আন্তর্জাতিক-বহুপাক্ষিকতার পথে বিশ্বব্যবস্থা by এম আবদুল হাফিজ
বিশ্বজুড়ে উন্নয়ন এজেন্ডার একটি স্থানান্তর ঘটছে। ঐতিহ্যগতভাবে এই এজেন্ডা উন্নত বিশ্বেই তৈরি, বাস্তবায়িত হতো এবং অতঃপর তা সমগ্র বিশ্বে চাপিয়ে দেওয়া হতো। এই প্রক্রিয়ার পুরোভাগে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং জাপান। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিশ্বব্যবস্থায় এরা এখনও সক্রিয় থাকবে; তবে চীন, ব্রাজিল,
ভারত বা দক্ষিণ আফ্রিকা এখনও বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় অগ্রণী ডোনার এবং প্রাপক হিসেব তাদের অবস্থান অটুট রাখবে। উদীয়মান এই দেশগুলোর ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বাস করে তবু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এরা এখন নবলব্ধ মর্যাদার অধিকারী
আরও কিছু সময় পেরিয়ে গেলে ইতিহাসবিদরা হয়তোবা আমেরিকার চলমান মন্দাকে দায়ী করবে বিশ্ব ব্যবস্থায় পরাশক্তিটির প্রাধান্য হারানোর কারণ হিসেবে। কিন্তু এই প্রাধান্য হারানোর প্রক্রিয়া একটি বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে অনেক আগেই শুরু হয়েছে। পাশ্চাত্যের অর্থ বাজারের প্রচণ্ড চাপের দরুন অভ্যন্তরভাগের দিকে সংকোচনও পুরনো কথা। বাজার ব্যবস্থার স্থিতাবস্থায় প্রত্যাবর্তনের দুর্বলতাও আমেরিকার প্রাধান্য হারানোর নেপথ্য কারণ। বর্তমান সংকট দৃশ্যমান হওয়ার আগেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেগুলো ব্রেটন উডে বিশ্বের অর্থ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিচালনার্থে অস্তিত্বে আনা হয়েছিল তাদের সহ্যসীমাও এখন অতিক্রান্ত।
বিশ্বব্যাংক বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরিচালন পদ্ধতি থেকে বোঝা যায় মেয়াদোত্তীর্ণ অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রয়োগ। নব্বইয়ের দশক থেকে শুরু করে তা নতুন শতকেও অব্যাহত রেখে ব্রেটন উডে সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আসলেই চাপের মুখে নতুন করে অস্তিত্বে আসা ব্রাজিল এবং চীনের মতো বিশাল বাজারকে বেশি বেশি করে ভোটের ক্ষমতা প্রদান করেছে। ইত্যবসরে জি-৭-এর মতো ছয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমা গণতন্ত্র এবং জাপানের সমন্বয়ে গঠিত অর্থনৈতিক এলিট গোষ্ঠীকে কার্যত বিশ্বের অনানুষ্ঠানিক স্টিয়ারিং কমিটি করে রাখা হয়েছে, বিশেষ করে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সমন্বয়ের মতো ইস্যুতে যদিওবা আরও ক্ষমতার কেন্দ্রের উদ্ভব ঘটেছে।
আর্থিক সংকট অবশ্য শেষ পর্যন্ত জি-৭ গোষ্ঠীর বিলোপ ঘটিয়েছে অন্তত অর্থনৈতিক নীতি সমন্বিত করার প্লাটফর্ম হিসেবে এবং গোষ্ঠীটির স্থান এখন নিয়েছে জি-২০। ২০০৮ সালের নভেম্বরে জি-২০-এর রাষ্ট্রপ্রধানরা বৈশ্বিক প্রণোদনা কর্মসূচি নির্ধারণ করতে ওয়াশিংটনে সমবেত হন। এই সমাবেশই কালক্রমে একটি প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়। যেহেতু জি-২০ জি-৭-এর কার্যপদ্ধতি বাতিল করে নতুন করে অর্থনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে অস্তিত্বে আসা চীন, ভারত এবং ব্রাজিলকেও জি-২০ তাদের কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করে অর্থনৈতিক শক্তি গোষ্ঠীর এই বিস্তৃতির স্বীকৃতি এবং এই উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর নতুন অর্থনৈতিক খেলোয়াড় হিসেবে বৈশ্বিক পর্যায়ে ভূমিকা রাখার সময় এখন আগত।
