থ্যালাসেমিয়া-সচেতনতা বাড়াতে হবে
বাঁচার সমান সুযোগ_ এমন দাবি চমকিত করার মতো। প্রতিটি দেশের নাগরিকদেরই এমন নিশ্চয়তা দিতে হয়। কেবল আইনগত কিংবা দৈহিক নিরাপত্তা নয়, আরও অনেক কিছু আসতে পারে এর আওতায়। ৮ মে রোববার রাজধানীতে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবসে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি ও মেডিসিন ক্লাব আয়োজিত আলোচনা সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং অন্যান্য আলোচক যখন জিনবাহী এ রোগের ভয়াবহতা ও পরিণতি সম্পর্কে বক্তব্য রাখছিলেন তখন শ্রোতারা হয়ে পড়েন অশ্রুসিক্ত। বাংলাদেশে এ ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এক কোটির বেশি নারী-পুরুষ এর জিন বহন করছে। আক্রান্ত কয়েকজন শিশু এবং তাদের পিতামাতা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ছিলেন। রোগের ভয়াবহতা এবং চিকিৎসার নানা সমস্যা তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। কোনো আশার বাণীই তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। সরকারের তরফে সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রকল্প প্রস্তাব জমা প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, 'যতটুকু করণীয় তার চেয়েও আমি বেশি করার চেষ্টা করব।' থ্যালাসেমিয়া সমিতিকে জমি ও অর্থ দিয়ে ডায়াবেটিক সমিতির মতো গড়ে তোলার প্রস্তাব এসেছে অনুষ্ঠানে। বাংলাদেশের কৃতী সন্তান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইব্রাহিম এ অনন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন ঐকান্তিক চেষ্টায়। সরকারি-বেসরকারি চেষ্টায় বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য এমন আয়োজন করা কেন অসম্ভব হবে? এ কাজে সরকার নবউদ্যমে এগিয়ে আসতে পারে, ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবেও উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব। আক্রান্তদের প্রতি মাসে দুই থেকে চার ব্যাগ রক্ত বদলাতে হয়। বারবার রক্ত নেওয়ার কারণে দেহে জমা হওয়া অতিরিক্ত লোহা দূর করার জন্য প্রয়োজন পড়ে প্রতি মাসে তিন-চার হাজার টাকার ওষুধ। দরিদ্র পরিবার তো বটেই এমনকি মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষেও তা রীতিমতো দুঃসাধ্য। আর এখানেই রাষ্ট্রের পাশাপাশি সমাজের রয়েছে বিপুল করণীয়। এ ধরনের রোগীদের কথা বিবেচনায় রেখে নিয়মিত রক্তদানে আরও অনেকে এগিয়ে আসতে পারেন। নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন, রোগ পরীক্ষা সহজলভ্য এবং ওষুধের দাম কমিয়ে রাখার জন্য উৎপাদক ও আমদানিকারকদের সুবিধা প্রদানসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ সময়ের দাবির চেয়েও বেশি কিছু। এ ধরনের ব্যাধিতে আক্রান্তরা যাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্বস্তিকর অবস্থায় না পড়ে সেজন্যও করণীয় রয়েছে। তাদের পাশে সমাজের প্রতিটি পর্যায় থেকে বাড়িয়ে দিতে হবে সহমর্মিতার হাত এবং এভাবেই নিশ্চিত হতে পারে বাঁচার সমঅধিকার। থ্যালাসেমিয়া জিনবাহিত রোগ। কোনো দম্পতির দু'জনই থ্যালাসেমিয়ার জিনবাহক হলে তাদের সন্তানের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার ওপর বিশেষজ্ঞরা জোর দিচ্ছেন। গ্রিস, ইতালি ও সাইপ্রাসে এ ধরনের বিয়ের ওপর আইনি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং তা সুফল দিচ্ছে। আমাদের দেশে এ বিষয়ে কড়াকড়ি আইন আরোপ যদি না-ও করা যায়, কাবিন ও রেজিস্ট্রেশনের সময় এ ধরনের পরীক্ষার প্রমাণপত্র চাওয়া হলে তার ইতিবাচক প্রভাব সমাজে পড়বেই। দেশজুড়ে ব্যাপক উদ্যোগ ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করে কয়েক ধরনের ব্যাধি মোকাবেলায় আমাদের সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বারডেম ও আইসিডিডিআরবির মতো প্রতিষ্ঠানের নাম বিশ্বের সর্বত্রই গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হয়। সম্মিলিত চেষ্টায় আমাদের শিশুদের পোলিওসহ কয়েক ধরনের রোগের আক্রমণ থেকেও মুক্ত রাখা সম্ভব হচ্ছে। থ্যালাসেমিয়া মোকাবেলায়ও একই ধরনের অর্জন সম্ভব।
No comments