বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা-রমজানে ঢাকায় থাকবে ১৪ নজরদারি টিম

রমজান মাসে ঢাকার বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪টি নজরদারি টিম মাঠে থাকবে। সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে নজরদারি চালাবে মন্ত্রণালয়। কোনো ব্যবসায়ী যাতে মজুদদারি করে পণ্যের দাম না বাড়াতে পারেন, সে জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও সতর্ক দৃষ্টি রাখবে।


বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ-সংক্রান্ত পরিকল্পনায় এ উদ্যোগের আশ্বাস দেওয়া হয়। রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এবং স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার এই কর্মপরিকল্পনাটি চূড়ান্ত করে। এতে বলা হয়, রমজানে সরকারি বিক্রয় সংস্থা টিসিবির মাধ্যমে ৭ রমজান থেকে ঢাকায় প্রতিদিন ২৫টি খোলা ট্রাকে ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে পাঁচটি খোলা ট্রাকে করে সহনীয় মূল্যে ভোজ্য তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করা হবে।
কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়, রমজানে টিসিবি ৫৫ হাজার ৭৮৮ টন চিনি, ১৬ হাজার ২১৯ টন ভোজ্য তেল, ১৯ হাজার ৩১৯ টন মসুর ডাল, পাঁচ হাজার টন ছোলা ও এক হাজার টন খেজুর নিয়ে মাঠে থাকবে। বর্তমানে টিসিবির গুদামে ১০ হাজার ৭৮৮ টন চিনি, চার হাজার ৩৭২ টন সয়াবিন তেল ও এক হাজার ৩১৯ টন মসুর ডাল মজুদ আছে উল্লেখ করে বলা হয়, বাকি পণ্য রমজানের আগেই হাতে চলে আসবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়। তবে লবণ, ডিম আর ব্রয়লার মুরগির উচ্চমূল্য রমজানেও ভোগাতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, লবণ ও ডিমের উচ্চমূল্য নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত আছেন তাঁরা। তাই রমজানের আগেই এ দুটি পণ্যের আমদানি অবাধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে লবণ আমদানির জন্য ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট ঋণপত্র (এলসি) খোলা শুরু করলেও ডিমের বেলায় তা হচ্ছে না। ফলে রমজানে ডিম নিয়ে তাঁদের চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্রয়লার মুরগির উচ্চমূল্য। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৯০ টাকায় উঠেছে। এ চিন্তা থেকেই এক দিন বয়সী ব্রয়লার মুরগি ও হ্যাচিং ডিম আমদানির সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
কর্মপরিকল্পনায় লবণের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলা হয়, এ বছর লবণের মৌসুমে বৃষ্টির কারণে উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় চার লাখ টন লবণের ঘাটতি রয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে লবণ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে গতকাল ২৫ জুন পর্যন্ত দুই লাখ ৪০ হাজার টন লবণ আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। আগামী ২৮-২৯ জুনের মধ্যে আমদানি করা লবণ বাজারে চলে আসবে। এতে লবণের দাম কমবে বলে আশা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ডিমের উচ্চমূল্য সম্পর্কে পরিকল্পনাপত্রে বলা হয়, দেশে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা প্রায় দুই কোটি পিস। দেশীয় ডিমের খামার বার্ড ফ্লুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ডিমের উৎপাদন কমেছে। ফলে দাম বেড়েছে। পাশের দেশগুলোতে বার্ড ফ্লুর সংক্রমণ থাকায় ডিমের আমদানি অবাধ করা সত্ত্বেও আমদানি সন্তোষজনক হচ্ছে না। হ্যাচিং ডিম ও ব্রয়লার মুরগির এক দিন বয়সী বাচ্চা উন্মুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, এর ফলে অচিরেই ডিমের দাম কমবে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিকল্পনায় আরো বলা হয়, রমজান মাসে অসাধু ব্যবসায়ীরা নানাভাবে পণ্যের দাম বাড়াতে তৎপর হয়ে ওঠেন। তাই ঢাকাসহ সারা দেশে মন্ত্রণালয়ের নজরদারি চলবে। এ ছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বিএসটিআইয়ের মনিটরিং টিমগুলোও মাঠে থাকবে। কর্মপরিকল্পনার প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, রমজান মাসে সড়কপথে ও ফেরিঘাটে চাঁদাবাজি বা যানজটের কারণে যাতে সরবরাহ বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে বিভিন্ন বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা পণ্যসামগ্রী দ্রুত খালাস ও শুল্কায়নের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পণ্য খালাসের জন্য বন্দরে নির্ধারিত জেটির পাশাপাশি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের জন্য নির্ধারিত 'ডলফিন জেটি' ব্যবহারেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সভা করে বাজারের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কেউ যাতে মজুদদারির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সজাগ রাখা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.