দেখা যাচ্ছে যে, সংকট-সংকট না থেকে বিশ্ব ব্যাংক এবং আইএমএফকে নতুন জীবনদান করেছে। যদিও এর আগে আইএমএফকে কার্যত সেকেলে মনে হয়েছিল। বেসরকারি পুঁজি বাজার বিভিন্ন দেশে সহজশর্তে অর্থায়ন করেছিল। সংগঠনটি নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অর্থাভাবে ভুগছিল এবং আধিকারিকদের ছাঁটাইয়ে প্রবৃত্ত হতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ সাল নাগাদ এর দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসে যখন জি-২০-এর নেতারা ব্রেটেন উড সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক ট্রিলিয়ন ডলার প্রদান করে। বিশেষ করে চীন ও ব্রাজিল এই বিশেষ ফান্ডের অর্থায়নে ভূমিকা রাখে। এই ফান্ডই গ্রিস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লাটবিয়া, পাকিস্তান ও ইউক্রেনকে সাহায্য করে।
চীন ও অন্যান্য উদীয়মান বাজারকে পাশ্চাত্যের শিল্পোন্নত গণতন্ত্রগুলো প্রকারান্তরে এদেরই বৃহত্তর নেতৃত্ব নিতে প্রণোদিত করে পাশ্চাত্য একবারই স্বীকৃতি দিচ্ছে যে তারা আর বৈশ্বিক অর্থনেতিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম নয়।
তথাকথিত বাকিদের উত্থান (জরংব ড়ভ ঃযব ৎবংঃ) কিন্তু অর্থনৈতিক রাজনৈতিক শক্তি সঞ্চয়ের ব্যাপারই শুধু নয়, এর সঙ্গে নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং মডেল তৈরির বৈশ্বিক প্রতিযোগিতাও কিন্তু ছড়িয়ে আছে। পাশ্চাত্য, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে কিন্তু এখন আর আর্থসামাজিক জীবন নিয়ে উদ্ভাবনী চিন্তার একমাত্র সূতিকাগাররূপে ভাবা হচ্ছে না। দৃষ্টান্তস্বরূপ, শর্তাধীন ক্যাশ ট্রান্সফার প্রকল্প কিন্তু সর্বপ্রথম লাতিন আমেরিকায় প্রবর্তিত হয়েছিল। এমনকি শিল্পনীতিতেও গত ৩০ বছরে পাশ্চাত্যের অবদান সামান্যই। সময় এসেছে যখন উদীয়মান বাজার শক্তিসম্পন্ন দেশের দিকেই এখন নতুন উন্নয়ন মডেল বা তার বাস্তবায়নের উপায় দেখতে দৃষ্টিপাত করতে হয়।
বিশেষ করে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর ভূমিকা ক্রমেই তার গুরুত্ব হারাচ্ছে। স্পষ্টতই তাদের স্থান দখল করছে উদীয়মান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক শক্তিগুলো। যেহেতু আন্তর্জাতিক অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে এদের অবদান অধিক, তাই এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে এদের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। আন্তর্জাতিক অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে গুরুত্বও অধিক দেওয়া হয় এই নবাগতদের।
এই পরিবর্তনগুলো স্পষ্ট সংকেত বহন করে বিশ্বজুড়ে উন্নয়ন এজেন্ডার একটি স্থানান্তর ঘটছে। ঐতিহ্যগতভাবে এই এজেন্ডা উন্নত বিশ্বেই তৈরি, বাস্তবায়িত হতো এবং অতঃপর তা সমগ্র বিশ্বে চাপিয়ে দেওয়া হতো। এই প্রক্রিয়ার পুরোভাগে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং জাপান। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিশ্বব্যবস্থায় এরা এখনও সক্রিয় থাকবে; তবে চীন, ব্রাজিল, ভারত বা দক্ষিণ আফ্রিকা এখনও বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় অগ্রণী ডোনার এবং প্রাপক হিসেব তাদের অবস্থান অটুট রাখবে। উদীয়মান এই দেশগুলোর ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বাস করে তবু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এরা এখন নবলব্ধ মর্যাদার অধিকারী। তাদেরই সৃষ্ট মন্দার ভেতর দিয়েই পাশ্চাত্যের শক্তিগুলো উপলব্ধি না করে পারছে না যে আরও সংকট তাদের জন্য ঘনিয়ে আসছে যা সামগ্রিক বিশ্বব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলতে বাধ্য।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ : সাবেক মহাপরিচালক, বিআইআইএসএস ও কলাম লেখক
