একটু বিশ্রাম চাই by সাকিব আল হাসান
অর্জন বা অভিজ্ঞতা বলা যায়, এমন চারটি ঘটনা আছে আমার জীবনে। দুটিই ঘটেছে গত এক বছরে। প্রথম দুটি হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজে হঠাৎ অধিনায়কত্ব পেয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানো আর নিউজিল্যান্ডকে দেশের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করা। পরের দুটি বিপিএল আর সদ্য শেষ হওয়া এশিয়া কাপের সাফল্য।
বিশ্বকাপের পরের এই এক বছর ভীষনই ব্যস্ততায় কেটেছে। অন্যরা যেরকম মাঝে মাঝে এক-দেড়মাসের বিশ্রাম পেয়েছে, আমার সে সৌভাগ্য হয়নি। মনে পড়ে না সর্বশেষ কবে টানা দুই সপ্তাহের বিশ্রাম পেয়েছি। ভালো খেলেছি বলেই হয়তো ক্লান্তিকর মনে হয়নি সময়টা। তবে সবসময়ই মনে হয়, আমার একটু বিশ্রাম দরকার। আশা করি আইপিএলের পর সেটা পাব। কাউন্টিতে যাওয়ার সম্ভাবনা এবার কম। যদি যাইও, চেষ্টা করব অন্তত পনের-বিশটি দিন যেন দেশে একেবারেই কোনো কাজ ছাড়া থাকতে পারি।
এই এক বছরে ক্যারিয়ারের অনেক উত্থান-পতনও দেখেছি। কখনো আমি নায়ক, কখনো ভিলেন। অনেক খেলোয়াড় পাঁচ-সাত বছরের ক্যারিয়ারেও যা দেখে না, আমি যেন এই এক বছরেই তা দেখে ফেলেছি।
বিশ্বকাপ গেছে ভালোমন্দ মিলিয়ে। সবাই আশা করেছিল, আমরা যেন তিনটা ম্যাচ জিতি। আমরা চেয়েছিলাম চারটি ম্যাচ জিততে। তা না পারায় খুব হতাশ হয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের হতাশা কে দেখে! ৫৮ আর ৭৮ এর কারণে আমরা কাঠগড়ায়। অধিনায়ক ছিলাম বলে আমার ওপর দিয়েই ঝড়টা বেশি গেছে। তবে আমার জন্য শেখার অনেক বড় সুযোগ হয়ে এসেছিল বিশ্বকাপ। অনেক কিছু বুঝেছি, জেনেছি বিশ্বকাপে।
বিশ্বকাপের পর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে হোম সিরিজ। গেলাম আইপিএলে। খুব একটা খারাপ করিনি সেখানেও। কাউন্টিতে খেলার অভিজ্ঞতা অনেক সাহায্য করেছে। দেড়-দুই মাস ওদের সঙ্গে থাকা, খেলা। এরপর জিম্বাবুয়ে সফর। আমাদের প্রস্তুতি মোটেও ভালো ছিল না এই সফরের জন্য। কোচিং স্টাফ বদলেছে, দলে অনেক নতুন খেলোয়াড়। টেস্ট জয়ের আশা থাকলেও উল্টো হেরে গেছি। ওয়ানডে সিরিজেও হেরেছি, যেটা কেউ কল্পনাও করেনি। দেশে আসার পর আমার অধিনায়কত্ব চলে গেল।
আগেও বলেছি, অধিনায়কত্ব যাওয়া নিয়ে আমার দুঃখ নেই। উপমহাদেশের ক্রিকেটে এমন ঘটনা অহরহ। আমার কাছেও এটা নতুন কিছু ছিল না। আমার কাজ ক্রিকেট খেলা। দলের জন্য পারফর্ম করতে পারলেই আমি খুশি। জিম্বাবুয়েতে দল হিসেবে আমরা খারাপ করলেও আমার পারফরম্যান্স তো ভালোই ছিল।
