গদ্যকার্টুন-বাড়ির বাড়া by আনিসুল হক
প্রথমে আমরা অভিধানে দেখে নেব, বাড়ি মানে কী। আর বাড়া মানে কী। বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান বলছে— বাড়ি: ‘লাঠি দণ্ড বেত প্রভৃতি দিয়ে আঘাত (উপস্থিত মাথায় বাড়ি কি প্রকারে ঠেকাইবেন তাহারই ফিকির করুন—মীম)।’ ‘মীম’ মানে মীর মশাররফ হোসেন।
বাড়ি, বাড়ী: ‘আবাসগৃহ; বাসস্থান; বাস্তুসংলগ্ন বেষ্টিত স্থান। ২ উদ্যান; বাগান (বাগানবাড়ি)।’
বাড়া: অধিক, বেশি (জনক হইতে স্নেহ জননীর বাড়া—ভারতচন্দ্র)
গল্পগুলো পুরোনো। সবই আপনাদের জানা। একবার কাজির আদালতে বিচার নিয়ে এলেন দুই মহিলা। বিবাদের বিষয় একটা ছোট্ট ছেলে। দুই মহিলাই দাবি করছেন, শিশুটি তাঁর। তিনিই বাচ্চার আসল মা। কেউ দাবি ছাড়তে নারাজ। কাজি পড়লেন মহা মুশকিলে। কী করবেন। শেষে তিনি রায় ঘোষণা করলেন, বঁটি আনো। বাচ্চাটাকে দুই টুকরা করো। প্রত্যেক মা অর্ধেক করে পাবেন বাচ্চার ভাগ। এক মহিলা তখন বললেন, ঠিক আছে, আমি দাবি ছেড়ে দিচ্ছি। বাচ্চাটা ওকেই দিয়ে দিন। কাটতে হবে না। ও-ই আসলে বাচ্চার মা।
বিচারক বললেন, এবার আমি জানি, বাচ্চার আসল মা কে। এই মহিলাই বাচ্চার আসল মা। আসল মা কখনোই সন্তানের অমঙ্গল চাইতে পারেন না।
আমরা জানি, বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি হচ্ছে। বেগম জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তিনি খুব দুঃখ পেয়েছেন। সাংবাদিকদের ডেকে লিখিত বিবৃতি পড়েছেন। এবং পড়ার সময় কান্নাকাটি করেছেন। তাঁকে কাঁদতে দেখে বিএনপির মহিলা কর্মীরা হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছেন।
তারপর বেগম জিয়াকে বাস্তুহারা করার প্রতিবাদে ঈদের আগে—যখন ঘরমুখো মানুষ একটা যানবাহনের টিকিটের জন্য হাহাকার করছেন, অনেক কষ্টে একটা টিকিট জোগাড় করতে পেরেছেন কি পারেননি—বিএনপি হরতাল ডেকে বসেছে।
এ নিয়ে এখন পত্রিকার কলাম লেখকেরা সরব হয়েছেন। টেলিভিশনের রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকারেরা পরিস্থিতির চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন।
ঘটনায় কার লাভ হয়েছে? বিএনপির, নাকি আওয়ামী লীগের?
আপাতত বিভিন্ন সংবাদ বিশ্লেষণ পড়ে মনে হচ্ছে, বিএনপি লাভবান হয়েছে। কারণ, মওদুদ আহমদ আগেই বলে দিয়েছিলেন, আদালতে বাড়ি-সমস্যার সমাধান তাঁরা পাবেন না, তাঁদের রাজপথেই সমাধান করতে হবে। সরকার যদি সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের জন্য আর কটা দিন অপেক্ষা করত, তাহলে আদালতের রায় খালেদা জিয়ার বিপক্ষে যেত, তখন তিনি আপনা-অপনিই বাড়ি ছেড়ে দিতে বাধ্য হতেন। তাতে কান্নাকাটি করার সুযোগ পাওয়া গেলেও হরতাল ডাকা যেত কি না সন্দেহ। কিন্তু সরকারের ধৈর্য অত্যন্ত কম। তারা তাড়াহুড়া করেছে অকারণে, ফলে বিএনপি একটা হরতাল ডাকার অজুহাত খুঁজে পেয়েছে আর ঈদের আগে মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকারে পরিণত করেছে।
এখন প্রশ্ন হলো, সরকার কেন বিএনপির হাতে এই ইস্যু তুলে দিল? কারণ কি এই যে, সরকারে গেলে মানুষের বুদ্ধিশুদ্ধি লোপ পায়? রূপকথার বানরের কলজের মতোই গাছের মগডালে মগজ রেখে তারপর গদিতে বসতে হয়?
