সরকারি স্বাস্থ্যসেবা-বরাদ্দ বাড়ূক, হোক দরিদ্রবান্ধব
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বাস্থ্য খাতে বেসরকারি উদ্যোগের যথেষ্ট অগ্রগতি হলেও সরকারি স্বাস্থ্যসেবাকে এখনও চিকিৎসা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হিসেবে অভিহিত করা হয়। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কাম্য; কিন্তু এগুলো সরকারি ব্যবস্থার বিকল্প হতে পারে না, হওয়া উচিতও নয়।
প্রথমত, জনগণের চিকিৎসা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। হাজার বাধা সত্ত্বেও তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসা সেবা পেঁৗছে দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। দ্বিতীয়ত, শ্রেণী নির্বিশেষে সবার জন্য বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা সুলভ নয়। অপেক্ষাকৃত কম আয়ের মানুষরা চাইলেও বেসরকারি হাসপাতালগুলো থেকে পর্যাপ্ত সেবা পেতে পারেন না। সঙ্গত কারণেই সরকারি হাসপাতালগুলো রোগীদের ভিড়ে আকীর্ণ থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো, চিকিৎসা সরঞ্জাম, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের উপস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনাতেও সরকারি হাসপাতাল বিশেষত মেডিকেল কলেজগুলোর গ্রহণযোগ্যতা এখনও অনেক বেশি। কিন্তু সেবাদানের ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে রয়েছে। হাসপাতালগুলো নিয়ে রোগীদের অভিযোগ এন্তার। অনেক সময়ই রোগীরা পর্যাপ্ত মনোযোগ পান না, অধিকাংশ হাসপাতালেই ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রয়োজনের চাইতে অপ্রতুল। বিশেষত গ্রামে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র অপ্রতুল। কোথাও স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও তা ডাক্তার ও নার্সের অভাবে অকার্যকর। কোনো কোনো হাসপাতালে কাগজে-কলমে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ থাকলেও বাস্তবে তাদের দেখা মেলা ভার। অভিযোগ আছে, অনেক ডাক্তার সরকারি হাসপাতালে রোগী দেখার চাইতে প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালের প্রতিই বেশি আগ্রহী। রোগীর সংখ্যা অনুসারে পর্যাপ্ত আসনের সংস্থান নেই বলে অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার্থীদের পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে। সমস্যার তালিকা অন্তহীন। স্বাস্থ্যসেবার সামগ্রিক সমস্যাবলি নিয়ে বৈঠক বসেছিল দৈনিক সমকালে। আয়োজন করেছিল যৌথভাবে সমকাল ও অক্সফাম। স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তর্ক-বিতর্ক ও খোলামেলা আলোচনায় এ খাতের বিভিন্ন সমস্যা অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে। শুধু সমস্যা চিহ্নিতকরণই নয়, সমাধানের নির্দেশনাও এসেছে। বিশেষত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বরাদ্দ নিয়ে স্পষ্ট অভিমত পাওয়া গেছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা সেবার যে বৃহৎ অবকাঠামো গড়ে উঠেছে তাকে কার্যকর রাখতে এবং সেবার মান উন্নত করতে হলে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। কিন্তু বাস্তবে আনুপাতিক বরাদ্দ কমানো হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবাকে দরিদ্রবান্ধব করতে হলে বাজেটে ব্যয় বাড়ানোর বিকল্প নেই। তবে শুধু ব্যয় বৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়। দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে হলে বিদ্যমান ব্যবস্থায় কিছু সংস্কার দরকার। সেবার মনোভাবও উৎসাহিত করা প্রয়োজন। কম মূল্যে মানসম্মত ওষুধ থাকার পরও চিকিৎসকরা যাতে বেশি দামের বাইরের ওষুধের প্রতি পক্ষপাত প্রদর্শন না করেন, বিনাপ্রয়োজনে রোগীদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে না পাঠান সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেবা ব্যবস্থাকে সহজ করার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য খাতের সমস্যাবলি নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও সক্রিয় ব্যক্তিরা যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তা আমলে নেওয়া উচিত। সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সম্ভাবনা এখনও অনেক বেশি। ফলে যত দ্রুত এদিকে সরকারের মনোযোগ নিবদ্ধ হবে ততই মঙ্গল।
No comments