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্থাপত্য অধিদপ্তরের একজন স্থপতি কালের কণ্ঠকে বলেন, এসব ক্ষেত্রে সরকারের ইচ্ছাই ছিল মুখ্য বিষয়। স্থাপত্য অধিদপ্তরে কার ঘাড়ে কয়টা মাথা যে সরকারের ইচ্ছায় আপত্তি দেবে? এ ক্ষেত্রেও 'কর্তার ইচ্ছায় কর্ম' সম্পাদন হয়েছে। আবার বিগত সরকারের আমলে এফডিসির সামনে হাতিরঝিলের পাশে প্লট বানিয়ে তেলের পাম্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান সরকার এসে মনে করল, ওখানে পাম্প থাকলে হাতিরঝিল প্রকল্পের সমস্যা হবে। কাজেই তারা বাতিলের ব্যবস্থা করল। এ ক্ষেত্রেও সরকারের ইচ্ছাটাই বড় কথা।
তেজগাঁওয়ে জরিপের দায়িত্ব পালনকারী গণপূর্ত বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, তেজগাঁওয়ের ফাঁকা জায়গাগুলো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বরাদ্দ দেওয়ার একাধিক ঘটনা তো আছেই। পরে যখন আর জায়গা পাওয়া যায় না, তখন রাস্তাকে প্লট বানিয়ে বরাদ্দ শুরু হয়। ১৯৯৪ সালে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় প্রথম রাস্তাকে প্লট বানিয়ে বরাদ্দ দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন রাস্তার জায়গায় ১২২/১ ও ১২৩/১ নম্বর হোল্ডিং বসিয়ে দলীয় লোকদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাঁর মতে, এতে নগরীর যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ১৩৬/১ নম্বর প্লটে অবকাঠামো তৈরির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। স্থানীয় একজন বাসিন্দা এ প্রতিবেদককে বলেন, স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক নেতা ওই প্লটে মাটি ভরাটের ঠিকাদারি করেছেন।
১৭১/১ এবং ১৭১/২ নম্বর প্লট দুটিতে চলছে গাড়ির ইঞ্জিন সিএনজিতে রূপান্তরের কাজ। আরেকটি খালি প্লটের একাংশে গড়ে উঠেছে কিছু বস্তিঘর ও টং দোকান। আরেক অংশে ইট বিছিয়ে পার্কিং স্পেস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
জানা গেছে, এ ধরনের কতটি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে, এর সঠিক সংখ্যা এখনো নিরূপণ করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। এ জন্য আরো সময়ের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। তাঁরা জানান, তেজগাঁও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য ২৫ বিঘা জমি ১৯৯০ সালে লিখিতভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই জমিতে হাসপাতাল, প্রশাসনিক ভবন, ডাক্তার, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন, পানির পাম্প, সংযোগ সড়ক, নতুন হাসপাতাল, বাগান ও বিনোদনের জন্য খালি মাঠ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। সেই হাসপাতাল কমপ্লেক্সের নকশা অনুসারে কিছু স্থাপনাও গড়ে তোলা হয়। সেই জায়গারও কিছু অংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিগত জোট সরকারের আমলে বরাদ্দ দেওয়া প্লটগুলোর অবস্থানও ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও তেজগাঁও ভূমি রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের আশপাশে। এগুলোর আয়তন ১০ কাঠা থেকে তিন বিঘা পর্যন্ত। এ ধরনের প্লটের মধ্যে রয়েছে এক বিঘা আয়তনের ১৫৩/৮, ১৪ কাঠা আয়তনের ৪৪৬/বি, পৌনে দুই বিঘা আয়তনের ৭/এ, ১৮ কাঠার ১৫৩/১, সাড়ে ১৮ কাঠার ৪৬৬/বি, ১৮ দশমিক ৩৪ কাঠার ৪৪৬/আই, ২১ কাঠার ১৭১ ও ১৩২; ১৩ কাঠার ১৩৩ ও ১৩৮; ১৭ কাঠার ৪৪৬/সি ও ৪৪৬/ডি; এক বিঘা আয়তনের ক/৭, ১০৭, ১৫৩/৮, ৪৪৬/ই, ৪৪৬/এফ ও ৪৪৬/জি; ১৭ কাঠা আয়তনের ১৫২/২ প্রভৃতি।
