শিক্ষা-ইউজিসির কাছে প্রত্যাশা by মাসুদ পারভেজ রানা
নতুন ইউজিসি চেয়ারম্যান দায়িত্ব নিয়েছেন। আমি নিশ্চিত, তিনি তার ব্যক্তিগত নৈপুণ্য প্রদর্শন করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান দুর্দশা দূরীকরণে ব্যবস্থা নেবেন। আশা করি, আগামীতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া ও প্রমোশন প্রদানে অধিকতর যোগ্যতা প্রাধান্য দেওয়া হবে।
আমরা দেখতে চাই, নতুন চেয়ারম্যান আমাদের জন্য নতুন এবং ভালো কিছু করছেন
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লেখাপড়ার মান ও মান উন্নয়নে করণীয় বিষয়াদি নিয়ে খবরাবর প্রায়ই নজরে আসে। কিছুদিন আগে ইউজিসির নতুন চেয়ারম্যান যোগদান করেছেন। পুরনো ও নতুন দু'জনই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কী কী করেছেন এবং করবেন তা নিয়ে বিস্তর মতামত দিয়েছেন। শুধু এখনই নয়, বিগত সময়ের ইউজিসির কর্মকাণ্ড যা মূলত পত্রিকায় আসে, তা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ওনারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলেন এবং আগামীতেও থাকবেন বলে মনে হয়। তাহলে ওনারা কি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ভুলে গেছেন, ইউজিসি শুধু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান-মর্যাদার মানদণ্ড প্রদানকারী পাবলিক প্রতিষ্ঠান?
মোটামুটিভাবে সব সরকারের আমলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমানহারে খুনোখুনি, আছাড় দেওয়া, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, চাঁদাবাজি এবং টেন্ডারবাজি ইত্যাদি হয়েছে। এর সঙ্গে আছে দলীয়করণের হিড়িক। মনোনীত ভিসিরা তাদের সমর্থিত দলকে নির্বাচনে বিজয়ী করার জন্য কোনো কোনো বিভাগে ১০-১২ জন করেও শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ ও প্রাণরসায়ন বিভাগ উল্লেখযোগ্য। এরপরও সেগুলো যদি মেধানুক্রম অনুযায়ী হতো তাহলে হয়তো কষ্ট কিছুটা হলেও কমত। আবার শিক্ষকদের প্রমোশন দিতে দলীয় সমর্থকদের গুরুত্ব দেওয়ার মতো ঘটনাও অগণিত।
এই যে সমস্যাগুলোর কথা বললাম, ইউজিসি কি এগুলো উপলব্ধি করে না? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে হাল দিনে দিনে হয়েছে তা কি ভেবে দেখে না? অথচ ইউজিসি অযথা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মানদণ্ড নিয়ে মেতে রয়েছে। একটি বিষয় আমাদের ভালোভাবে বোঝা দরকার। সেটি হলো 'ঢ়ৎরাধঃব' বা 'ঢ়ৎরাধঃরুধঃরড়হ'-এর ধারণা। তাত্তি্বকভাবে বলতে গেলে ধারণাটির সঙ্গে সধৎশবঃ, পধঢ়রঃধষ ধপপঁসঁষধঃরড়হ এবং পড়সঢ়বঃরঃরড়হ জড়িত। একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যখন মার্কেটে প্রবেশ করবে তার জন্য মাসে দশবার মানদণ্ডের জিকির করতে হবে না। প্রতিযোগিতার এ মার্কেটে টিকে থাকার জন্য, লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য তারা গুণগত মান বজায় রাখতে বাধ্য। আপনারা যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি দেখেন তাহলেই বুঝতে পারবেন। কিছু আত্মীয়করণ ছাড়া বেশিরভাগ শিক্ষক বিদেশ থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত অথবা স্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে ভালো এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষক পাঠদান করে থাকেন। প্রয়োজনীয় বললাম এ কারণেই যে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের প্রয়োজন মোতাবেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক ধার করে আনে। উল্লেখ্য, পাঠদানে তাদের নৈপুণ্য একটি বড় বিষয়। এছাড়া ওই শিক্ষকরাও জানেন, নৈপুণ্য না থাকলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি থাকবে না, অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের উপায়ও শেষ হয়ে যাবে। এ জন্য নিজেদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্যতা দেখানোর প্রয়োজন না হলেও তারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শতভাগ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন এবং বহাল তবিয়তেই আছেন। অর্থাৎ নিশ্চিত করেই বলা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকংশ শিক্ষক অধিক মাত্রায় যোগ্যতম না হলেও অধিক মাত্রায় নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন এবং এটি হয়ে থাকে ওই 'ঢ়ৎরাধঃরুধঃরড়হ' ধারণার জন্যই।
