ঢাকা-ময়মনসিংহ-দুপাশে দোকানপাট মাঝখানে ঢিবি by নিয়ামুল কবীর সজল ও শরীফ আহ্‌মেদ শামীম

গত বছর ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের কাছে মহা-আতঙ্কের নাম ছিল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। এবার সড়কের সেই শোচনীয় অবস্থা নেই। তবে এখনো পুরোপুরি ভালো নয়। কোথাও কোথাও সড়কের মাঝখানে চারপাশ দেবে গিয়ে ছোট-বড় ঢিবির আকার ধারণ করেছে। এ কারণে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না।


এর চেয়েও মাথাব্যথার বড় কারণ টঙ্গী ব্রিজ থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা, ভাসমান দোকানপাট ও চার লেনের চলমান কাজ।
এসব কারণে এ মহাসড়কে ক্ষণে ক্ষণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, যানজট ও দুর্ভোগ ততই বাড়ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা ও হাট-বাজার দ্রুত অপসারণ না করলে আসন্ন ঈদে এ মহাসড়কে মহাভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন যানবাহনের মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীরা। টঙ্গী-ঘোড়াশাল-সিলেট এবং ঢাকা-গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কেরও প্রায় একই অবস্থা।
ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক : যোগাযোগমন্ত্রীর ঘন ঘন পরিদর্শন ও নজরদারির কারণে টঙ্গী থেকে শ্রীপুরের জৈনাবাজার পর্যন্ত কোথাও ভাঙাচোরা নেই। তবে গত বছরের নিম্নমানের কাজের জন্য টঙ্গী থেকে বোর্ডবাজার পর্যন্ত মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে ছোট-বড় টিবির সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে রয়েছে ভাসমান দোকান ও বাজার।
টঙ্গী থেকে শ্রীপুরের জৈনাবাজার পর্যন্ত প্রায় ৩৮ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানো হচ্ছে, কোথাও অবৈধ বেবিট্যাক্সি-সিএনজি অটোরিকশা-লেগুনার স্ট্যান্ড, ভাসমান দোকানপাট, আবার কোথাও অবৈধ স্থাপনা। এসব কারণেও মহাসড়কে যানজট হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীর শেষ সীমা আবদুল্লাহপুর থেকে টঙ্গীর তুরাগ ব্রিজ পার হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রথম যানজট শুরু হয় টঙ্গীর স্টেশন রোডে। এরপর চেরাগ আলী, গাজীপুরা, সাইনবোর্ড, ঢাকা বাইপাস মোড়, গাজীপুর চৌরাস্তা ও শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা। ঢাকা-গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে নিয়মিত যানজট লাগে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে। এ ছাড়া ওই মহাসড়কের চন্দ্রা মোড় ও সফিপুর বাজারেও মাঝেমধ্যে যানজট লাগছে। ঢাকা-ঘোড়াশাল-সিলেট মহাসড়কের গাজীপুর অংশের টঙ্গীর মরকুন থেকে মাজুখান, মীরের বাজার ও পুবাইলে যানজটে আটকা পড়ে যাত্রীরা নিয়মিত দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এ তিন মহাসড়কের যানজটের প্রভাব ঢাকা বাইপাস সড়কে পড়ছে। ভোগড়া বাইপাস ও মীরের বাজারে প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট লেগে যাচ্ছে। তবে গাজীপুর চৌরাস্তা ও কোনাবাড়ীর যানজট সবচেয়ে বেশি লম্বা।
টঙ্গীর গাজীপুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কথা হয় বলাকা পরিবহনের চালক জাহিদুল হকের সঙ্গে। সড়কের উঁচু ঢিবি দেখিয়ে তিনি বলেন, আধা ফুট, এক ফুট আবার কোথাও বা তারও বেশি উচ্চতার টিউমারের মতো দেখতে ছোট-বড় এসব ঢিবির জন্য স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চালানো যায় না। প্রায়ই যানবাহন উল্টে বা কাত হয়ে পড়ে। রাতের বেলায় যানবাহন চালাতে কষ্ট বেশি হয়। টঙ্গী ব্রিজ থেকে বোর্ডবাজার পর্যন্ত অংশের হাল সবচেয়ে খারাপ।
