মুক্তিযুদ্ধ-রণাঙ্গনের কলমসৈনিকদের যেন ভুলে না যাই by শেখ রোকন
এসব সংবাদপত্রের সম্পাদকদের যে কয়জন এখনও সৌভাগ্যক্রমে আমাদের মধ্যে বেঁচে আছেন, তাদের একটি সংবর্ধনার আয়োজন তো সরকার এখনই, এই বিজয় দিবসেই করতে পারে। তাতে রণাঙ্গনের ওই কলমসৈনিকরা যতখানি না, তার চেয়ে অনেক বেশি সম্মানিত হবো আমরা নিজেরাই
এটা সত্য যে বাঙালির হাজার বছরের মহত্তম অর্জন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এখন অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু অনাগত প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধকে শ্রেষ্ঠ স্মারক করে তুলতে যে এখনও অনেক কাজ বাকি, ব্যক্তিগতভাবে সেটা আমার কাছে নতুন করে স্পষ্ট হয়েছিল হেডস্যারের ফোন পাওয়ার পর। কিছুদিন আগের এক সকালে অফিসে এসে জেনেছিলাম যে হেডস্যার ফোন করেছিলেন। পরে তাকে কলব্যাগ করেছিলাম। তিনি তার আক্ষেপের কথা জানিয়েছিলেন।
আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতার জন্য ব্যক্তিগত আক্ষেপের কথা শোনার আগে খোদ হেডস্যার সম্পর্কেই একটু বলি। কুড়িগ্রামের রৌমারী-রাজীবপুর অঞ্চলের অনেকের কাছে হেডস্যার মানে একজনই_ রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক জনাব আজিজুল হক সরকার। রৌমারী-রাজীবপুরে প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক কিংবা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক; সেগুলোতে নিশ্চয়ই একেকজন প্রধান শিক্ষকও আছেন; কিন্তু ওই অঞ্চলে 'হেডস্যার' বলতে একজনকেই বোঝায়। তিনি যে সময়, স্বাধীনতার আগে, স্কুলটির দায়িত্ব নিয়েছিলেন তখন সেটা ছিল ওই অঞ্চলের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ওই এলাকার শিক্ষিত এমন অনেক পরিবার রয়েছে যেখানে পিতা-পুত্র উভয়ই তার ছাত্র। পিতামহ-পৌত্র মিলিয়ে তিন পুরুষ তার ছাত্র এমন নজিরও বিরল নয়। শিক্ষকতার পাশাপাশি রাজনীতিতেও সক্রিয় তিনি। প্রথমে ন্যাপ, পরে আওয়ামী লীগ নেতা। ওই জনপদে তার প্রভাব পাহাড় সমান। তবে তিনি সম্ভবত জীবনের শ্রেষ্ঠতম অবদান রেখেছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালে।
২৫ মার্চের কালরাত্রিতে ঢাকায় পাকবাহিনী গণহত্যা অভিযান চালালে, পরদিন ব্রহ্মপুত্র নদের কারণে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এখনকার দুই উপজেলা রৌমারী-রাজীবপুর অঞ্চলে শুরু হয় প্রতিরোধ পর্ব। বাংলাদেশের পক্ষে রৌমারী থানাসহ ইপিআর সীমান্ত ফাঁড়িগুলো দখল নিয়ে রৌমারীকে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করা হয়। স্থানীয় এমপিএ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ ও সুধীজনের সমন্বয়ে গঠিত হয় সংগ্রাম পরিষদ, আজিজুল হক ছিলেন এর আহ্বায়ক। সংগ্রাম পরিষদের প্রধান প্রধান কাজ ছিল, মূল ভূখণ্ড থেকে স্রোতের মতো আসতে থাকা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া, ছাত্র-যুবকদের বাছাই করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে পাঠানো এবং মুজিবনগর সরকারের অধীনে বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করা। অনেকে নিশ্চয়ই জানেন, রৌমারীতেই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের পূর্ণাঙ্গ বেসামরিক প্রশাসন চালু করা সম্ভব হয়েছিল।
