গান শুনেই সোল-জুর প্রেমে পড়েন উন

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বিয়ের খবর প্রকাশ হওয়ার পর দেশটিতে এখন জোর আলোচনা চলছে ফার্স্ট লেডির পরিচয় কী এবং কবে ও কোথায়ই বা তাদের বিয়ে হয়েছে। কারণ, সংবাদমাধ্যমে উনের স্ত্রীর নাম ছাড়া আর তেমন কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।


তবে গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, উনের স্ত্রী রি সোল-জু উত্তর কোরিয়ার সাবেক গায়িকা। উন ২০০৯ সালের আগে এক সংগীতানুষ্ঠানে সোল-জুকে প্রথম দেখেন এবং তাঁর প্রেমে পড়েন।
কয়েক সপ্তাহ ধরে উনের সঙ্গে এক নারীকে দেখা যাচ্ছিল। এ নিয়ে চলছিল জল্পনা-কল্পনা। অবশেষে গত বুধবার প্রথমে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় একটি বেতার এবং একটি টেলিভিশন 'রহস্যময়ী' ওই নারীর পরিচয় দিয়ে জানায়, উন বিবাহিত। ওই নারীই উনের স্ত্রী। তাঁর নাম কমরেড রি সোল-জু। উন স্ত্রীকে নিয়ে একটি বিনোদন পার্কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই দম্পতির প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে হাজির হওয়ার মধ্যে উত্তর কোরিয়ায় পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত রয়েছে। কারণ, উনের বাবা দেশটির সাবেক নেতা কিম জং ইল বা দাদা কিম ইল সাংকে স্ত্রীদের নিয়ে জনসমক্ষে কখনো দেখা যায়নি।
সংবাদমাধ্যম জানায়, খাটো চুলের সোল-জুর বয়স কুড়ির কোঠায়। তিনি কিম ইল সাং ইউনিভার্সিটির ছাত্রী। বাড়ি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ নর্থ হ্যামকিয়ং। তাঁর বাবা পেশায় শিক্ষক এবং মা চিকিৎসক। সোল-জুকে উন প্রথম দেখেন একটি অনুষ্ঠানে। তাঁদের বিয়ে হয়েছে ২০০৯ সালে। তাঁকে ফার্স্ট লেডির জীবনযাপনে অভ্যস্ত করার জন্য অন্তত ছয় মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
অন্য একটি পত্রিকার মতে, সোল-জুকে পুত্রবধূ হিসেবে পছন্দ করে গেছেন স্বয়ং কিম জং ইল। উত্তরাধিকার হিসেবে গড়ে তোলার সময়ই উনের জন্য বউ ঠিক করে রাখেন তিনি।
গত ডিসেম্বরে বাবা কিম জং ইলের মৃত্যুর পর উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচিত হন উন। এর আগে উনের বিষয়ে দেশের মানুষই তেমন কিছু জানত না। বহির্বিশ্ব বিশেষ করে পশ্চিমা মহল পরমাণু শক্তিধর দেশটির নতুন নেতা উনের বিষয়-আশয় জানতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ধারণা করা হয়, তাঁর বয়স ত্রিশের কাছাকাছি। এত কম বয়সী একজন নেতা কাদের পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি পালন করছেন তা নিয়েও জল্পনাকল্পনা রয়েছে। এমন অবস্থায় তাঁর বিয়ের খবরে রীতিমতো সাড়া পড়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড ইউনিফিকেশন স্টাডিজের অধ্যাপক চ্যাং ইয়ং-সুক বলেন, 'উনের বিয়ের খবর প্রকাশের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, বিশ্ববাসীকে বোঝানো যে, উন কোনো বাচ্চা ছেলে নয়। উন কোথাও একা গেলে লোকে তাঁকে একজন তরুণ ছেলে ভাবতে পারে। কিন্তু যখন তাঁর সঙ্গে স্ত্রী থাকবেন তখন এটা তো বোঝানো যাবে যে, তিনি প্রাপ্তবয়স্ক এবং একটি পরিবারের প্রধান।'
যুক্তরাষ্ট্রের শুভ কামনা : উনের বিয়ের খবর প্রকাশ হওয়ার পর এ দম্পতিকে শুভ কামনা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে একই সঙ্গে এই পরিবারের নেতৃত্বে উত্তর কোরিয়ার জনগণ দুর্দশায় রয়েছে অভিহিত করে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড সাংবাদিকদের বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই যেকোনো নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানায়।' তিনি উত্তর কোরিয়ার সরকারকে তাদের কর্মকাণ্ড উন্মুক্ত করার আহ্বান জানান। সূত্র : টেলিগ্রাফ, জিনিউজ।

No comments

Powered by Blogger.