আসলে বিশ্বকাপ বাদ দিলে গত এক বছরে আমি নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে কখনো চাপে ছিলাম না। চাপ থাকলে দলের পারফরম্যান্স নিয়ে ছিল। এখানে আমার কিছু করারও নেই। আমি তো অন্যের রান করে দিতে পারব না। অন্যের জন্য উইকেট নিয়ে দিতে পারব না।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম সিরিজেও খুব খারাপ খেলিনি বলে আমার ধারণা। যা যা করা সম্ভব ছিল, করেছি। পাকিস্তান সিরিজে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি ও ইনিংসে ৫ উইকেট নিলাম। এগুলো অনেক বড় অর্জন। নিজের কাছে অন্তত খুব ভালো লেগেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটের নতুন সংযোজন বিপিএলও আমার জন্য বড় ঘটনা। বড় বড় আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়েরা ছিল। তাদের সঙ্গে লড়াই করে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হওয়া অনেক বড় অর্জন। আমার ধারনা, বাংলাদেশের কেউ ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হওয়ায় আমার মতো দেশের সব মানুষই খুশি হয়েছে।
এশিয়া কাপ নিয়ে বলার কিছু নেই। মাত্রই শেষ হলো। সবারই নিশ্চয়ই মনে আছে কী হয়েছে। তবে এশিয়ার চার টেস্ট দলের লড়াইয়ে আমি ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট—এটাকে বড় অর্জনই বলব। টুর্নামেন্টে দল এবং নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে খুবই খুশি আমি। তারপরও অতৃপ্তি থাকে। মাঝে মাঝে মনে হয়, যদি আমি আরও কিছু করতে পারতাম দলের জন্য! দুটি ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছি। বাকি দুটি ম্যাচে জিতলেও হয়তো আমিই ম্যান অব দ্য ম্যাচ হতাম। ৬৪ যেদিন করেছি...২২ রানে হারলাম, সেদিন যদি আমি খেলাটা শেষ করে দিয়ে আসতে পারতাম! এমন তো নয় যে না পারার মতো ব্যাপার ছিল। ফাইনাল নিয়েও একই কথা। আরেকটু সময় থাকলেই হয়তো কিছু একটা হয়ে যেত।
মাঠের পারফরম্যান্সের ছবিটা আইসিসির র্যাঙ্কিংয়েও পাবেন। যদিও র্যাঙ্কিং-ট্যাঙ্কিং আমার কাছে তত গুরুত্বপূর্ণ না। হ্যাঁ, এটা যেহেতু আইসিসির স্বীকৃতি, কিছু অনুপ্রেরণা তো আসেই। সাফল্য ধরে রাখার চাপ আসে। একটা ছোট দলে বড় খেলোয়াড় থাকলে ওই খেলোয়াড়ও কিন্তু ছোট দলের খেলোয়াড়ের মতোই হয়ে যায়। আবার বড় দলে মোটামুটি মানের খেলোয়াড় থাকলেও তার মধ্যে বড় বড় ভাব চলে আসে। আমি বলতে চাচ্ছি, ভালো একটা পর্যায়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই মনের মধ্যে চলে আসে যে, ওদের সঙ্গে আমার একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। মনের মধ্যে ঘুরতে থাকে আমি কার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। চিন্তাটা আর এমন থাকে না যে, আমাকে দলে থাকতে হবে, মোটামুটি একটা পারফরম করলেই চলবে। নিজেকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার অংশ মনে হতে থাকে।
গত ২৪ মার্চ আমার বয়স ২৫ হলো। অনেকে বলেন, বয়সের তুলনায় আমার অর্জন নাকি বেশি। এত সাফল্য, তারকাখ্যাতি আমি কিভাবে নিচ্ছি? প্রশ্নটা আমারও। তবে উত্তর খুঁজতে যাই না। দরকারও মনে করি না। অস্বীকার করব না, মাঝে মাঝে এসব জিনিস একটু হলেও মনের মধ্যে উঁকি দেয়। নিজের অজান্তেই বুঝতে পারি এটা ভেতরে কাজ করছে। আবার বাইরের মানুষও বুঝিয়ে দেয়। বাংলাদেশে রেস্টুরেন্ট ছাড়া ওরকম কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই আমার। ঘুরতে যাওয়া তো দূরের কথা। রেস্টুরেন্ট নয়তো কারও বাসা, তাও খুব বাছাই করা কিছু জায়গায়। তখন বুঝতে পারি আমার অবস্থা আসলে কী।