কিন্তু পরে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী হিসেবে বুঝেছি, আরেকটি কী অসাধারণ কাজ জনাব আজিজুল হক তখন করেছিলেন। রৌমারীর মতো প্রত্যন্ত জনপদ, যেখানে ছাপা মেশিন পর্যন্ত ছিল না, সেখান থেকে স্কুলের সাইক্লোস্টাইল মেশিনের ওপর ভরসা করে একটি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, নাম_ 'অগ্রদূত'। সাংবাদিকতার কোনো ধরনের অভিজ্ঞতাই ছিল না তার। কিন্তু তখন সময়টা ছিল 'যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে ঝঁপিয়ে' পড়ার। আগস্টের প্রথম দিন 'স্বাধীন বাংলার মুক্ত অঞ্চলের সাপ্তাহিক মুখপত্র অগ্রদূত' প্রথম সম্পাদকীয়তে লিখেছিল : "... দিন দিন দেশের বিরাট অঞ্চল আমাদের মুক্তি বাহিনীর করতলগত হচ্ছে। আর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে স্বাধীন বাংলা দেশের (সরকারের) প্রশাসন চালু হচ্ছে। বিধ্বস্ত ও বিকলাঙ্গ বাংলার রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও দুর্গম। তাই এক প্রান্তের খবর অপর প্রান্তের সাধারণ মানুষের কর্ণগোচরে আসেই না বা ঠিকমত ঠিক সময় পেঁৗছে না। প্রতিনিয়ত এই অসুবিধার সম্মুখীন অত্র রৌমারী থানা ও তৎসংলগ্ন অন্যান্য থানার মুক্ত অঞ্চলের জনসাধারণ। এই অসুবিধা দূরীকরণার্থে উত্তর-পূর্ব সেক্টরের মুক্তিফৌজের অধিনায়ক ব্রিগেঃ জে, রহমান সাহেবের পৃষ্ঠপোষকতায় ঘনিয়ে এলো ১৯৭১ সালের ৩১শে আগস্ট মুক্তাঞ্চলের সাপ্তাহিক মুখপত্র 'অগ্রদূত'-এর জন্মলগ্ন। জনসাধারণ ও সুধী সমাজের সহানুভূতি ও সৎ উপদেশ হবে এর পাথেয়।"
চার পৃষ্ঠার অগ্রদূতের দাম রাখা হয়েছিল ২০ পয়সা। মানুষের হাতে হাতে গোপনে গোপনে বাংলাদেশ ও ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পেঁৗছে যেত অগ্রদূত। বিজয়ের দিন পর্যন্ত অগ্রদূত যথার্থই মুক্তাঞ্চলের মুখপত্র হয়ে উঠেছিল। স্বাধীনতার বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজে অগ্রদূতের উল্লেখ ও উদ্ধৃতি আছে। সেই সাইক্লোস্টাইল মেশিনটিও রংপুরে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রাখা আছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এতটুকুতেই কি শেষ? আক্ষেপের সঙ্গে এ কথাই বলছিলেন হেডস্যার। 'গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ' গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে হাসিনা আহমেদ মুজিবনগর বা মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত ৬৪টি পত্রপত্রিকার বিবরণ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শিক্ষক ড. শাখাওয়াত আলী খান তার একটি লেখায় এই সংখ্যা শতাধিক বলে উল্লেখ করেছেন। এগুলোর বেশিরভাগই অগ্রদূতের পরিণতি বরণ করেছে_ ব্যক্তিগত পর্যায়ে সংরক্ষণ, দলিল-দস্তাবেজে উল্লেখ, বড়জোর কোনো জাদুঘর বা সংগ্রহশালার কোনায় স্থান। অথচ এসব সংবাদপত্র হতে পারে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল। শাখাওয়াত স্যার বলেছেন, কোনো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেই সম্ভবত এত অধিকসংখ্যক মুক্তিকামী প্রকাশনার নজির নেই।
এই যে গৌরবের অধ্যায়, এটা কি আমরা কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে দেব? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাংবাদিকতা বিভাগে সত্যিকার কলমযুদ্ধের এই ইতিহাস কি যথাযোগ্য গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হয়? অন্তত আমাকে পড়ানো হয়নি। জীবনের ঝুঁকি ও উপকরণের অপ্রতুলতা নিয়ে একঝাঁক উদ্যমী তরুণের এক অন্যরকম লড়াইয়ের এই ইতিহাস কি অজানাই থেকে যাবে? উত্তাল নয় মাসে সারাদেশে কতটি সংবাদপত্র কীভাবে প্রকাশ হয়েছিল, কারা এর সঙ্গে যুক্ত ছিল, তা নথিবদ্ধ করার কাজটি বিলম্বে হলেও সম্পন্ন করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ হচ্ছে, বাড়ছে সংবাদমাধ্যমের সংখ্যা ও প্রভাব। তারা কি এ ব্যাপারে কিছু গবেষণাধর্মী কাজ করতে পারে না? এসব সংবাদপত্রের সম্পাদকদের যে কয়জন এখনও সৌভাগ্যক্রমে আমাদের মধ্যে বেঁচে আছেন, তাদের একটি সংবর্ধনার আয়োজন তো সরকার এখনই, এই বিজয় দিবসেই করতে পারে। তাতে রণাঙ্গনের ওই কলমসৈনিকরা যতখানি না, তার চেয়ে অনেক বেশি সম্মানিত হবো আমরা নিজেরাই।
