কে শোনে কার কথা by আরিফ হোসেন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের মৃত্যু হয়েছে কিছুদিন আগে। এখন কাজ চালাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত একজন, যিনি উপ-উপাচার্য পদে আসীন রয়েছেন। গতকাল সোমবার এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত কিছু পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। কারণ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী ও শিক্ষক শহরে বসবাস করেন তাদের একটি অংশ ক্যাম্পাসে


পেঁৗছাতে পারেনি। কেন এ বিঘ্ন? ছাত্ররা শহর থেকে আসে মূলত ট্রেনে, যার পোশাকি নাম শাটল ট্রেন। আর শিক্ষকদের অনেকেই আসেন নির্ধারিত বাসে চেপে। গতকাল দুই ধরনের যানেই হামলা হয়েছে। কারা হামলা করেছে? সাংবাদিকদের খবর : ছাত্রলীগের নাম নিয়ে সক্রিয় কয়েকটি ছাত্র-অছাত্র গ্রুপের একটি। এ গ্রুপটির নাম বেশ মজার_ ভি-এক্স। এর অর্থ কী, কে জানে। তবে তাদের কাজের অর্থ বা ফল স্পষ্ট : শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আয়ু আরও কিছুকাল বাড়িয়ে দেওয়া। এদের কাজের ধারা এমন যে তাতে মানুষের আয়ু কমে যেতে পারে। শিক্ষার আয়ুষ্কাল বাড়া মানেও কিন্তু আয়ু কমাতে সহায়তা করা। যারা পরীক্ষা দিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে দিন গুনছেন তারা নিশ্চিতভাবেই হতাশ হবেন। তাদের অভিভাবকদের ব্যয়ের বোঝা বাড়বে। কে তার ক্ষতিপূরণ দেবে?
কেন ছাত্র নামধারীদের এ অপকর্ম? ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য যে কেন্দ্রীয় কমিটি রয়েছে তারা এর জবাবদিহি করবে বলে মনে হয় না। কারণ বললেও তা শুনতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই। দেশের নানা স্থানে এমন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে মেধাবী শিক্ষার্থী ব্যতিরেকে ভর্তির সুযোগ নেই কারও। এক একটি আসনের জন্য প্রতিযোগিতা চলে তীব্র। সেখানে যারা ভর্তি হয় তাদের একটি অংশ ছাত্রলীগ করে। তাদেরকেও দেখা যায় নিজেদের মধ্যে হানাহানি করে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে শিক্ষা জীবনের। এ নিয়ে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কিংবা আওয়ামী লীগ মাথা ঘামায় বলে অন্তত ছাত্রছাত্রীরা মনে করে না। বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল যারা করে তাদের মধ্যেও এমন বিভেদ দেখা যায়। তাদের কারণেও ক্যাম্পাসে অশান্তি সৃষ্টি হয়। তবে এখন তেমনটি তারা করতে পারছে না। নিজেদের মধ্যে হানাহানি মাঝে মধ্যে ঘটে, তবে তা ক্যাম্পাসে তেমন প্রভাব ফেলে না। ছাত্রলীগ তাদের প্রায় সব ক্যাম্পাস থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। যেমনটি ছাত্রলীগকে তারা বিতাড়ন করেছিল খালেদা জিয়ার শাসনামলে। এখন অপেক্ষা করছে, যদি সুদিন আসে।
ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাণ্ডব চালিয়েছিল এপ্রিলের শেষ দিকে। দুই পক্ষ পরস্পরকে ঘায়েল করতে ব্যস্ত ছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত ছুটি ঘোষণা করতে হয়। কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার জন্য ১১ জন 'ছাত্রলীগ নেতার' বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। গতকালের আন্দোলনের অন্যতম দাবি এই শাস্তির আদেশ প্রত্যাহার। তবে ওয়াকিবহাল মহল বলছে, তাদের আরেকটি লক্ষ্য রয়েছে : উপাচার্য পদে এমন কাউকে বসানো যিনি তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবেন। এ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তারা জিম্মি করছে শিক্ষার্থীদের। তারা নামে ছাত্র সংগঠন করছে, কিন্তু তাদের কাজে ক্ষতি হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। এ নিয়ে তাদের দুশ্চিতার কোনো কারণ নেই। কারণ মূল লক্ষ্য হচ্ছে অন্যায় সুবিধা আদায়। এদের পেছনে শিক্ষকদের কোনো গ্রুপের মদদ নেই তো? চট্টগ্রামের রাজনৈতিক কোনো মহল নেপথ্যে কলকাঠি নাড়াচ্ছে না তো? কিন্তু দুর্ভাগ্য, এসব বিষয় কেউ দেখার নেই। ছাত্রছাত্রীরা প্রায় দুই সপ্তাহ 'অনাকাঙ্ক্ষিত' ছুটি কাটিয়ে ক্যাম্পাসে এসেছে। এখন তাদের কারও কারও পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেল। এ পরীক্ষা নিতে নিতে দেখা যাবে নতুন কোনো বিবাদ শুরু হয়েছে। তার পেছনেও সক্রিয় থাকবে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের এক কিংবা একাধিক গ্রুপ। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ভাবছে, দিন আমাদেরও আসবে। তখন দেখিয়ে দেব আমাদের ক্ষমতা। এদের হাত থেকে কি শিক্ষার্থীদের মুক্তি নেই?
 

No comments

Powered by Blogger.