খেলাপি ঋণ-এই অশুভ প্রতিযোগিতা থামাতে হবে

ঋণ করেও ঘি খাওয়া ভালো- বহুল প্রচলিত এ কথাটিই যেন আজ চরম সত্য হয়ে উঠেছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দেদার খরচ করার এবং খেলাপি হয়ে যাওয়ার যেন রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। আর তারই সত্যতা পাওয়া যায় অর্থমন্ত্রীর বিবৃতিতে।


তিনি গত রবিবার সংসদকে জানিয়েছেন, দেশের ৪৭টি ব্যাংকে এখন ঋণখেলাপির সংখ্যা প্রায় সোয়া লাখ। তাঁর দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, এই সোয়া লাখের প্রায় অর্ধেকই হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সাতটি ব্যাংকের ঋণখেলাপি। ব্যাংকগুলো হচ্ছে অগ্রণী, সোনালী, জনতা, রূপালী, কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও খেলাপি ঋণের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। খেলাপি ঋণগ্রহীতার সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
ঋণখেলাপিদের নিয়ে অতীতেও পত্রপত্রিকায় অনেক তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ঋণখেলাপির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার একটি বড় কারণ। আবার খেলাপি ঋণের জন্য ব্যাংকের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর অসততাও অনেকাংশে দায়ী। অন্যের নামে অথবা ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ঋণ নেওয়ার পরিমাণও কম নয়। যেমন বগুড়া জেলার শেরপুরের ৯০ বছরের বৃদ্ধ আন্নাতন বেওয়ার নিজের বলতে কিছুই ছিল না, থাকতেন মেয়ের বাড়িতে। হঠাৎ করেই ২০০৭ সালে অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণ পরিশোধের নোটিশ পান। তিনি নাকি ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন, যা সুদে-আসলে ১৯ হাজার ৬৭৯ টাকায় দাঁড়িয়েছে। পরে জানা যায়, বৃদ্ধার সতীনের ছেলে খালেক জালিয়াতি করে তাঁর নামে ঋণ নিয়েছিল। এমনটি কেন ঘটবে? আর এ ধরনের ঘটনার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। অথচ অভিযোগ রয়েছে, ক্ষুদ্র শিল্পের একজন সৎ উদ্যোক্তা প্রয়োজনের সময় ব্যাংক থেকে ঋণ পান না, কিংবা পেলেও তাঁকে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়। আবার বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা এবং আগ্রাসী ঋণদান নীতিমালাকেও এ ক্ষেত্রে অনেকে দায়ী করে থাকেন। জানা যায়, এসব খেলাপি ঋণের বিপরীতে ৩২ হাজারের বেশি মামলা রয়েছে। একদিকে ঋণ আদায় না হওয়া এবং অন্যদিকে বছরের পর বছর এসব মামলা চালাতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর ক্ষতির পরিমাণই কেবল বাড়ছে।
আমরা চাই, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সুষ্ঠু নীতিমালার ভিত্তিতে স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হোক। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতিশীলতা আনতে ব্যাংকগুলো জোরদার ভূমিকা পালন করুক। কিন্তু খেলাপি ঋণের এই প্রতিযোগিতা কোনো শুভ লক্ষণ নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এদিকে আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো যেহেতু জনগণের সম্পদ, তাই এগুলোর পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও স্বচ্ছতার দিকে রাষ্ট্রকে আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে। রাজনৈতিক পরিচালক নিয়োগ ও তাদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.