শেখ রোকন : সাংবাদিক ও গবেষক
skrokon@gmail.com
আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতার জন্য ব্যক্তিগত আক্ষেপের কথা শোনার আগে খোদ হেডস্যার সম্পর্কেই একটু বলি। কুড়িগ্রামের রৌমারী-রাজীবপুর অঞ্চলের অনেকের কাছে হেডস্যার মানে একজনই_ রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক জনাব আজিজুল হক সরকার। রৌমারী-রাজীবপুরে প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক কিংবা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক; সেগুলোতে নিশ্চয়ই একেকজন প্রধান শিক্ষকও আছেন; কিন্তু ওই অঞ্চলে 'হেডস্যার' বলতে একজনকেই বোঝায়। তিনি যে সময়, স্বাধীনতার আগে, স্কুলটির দায়িত্ব নিয়েছিলেন তখন সেটা ছিল ওই অঞ্চলের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ওই এলাকার শিক্ষিত এমন অনেক পরিবার রয়েছে যেখানে পিতা-পুত্র উভয়ই তার ছাত্র। পিতামহ-পৌত্র মিলিয়ে তিন পুরুষ তার ছাত্র এমন নজিরও বিরল নয়। শিক্ষকতার পাশাপাশি রাজনীতিতেও সক্রিয় তিনি। প্রথমে ন্যাপ, পরে আওয়ামী লীগ নেতা। ওই জনপদে তার প্রভাব পাহাড় সমান। তবে তিনি সম্ভবত জীবনের শ্রেষ্ঠতম অবদান রেখেছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালে।
২৫ মার্চের কালরাত্রিতে ঢাকায় পাকবাহিনী গণহত্যা অভিযান চালালে, পরদিন ব্রহ্মপুত্র নদের কারণে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এখনকার দুই উপজেলা রৌমারী-রাজীবপুর অঞ্চলে শুরু হয় প্রতিরোধ পর্ব। বাংলাদেশের পক্ষে রৌমারী থানাসহ ইপিআর সীমান্ত ফাঁড়িগুলো দখল নিয়ে রৌমারীকে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করা হয়। স্থানীয় এমপিএ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ ও সুধীজনের সমন্বয়ে গঠিত হয় সংগ্রাম পরিষদ, আজিজুল হক ছিলেন এর আহ্বায়ক। সংগ্রাম পরিষদের প্রধান প্রধান কাজ ছিল, মূল ভূখণ্ড থেকে স্রোতের মতো আসতে থাকা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া, ছাত্র-যুবকদের বাছাই করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে পাঠানো এবং মুজিবনগর সরকারের অধীনে বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করা। অনেকে নিশ্চয়ই জানেন, রৌমারীতেই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের পূর্ণাঙ্গ বেসামরিক প্রশাসন চালু করা সম্ভব হয়েছিল।
কিন্তু পরে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী হিসেবে বুঝেছি, আরেকটি কী অসাধারণ কাজ জনাব আজিজুল হক তখন করেছিলেন। রৌমারীর মতো প্রত্যন্ত জনপদ, যেখানে ছাপা মেশিন পর্যন্ত ছিল না, সেখান থেকে স্কুলের সাইক্লোস্টাইল মেশিনের ওপর ভরসা করে একটি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, নাম_ 'অগ্রদূত'। সাংবাদিকতার কোনো ধরনের অভিজ্ঞতাই ছিল না তার। কিন্তু তখন সময়টা ছিল 'যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে ঝঁপিয়ে' পড়ার। আগস্টের প্রথম দিন 'স্বাধীন বাংলার মুক্ত অঞ্চলের সাপ্তাহিক মুখপত্র অগ্রদূত' প্রথম সম্পাদকীয়তে লিখেছিল : "... দিন দিন দেশের বিরাট অঞ্চল আমাদের