আরেক দল বিশ্লেষক বলছেন, আমরা চলি ডালে ডালে, সরকার চলে পাতায় পাতায়। সরকার জেনেশুনেই বিএনপির হাতে এই ইস্যু তুলে দিয়েছে। কারণ, সরকার খুব ভালো করেই জানে, বিএনপি আজ হোক, কাল হোক আন্দোলনে যাবেই। এবং আন্দোলনে যাওয়ার কতগুলো কারণও তার সামনে আছে। জিনিসপত্রের দাম বেশি, দুর্নীতি, বিদ্যুৎ-সমস্যা, এরপর যোগ হবে পানি-সমস্যা, সার-সমস্যা। আছে ট্রানজিট ইস্যু, বন্দর ইস্যু। বিএনপি যদি জনগণের সত্যিকারের সমস্যা নিয়ে আন্দোলনে যায়, তাহলে তা জনগণের সমর্থন পাবে। সেটা তাদের করতে দেওয়া যাবে না। তাকে এমন একটা ইস্যু দিতে হবে, যেটা নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণ ছি ছি করবে, ধিক্কার দেবে। খালেদার বাড়ি হলো সেই ইস্যু। ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে এত বড় একটা বাড়ি নিয়ে তিনি রানির হালে থাকেন, আর সেখান থেকে রাজনীতি পরিচালনা করেন, এটা যখন আলোচনায় আসে, এ দেশের ভূমিহীন অসংখ্য মানুষ সেটাকে খুব একটা প্রীতির চোখে দেখে না, আর ঢাকায় এক কাঠা জমির মালিক হতে না পারার ব্যর্থতা যে বিশাল মধ্যবিত্ত মানুষের বুকে পাথরের মতো চেপে বসে আছে, তাদের কাছে সেটা হয় সমূহ ঈর্ষা আর ক্ষোভের ব্যাপার। খালেদা জিয়া যখন নিজেকে বাস্তুহারা বা উদ্বাস্তু বলেন, দেশের অগণিত বাস্তুহারা মানুষের কাছে সেটা একটা নির্মম রসিকতা বলে প্রতীয়মান হয়। বেগম জিয়ার যদি সত্যিই থাকার জায়গা না থাকে, তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রীর মিন্টো রোডের সরকারি বাড়িতেই তো উঠতে পারেন।
এখানে প্রাসঙ্গিক আবার শেয়াল পণ্ডিত আর কুমিরের গল্প। শেয়াল গেছে নদীর ধারে। কুমির তার পা কামড়ে ধরেছে। শেয়াল বলে, ওরে বোকা কুমির, তুমি তো আমার পা ধরোনি, লাঠি ধরেছ। কুমির যেই না পা ছেড়ে দিয়েছে, অমনি শেয়াল এক লাফে উঠে পড়েছে ডাঙায়।
আওয়ামী লীগ বিএনপিকে পা না দিয়ে লাঠি এগিয়ে দিয়েছে। বিএনপি সেই লাঠি ধরে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা মিটিমিটি হাসছেন। কিন্তু হাসির কিছু নেই।
আমি নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। এই যে বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি, এটাকে আপনারা কী চোখে দেখছেন? তাঁরা সবাই যা বলেছেন, তার সরলার্থ হলো, তাঁরা উভয় দলের ওপরই বিরক্ত।
সরকার তার চাল চালছে।
বিরোধী দল তার রাগ ঝাড়ছে।
রাজায় রাজায় যুদ্ধ হচ্ছে, উলুখাগড়ার প্রাণ যাই যাই করছে। নোড়া আর পাটা ঘষাঘষি করছে, মরিচের প্রাণ ওষ্ঠাগত।
আওয়ামী লীগ ‘পুলিটিকস’ খেলছে। তার পেছনে আছে প্রতিশোধপরায়ণতা, আছে নিষ্ঠুর কৌতুক। বিএনপি এই সুযোগে সরকার পতনের আন্দোলনে নামতে চাইছে। কিন্তু মধ্যখানে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ, পরাজিত হচ্ছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
দেশের মানুষ দুই দলের ওপরই বিরক্ত, এই বার্তাটি পৌঁছে দিয়ে বলি, প্রকৃত মা তাঁর সন্তানের ক্ষতির বিনিময়ে নিজের স্বার্থরক্ষা করতে চান না।
আমাদের রাজনৈতিক নেতারা কি কেবল নিজেদের ক্ষমতাটাকেই বড় করে দেখবেন, নাকি দেশ, দেশের মানুষ, জনগণ, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁদের আদৌ কোনো দুশ্চিন্তা আছে?