আমি কিভাবে এসব নিই? আমার চরিত্রই এটাকে নিয়ন্ত্রন করছে। জোর করে কিছু করতে হচ্ছে না। আমার চিন্তাভাবনাই ওরকম। কী হয়ে গেছি, সামনে কী আছে, কি হবো—এসব ভাবনা আমার নেই। বিশ্বাস হয় না? আমার মাথাটা খুলে দেখুন, ভবিষ্যতের ভাবনা জাতীয় কিছু পান কিনা। ও হ্যাঁ, বিশ্রামের আকুতিটা থাকতেই পারে।
এই এক বছরে ক্যারিয়ারের অনেক উত্থান-পতনও দেখেছি। কখনো আমি নায়ক, কখনো ভিলেন। অনেক খেলোয়াড় পাঁচ-সাত বছরের ক্যারিয়ারেও যা দেখে না, আমি যেন এই এক বছরেই তা দেখে ফেলেছি।
বিশ্বকাপ গেছে ভালোমন্দ মিলিয়ে। সবাই আশা করেছিল, আমরা যেন তিনটা ম্যাচ জিতি। আমরা চেয়েছিলাম চারটি ম্যাচ জিততে। তা না পারায় খুব হতাশ হয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের হতাশা কে দেখে! ৫৮ আর ৭৮ এর কারণে আমরা কাঠগড়ায়। অধিনায়ক ছিলাম বলে আমার ওপর দিয়েই ঝড়টা বেশি গেছে। তবে আমার জন্য শেখার অনেক বড় সুযোগ হয়ে এসেছিল বিশ্বকাপ। অনেক কিছু বুঝেছি, জেনেছি বিশ্বকাপে।
বিশ্বকাপের পর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে হোম সিরিজ। গেলাম আইপিএলে। খুব একটা খারাপ করিনি সেখানেও। কাউন্টিতে খেলার অভিজ্ঞতা অনেক সাহায্য করেছে। দেড়-দুই মাস ওদের সঙ্গে থাকা, খেলা। এরপর জিম্বাবুয়ে সফর। আমাদের প্রস্তুতি মোটেও ভালো ছিল না এই সফরের জন্য। কোচিং স্টাফ বদলেছে, দলে অনেক নতুন খেলোয়াড়। টেস্ট জয়ের আশা থাকলেও উল্টো হেরে গেছি। ওয়ানডে সিরিজেও হেরেছি, যেটা কেউ কল্পনাও করেনি। দেশে আসার পর আমার অধিনায়কত্ব চলে গেল।
আগেও বলেছি, অধিনায়কত্ব যাওয়া নিয়ে আমার দুঃখ নেই। উপমহাদেশের ক্রিকেটে এমন ঘটনা অহরহ। আমার কাছেও এটা নতুন কিছু ছিল না। আমার কাজ ক্রিকেট খেলা। দলের জন্য পারফর্ম করতে পারলেই আমি খুশি। জিম্বাবুয়েতে দল হিসেবে আমরা খারাপ করলেও আমার পারফরম্যান্স তো ভালোই ছিল।
আসলে বিশ্বকাপ বাদ দিলে গত এক বছরে আমি নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে কখনো চাপে ছিলাম না। চাপ থাকলে দলের পারফরম্যান্স নিয়ে ছিল। এখানে আমার কিছু করারও নেই। আমি তো অন্যের রান করে দিতে পারব না। অন্যের জন্য উইকেট নিয়ে দিতে পারব না।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম সিরিজেও খুব খারাপ খেলিনি বলে আমার ধারণা। যা যা করা সম্ভব ছিল, করেছি। পাকিস্তান সিরিজে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি ও ইনিংসে ৫ উইকেট নিলাম। এগুলো অনেক বড় অর্জন। নিজের কাছে অন্তত খুব ভালো লেগেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটের নতুন সংযোজন বিপিএলও আমার জন্য বড় ঘটনা। বড় বড় আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়েরা ছিল। তাদের সঙ্গে লড়াই করে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হওয়া অনেক বড় অর্জন। আমার ধারনা, বাংলাদেশের কেউ ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হওয়ায় আমার মতো দেশের সব মানুষই খুশি হয়েছে।
