মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ-সামষ্টিক স্বপ্নের পথে আরেক ধাপ

দেশের এক হাজার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি করে 'মাল্টিমিডিয়া' শ্রেণীকক্ষ চালু শিক্ষা ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশনে নিঃসন্দেহে একধাপ অগ্রগতি। এই প্রযুক্তি উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্নের কথা ব্যক্ত করেছেন, তাও আমাদের সবারই স্বপ্ন।


দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ক্লাসরুমেই পাঠদানের এমন আধুনিকায়ন কে না চায়? শিক্ষার সুযোগের ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরাঞ্চলের, আরও বিস্তৃত অর্থে বললে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে যে পার্থক্য, সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তা ঘোচাবার যে স্বপ্ন আমরাও দেখে আসছি, প্রধানমন্ত্রী তা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আমরা এই প্রকল্পের সাফল্য কামনা করছি। বস্তুত শিক্ষা সম্প্রসারণ আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা অস্বীকারের অবকাশ নেই। মাল্টিমিডিয়া সমৃদ্ধ শ্রেণীকক্ষ তারই ধারাবাহিকতা। তবে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা সর্বজনীন করে তোলার প্রতিবন্ধক সম্পর্কেও স্বচ্ছ ও সতর্ক থাকা জরুরি। মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই এবং বছরের শুরুতে তা শিক্ষার্থীর হাতে পেঁৗছানোর ব্যবস্থা, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রশাসনিক মর্যাদা বৃদ্ধি প্রভৃতি পদক্ষেপের সঙ্গে বর্তমান উদ্যোগটির গুণগত পার্থক্য রয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট শ্রেণীকক্ষগুলোতে যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে, তার সংস্থান কি নিশ্চিত? পাঠদানকালে বিদ্যুৎ চলে গেলে কি পরবর্তী অংশ পুরনো পদ্ধতিতেই চলবে? বিদ্যুতের অভাবে যদি মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারই করা না যায়, তা দিয়ে কেবল শ্রেণীকক্ষের শোভাবর্ধন কেউ প্রত্যাশা করে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, বিদ্যালয়ে বরাদ্দ মাল্টিমিডিয়া পরিচালনার জন্য বিকল্প শক্তি ব্যবহার করা যায় কি-না? বাংলাদেশের মতো রোদেলা দেশে সৌরবিদ্যুতের সম্ভাবনা ব্যাপক। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জনপদের গার্হস্থ্য ব্যবহারের জন্য নবায়নযোগ্য এই শক্তি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেলও কি সরবরাহ করা যায় না? নতুন এই প্রযুক্তি পরিচালনা ছাড়াও তাতে বিদ্যালয়ের আনুষঙ্গিক আলোও নিশ্চিত হবে আশা করা যায়। প্রযুক্তিটির উদ্বোধনকালে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পক্ষগুলোকে এগিয়ে আসার যে আহ্বান প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাতে সাড়া দিয়ে আমাদের দেশের সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসতে পারে। সাড়া দিতে পারে শিক্ষা অধিকার প্রতিষ্ঠা ও আধুনিকায়নে কর্মরত উন্নয়ন সংস্থাগুলোও। একই সঙ্গে স্থানীয় উদ্যোক্তা ও শিক্ষানুরাগীদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই আমরা। বস্তুত শিক্ষার উন্নয়নে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যে সদিচ্ছা আমরা লক্ষ্য করে আসছি, তৃণমূলে তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হলে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.