বর্ষায় ঢাকায় জনদুর্ভোগ-সবার আগে এডিস মশা দূর করুন

এই বর্ষায় ঢাকা মহানগরীর জীবন যেন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। একদিকে ভাঙা রাস্তা, অন্যদিকে রাস্তা মেরামতের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি। যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, অনেক রাস্তা হেঁটে পার হওয়াই মুশকিল। এই বিড়ম্বনার মাঝে বর্ষা শুরু হতে না হতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে।


সব কিছু মিলিয়ে মহা যন্ত্রণায় পড়েছে মহানগরবাসী। অনেকেই এখন মনে করছেন, দুই ভাগে বিভক্ত ডিসিসির সমন্বয়হীনতাই এ দুর্ভোগের অন্যতম কারণ। স্থানীয় সরকার আইন-২০০৯ সংশোধন করে সরকার ২০১১ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে বিভক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সিটি করপোরেশন কেন ভেঙে দুই ভাগে ভাগ করা হলো, সেই বিষয়ে বেশ কয়েকটি যুক্তি দেখানো হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে প্রধান যুক্তি ছিল- এত বড় একটি মহানগরীর নিয়ন্ত্রণ একটি মাত্র সিটি করপোরেশন দ্বারা পরিচালনা করা সম্ভব নয়। বলা হয়েছিল, নগরবাসী কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। তাই সেবা নিশ্চিত করতেই ঢাকা সিটি করপোরেশনকে উত্তর ও দক্ষিণ- দুই ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। দেশের রাজধানী এই ঢাকা মহানগরীতে কমবেশি সোয়া কোটি মানুষ বসবাস করছে। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পানি সরবরাহ থেকে শুরু করে মশা নিধন বা সড়কবাতি সংযোজন ও রক্ষণাবেক্ষণ- সব ক্ষেত্রেই দুর্বল ব্যবস্থাপনা আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। দুটি সিটি করপোরেশনে রয়েছে লোকবলের অভাব। এসব সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে বর্ষা মৌসুমে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির পাশাপাশি এরই মধ্যে অনেক রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা, পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে এবং পানি দূষণ আরো বেড়েছে।
বর্ষাকালে দুর্ভোগের কথা সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের আগেই বোঝা উচিত ছিল। সেই মোতাবেক সিটি করপোরেশনে আগে থেকেই জনবল নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। ঢাকায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজটি এ বছর ধীরগতিতে চলবে বলে ধরে নেওয়া যায়। রাস্তা নির্মাণের জন্য পাথর-সিমেন্টের মিশ্রণের একমাত্র অ্যাসফল্ট প্লান্টটি পড়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভাগে। ফলে উত্তর অংশ রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্য এই অ্যাসফল্ট প্লান্টটির সুবিধা পাচ্ছে না। এতে রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কারে ব্যাঘাত ঘটছে। এখন যেভাবেই হোক মহানগরীর মানুষের নূ্যনতম সেবা নিশ্চিত করতে হবে। বর্ষার শুরু বলা যায়। আরো অনেক দিন থাকবে বৃষ্টি-বাদল। যদি এখনই ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে সামনের দিনগুলোতে ভোগান্তির কোনো শেষ থাকবে না। স্থানীয় সরকারকে যেভাবেই হোক এই মহানগরীর এডিস মশা দূর করতে হবে। সে জন্য মশার প্রজননস্থল নির্মূলে নাগরিক সচেতনতাও বাড়াতে হবে। তা না হলে ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে ডেঙ্গু বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.