আসুন, আমরা উভয় দলকে বলি, আমরা হরতাল চাই না। সরকারকে বলি, এমন কিছু করবেন না, যাতে বিরোধী দল হরতাল ডাকার অজুহাত পায়। আর বিরোধী দলকে বলি, হরতাল ডাকলে জনপ্রিয় হওয়া যায়—এটা এখন আর সত্য নয়। ১৯৮০-এর দশকের দাওয়াই দিয়ে ২০১০ সালে পাতে ঝোল টানা যাবে না।
পুনশ্চ: গদ্যকার্টুনটা যথেষ্ট হাস্য-উদ্দীপক হলো না। কাজেই একটা কৌতুক বলি। সাদ্দাম হোসেন, বুশ আর টনি ব্লেয়ার এক বিমানে যাচ্ছেন। মধ্যখানে প্লেনের ইঞ্জিনে গণ্ডগোল দেখা দিল। বৈমানিক তিনজনকেই ধাক্কা দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলে দিলেন। এই তিনজনের মধ্যে কে বাঁচবেন?
উত্তর: কেউ বাঁচবেন না, বাঁচবে এই পৃথিবী।
এই কৌতুকের একটা দেশি সংস্করণ আছে। আমি সেটা মনেও করতে চাই না।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
বাড়া: অধিক, বেশি (জনক হইতে স্নেহ জননীর বাড়া—ভারতচন্দ্র)
গল্পগুলো পুরোনো। সবই আপনাদের জানা। একবার কাজির আদালতে বিচার নিয়ে এলেন দুই মহিলা। বিবাদের বিষয় একটা ছোট্ট ছেলে। দুই মহিলাই দাবি করছেন, শিশুটি তাঁর। তিনিই বাচ্চার আসল মা। কেউ দাবি ছাড়তে নারাজ। কাজি পড়লেন মহা মুশকিলে। কী করবেন। শেষে তিনি রায় ঘোষণা করলেন, বঁটি আনো। বাচ্চাটাকে দুই টুকরা করো। প্রত্যেক মা অর্ধেক করে পাবেন বাচ্চার ভাগ। এক মহিলা তখন বললেন, ঠিক আছে, আমি দাবি ছেড়ে দিচ্ছি। বাচ্চাটা ওকেই দিয়ে দিন। কাটতে হবে না। ও-ই আসলে বাচ্চার মা।
বিচারক বললেন, এবার আমি জানি, বাচ্চার আসল মা কে। এই মহিলাই বাচ্চার আসল মা। আসল মা কখনোই সন্তানের অমঙ্গল চাইতে পারেন না।
আমরা জানি, বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি হচ্ছে। বেগম জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তিনি খুব দুঃখ পেয়েছেন। সাংবাদিকদের ডেকে লিখিত বিবৃতি পড়েছেন। এবং পড়ার সময় কান্নাকাটি করেছেন। তাঁকে কাঁদতে দেখে বিএনপির মহিলা কর্মীরা হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছেন।
তারপর বেগম জিয়াকে বাস্তুহারা করার প্রতিবাদে ঈদের আগে—যখন ঘরমুখো মানুষ একটা যানবাহনের টিকিটের জন্য হাহাকার করছেন, অনেক কষ্টে একটা টিকিট জোগাড় করতে পেরেছেন কি পারেননি—বিএনপি হরতাল ডেকে বসেছে।
এ নিয়ে এখন পত্রিকার কলাম লেখকেরা সরব হয়েছেন। টেলিভিশনের রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকারেরা পরিস্থিতির চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন।
ঘটনায় কার লাভ হয়েছে? বিএনপির, নাকি আওয়ামী লীগের?