কেবল এ চারটি প্লটই নয়, তেজগাঁও শিল্প এলাকায় স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে শতাধিক প্লট নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে পানির দামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা পেয়েছেন, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি বা রাজনীতিবিদ। দলীয় বিবেচনায় এসব বরাদ্দের ঘটনা ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করার ষোলকলাই পূর্ণ করা হয়েছে। এসব প্লটের বেশির ভাগেই শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আবার কিছু প্লট এখনো খালি। তবে যে খাতে বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে সেটা না করে অন্য কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু প্লট বরাদ্দ নেওয়ার পর অনেকে বিক্রিও করে দিয়েছেন। বিভিন্ন সময় সরকার এ ধরনের কিছু প্লটের বরাদ্দ বাতিলের উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে রূপ পায়নি।
২০১০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কালের কণ্ঠে 'রাস্তাকে প্লট বানিয়ে ভাগাভাগি/জোট আমলে পানির দরে বরাদ্দ, নতুন প্লট পাওয়ার চেষ্টা মহাজোট এমপির' শীর্ষক প্রতিবেদনটি সম্প্রতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোর্শেদ আদালতের নজরে আনেন। নতুন করে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। পূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউকের কাছে এ-সংক্রান্ত নথিপত্র চান আদালত। এ নিয়ে গঠিত হয় তেজগাঁও বেগুনবাড়ী হাতিরঝিল এলাকায় প্লট বরাদ্দে অনিয়মবিষয়ক তদন্ত কমিটি। গত বুধবার কমিটি প্লটের বরাদ্দ-সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করে তুঘলকি সব কাণ্ড দেখতে পায়।
কমিটি দেখতে পায়- হাতিরঝিল, বেগুনবাড়ী ও তেজগাঁও শিল্প এলাকায় অসংখ্য প্লট বরাদ্দে প্রচলিত নিয়ম-নীতি মানা হয়নি। ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক বিবেচনায় নীতিমালা তৈরি করে সরকারের জমি ব্যক্তিবিশেষ বা প্রতিষ্ঠানকে পানির দামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১৯৫৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত শত শত বিঘা জমি এভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তেজগাঁও এলাকায় এক কাঠা জমির দাম বর্তমানে প্রায় কোটি টাকা হলেও এসব জমি প্রতি কাঠা মাত্র এক-দেড় লাখ টাকায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বরাদ্দ দেওয়া এসব প্লট বর্তমানে ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া খুঁজছে সরকার। কমিটির প্রধান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটিয়ে পারস্পরিক যোগসাজশে দুই শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে এসব জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি বা প্রযোজ্য শর্ত পূরণ করা হয়েছে কি না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে।
কমিটির অন্য সদস্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান বলেন, বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রচলিত নীতিমালা না মেনে মন্ত্রীর ইচ্ছানুসারে কোটি কোটি টাকার জমি নামমাত্র দামে দেওয়া হয়েছে। বিগত জোট সরকারের আমলে ১১টি সংবাদমাধ্যমকেও একই কায়দায় প্লট দেওয়া হয়। এগুলো হস্তান্তরের ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচারের নিয়ম থাকলেও সেটা করা হয়নি। জমির দামও সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়নি।
