বার্মা, মিয়ানমার কিংবা লাউ ও কদু by জামান সরদার
প্রায় আড়াই দশক পর ইউরোপ সফরে গিয়ে স্মৃতিআর্দ্র সু চিকে কড়া সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে তার দেশের মহাপরাক্রমশালী নির্বাচন কমিশন। ভালো কথা, অং সান সু চির 'দেশ' কোনটি? এ কেমন প্রশ্ন! কে না জানে! সু চি নিজেও কি দিনে তিনবেলা দেশের নাম নিচ্ছেন না! বারবার বলছেন- স্বদেশ বার্মায় তিনি আইনের শাসন চান।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন বার্মার জন্য বন্ধ অর্গল খুলে দেয়। বার্মার উন্নয়নে এগিয়ে আসে। তার মুখে কেবলই বার্মা, বার্মা, বার্মা। এই দেশটির জন্যই তো তিনি সুখের সংসার ছেড়ে নিপীড়ন ও নিঃসঙ্গতার জীবন বেছে নিয়েছেন।
এতদিন সু চি বার্মার সামরিক শাসকদের একঘরে করে রাখার আহ্বান জানিয়ে এসেছেন। সরকার উর্দি খুলে গণতন্ত্রের দিকে এক পা এগিয়ে আসার পর তিনি উন্নয়ন ও সহযোগিতার প্রশ্নে দুই পা বাড়িয়েছেন। তার নতুন ভূমিকায় সরকার দৃশ্যত খুশিই। কিন্তু বিদেশের মাটিতে গিয়ে দেশের দাফতরিক নাম মিয়ানমারের বদলে বার্মা বলছেন_ নির্বাচন কমিশন ওরফে আধা-সামরিক জান্তার আপত্তি সেখানেই।
বাংলার ইতিহাস ও সাহিত্যে বহুল কথিত 'ব্রহ্মদেশ' কিন্তু নাম বিভ্রাটে ভুগছে অনেক আগে থেকেই। শতাধিক নৃগোষ্ঠীর এই বাসস্থান যখন ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে প্রথমবারের মতো সংহত সীমান্ত লাভ করে, তখন এর নাম হয়েছিল 'ইউনিয়ন অব বার্মা'। ষাটের দশকের গোড়ায় সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখল করে আরেকবার নাম পাল্টিয়েছিল_ সোসালিস্ট রিপাবলিক অব দ্য ইউনিয়ন অব বার্মা। প্রসঙ্গক্রমে আমাদের সামরিক শাসকযুগলকে ধন্যবাদ দিতে হয়। তারা রাষ্ট্রের মূলনীতিসহ অনেক কিছুই তছনছ করেছেন, দেশের দাফতরিক নামে হাত দেননি! ওদিকে ১৯৮৯ সালে এসে দেশের আরেকবার আকিকা করেছিল। সেবার আর ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে বার্মা নয়, একেবারে নতুন নামে ডাকা। ইউনিয়ন অব মিয়ানমার।
সমস্যা হচ্ছে, সরকারি কাগজ ও কর্মে যদিও মিয়ানমার চালু হয়েছিল, সাধারণের মধ্যে বার্মাই বহাল তবিয়তে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কোনো কোনো দেশ ও সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার বলতে নারাজ। এই তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, বিবিসি প্রভৃতি। জাতিসংঘ, আসিয়ান, চীন, জার্মানি, নরওয়ের মতো সংঘ ও রাষ্ট্র অবশ্য নতুন নামই মেনে নিয়েছে। বলাবাহুল্য, আমরা শেকসপিয়রের দলে_ নামে কী
আসে যায়!
মিয়ানমারের সরকারবিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো অবশ্য এত সহজে ছাড়ার পাত্র নয়। তারা বার্মা নামটিই চালিয়ে যেতে চান সামরিক সরকারের আর দশটা সিদ্ধান্তের বিরোধিতার অংশ হিসেবে। যে সরকারকেই তারা বৈধ বলে মানেন না, তার দেওয়া নাম মানবেন কেন। দেশের নাম নিয়ে শান, কারেন, কাচিন প্রভৃতি নৃগোষ্ঠীভিত্তিক বিদ্রোহীদের হিসাব অবশ্য আলাদা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, বার্মা হোক আর মিয়ানমার হোক_ দুটিই সংখ্যাগুরু (৬৮ শতাংশ) জনগোষ্ঠীর নাম থেকে উৎসারিত। ওই জনগোষ্ঠীর নাম কথ্য ভাষায় 'বার্মা' ও লেখ্য ভাষায় 'মিয়ানমার'। তার মানে, বার্মা ও মিয়ানমার হচ্ছে আমাদের লাউ ও কদুর মতো।
সু চি নিজে সংখ্যাগুরু বার্মার জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। বর্তমান সরকারের সংবিধান ও নির্বাচনও মেনে নিয়েছেন। তারপরও কেন নতুন নাম মেনে নিচ্ছেন না, কে জানে!
