কী সুন্দর ফিরে আসা by জালাল আহমেদ চৌধুরী
একটা বিব্রতকর উৎকণ্ঠা নিয়ে সময় কাটাচ্ছিলাম, গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারের ২০১১ সাল পর্বে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ নির্বাচনে এবার পাঠক জরিপের একটা আলাদা বিভাগ চালু হয়েছে। মূল নির্বাচনের অতিরিক্ত বিষয় এটি। পুরস্কারটির বিচারকমণ্ডলীর বা জুরি বোর্ডের জন্য বিষয়টি একটা পরীক্ষাও বটে।
জুরি বোর্ডের অংশ হিসেবে তাই একটা উৎকণ্ঠার চাপ অনুভব করছিলাম ১১ জুন বিকেলে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে পাঠক জরিপের ফলাফল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত। এ ক্ষেত্রে প্রথম আলোর জরিপ পরিচালনা কর্তৃপক্ষ গোপনীয়তার ব্যাপারে এতই সাবধানী ছিলেন যে জরিপের বিষয়ে জুরি বোর্ডকেও সামান্য আঁচ দেননি। জুরিদের বিচারে ২০১১-এর একজন বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ তো নির্বাচিত হয়েছিলেনই। এদিকে ক্রীড়ামোদী পাঠকদের প্রাসঙ্গিক সিদ্ধান্ত যদি না মেলে তাহলে সেটা জুরিদের জন্য কিছুটা প্রশ্নের অবকাশ রেখে যায়। উৎকণ্ঠাটা সে কারণেই। পাঠক জরিপের ফলাফলটা যথাসময়ে ঘোষিত হলে একটি স্বস্তিদায়ক আবহে মনটা ভরে গেল। চরম কাঙ্ক্ষিত ধ্বনিটাই কর্ণকুহরে প্রবেশ করল। সেই সাকিব আল হাসানই। মানুষী দুর্বলতার বৃত্ত কাটিয়ে যুক্তির বলয়ে প্রবেশ করতেই দেখি, বৃথা ছিল সেই উৎকণ্ঠা। ২০১১ সালে সাকিব আল হাসান তো ছিলেন এমন তর্কাতীত অর্জনের চাকচিক্যের চূড়ায়ই।
দিন দশেক আগে রূপসী বাংলা হোটেলের উইন্টার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানের কথা লিখতে বসে করোটির ভেতর অনুভব করি, অ্যাকুয়ারিয়ামে রাখা রঙিন মাছের মতো নানা বর্ণিল সদ্য স্মৃতির ঘাই। ২০০৪-এর বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদদের নিয়ে ২০০৫-এ যাত্রা শুরু এ অনুষ্ঠানের। তার পর থেকে গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কার মানগত উৎকর্ষতায় দেশের অন্যতম বার্ষিক ক্রীড়া উৎসবে পরিণত হয়েছিল খুব দ্রুতই। গত দুই বছরের বিরতিটা তাই সংশ্লিষ্ট সবার জন্যই একটু মনোবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। উদ্যোক্তাদের জন্য সেটা ছিল একটু বেশিই পীড়াদায়ক। সামর্থ্য, সদিচ্ছা বা আন্তরিকতার অভাব ছিল না। ছিল ক্রীড়াকেন্দ্রিক ব্যস্ততা প্রসূত সময়ের অভাব। অবস্থাটা তাঁরা সামলেছেন দারুণভাবে। ১১ জুন দুই বছরের বিরতির ছেদ টেনে তিন বছরের পুরস্কার একসঙ্গে দিতে গিয়ে যে প্রাণবন্ত ক্রীড়াসন্ধ্যা কর্তৃপক্ষ আয়োজন করল, তা বিরতির অস্বস্তি কাটিয়ে পুরস্কারটিকে ঘিরে আকর্ষণীয় উৎসবটিকে বলিষ্ঠ ধারাবাহিকতায় ফিরিয়ে এনেছে বলে আমার বিশ্বাস। নতুন আঙ্গিকে, সাংস্কৃতিক মাত্রার নতুন সংযোগে প্রতিশ্রুতি রেখেছে ভবিষ্যতে আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠার।