জানা গেছে, টেলিকম, তৈরি পোশাক কারখানা, ময়দার কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে এসব প্লট অত্যন্ত গোপনে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্থাপত্য অধিদপ্তরের একজন স্থপতি কালের কণ্ঠকে বলেন, এসব ক্ষেত্রে সরকারের ইচ্ছাই ছিল মুখ্য বিষয়। স্থাপত্য অধিদপ্তরে কার ঘাড়ে কয়টা মাথা যে সরকারের ইচ্ছায় আপত্তি দেবে? এ ক্ষেত্রেও 'কর্তার ইচ্ছায় কর্ম' সম্পাদন হয়েছে। আবার বিগত সরকারের আমলে এফডিসির সামনে হাতিরঝিলের পাশে প্লট বানিয়ে তেলের পাম্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান সরকার এসে মনে করল, ওখানে পাম্প থাকলে হাতিরঝিল প্রকল্পের সমস্যা হবে। কাজেই তারা বাতিলের ব্যবস্থা করল। এ ক্ষেত্রেও সরকারের ইচ্ছাটাই বড় কথা।
তেজগাঁওয়ে জরিপের দায়িত্ব পালনকারী গণপূর্ত বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, তেজগাঁওয়ের ফাঁকা জায়গাগুলো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বরাদ্দ দেওয়ার একাধিক ঘটনা তো আছেই। পরে যখন আর জায়গা পাওয়া যায় না, তখন রাস্তাকে প্লট বানিয়ে বরাদ্দ শুরু হয়। ১৯৯৪ সালে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় প্রথম রাস্তাকে প্লট বানিয়ে বরাদ্দ দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন রাস্তার জায়গায় ১২২/১ ও ১২৩/১ নম্বর হোল্ডিং বসিয়ে দলীয় লোকদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাঁর মতে, এতে নগরীর যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ১৩৬/১ নম্বর প্লটে অবকাঠামো তৈরির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। স্থানীয় একজন বাসিন্দা এ প্রতিবেদককে বলেন, স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক নেতা ওই প্লটে মাটি ভরাটের ঠিকাদারি করেছেন।
১৭১/১ এবং ১৭১/২ নম্বর প্লট দুটিতে চলছে গাড়ির ইঞ্জিন সিএনজিতে রূপান্তরের কাজ। আরেকটি খালি প্লটের একাংশে গড়ে উঠেছে কিছু বস্তিঘর ও টং দোকান। আরেক অংশে ইট বিছিয়ে পার্কিং স্পেস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
জানা গেছে, এ ধরনের কতটি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে, এর সঠিক সংখ্যা এখনো নিরূপণ করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। এ জন্য আরো সময়ের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। তাঁরা জানান, তেজগাঁও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য ২৫ বিঘা জমি ১৯৯০ সালে লিখিতভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই জমিতে হাসপাতাল, প্রশাসনিক ভবন, ডাক্তার, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন, পানির পাম্প, সংযোগ সড়ক, নতুন হাসপাতাল, বাগান ও বিনোদনের জন্য খালি মাঠ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। সেই হাসপাতাল কমপ্লেক্সের নকশা অনুসারে কিছু স্থাপনাও গড়ে তোলা হয়। সেই জায়গারও কিছু অংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিগত জোট সরকারের আমলে বরাদ্দ দেওয়া প্লটগুলোর অবস্থানও ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও তেজগাঁও ভূমি রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের আশপাশে। এগুলোর আয়তন ১০ কাঠা থেকে তিন বিঘা পর্যন্ত। এ ধরনের প্লটের মধ্যে রয়েছে এক বিঘা আয়তনের ১৫৩/৮, ১৪ কাঠা আয়তনের ৪৪৬/বি, পৌনে দুই বিঘা আয়তনের ৭/এ, ১৮ কাঠার ১৫৩/১, সাড়ে ১৮ কাঠার ৪৬৬/বি, ১৮ দশমিক ৩৪ কাঠার ৪৪৬/আই, ২১ কাঠার ১৭১ ও ১৩২; ১৩ কাঠার ১৩৩ ও ১৩৮; ১৭ কাঠার ৪৪৬/সি ও ৪৪৬/ডি; এক বিঘা আয়তনের ক/৭, ১০৭, ১৫৩/৮, ৪৪৬/ই, ৪৪৬/এফ ও ৪৪৬/জি; ১৭ কাঠা আয়তনের ১৫২/২ প্রভৃতি।
No comments