আরেকটি বিষয় হলো, অধিকাংশই শিক্ষিত পরিবারের সন্তান প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন এবং স্বাভাবিকভাবেই তারা প্রয়োজনীয় খরচ জোগানোর ক্ষমতা যেমন রাখেন তেমনি উচ্চ শিক্ষার মান ও তার ব্যবহার উপযোগিতা সম্পর্কে ধারণা রাখেন। অর্থাৎ নিশ্চিতভাবেই ছাত্রছাত্রীদের অধ্যয়নকালে গুণগত শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে কি-না তা প্রায় সব পবিবারই যাচাই করে থাকে এবং যেখানে পড়ালে সন্তানরা ভালোভাবে শিক্ষা লাভ ও চাকরি পাবে সেখানেই ভর্তির ব্যবস্থা করে। এ জন্য শুধু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মানদণ্ড নিয়ে এত মাতামাতির প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আপনা আপনি মানসম্মত শিক্ষা ও শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখবে। নতুবা মার্কেটে টিকে থাকতে পারবে না। আমি বলছি না, তাদের তদারকি একেবারে অনর্থক। আমি এটা বলতে চাইছি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একেবারেই গণনায় না নিয়ে এসে শুধু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে লোক দেখানো মাতামাতি মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়।
সম্প্রতি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টিম 'নাসা'র রোবোটিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে জেনে বেশ পুলকিত অনুভব করছি। নিশ্চিত করেই এটি ভালো একটি অর্জন। ইতিমধ্যে ব্র্যাক ছাড়াও অন্য কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সমর্থ হয়েছে। সেগুলোর তুলনায় দেশের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো (যেমন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) আন্তর্জাতিক মানসম্মত সিলেবাস প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী পাঠদান থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। শুধু তাই নয়, বরং দিন দিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান আরও নিচে নেমে যাচ্ছে। এরূপ অবস্থায় ইউজিসির কি কোনো ভূমিকা নেই? ইউজিসি যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এত মনোযোগ দিতে পারে তাহলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাম্প্রতিক বেহাল অবস্থা নিয়ে কিছুই বলে না কেন? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা কি ইউজিসিকে আমলে নেন না? এই কি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন! সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর নজরুল ইসলাম দায়িত্ব অর্পণকালীন (নতুন চেয়ারম্যানকে) অনুষ্ঠানে ভিসিদের বিলাসবহুল বাড়ি ও প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে যে মতামত দিয়েছেন তা থেকেই বোঝা যায়, তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়ন ও শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারেননি কেন।
নতুন ইউজিসি চেয়ারম্যান দায়িত্ব নিয়েছেন। আমি নিশ্চিত, তিনি তার ব্যক্তিগত নৈপুণ্য প্রদর্শন করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান দুর্দশা দূরীকরণে যথাবিহিত ব্যবস্থা নেবেন। বিশেষ করে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলো স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করা যায় কি-না তা ভেবে দেখবেন। আশা করি, আগামীতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া ও প্রমোশন প্রদানে অধিকতর যোগ্যতা প্রাধান্য দেওয়া হবে। আমরা দেখতে চাই, নতুন চেয়ারম্যান আমাদের জন্য নতুন এবং ভালো কিছু করছেন।