আরও কিছু সময় পেরিয়ে গেলে ইতিহাসবিদরা হয়তোবা আমেরিকার চলমান মন্দাকে দায়ী করবে বিশ্ব ব্যবস্থায় পরাশক্তিটির প্রাধান্য হারানোর কারণ হিসেবে। কিন্তু এই প্রাধান্য হারানোর প্রক্রিয়া একটি বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে অনেক আগেই শুরু হয়েছে। পাশ্চাত্যের অর্থ বাজারের প্রচণ্ড চাপের দরুন অভ্যন্তরভাগের দিকে সংকোচনও পুরনো কথা। বাজার ব্যবস্থার স্থিতাবস্থায় প্রত্যাবর্তনের দুর্বলতাও আমেরিকার প্রাধান্য হারানোর নেপথ্য কারণ। বর্তমান সংকট দৃশ্যমান হওয়ার আগেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেগুলো ব্রেটন উডে বিশ্বের অর্থ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিচালনার্থে অস্তিত্বে আনা হয়েছিল তাদের সহ্যসীমাও এখন অতিক্রান্ত।
বিশ্বব্যাংক বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরিচালন পদ্ধতি থেকে বোঝা যায় মেয়াদোত্তীর্ণ অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রয়োগ। নব্বইয়ের দশক থেকে শুরু করে তা নতুন শতকেও অব্যাহত রেখে ব্রেটন উডে সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আসলেই চাপের মুখে নতুন করে অস্তিত্বে আসা ব্রাজিল এবং চীনের মতো বিশাল বাজারকে বেশি বেশি করে ভোটের ক্ষমতা প্রদান করেছে। ইত্যবসরে জি-৭-এর মতো ছয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমা গণতন্ত্র এবং জাপানের সমন্বয়ে গঠিত অর্থনৈতিক এলিট গোষ্ঠীকে কার্যত বিশ্বের অনানুষ্ঠানিক স্টিয়ারিং কমিটি করে রাখা হয়েছে, বিশেষ করে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সমন্বয়ের মতো ইস্যুতে যদিওবা আরও ক্ষমতার কেন্দ্রের উদ্ভব ঘটেছে।
আর্থিক সংকট অবশ্য শেষ পর্যন্ত জি-৭ গোষ্ঠীর বিলোপ ঘটিয়েছে অন্তত অর্থনৈতিক নীতি সমন্বিত করার প্লাটফর্ম হিসেবে এবং গোষ্ঠীটির স্থান এখন নিয়েছে জি-২০। ২০০৮ সালের নভেম্বরে জি-২০-এর রাষ্ট্রপ্রধানরা বৈশ্বিক প্রণোদনা কর্মসূচি নির্ধারণ করতে ওয়াশিংটনে সমবেত হন। এই সমাবেশই কালক্রমে একটি প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়। যেহেতু জি-২০ জি-৭-এর কার্যপদ্ধতি বাতিল করে নতুন করে অর্থনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে অস্তিত্বে আসা চীন, ভারত এবং ব্রাজিলকেও জি-২০ তাদের কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করে অর্থনৈতিক শক্তি গোষ্ঠীর এই বিস্তৃতির স্বীকৃতি এবং এই উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর নতুন অর্থনৈতিক খেলোয়াড় হিসেবে বৈশ্বিক পর্যায়ে ভূমিকা রাখার সময় এখন আগত।