এশিয়া কাপ নিয়ে বলার কিছু নেই। মাত্রই শেষ হলো। সবারই নিশ্চয়ই মনে আছে কী হয়েছে। তবে এশিয়ার চার টেস্ট দলের লড়াইয়ে আমি ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট—এটাকে বড় অর্জনই বলব। টুর্নামেন্টে দল এবং নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে খুবই খুশি আমি। তারপরও অতৃপ্তি থাকে। মাঝে মাঝে মনে হয়, যদি আমি আরও কিছু করতে পারতাম দলের জন্য! দুটি ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছি। বাকি দুটি ম্যাচে জিতলেও হয়তো আমিই ম্যান অব দ্য ম্যাচ হতাম। ৬৪ যেদিন করেছি...২২ রানে হারলাম, সেদিন যদি আমি খেলাটা শেষ করে দিয়ে আসতে পারতাম! এমন তো নয় যে না পারার মতো ব্যাপার ছিল। ফাইনাল নিয়েও একই কথা। আরেকটু সময় থাকলেই হয়তো কিছু একটা হয়ে যেত।
মাঠের পারফরম্যান্সের ছবিটা আইসিসির র্যাঙ্কিংয়েও পাবেন। যদিও র্যাঙ্কিং-ট্যাঙ্কিং আমার কাছে তত গুরুত্বপূর্ণ না। হ্যাঁ, এটা যেহেতু আইসিসির স্বীকৃতি, কিছু অনুপ্রেরণা তো আসেই। সাফল্য ধরে রাখার চাপ আসে। একটা ছোট দলে বড় খেলোয়াড় থাকলে ওই খেলোয়াড়ও কিন্তু ছোট দলের খেলোয়াড়ের মতোই হয়ে যায়। আবার বড় দলে মোটামুটি মানের খেলোয়াড় থাকলেও তার মধ্যে বড় বড় ভাব চলে আসে। আমি বলতে চাচ্ছি, ভালো একটা পর্যায়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই মনের মধ্যে চলে আসে যে, ওদের সঙ্গে আমার একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। মনের মধ্যে ঘুরতে থাকে আমি কার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। চিন্তাটা আর এমন থাকে না যে, আমাকে দলে থাকতে হবে, মোটামুটি একটা পারফরম করলেই চলবে। নিজেকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার অংশ মনে হতে থাকে।
গত ২৪ মার্চ আমার বয়স ২৫ হলো। অনেকে বলেন, বয়সের তুলনায় আমার অর্জন নাকি বেশি। এত সাফল্য, তারকাখ্যাতি আমি কিভাবে নিচ্ছি? প্রশ্নটা আমারও। তবে উত্তর খুঁজতে যাই না। দরকারও মনে করি না। অস্বীকার করব না, মাঝে মাঝে এসব জিনিস একটু হলেও মনের মধ্যে উঁকি দেয়। নিজের অজান্তেই বুঝতে পারি এটা ভেতরে কাজ করছে। আবার বাইরের মানুষও বুঝিয়ে দেয়। বাংলাদেশে রেস্টুরেন্ট ছাড়া ওরকম কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই আমার। ঘুরতে যাওয়া তো দূরের কথা। রেস্টুরেন্ট নয়তো কারও বাসা, তাও খুব বাছাই করা কিছু জায়গায়। তখন বুঝতে পারি আমার অবস্থা আসলে কী।
আমি কিভাবে এসব নিই? আমার চরিত্রই এটাকে নিয়ন্ত্রন করছে। জোর করে কিছু করতে হচ্ছে না। আমার চিন্তাভাবনাই ওরকম। কী হয়ে গেছি, সামনে কী আছে, কি হবো—এসব ভাবনা আমার নেই। বিশ্বাস হয় না? আমার মাথাটা খুলে দেখুন, ভবিষ্যতের ভাবনা জাতীয় কিছু পান কিনা। ও হ্যাঁ, বিশ্রামের আকুতিটা থাকতেই পারে।
No comments