মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র-নামে আছে কাজে নেই
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মা ও শিশু কেন্দ্রটিতে প্রসব বেদনায় কাতর গৃহবধূ আলেয়া বেগমের ঠাঁই হয়নি। ডাক্তারের অনুপস্থিতির কারণে একজন আয়া তাকে খিঁচুনি রোগ থাকার কথা বলে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। এই স্থানান্তরের পথেই চিকিৎসা কেন্দ্রটির মাত্র তিনশ' গজ দূরে স্কুটারেই তাকে সন্তান জন্ম দিতে হয়েছে।
কপালগুণে প্রসূতি এবং শিশুসন্তান প্রাণে রক্ষা পায়। অথচ সেই সময়ই চিকিৎসা কেন্দ্রটির বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে একই শহরে নিজের ক্লিনিকে রোগী দেখায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। গতকাল সোমবার সমকালের লোকালয় পাতায় এ সম্পর্কে প্রকাশিত রিপোর্টে চিকিৎসকের দায়িত্বহীন আচরণ তুলে ধরা হয়েছে। এ ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রয়োজনে মা ও শিশু ক্লিনিকের সরকারি চাকরি ছেড়ে দেওয়ারও হুমকি দেন। একজন চিকিৎসকের মধ্যে এ ধরনের মানসিকতা থাকলে রোগীরা এদের কাছ থেকে সুচিকিৎসা আশা করতে পারেন কি? সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি যেন অব্যবস্থা ও অনিয়মের শিকার দেশের আরও অনেক পল্লী চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। এখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নামে থাকলেও কাজে নেই। আবার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে জরুরি চিকিৎসা সেবা কে দেবেন তাও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঠিক থাকে না। ফলে জরুরি চিকিৎসাপ্রার্থী রোগীরা এসব সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা না পেয়ে বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে ভিড় জমান। আর যাদের বড় অঙ্কের খরচ চালানোর সামর্থ্য নেই তাদের ফের ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নিয়ে বাঁচার শেষ চেষ্টা করতে দেখা যায়। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার এহেন দৈন্য কি দূর করা যায় না? একজন আসন্ন সন্তানসম্ভবার প্রতি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের একজন আয়ার আচরণ দেখে মনে হয়েছে, কেন্দ্রটি প্রধানত এরাই পাহারা দেয়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার যদি নিজের ক্লিনিকে রোগী দেখায় ব্যস্ত থাকেন, তাহলে আয়াদের আর দোষ কি! স্বাস্থ্য বিভাগের কি উচিত নয়, দেশের পল্লী অঞ্চলের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো ভালোভাবে চলছে কি-না দেখা! বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নামে দায়িত্বজ্ঞান ও হৃদয়হীনদের চিকিৎসার মতো সেবামূলক পেশায় বেমানান।
No comments