রেললাইনের ওপর বাজার by মিঠুন চৌধুরী

নগরের দুই নম্বর গেট রেলক্রসিং, ঝাউতলা ও দেওয়ানহাটসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় রেললাইনের ওপর নিয়মিত অস্থায়ী বাজার বসে । ট্রেন আসার আগমুহূর্তে বিক্রেতারা তরিতরকারিসহ তাঁদের সরঞ্জাম সরিয়ে নেন দ্রুত। তবে ট্রেন এলেও রেললাইনের পাশঘেঁষেই চলে কেনা-বেচা। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।


একাধিকবার এসব বাজার উচ্ছেদ করা হলেও উচ্ছেদের দুয়েক দিনের মধ্যেই আবার বাজার বসে যায়। রেলওয়ের কর্মকর্তা, রেলওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় অধিবাসীরা বলছেন, এসব বাজারের কারণে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, প্রতিদিন বিকেলেই বসে এসব অস্থায়ী বাজার। কেনাবেচা চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। দেওয়ানহাট সেতুর নিচে রেললাইনের ওপর বসা বাজারে দোকানসংখ্যা ২০টি। অন্যদিকে দুই নম্বর গেট রেলক্রসিং এলাকার বাজারে দোকান প্রায় ৭০টি। এ ছাড়া নগরের ঝাউতলা রেলস্টেশনের পাশে রেললাইনের ওপর তরিতরকারি নিয়ে বসেন বিক্রেতারা।
চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন বিকেলে ছেড়ে যাওয়া সব কয়েকটি আন্তনগর ট্রেন চলাচলের পথেই বসে দেওয়ানহাটের বাজারটি। ঝাউতলা ও দুই নম্বর গেটের বাজার অতিক্রম করে প্রতিদিন চলাচল করে পাঁচটি ট্রেন।
গত সোমবার রাতে দেওয়ানহাট সেতুর নিচে বাজারে দেখা গেছে, ঝুড়িতে শাকসবজি বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, এ বাজারটি অনিয়মিতভাবে বসে। রেলের নিয়মিত অভিযানের কারণে আগের চেয়ে ছোট হয়ে গেছে বাজারের আকার। মূলত রেলওয়ে কলোনির বাসিন্দা ও সংলগ্ন বিভিন্ন পোশাকশিল্পের কর্মীরা এ বাজারের ক্রেতা।
দুই নম্বর গেট রেলক্রসিং এলাকায় গত সোমবার রাতে গিয়ে দেখা যায়, মূল সড়কের দুই পাশে রেললাইনের ওপর বসেছে বাজার। সেখানে বিক্রি হচ্ছে তরকারি, মাছ, মুরগি, কাপড়, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্য। ওই এলাকার দুটি রেললাইনের (ট্র্যাক) মধ্যকার কয়েক ফুট ফাঁকা জমিতেও পসরা নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। আর লাইনের উভয় পাশে দেড় থেকে দুই ফুট দূরত্বে সীমানা প্রাচীরঘেঁষে আরও দুই সারি দোকান। রেললাইনের ওপরে দাঁড়িয়েই ক্রেতারা কেনাকাটা করছেন।
বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, এসব দোকানের ভাড়া দৈনিক ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এ ভাড়া নেন। তবে বিক্রেতারা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম প্রকাশে অপারগতা জানিয়েছেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রতিদিন নগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সাত জোড়া শাটল ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে বেলা দুইটা ৫০ মিনিট, তিনটা ৫০ মিনিট ও রাত সাড়ে আটটায় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন তিনটি এ বাজার অতিক্রম করে। এ ছাড়া দোহাজারী ও নাজিরহাটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন দুটিও চলাচল করে এই পথে।
ষোলশহর স্টেশনের স্টেশনমাস্টার ফখরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেললাইনের আশপাশে এ ধরনের বাজার ট্রেন চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি করে। একাধিকবার উচ্ছেদের পরও আবার বাজার বসে যায়। কোনো কোনো সময় দেখা গেছে, ট্রেনের শব্দ পেয়ে বিক্রেতারা মালামাল নিয়ে একটু সরে যায়। ট্রেন চলে গেলে আবার বসে পড়ে।’
এ বিষয়ে রেলের স্টেট অফিসার (ভূমি কর্মকর্তা) আবদুল বারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সপ্তাহ দুয়েক আগে একবার ওই বাজারটি উচ্ছেদ করা হয়েছিল। সেখানে ক্রেতারা লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করেন। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বছর খানেক আগে কাঁটাতার দিয়ে ওই এলাকা ঘিরে দিয়েছিলাম। তা-ও কেটে নিয়ে গেছে। লোকবলের অভাবের কারণে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে দেওয়ানহাট এলাকার বাজারটি বন্ধে নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।’
রেলওয়ে জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু তাহের বলেন, ‘রেললাইনের দুই পাশে ১০ ফুট করে জমির নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের। এই জমির মালিক রেলওয়ে। যদি কোনো উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয় সে ক্ষেত্রে আমরা আইনগত সহায়তা দেব।’

No comments

Powered by Blogger.