আপাতত বিভিন্ন সংবাদ বিশ্লেষণ পড়ে মনে হচ্ছে, বিএনপি লাভবান হয়েছে। কারণ, মওদুদ আহমদ আগেই বলে দিয়েছিলেন, আদালতে বাড়ি-সমস্যার সমাধান তাঁরা পাবেন না, তাঁদের রাজপথেই সমাধান করতে হবে। সরকার যদি সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের জন্য আর কটা দিন অপেক্ষা করত, তাহলে আদালতের রায় খালেদা জিয়ার বিপক্ষে যেত, তখন তিনি আপনা-অপনিই বাড়ি ছেড়ে দিতে বাধ্য হতেন। তাতে কান্নাকাটি করার সুযোগ পাওয়া গেলেও হরতাল ডাকা যেত কি না সন্দেহ। কিন্তু সরকারের ধৈর্য অত্যন্ত কম। তারা তাড়াহুড়া করেছে অকারণে, ফলে বিএনপি একটা হরতাল ডাকার অজুহাত খুঁজে পেয়েছে আর ঈদের আগে মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকারে পরিণত করেছে।
এখন প্রশ্ন হলো, সরকার কেন বিএনপির হাতে এই ইস্যু তুলে দিল? কারণ কি এই যে, সরকারে গেলে মানুষের বুদ্ধিশুদ্ধি লোপ পায়? রূপকথার বানরের কলজের মতোই গাছের মগডালে মগজ রেখে তারপর গদিতে বসতে হয়?
আরেক দল বিশ্লেষক বলছেন, আমরা চলি ডালে ডালে, সরকার চলে পাতায় পাতায়। সরকার জেনেশুনেই বিএনপির হাতে এই ইস্যু তুলে দিয়েছে। কারণ, সরকার খুব ভালো করেই জানে, বিএনপি আজ হোক, কাল হোক আন্দোলনে যাবেই। এবং আন্দোলনে যাওয়ার কতগুলো কারণও তার সামনে আছে। জিনিসপত্রের দাম বেশি, দুর্নীতি, বিদ্যুৎ-সমস্যা, এরপর যোগ হবে পানি-সমস্যা, সার-সমস্যা। আছে ট্রানজিট ইস্যু, বন্দর ইস্যু। বিএনপি যদি জনগণের সত্যিকারের সমস্যা নিয়ে আন্দোলনে যায়, তাহলে তা জনগণের সমর্থন পাবে। সেটা তাদের করতে দেওয়া যাবে না। তাকে এমন একটা ইস্যু দিতে হবে, যেটা নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণ ছি ছি করবে, ধিক্কার দেবে। খালেদার বাড়ি হলো সেই ইস্যু। ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে এত বড় একটা বাড়ি নিয়ে তিনি রানির হালে থাকেন, আর সেখান থেকে রাজনীতি পরিচালনা করেন, এটা যখন আলোচনায় আসে, এ দেশের ভূমিহীন অসংখ্য মানুষ সেটাকে খুব একটা প্রীতির চোখে দেখে না, আর ঢাকায় এক কাঠা জমির মালিক হতে না পারার ব্যর্থতা যে বিশাল মধ্যবিত্ত মানুষের বুকে পাথরের মতো চেপে বসে আছে, তাদের কাছে সেটা হয় সমূহ ঈর্ষা আর ক্ষোভের ব্যাপার। খালেদা জিয়া যখন নিজেকে বাস্তুহারা বা উদ্বাস্তু বলেন, দেশের অগণিত বাস্তুহারা মানুষের কাছে সেটা একটা নির্মম রসিকতা বলে প্রতীয়মান হয়। বেগম জিয়ার যদি সত্যিই থাকার জায়গা না থাকে, তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রীর মিন্টো রোডের সরকারি বাড়িতেই তো উঠতে পারেন।
