রংপুরে কেডি খাল দখল করে উঠছে ভবন by আরিফুল হক

রংপুরে ঐতিহ্যবাহী কেডি খাল দখল করে দোকান ও বাড়িঘর নির্মাণ করছেন এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। অবৈধ স্থাপনা সরানোর জন্য সিটি করপোরেশনের (সাবেক পৌরসভা) পক্ষ থেকে একাধিকবার চিঠি দিলেও অজ্ঞাত কারণে এই উচ্ছেদ অভিযান ঝুলে আছে।


রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক কাজী হাসান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মাপজোক করে দেখা গেছে, এই খালের কিছু অংশে পিলার করে ভবন ও দোকানপাট নির্মাণ করা হচ্ছে। উচ্ছেদের জন্য খুব শিগগির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ এপ্রিল অবৈধ দখলদারকে নিজ খরচে কেডি খালের এলাকা থেকে অবৈধ স্থাপনা সরানোর জন্য একটি চিঠি দিয়ে জানানো হয়। এরপরও অবৈধ দখলদার আজিজুল ইসলাম তা না মেনে নির্বিঘ্নে খালের মধ্যে একে একে আটটি পিলার তুলে স্থাপনা গড়ে তুলেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খালটি নগরের জলকল এলাকার চিকলি বিল থেকে উৎপত্তি হয়ে ইসলামপুর, হনুমানতলা, জলকর, নিউ জুম্মাপাড়া, শালবন, শালবন মিস্ত্রিপাড়া, কামালকাছনা, রবার্টসনগঞ্জ, মণ্ডলপাড়া, মাহীগঞ্জ হয়ে বুড়ি তিস্তা নদীতে গিয়ে মিশেছে। প্রায় দেড় শ বছর আগে তৎকালীন পৌর প্রশাসক কৃষ্ণধন ঘোষ (কেডি নামে পরিচিত) প্রায় ১০ কিলোমিটার এই খালটি খনন করেন। নগরের উত্তর-পূর্ব এলাকার বর্জ্য ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা দূর করতে কৃষ্ণধন ঘোষ ১৮৭১ সালে খালটি খনন করেন। এই খালের প্রস্থ অধিকাংশ স্থানে ৬০ ফুট রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের হনুমানতলা এলাকার সেতুর পাশে নগরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত এই খালের কিছু অংশ দখল করে আজিজুল ইসলাম সিমেন্টের তৈরি (আরসিসি) আটটি পিলার নির্মাণ করেছেন। খালের একটি অংশে এই পিলারগুলোর স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। সিটি করপোরেশন জমি মাপজোক করে এর সত্যতাও পেয়েছে।
কাজ বন্ধের জন্য গত ২৩ এপ্রিল তৎকালীন পৌরসভা আজিজুল ইসলামকে চিঠি দেয়। কিন্তু এরপরও কাজ বন্ধ করা হয়নি। এরপর গত ২৬ এপ্রিল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য কোতোয়ালি থানাকে চিঠি দেওয়া হয়। কেডি খালের প্রায় সাত ফুট জায়গা অবৈধভাবে দখল করে আরসিসি পিলার দিয়ে নির্মাণকাজ করছেন বলে কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে।
সরকারি খালের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা প্রসঙ্গে নির্মাণাধীন কাজের মালিক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘নিজের জায়গায় স্থাপনা করতে কাজ করেছি।’ এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।
সদ্য সাবেক মেয়র এ কে এম আবদুর রউফ বলেন, লোকবল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় উচ্ছেদ অভিযান করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলতাফ হোসেন পৌরসভার অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সিটি করপোরেশনকেই উচ্ছেদের উদ্যোগ নিতে হবে। সহযোগিতা চাইলে দেওয়া হবে।
এদিকে এলাকাবাসীর পক্ষ এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে গত ২৭ জুন জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করা হয়েছে। এ কাজের অন্যতম উদ্যোক্তা মোহামঞ্চদ শোয়েব হোসেন বলেন, খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা জরুরি, তা না হলে খালের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.