মুক্তি বাহিনীর করতলগত হচ্ছে। আর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে স্বাধীন বাংলা দেশের (সরকারের) প্রশাসন চালু হচ্ছে। বিধ্বস্ত ও বিকলাঙ্গ বাংলার রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও দুর্গম। তাই এক প্রান্তের খবর অপর প্রান্তের সাধারণ মানুষের কর্ণগোচরে আসেই না বা ঠিকমত ঠিক সময় পেঁৗছে না। প্রতিনিয়ত এই অসুবিধার সম্মুখীন অত্র রৌমারী থানা ও তৎসংলগ্ন অন্যান্য থানার মুক্ত অঞ্চলের জনসাধারণ। এই অসুবিধা দূরীকরণার্থে উত্তর-পূর্ব সেক্টরের মুক্তিফৌজের অধিনায়ক ব্রিগেঃ জে, রহমান সাহেবের পৃষ্ঠপোষকতায় ঘনিয়ে এলো ১৯৭১ সালের ৩১শে আগস্ট মুক্তাঞ্চলের সাপ্তাহিক মুখপত্র 'অগ্রদূত'-এর জন্মলগ্ন। জনসাধারণ ও সুধী সমাজের সহানুভূতি ও সৎ উপদেশ হবে এর পাথেয়।"
চার পৃষ্ঠার অগ্রদূতের দাম রাখা হয়েছিল ২০ পয়সা। মানুষের হাতে হাতে গোপনে গোপনে বাংলাদেশ ও ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পেঁৗছে যেত অগ্রদূত। বিজয়ের দিন পর্যন্ত অগ্রদূত যথার্থই মুক্তাঞ্চলের মুখপত্র হয়ে উঠেছিল। স্বাধীনতার বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজে অগ্রদূতের উল্লেখ ও উদ্ধৃতি আছে। সেই সাইক্লোস্টাইল মেশিনটিও রংপুরে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রাখা আছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এতটুকুতেই কি শেষ? আক্ষেপের সঙ্গে এ কথাই বলছিলেন হেডস্যার। 'গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ' গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে হাসিনা আহমেদ মুজিবনগর বা মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত ৬৪টি পত্রপত্রিকার বিবরণ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শিক্ষক ড. শাখাওয়াত আলী খান তার একটি লেখায় এই সংখ্যা শতাধিক বলে উল্লেখ করেছেন। এগুলোর বেশিরভাগই অগ্রদূতের পরিণতি বরণ করেছে_ ব্যক্তিগত পর্যায়ে সংরক্ষণ, দলিল-দস্তাবেজে উল্লেখ, বড়জোর কোনো জাদুঘর বা সংগ্রহশালার কোনায় স্থান। অথচ এসব সংবাদপত্র হতে পারে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল। শাখাওয়াত স্যার বলেছেন, কোনো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেই সম্ভবত এত অধিকসংখ্যক মুক্তিকামী প্রকাশনার নজির নেই।
এই যে গৌরবের অধ্যায়, এটা কি আমরা কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে দেব? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাংবাদিকতা বিভাগে সত্যিকার কলমযুদ্ধের এই ইতিহাস কি যথাযোগ্য গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হয়? অন্তত আমাকে পড়ানো হয়নি। জীবনের ঝুঁকি ও উপকরণের অপ্রতুলতা নিয়ে একঝাঁক উদ্যমী তরুণের এক অন্যরকম লড়াইয়ের এই ইতিহাস কি অজানাই থেকে যাবে? উত্তাল নয় মাসে সারাদেশে কতটি সংবাদপত্র কীভাবে প্রকাশ হয়েছিল, কারা এর সঙ্গে যুক্ত ছিল, তা নথিবদ্ধ করার কাজটি বিলম্বে হলেও সম্পন্ন করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ হচ্ছে, বাড়ছে সংবাদমাধ্যমের সংখ্যা ও প্রভাব। তারা কি এ ব্যাপারে কিছু গবেষণাধর্মী কাজ করতে পারে না? এসব সংবাদপত্রের সম্পাদকদের যে কয়জন এখনও সৌভাগ্যক্রমে আমাদের মধ্যে বেঁচে আছেন, তাদের একটি সংবর্ধনার আয়োজন তো সরকার এখনই, এই বিজয় দিবসেই করতে পারে। তাতে রণাঙ্গনের ওই কলমসৈনিকরা যতখানি না, তার চেয়ে অনেক বেশি সম্মানিত হবো আমরা নিজেরাই।
শেখ রোকন : সাংবাদিক ও গবেষক
skrokon@gmail.com
No comments