সড়কের স্টেশন রোডে কথা হয় ময়মনসিংহগামী এনা পরিবহনের চালক বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, যানজটের কারণে টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। ঈদের আগে শেষ তিন দিন যানজট তীব্র আকার ধারণ করবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় চার সড়কেই যানজট। ভাসমান দোকান, যানবাহন থেকে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানো, মহাসড়কে অবৈধ টেম্পো লেগুনার স্ট্যান্ড তৈরি করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর ওপর রয়েছে শ্রমিক ইউনিয়নের চাঁদাবাজি।
মহাসড়কের শ্রীপুরের নয়নপুর এলাকায় দেখা গেছে, চার লেনের কাজের জন্য যানবাহনগুলোকে তুলনামূলক আস্তে চলাচল করতে হচ্ছে। এ কারণে প্রায়ই যানজট লেগে যাচ্ছে।
এ ছাড়া মহাসড়কের ময়মনসিংহের ৫৫ কিলোমিটার অংশের মাঝে ভালুকা উপজেলা সদরের কিছু অংশে সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। মহাসড়কের ভালুকা অংশের বিধ্বস্ত এ অংশটুকু ইট-সুরকি দিয়ে ভরাট করে যানবাহন চলাচল করলেও তা যেকোনো সময়ের ভারি বৃষ্টি এবং আসন্ন ঈদের সময় অত্যধিক যানবাহনের চাপে আবার বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছানোর আশঙ্কা করেছেন অনেকে। এ ছাড়া ঈদের সময় এ অংশে যানজটের আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।
টঙ্গী-ঘোড়াশাল-সিলেট : গাজীপুরের কালীগঞ্জে শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতু চালু হলে গুরুত্ব বেড়ে যায় টঙ্গী-কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল-সিলেট মহাসড়কের। বৃহত্তর সিলেট ছাড়াও নরসিংদী, ভৈরব ও কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন রুটের যানবাহন এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। মাজুখান লেভেলক্রসিং, পুবাইল কলেজ লেভেলক্রসিং, পুবাইল ব্রিজ লেভেলক্রসিং, দড়িপাড়া লেভেলক্রসিংসহ বেশ কিছু এলাকায় সড়কটি ভেঙে গেছে। পুবাইল ব্রিজ লেভেলক্রসিং এলাকার সড়কের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। মাজুখান, মীরের বাজার, পুবাইল, দড়িপাড়া, তুমুলিয়া বাজার এলাকার দুই পাশে ড্রেন না থাকায় এবং সড়কের দুই পাশে ভরাট করে উঁচুতে দোকানপাট গড়ে তোলায় জলাবদ্ধতায় ওই সব এলাকায় রাস্তা ভেঙে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়ক : ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের দুর্ভোগের অপর নাম গাজীপুর সদরের কোনাবাড়ী শিল্প এলাকা। জলাবদ্ধতা, অবৈধ স্থাপনা, ভাসমান দোকান, টেম্পো-লেগুনা স্ট্যান্ডের কারণে সড়কটিতে সব সময় থাকে তীব্র যানজট। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন কোনাবাড়ীতে একাধিকবার ড্রেন নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। পরে ড্রেন নির্মাণ শুরু হলেও তা আর শেষ হয়নি। ফলে মহাসড়কের জলাবদ্ধতা আগের অবস্থাতেই রয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই আশপাশের পানি গড়িয়ে মহাসড়কে এসে জমা হচ্ছে।
কয়েকজন গাড়িচালক জানান, এ মহাসড়ক এখন আগের তুলনায় ভালো। অনবরত ইটের ট্রাক চলার কারণে কড্ডা, ইটাহাটা ও মৌচাক এলাকায় কিছু অংশ নষ্ট হয়ে গেলেও যানবাহন চালাতে খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না।
কর্তৃপক্ষের ভাষ্য : গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত স্বীকার করেন, সাত কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ কিলোমিটার সড়কটি মেরামতে প্রথম দিকে কম পুরুত্বের কার্পেটিং করায় কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে নিয়ম অনুযায়ীই কাজ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের অবৈধ স্থাপনা শিগগিরই অপসারণ করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এবং মাওনা চৌরাস্তা শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা। এ দুই স্থানে ফুট ওভারব্রিজ না থাকায় অনবরত মানুষ যত্রতত্র রাস্তা পারাপার হয়। এ কারণে ওই এলাকায় যানজট হয়। তবে ঈদ সামনে রেখে যানজট নিরসন এবং মহাসড়কে যানজট রোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.