এশীয় পাড়ার পাঁচজন হিসেবে আমাদের কাছে শান ও কাচিনদের এই বক্তব্যই যুক্তিযুক্ত মনে হয় যে, প্রতিবেশী দেশটির অন্য একটি নাম হওয়া উচিত, যেখানে দেশটির সব জনগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এমনকি তাড়া খাওয়া রোহিঙ্গাদেরও।
এতদিন সু চি বার্মার সামরিক শাসকদের একঘরে করে রাখার আহ্বান জানিয়ে এসেছেন। সরকার উর্দি খুলে গণতন্ত্রের দিকে এক পা এগিয়ে আসার পর তিনি উন্নয়ন ও সহযোগিতার প্রশ্নে দুই পা বাড়িয়েছেন। তার নতুন ভূমিকায় সরকার দৃশ্যত খুশিই। কিন্তু বিদেশের মাটিতে গিয়ে দেশের দাফতরিক নাম মিয়ানমারের বদলে বার্মা বলছেন_ নির্বাচন কমিশন ওরফে আধা-সামরিক জান্তার আপত্তি সেখানেই।
বাংলার ইতিহাস ও সাহিত্যে বহুল কথিত 'ব্রহ্মদেশ' কিন্তু নাম বিভ্রাটে ভুগছে অনেক আগে থেকেই। শতাধিক নৃগোষ্ঠীর এই বাসস্থান যখন ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে প্রথমবারের মতো সংহত সীমান্ত লাভ করে, তখন এর নাম হয়েছিল 'ইউনিয়ন অব বার্মা'। ষাটের দশকের গোড়ায় সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখল করে আরেকবার নাম পাল্টিয়েছিল_ সোসালিস্ট রিপাবলিক অব দ্য ইউনিয়ন অব বার্মা। প্রসঙ্গক্রমে আমাদের সামরিক শাসকযুগলকে ধন্যবাদ দিতে হয়। তারা রাষ্ট্রের মূলনীতিসহ অনেক কিছুই তছনছ করেছেন, দেশের দাফতরিক নামে হাত দেননি! ওদিকে ১৯৮৯ সালে এসে দেশের আরেকবার আকিকা করেছিল। সেবার আর ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে বার্মা নয়, একেবারে নতুন নামে ডাকা। ইউনিয়ন অব মিয়ানমার।
সমস্যা হচ্ছে, সরকারি কাগজ ও কর্মে যদিও মিয়ানমার চালু হয়েছিল, সাধারণের মধ্যে বার্মাই বহাল তবিয়তে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কোনো কোনো দেশ ও সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার বলতে নারাজ। এই তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, বিবিসি প্রভৃতি। জাতিসংঘ, আসিয়ান, চীন, জার্মানি, নরওয়ের মতো সংঘ ও রাষ্ট্র অবশ্য নতুন নামই মেনে নিয়েছে। বলাবাহুল্য, আমরা শেকসপিয়রের দলে_ নামে কী
আসে যায়!
মিয়ানমারের সরকারবিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো অবশ্য এত সহজে ছাড়ার পাত্র নয়। তারা বার্মা নামটিই চালিয়ে যেতে চান সামরিক সরকারের আর দশটা সিদ্ধান্তের বিরোধিতার অংশ হিসেবে। যে সরকারকেই তারা বৈধ বলে মানেন না, তার দেওয়া নাম মানবেন কেন। দেশের নাম নিয়ে শান, কারেন, কাচিন প্রভৃতি নৃগোষ্ঠীভিত্তিক বিদ্রোহীদের হিসাব অবশ্য আলাদা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, বার্মা হোক আর মিয়ানমার হোক_ দুটিই সংখ্যাগুরু (৬৮ শতাংশ) জনগোষ্ঠীর নাম থেকে উৎসারিত। ওই জনগোষ্ঠীর নাম কথ্য ভাষায় 'বার্মা' ও লেখ্য ভাষায় 'মিয়ানমার'। তার মানে, বার্মা ও মিয়ানমার হচ্ছে আমাদের লাউ ও কদুর মতো।
সু চি নিজে সংখ্যাগুরু বার্মার জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। বর্তমান সরকারের সংবিধান ও নির্বাচনও মেনে নিয়েছেন। তারপরও কেন নতুন নাম মেনে নিচ্ছেন না, কে জানে!
এশীয় পাড়ার পাঁচজন হিসেবে আমাদের কাছে শান ও কাচিনদের এই বক্তব্যই যুক্তিযুক্ত মনে হয় যে, প্রতিবেশী দেশটির অন্য একটি নাম হওয়া উচিত, যেখানে দেশটির সব জনগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এমনকি তাড়া খাওয়া রোহিঙ্গাদেরও।
No comments