মোঃ মাসুদ পারভেজ রানা, শিক্ষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বর্তমানে পিএইচডি গবেষণারত, সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
mmprana@yahoo.com
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লেখাপড়ার মান ও মান উন্নয়নে করণীয় বিষয়াদি নিয়ে খবরাবর প্রায়ই নজরে আসে। কিছুদিন আগে ইউজিসির নতুন চেয়ারম্যান যোগদান করেছেন। পুরনো ও নতুন দু'জনই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কী কী করেছেন এবং করবেন তা নিয়ে বিস্তর মতামত দিয়েছেন। শুধু এখনই নয়, বিগত সময়ের ইউজিসির কর্মকাণ্ড যা মূলত পত্রিকায় আসে, তা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ওনারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলেন এবং আগামীতেও থাকবেন বলে মনে হয়। তাহলে ওনারা কি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ভুলে গেছেন, ইউজিসি শুধু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান-মর্যাদার মানদণ্ড প্রদানকারী পাবলিক প্রতিষ্ঠান?
মোটামুটিভাবে সব সরকারের আমলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমানহারে খুনোখুনি, আছাড় দেওয়া, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, চাঁদাবাজি এবং টেন্ডারবাজি ইত্যাদি হয়েছে। এর সঙ্গে আছে দলীয়করণের হিড়িক। মনোনীত ভিসিরা তাদের সমর্থিত দলকে নির্বাচনে বিজয়ী করার জন্য কোনো কোনো বিভাগে ১০-১২ জন করেও শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ ও প্রাণরসায়ন বিভাগ উল্লেখযোগ্য। এরপরও সেগুলো যদি মেধানুক্রম অনুযায়ী হতো তাহলে হয়তো কষ্ট কিছুটা হলেও কমত। আবার শিক্ষকদের প্রমোশন দিতে দলীয় সমর্থকদের গুরুত্ব দেওয়ার মতো ঘটনাও অগণিত।
এই যে সমস্যাগুলোর কথা বললাম, ইউজিসি কি এগুলো উপলব্ধি করে না? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে হাল দিনে দিনে হয়েছে তা কি ভেবে দেখে না? অথচ ইউজিসি অযথা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মানদণ্ড নিয়ে মেতে রয়েছে। একটি বিষয় আমাদের ভালোভাবে বোঝা দরকার। সেটি হলো 'ঢ়ৎরাধঃব' বা 'ঢ়ৎরাধঃরুধঃরড়হ'-এর ধারণা। তাত্তি্বকভাবে বলতে গেলে ধারণাটির সঙ্গে সধৎশবঃ, পধঢ়রঃধষ ধপপঁসঁষধঃরড়হ এবং পড়সঢ়বঃরঃরড়হ জড়িত। একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যখন মার্কেটে প্রবেশ করবে তার জন্য মাসে দশবার মানদণ্ডের জিকির করতে হবে না। প্রতিযোগিতার এ মার্কেটে টিকে থাকার জন্য, লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য তারা গুণগত মান বজায় রাখতে বাধ্য। আপনারা যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি দেখেন তাহলেই বুঝতে পারবেন। কিছু আত্মীয়করণ ছাড়া বেশিরভাগ শিক্ষক বিদেশ থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত অথবা স্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে ভালো এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষক পাঠদান করে থাকেন। প্রয়োজনীয় বললাম এ কারণেই যে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের প্রয়োজন মোতাবেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক ধার করে আনে। উল্লেখ্য, পাঠদানে তাদের নৈপুণ্য একটি বড় বিষয়। এছাড়া ওই শিক্ষকরাও জানেন, নৈপুণ্য না থাকলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি থাকবে না, অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের উপায়ও শেষ হয়ে যাবে। এ জন্য নিজেদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্যতা দেখানোর প্রয়োজন না হলেও তারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শতভাগ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন এবং বহাল তবিয়তেই আছেন। অর্থাৎ নিশ্চিত করেই বলা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকংশ শিক্ষক অধিক মাত্রায় যোগ্যতম না হলেও অধিক মাত্রায় নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন এবং এটি হয়ে থাকে ওই 'ঢ়ৎরাধঃরুধঃরড়হ' ধারণার জন্যই।