বহমান রচনার চরিত্রের সঙ্গে নিজের উল্লেখ মোটেই শোভন নয়। তবু মার্জনা প্রত্যাশা করে বলছি, গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারের সঙ্গে এর জন্মলগ্ন থেকে জুরি হিসেবে সংযুক্ত থাকায় আমি নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে করি। যাদের সঙ্গে বসে এ যাবৎকাল এ পুরস্কার অর্জনকারীদের নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে এসেছি, তাদের তুলনায় ক্রীড়াঙ্গনে আমার অবস্থান এতই বিবর্ণ যে প্রতিবারই এই কর্মোপলক্ষে তাদের সঙ্গে বসাটাকেই আমার কাছে বিশেষ অর্জন বলে মনে হয়েছে। জুরি বোর্ডে প্রথমাবধি আমি আর ফুটবল দিকপাল শ্রদ্ধেয় গোলাম সারোয়ার টিপু ভাই আছেন। গতবার টিপু ভাই জুরি বোর্ডের প্রধান ছিলেন। টিপু ভাই, আপনারা জানেন, মাঠ কাঁপানো উইঙ্গার ছিলেন। এবার তিনি উইঙ্গারের স্বভাবে আমাকে মাঝখানে ঠেলে দিয়ে টাচ লাইনে সরে গেছেন। অনেকটা জোর করেই। বাধ্য হয়ে আমাকে পৌরহিত্য করতে হয়েছে। তবে টিপু ভাই ক্রমাগত জুতসই বল জোগান দিয়ে গেছেন গোলমুখে। ফলে তিন বছরের পুরস্কার দিতে অসুবিধা হয়নি মোটেই। আর হবেই বা কেমন করে? তাঁদের তীক্ষ্ম মেধা, প্রজ্ঞা ও ক্ষুরধার বিশ্লেষণ ক্ষমতা নিয়ে সঙ্গে ছিলেন যে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ, গ্র্যান্ড মাস্টার নিয়াজ মোরশেদ ও টেবিল টেনিস সম্রাজ্ঞী জুবেরা রহমান লিনু। সঙ্গে ছিল প্রথম আলো ক্রীড়া বিভাগের নিটোল ও নির্ভুল সহযোগ। আপাত জটিল কাজটা আমরা খুব সহজেই করতে পেরেছি। নির্বাচনী গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের অর্জিত ঐতিহ্য আমরা রক্ষা করতে পেরেছি। আমাদের টিমওয়ার্ক ছিল দারুণ। আমাদের নির্বাচনের প্রতি ক্রীড়াঙ্গনের উচ্চারিত অনুমোদন এ কথা বলতে সাহস জোগাচ্ছে।
সে দিনের অনুষ্ঠানে ফিরে আসি। বরাবরের মতো বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিয়ে টইটম্বুর ছিল সভাস্থল। আমাদের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ মিলিয়ে সবাই ছিলাম। যাদের আর আসার সম্ভাবনা নেই, তাদেরও খুঁজেছে আমাদের চোখ। অনুভব করেছে আমাদের মন। এই কদিন আগে মারীদা চলে গেছেন। নেই কাজী আবদুল আলীম, সাঁতারু অরুণ নন্দী, সালমা রফিক, শামীম আরা টলি। এ অনুষ্ঠান তাঁদের নিয়মিত যোগদান মনে করিয়ে দেয়। এ অনুষ্ঠান আমাদের সুযোগ দেয় শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের, সুযোগ দেয় প্রীতি বিনিময়ের, স্নেহ বর্ষণের। ক্ষণিক বিরাম শেষে ফিরে আসা এ পুরস্কার, পুরস্কারকে ঘিরে প্রণোদনাসিক্ত এ অনুষ্ঠান এক বিরতিহীন পুনর্যাত্রার প্রত্যয়ী ঘোষণা দিয়ে গেল ১১ জুন সন্ধ্যায়। এবারের সব বিজয়ীকে আন্তরিক ও আক্ষরিক অভিনন্দন। অভিনন্দন গ্রামীণফোন ও প্রথম আলোকে। কী সুন্দর এই ছন্দে ফিরে আসা।
দিন দশেক আগে রূপসী বাংলা হোটেলের উইন্টার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানের কথা লিখতে বসে করোটির ভেতর অনুভব করি, অ্যাকুয়ারিয়ামে রাখা রঙিন মাছের মতো নানা বর্ণিল সদ্য স্মৃতির ঘাই। ২০০৪-এর বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদদের নিয়ে ২০০৫-এ যাত্রা শুরু এ অনুষ্ঠানের। তার পর থেকে গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কার মানগত উৎকর্ষতায় দেশের অন্যতম বার্ষিক ক্রীড়া উৎসবে পরিণত হয়েছিল খুব দ্রুতই। গত দুই বছরের বিরতিটা তাই সংশ্লিষ্ট সবার জন্যই একটু মনোবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। উদ্যোক্তাদের জন্য সেটা ছিল একটু বেশিই পীড়াদায়ক। সামর্থ্য, সদিচ্ছা বা আন্তরিকতার অভাব ছিল না। ছিল ক্রীড়াকেন্দ্রিক ব্যস্ততা প্রসূত সময়ের অভাব। অবস্থাটা তাঁরা সামলেছেন দারুণভাবে। ১১ জুন দুই বছরের বিরতির ছেদ টেনে তিন বছরের পুরস্কার একসঙ্গে দিতে গিয়ে যে প্রাণবন্ত ক্রীড়াসন্ধ্যা কর্তৃপক্ষ আয়োজন করল, তা বিরতির অস্বস্তি কাটিয়ে পুরস্কারটিকে ঘিরে আকর্ষণীয় উৎসবটিকে বলিষ্ঠ ধারাবাহিকতায় ফিরিয়ে এনেছে বলে আমার বিশ্বাস। নতুন আঙ্গিকে, সাংস্কৃতিক মাত্রার নতুন সংযোগে প্রতিশ্রুতি রেখেছে ভবিষ্যতে আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠার।