দেখা যাচ্ছে যে, সংকট-সংকট না থেকে বিশ্ব ব্যাংক এবং আইএমএফকে নতুন জীবনদান করেছে। যদিও এর আগে আইএমএফকে কার্যত সেকেলে মনে হয়েছিল। বেসরকারি পুঁজি বাজার বিভিন্ন দেশে সহজশর্তে অর্থায়ন করেছিল। সংগঠনটি নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অর্থাভাবে ভুগছিল এবং আধিকারিকদের ছাঁটাইয়ে প্রবৃত্ত হতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ সাল নাগাদ এর দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসে যখন জি-২০-এর নেতারা ব্রেটেন উড সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক ট্রিলিয়ন ডলার প্রদান করে। বিশেষ করে চীন ও ব্রাজিল এই বিশেষ ফান্ডের অর্থায়নে ভূমিকা রাখে। এই ফান্ডই গ্রিস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লাটবিয়া, পাকিস্তান ও ইউক্রেনকে সাহায্য করে।
চীন ও অন্যান্য উদীয়মান বাজারকে পাশ্চাত্যের শিল্পোন্নত গণতন্ত্রগুলো প্রকারান্তরে এদেরই বৃহত্তর নেতৃত্ব নিতে প্রণোদিত করে পাশ্চাত্য একবারই স্বীকৃতি দিচ্ছে যে তারা আর বৈশ্বিক অর্থনেতিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম নয়।
তথাকথিত বাকিদের উত্থান (জরংব ড়ভ ঃযব ৎবংঃ) কিন্তু অর্থনৈতিক রাজনৈতিক শক্তি সঞ্চয়ের ব্যাপারই শুধু নয়, এর সঙ্গে নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং মডেল তৈরির বৈশ্বিক প্রতিযোগিতাও কিন্তু ছড়িয়ে আছে। পাশ্চাত্য, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে কিন্তু এখন আর আর্থসামাজিক জীবন নিয়ে উদ্ভাবনী চিন্তার একমাত্র সূতিকাগাররূপে ভাবা হচ্ছে না। দৃষ্টান্তস্বরূপ, শর্তাধীন ক্যাশ ট্রান্সফার প্রকল্প কিন্তু সর্বপ্রথম লাতিন আমেরিকায় প্রবর্তিত হয়েছিল। এমনকি শিল্পনীতিতেও গত ৩০ বছরে পাশ্চাত্যের অবদান সামান্যই। সময় এসেছে যখন উদীয়মান বাজার শক্তিসম্পন্ন দেশের দিকেই এখন নতুন উন্নয়ন মডেল বা তার বাস্তবায়নের উপায় দেখতে দৃষ্টিপাত করতে হয়।
বিশেষ করে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর ভূমিকা ক্রমেই তার গুরুত্ব হারাচ্ছে। স্পষ্টতই তাদের স্থান দখল করছে উদীয়মান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক শক্তিগুলো। যেহেতু আন্তর্জাতিক অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে এদের অবদান অধিক, তাই এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে এদের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। আন্তর্জাতিক অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে গুরুত্বও অধিক দেওয়া হয় এই নবাগতদের।
এই পরিবর্তনগুলো স্পষ্ট সংকেত বহন করে বিশ্বজুড়ে উন্নয়ন এজেন্ডার একটি স্থানান্তর ঘটছে। ঐতিহ্যগতভাবে এই এজেন্ডা উন্নত বিশ্বেই তৈরি, বাস্তবায়িত হতো এবং অতঃপর তা সমগ্র বিশ্বে চাপিয়ে দেওয়া হতো। এই প্রক্রিয়ার পুরোভাগে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং জাপান। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিশ্বব্যবস্থায় এরা এখনও সক্রিয় থাকবে; তবে চীন, ব্রাজিল, ভারত বা দক্ষিণ আফ্রিকা এখনও বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় অগ্রণী ডোনার এবং প্রাপক হিসেব তাদের অবস্থান অটুট রাখবে। উদীয়মান এই দেশগুলোর ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বাস করে তবু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এরা এখন নবলব্ধ মর্যাদার অধিকারী। তাদেরই সৃষ্ট মন্দার ভেতর দিয়েই পাশ্চাত্যের শক্তিগুলো উপলব্ধি না করে পারছে না যে আরও সংকট তাদের জন্য ঘনিয়ে আসছে যা সামগ্রিক বিশ্বব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলতে বাধ্য।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ : সাবেক মহাপরিচালক, বিআইআইএসএস ও কলাম লেখক
No comments