এখানে প্রাসঙ্গিক আবার শেয়াল পণ্ডিত আর কুমিরের গল্প। শেয়াল গেছে নদীর ধারে। কুমির তার পা কামড়ে ধরেছে। শেয়াল বলে, ওরে বোকা কুমির, তুমি তো আমার পা ধরোনি, লাঠি ধরেছ। কুমির যেই না পা ছেড়ে দিয়েছে, অমনি শেয়াল এক লাফে উঠে পড়েছে ডাঙায়।
আওয়ামী লীগ বিএনপিকে পা না দিয়ে লাঠি এগিয়ে দিয়েছে। বিএনপি সেই লাঠি ধরে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা মিটিমিটি হাসছেন। কিন্তু হাসির কিছু নেই।
আমি নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। এই যে বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি, এটাকে আপনারা কী চোখে দেখছেন? তাঁরা সবাই যা বলেছেন, তার সরলার্থ হলো, তাঁরা উভয় দলের ওপরই বিরক্ত।
সরকার তার চাল চালছে।
বিরোধী দল তার রাগ ঝাড়ছে।
রাজায় রাজায় যুদ্ধ হচ্ছে, উলুখাগড়ার প্রাণ যাই যাই করছে। নোড়া আর পাটা ঘষাঘষি করছে, মরিচের প্রাণ ওষ্ঠাগত।
আওয়ামী লীগ ‘পুলিটিকস’ খেলছে। তার পেছনে আছে প্রতিশোধপরায়ণতা, আছে নিষ্ঠুর কৌতুক। বিএনপি এই সুযোগে সরকার পতনের আন্দোলনে নামতে চাইছে। কিন্তু মধ্যখানে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ, পরাজিত হচ্ছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
দেশের মানুষ দুই দলের ওপরই বিরক্ত, এই বার্তাটি পৌঁছে দিয়ে বলি, প্রকৃত মা তাঁর সন্তানের ক্ষতির বিনিময়ে নিজের স্বার্থরক্ষা করতে চান না।
আমাদের রাজনৈতিক নেতারা কি কেবল নিজেদের ক্ষমতাটাকেই বড় করে দেখবেন, নাকি দেশ, দেশের মানুষ, জনগণ, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁদের আদৌ কোনো দুশ্চিন্তা আছে?
আসুন, আমরা উভয় দলকে বলি, আমরা হরতাল চাই না। সরকারকে বলি, এমন কিছু করবেন না, যাতে বিরোধী দল হরতাল ডাকার অজুহাত পায়। আর বিরোধী দলকে বলি, হরতাল ডাকলে জনপ্রিয় হওয়া যায়—এটা এখন আর সত্য নয়। ১৯৮০-এর দশকের দাওয়াই দিয়ে ২০১০ সালে পাতে ঝোল টানা যাবে না।
পুনশ্চ: গদ্যকার্টুনটা যথেষ্ট হাস্য-উদ্দীপক হলো না। কাজেই একটা কৌতুক বলি। সাদ্দাম হোসেন, বুশ আর টনি ব্লেয়ার এক বিমানে যাচ্ছেন। মধ্যখানে প্লেনের ইঞ্জিনে গণ্ডগোল দেখা দিল। বৈমানিক তিনজনকেই ধাক্কা দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলে দিলেন। এই তিনজনের মধ্যে কে বাঁচবেন?
উত্তর: কেউ বাঁচবেন না, বাঁচবে এই পৃথিবী।
এই কৌতুকের একটা দেশি সংস্করণ আছে। আমি সেটা মনেও করতে চাই না।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
No comments