বহমান রচনার চরিত্রের সঙ্গে নিজের উল্লেখ মোটেই শোভন নয়। তবু মার্জনা প্রত্যাশা করে বলছি, গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারের সঙ্গে এর জন্মলগ্ন থেকে জুরি হিসেবে সংযুক্ত থাকায় আমি নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে করি। যাদের সঙ্গে বসে এ যাবৎকাল এ পুরস্কার অর্জনকারীদের নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে এসেছি, তাদের তুলনায় ক্রীড়াঙ্গনে আমার অবস্থান এতই বিবর্ণ যে প্রতিবারই এই কর্মোপলক্ষে তাদের সঙ্গে বসাটাকেই আমার কাছে বিশেষ অর্জন বলে মনে হয়েছে। জুরি বোর্ডে প্রথমাবধি আমি আর ফুটবল দিকপাল শ্রদ্ধেয় গোলাম সারোয়ার টিপু ভাই আছেন। গতবার টিপু ভাই জুরি বোর্ডের প্রধান ছিলেন। টিপু ভাই, আপনারা জানেন, মাঠ কাঁপানো উইঙ্গার ছিলেন। এবার তিনি উইঙ্গারের স্বভাবে আমাকে মাঝখানে ঠেলে দিয়ে টাচ লাইনে সরে গেছেন। অনেকটা জোর করেই। বাধ্য হয়ে আমাকে পৌরহিত্য করতে হয়েছে। তবে টিপু ভাই ক্রমাগত জুতসই বল জোগান দিয়ে গেছেন গোলমুখে। ফলে তিন বছরের পুরস্কার দিতে অসুবিধা হয়নি মোটেই। আর হবেই বা কেমন করে? তাঁদের তীক্ষ্ম মেধা, প্রজ্ঞা ও ক্ষুরধার বিশ্লেষণ ক্ষমতা নিয়ে সঙ্গে ছিলেন যে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ, গ্র্যান্ড মাস্টার নিয়াজ মোরশেদ ও টেবিল টেনিস সম্রাজ্ঞী জুবেরা রহমান লিনু। সঙ্গে ছিল প্রথম আলো ক্রীড়া বিভাগের নিটোল ও নির্ভুল সহযোগ। আপাত জটিল কাজটা আমরা খুব সহজেই করতে পেরেছি। নির্বাচনী গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের অর্জিত ঐতিহ্য আমরা রক্ষা করতে পেরেছি। আমাদের টিমওয়ার্ক ছিল দারুণ। আমাদের নির্বাচনের প্রতি ক্রীড়াঙ্গনের উচ্চারিত অনুমোদন এ কথা বলতে সাহস জোগাচ্ছে।
সে দিনের অনুষ্ঠানে ফিরে আসি। বরাবরের মতো বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিয়ে টইটম্বুর ছিল সভাস্থল। আমাদের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ মিলিয়ে সবাই ছিলাম। যাদের আর আসার সম্ভাবনা নেই, তাদেরও খুঁজেছে আমাদের চোখ। অনুভব করেছে আমাদের মন। এই কদিন আগে মারীদা চলে গেছেন। নেই কাজী আবদুল আলীম, সাঁতারু অরুণ নন্দী, সালমা রফিক, শামীম আরা টলি। এ অনুষ্ঠান তাঁদের নিয়মিত যোগদান মনে করিয়ে দেয়। এ অনুষ্ঠান আমাদের সুযোগ দেয় শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের, সুযোগ দেয় প্রীতি বিনিময়ের, স্নেহ বর্ষণের। ক্ষণিক বিরাম শেষে ফিরে আসা এ পুরস্কার, পুরস্কারকে ঘিরে প্রণোদনাসিক্ত এ অনুষ্ঠান এক বিরতিহীন পুনর্যাত্রার প্রত্যয়ী ঘোষণা দিয়ে গেল ১১ জুন সন্ধ্যায়। এবারের সব বিজয়ীকে আন্তরিক ও আক্ষরিক অভিনন্দন। অভিনন্দন গ্রামীণফোন ও প্রথম আলোকে। কী সুন্দর এই ছন্দে ফিরে আসা।
No comments