আরেকটি বিষয় হলো, অধিকাংশই শিক্ষিত পরিবারের সন্তান প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন এবং স্বাভাবিকভাবেই তারা প্রয়োজনীয় খরচ জোগানোর ক্ষমতা যেমন রাখেন তেমনি উচ্চ শিক্ষার মান ও তার ব্যবহার উপযোগিতা সম্পর্কে ধারণা রাখেন। অর্থাৎ নিশ্চিতভাবেই ছাত্রছাত্রীদের অধ্যয়নকালে গুণগত শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে কি-না তা প্রায় সব পবিবারই যাচাই করে থাকে এবং যেখানে পড়ালে সন্তানরা ভালোভাবে শিক্ষা লাভ ও চাকরি পাবে সেখানেই ভর্তির ব্যবস্থা করে। এ জন্য শুধু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মানদণ্ড নিয়ে এত মাতামাতির প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আপনা আপনি মানসম্মত শিক্ষা ও শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখবে। নতুবা মার্কেটে টিকে থাকতে পারবে না। আমি বলছি না, তাদের তদারকি একেবারে অনর্থক। আমি এটা বলতে চাইছি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একেবারেই গণনায় না নিয়ে এসে শুধু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে লোক দেখানো মাতামাতি মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়।
সম্প্রতি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টিম 'নাসা'র রোবোটিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে জেনে বেশ পুলকিত অনুভব করছি। নিশ্চিত করেই এটি ভালো একটি অর্জন। ইতিমধ্যে ব্র্যাক ছাড়াও অন্য কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সমর্থ হয়েছে। সেগুলোর তুলনায় দেশের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো (যেমন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) আন্তর্জাতিক মানসম্মত সিলেবাস প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী পাঠদান থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। শুধু তাই নয়, বরং দিন দিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান আরও নিচে নেমে যাচ্ছে। এরূপ অবস্থায় ইউজিসির কি কোনো ভূমিকা নেই? ইউজিসি যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এত মনোযোগ দিতে পারে তাহলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাম্প্রতিক বেহাল অবস্থা নিয়ে কিছুই বলে না কেন? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা কি ইউজিসিকে আমলে নেন না? এই কি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন! সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর নজরুল ইসলাম দায়িত্ব অর্পণকালীন (নতুন চেয়ারম্যানকে) অনুষ্ঠানে ভিসিদের বিলাসবহুল বাড়ি ও প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে যে মতামত দিয়েছেন তা থেকেই বোঝা যায়, তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়ন ও শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারেননি কেন।
নতুন ইউজিসি চেয়ারম্যান দায়িত্ব নিয়েছেন। আমি নিশ্চিত, তিনি তার ব্যক্তিগত নৈপুণ্য প্রদর্শন করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান দুর্দশা দূরীকরণে যথাবিহিত ব্যবস্থা নেবেন। বিশেষ করে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলো স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করা যায় কি-না তা ভেবে দেখবেন। আশা করি, আগামীতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া ও প্রমোশন প্রদানে অধিকতর যোগ্যতা প্রাধান্য দেওয়া হবে। আমরা দেখতে চাই, নতুন চেয়ারম্যান আমাদের জন্য নতুন এবং ভালো কিছু করছেন।
মোঃ মাসুদ পারভেজ রানা, শিক্ষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বর্তমানে পিএইচডি গবেষণারত, সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
mmprana@yahoo.com
No comments