প্রবাসে প্রতারণা-স্বদেশে দুর্ভোগের নতুন অধ্যায়
দীর্ঘ চার বছর মুম্বাই কারাগার ও মানবাধিকার সংগঠনের হোমে থাকার পর ৪৮ তরুণী ও এক শিশুকে ভারতীয় পুলিশ রোববার বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের ভারতে পাচার করা হয়। পরে তারা মুম্বাই শহরে গিয়ে বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ নেয়।
পরে বেআইনি প্রবেশের দায়ে জোটে কারাভোগ। গত সোমবার সমকালে 'চার বছর কারাভোগের পর ভারত থেকে ফিরল ওরা' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ ঘটনার বিশদ বিবরণ প্রকাশ পেয়েছে। সহজেই অনুমান করা যায় যে, এসব তরুণীর পরিবার সচ্ছল নয়। সুন্দর ভবিষ্যতের আশা নিয়েই তারা পাচারকারীদের হাত ধরে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিল। কিন্তু ভালো কর্মসংস্থান তো জোটেইনি, উপরন্তু বেআইনি অনুপ্রবেশের দায়ে মুম্বাই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দীর্ঘ চার বছর তাদের কারাগার ও মানবাধিকার সংগঠনের হোমে থাকতে হয়েছে। ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন ও বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠনের যৌথ প্রচেষ্টায় তারা শেষ পর্যন্ত স্বদেশে ফিরতে পারল। কিন্তু যাদের কারণে তাদের জীবনে এ চরম দুর্ভোগ ও বিপর্যয় তারা রয়ে গেল ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রশ্ন হলো, ভারত থেকে ফেরার পর তাদের ভাগ্যে কর্মসংস্থান ও সামাজিক সম্মান কোনোটাই জুটবে কি-না, নাকি দুর্ভোগের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হলো? এসব তরুণীর নিজ নিজ পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য ও সামাজিক অবস্থান কোনোটাই মজবুত নয়। তাই তাদের পারিবারিক সমর্থন দিয়ে নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার আশা বৃথা। সমাজ ও সরকারকেই এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার, বেসরকারি সাহায্য সংস্থা, এমনকি বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলেই নয়। মানব পাচার, নারী ও শিশু পাচার বন্ধে দেশে আইন রয়েছে। এ ব্যাপারে সার্ক কনভেনশনও রয়েছে। তারপরও মানব পাচার বন্ধ করা যায়নি। তবে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করলে পাচারকারীদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া অসম্ভব নয়। এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী সামাজিক জাগরণ সৃষ্টি করা আমাদের সবারই কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
No comments