বিএনপির প্রতিক্রিয়া-যোগ্যতার অভাবে বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে

প্রস্তাবিত বাজেট খুব একটা বড় না হলেও প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক দক্ষতা ও যোগ্যতার অভাবে সরকারের পক্ষে এ বাজেট বাস্তবায়ন বেশ দুরূহ হয়ে পড়বে। পাশাপাশি সম্পদ আহরণ ও ব্যবস্থাপনার ত্রুটি এবং অতিমাত্রায় ব্যাংকঋণ নির্ভরশীলতা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে তুলবে।


নতুন করারোপের ফলে জনজীবন আরো দুর্বিষহ হবে। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতারা এমনটাই বলছেন। তাঁরা আরো বলছেন, ক্ষমতায় গেলে বিএনপি কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখবে না।
গতকাল সোমবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত 'প্রস্তাবিত বাজেটবিষয়ক প্রতিক্রিয়া' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে দলের শীর্ষ নেতারা এসব কথা বলেন। সম্মেলনে আসন্ন ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, 'প্রয়োজনের তুলনায় বড় না হলেও সরকারের প্রশাসনিক দক্ষতা ও যোগ্যতার ঘাটতির কারণে এ বাজেট বাস্তবায়ন দুরূহ হবে।'
এম কে আনোয়ার বলেন, বিশাল এ ঘাটতি বাজেট বাস্তবায়নের জন্য সম্পদ আহরণ ও ব্যবস্থাপনা বড় চ্যালেঞ্জ। এর ফলে ধনী-গরিবের বৈষম্য আরো বাড়বে। ৫২ হাজার কোটি টাকার বিশাল এ ঘাটতি মেটাতে সরকার বৈদেশিক উৎস থেকে যে পরিমাণ অর্থ সংগ্রহের আশা করছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। আবার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সংশোধিত বাজেটে তার পরিমাণ গতবারের মতো বেড়ে গেলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে এবং মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। তা ছাড়া জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্প থেকে নিট প্রাপ্তি গতবারের সম্ভাব্য প্রাপ্তির তুলনায় ১৫ গুণ বেশি, যা অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং বাস্তবায়নযোগ্য নয়। আর এর বোঝা গিয়ে পড়বে ব্যাংকিং খাতের ওপর।
প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের জনগণের ওপর করারোপের সমালোচনা করে এম কে আনোয়ার আরো বলেন, অর্থমন্ত্রী নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের দুই হাত করের বোঝা দিয়ে ভরে দিয়েছেন। আর দিয়েছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ার নিশ্চয়তা। বাজেটে রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ২২ শতাংশ বাড়ানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে, এর বেশির ভাগ আসবে পরোক্ষ কর থেকে। যার ভার পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। তিনি বলেন, ৫৫ হাজার টাকার উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের জন্য সম্পদ আহরণ ও ব্যবস্থাপনা বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গিয়ে ঋণ গ্রহণ ও টাকা ছাপানোর মতো সহজ কৌশল গ্রহণ করলে অর্থনীতির ভীত আরো অস্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। ফলে দিনশেষে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির কলেবর ছোট হয়ে আসবে।
জনপ্রসাশনের দুর্বলতা তুলে ধরে এম কে আনোয়ার বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের জন্য যে প্রশাসনিক দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রয়োজন, সর্বব্যাপী দলীয়করণের ফলে তা অনেকাংশে ধ্বংস হয়ে গেছে। অবাঞ্ছিত, অনৈতিক ও বেআইনি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে জনপ্রশাসন তাদের অতীত গৌরব ও আত্মবিশ্বাস অনেকাংশে হারিয়েছে। সরকারের এবং সরকারি দলের এ ধরনের জনবিরোধী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে যেসব সরকারি কর্মকর্তা দাঁড়াবার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের বিভিন্নভাবে হয়রানি এমনকি দৈহিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এর কোনো প্রতিকার সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
সংসদে গিয়ে বিএনপি বাজেটের এ বিষয়গুলো কেন উপস্থাপন করছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে এম কে আনোয়ার বলেন, 'এটি আলাদা ইস্যু। আপনারা লক্ষ করবেন, ১৯৯১ সালের পর এই প্রথম কোনো বিরোধী দল সংসদের প্রথম অধিবেশনে যোগ দিয়েছে। কিন্তু তারপর আমরা যাতে সংসদে থাকতে না পারি এ জন্য আমার বসার আসন থেকে শুরু করে ডেপুটি স্পিকার, আমাদের শপথ নেওয়ার সময় টিভি বন্ধ করে দেওয়া, শত শত মুলতবি প্রস্তাবে একটিও গ্রহণ না করাসহ নানা ষড়যন্ত্র করেছে। সংসদের পরিবেশ ঠিক করতে পারলে এবং কারো চরিত্র হনন করা হবে না- এমন নিশ্চয়তা দিতে পারলেও আমরা অবশ্যই সংসদে যাব।'
পদ্মা সেতুর বিষয়ে এই নেতা বলেন, 'বিশ্বব্যাংককে বাদ দিয়ে পদ্মা সেতু কোনোভাবেই সম্ভব না। কারণ সহজ শর্তে তারাই আমাদের বেশি ঋণ দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুতে তারা অর্থায়ন না করলে তাদের অর্থায়নে অন্যান্য প্রকল্পগুলোর কী হবে। তা ছাড়া তাদের মতো সহজ শর্তে ঋণ যদি অন্য কেউ দিতে পারে তাতে বিএনপির সমস্যা নেই। এর ব্যত্যয় হলে বিএনপি তা হতে দেবে না।'
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কালো টাকা সাদার করার সুযোগ রাখবে কিনা- এমন প্রশ্নের কোনো স্পষ্ট জবাব দেননি নেতারা। তবে ড. মঈন খান বলেন, 'তাঁরা সুশাসনে বিশ্বাসী। তাঁরা দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চান। তাই সুশাসনের নীতিতে বিশ্বাসী বলে ভবিষ্যতে তাঁরা বাজেটে এ সুযোগ রাখবেন না।'
ড. মঈন খান বলেন, ১৯৯১ সালে ক্ষমতার আসার পরও বিএনপি কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম এ সুযোগ দেয়। ২০০১ সালের পর জোট সরকার সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে গিয়ে সীমিত আকারে ওই সুযোগ রেখেছিল। কারণ, অর্থনীতিতে হঠাৎ করে একটির বিপরীতে অন্য কিছু করা যায় না। এবার সরকার তা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তবে ভবিষ্যতে সেই সুযোগ দেওয়া হবে না। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার কারণেই টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে বলে তিনি জানান। সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নেতা ড. ওসমান ফারুক, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, এম এ কাইয়ূম, আবদুল লতিফ জনি প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.