সখীপুরের বনাঞ্চল-অবৈধ করাতকল তুলে দিন
সখীপুরের সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘেঁষে ৪৬টি অবৈধ করাতকল গড়ে ওঠার কারণ অনুসন্ধানের জন্য গভীর গবেষণার প্রয়োজন নেই। বনাঞ্চলের কাছাকাছি করাতকল থাকলে অবৈধভাবে গাছ চিরে সহজেই কাঠ বানিয়ে পাচার করা যায়। যেহেতু ব্যবসাটি বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তাই এর সঙ্গে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও দুর্নীতিগ্রস্ত একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমর্থন থাকাটা স্বাভাবিক।
মঙ্গলবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত 'সখীপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘেঁষে ৪৬ করাতকল' শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণীর নেতাকর্মী কীভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে বনভূমির গাছ উজাড় করছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এসব অভিযোগ প্রথামাফিক অস্বীকার করেছেন। শুধু তা-ই নয়, বন বিভাগের যেসব কর্মকর্তা আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘেঁষে এসব করাতকল প্রতিষ্ঠার সময় চোখ বুজে থেকেছেন, তারাও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ খণ্ডনের প্রয়াস পেয়েছেন। প্রশ্ন হলো_ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এবং বন বিভাগের কর্মকর্তারা যদি এসবের কিছুই না জেনে থাকেন, তাহলে এতগুলো করাতকল বনাঞ্চল এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারল কী করে? সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষা করার জন্য বন বিভাগের কর্মকর্তারা যেমন রয়েছেন, তেমনি স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বও কম নয়। সবার নাকের ডগা দিয়ে এভাবে বেআইনিভাবে করাতকল প্রতিষ্ঠা হতে পেরেছে এর সঙ্গে যুক্তদের সঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষমতার যোগসূত্র রয়েছে বলেই। তাই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব এর দায় এড়াতে পারেন না। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীরা যেহেতু এই পরিবেশ ধ্বংসকারী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাই উচ্চ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষেও সাহস নিয়ে এসব অবৈধ করাতকল উঠিয়ে দেওয়া বা এর মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাওয়া কঠিন হতে পারে। তদুপরি স্থানীয় প্রশাসনের কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এই অবৈধ কাজের বখরা পেয়ে থাকে বলে এরাও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিতে এগিয়ে না আসাটাই স্বাভাবিক। আমরা মনে করি, সখীপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘেঁষে বেআইনিভাবে প্রতিষ্ঠিত ৪৬টি করাতকল অবিলম্বে উঠিয়ে দিতে হবে। এজন্য সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ জারি ও পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। যেহেতু বিষয়টি দেশের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এটা বিবেচনা করা উচিত। অবৈধ করাতকল মালিকদের রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব নির্বিশেষে শাস্তি প্রাপ্য।
No comments