যুদ্ধাপরাধের বিচার : ওয়েবসাইট ও মিডিয়ার অপপ্রচার by মিল্টন বিশ্বাস
দৈনিক ভোরের কাগজে ৬ ডিসেম্বর ২০১১ এবং ১৫ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম নিয়ে আমার দুটি কলাম প্রকাশিত হয়। কলাম দুটি প্রকাশিত হলে অনলাইন পত্রিকার মন্তব্যের পাতায় বিচিত্র পোস্ট আসতে থাকে। এর অধিকাংশই চলমান বিচারপ্রক্রিয়ার বিরুদ্ধের মতামত।
কেবল আমার লেখার মন্তব্য পোস্টের কথা নয়, ওয়েবসাইটের বিভিন্ন ব্লগ ও বিদেশি মিডিয়ার বড় রকমের ভূমিকা রয়েছে এই বিচারপ্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তরা '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করেছে। পাকিস্তান না ভাঙার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে জঘন্যতম গণহত্যায় মেতে উঠেছে। নিজে জল্লাদের ভূমিকা পালন করে জবাই করেছে অসংখ্য বাঙালিকে; ধর্ষণ করেছে নারীদের। বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় মেতেছে পাকিস্তানি আদর্শের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে। গণহত্যায় ইন্ধন ও অংশগ্রহণ, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ_প্রতিটিই কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অথচ তাদের পক্ষে দেশ-বিদেশে কথা বলার মানুষের অভাব নেই। এটা কি আশ্চর্যের নয়?
১৭ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি সংবাদ হলো, 'পেইড লবিস্ট'রা মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।' আইনমন্ত্রীর বরাত দিয়ে বলা হয়, এই বিচারের উদ্দেশ্য রাজনৈতিকভাবে কাউকে হেনস্তা করা নয়, বরং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু কিছু ব্যক্তি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করছে। বিচারিক কাজে নিয়োজিতদের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই। এই বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হলে বিশ্বের কাছে একটি আদর্শ উদাহরণ হয়ে থাকবে। এ জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্র্রদায়ের সাহায্য প্রত্যাশিত। অথচ কেউ কেউ এর ভেতরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য খুঁজে ফিরছেন। ৪ মার্চ বেবি মওদুদ সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইট ও বিভিন্ন ব্লগে অপপ্রচার চালাচ্ছে; মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছে। ফেসবুকে ও অন্যান্য ব্লগে কাল্পনিক কেচ্ছা তৈরি করছে এই বিচারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে। এই অপপ্রচার বন্ধে সরকারের ভূমিকা প্রত্যাশা করেন এবং গণতন্ত্রের ধারা ব্যাহতকারীদের রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি একটি ব্লগে (posted by Fugstar) সরাসরি কুখ্যাত গোলাম আযমের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে পোস্ট দিয়েছেন জনৈক লেখক। দেশের যাঁরা প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ, তাঁদের প্রতি ব্যঙ্গ করা হয়েছে। শাহরিয়ার কবিরের প্রতি বিষোদ্গার করে সাইটের মাধ্যমে হিতাকাঙ্ক্ষীদের কাছে নৈতিক, বৌদ্ধিক, আর্থিক সহায়তা এবং রাজনৈতিক চাপের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। বিপুল অর্থ ব্যয় করে চ্যানেল এস, পিস টিভি, আলজাজিরা এবং চ্যানেল ফোরে অপপ্রচার চলছে। ইতিমধ্যে গোলাম আযমের ছেলের সাক্ষাৎকার দেখে থাকবেন অনেকে। আলজাজিরা টিভির সাংবাদিক নিকোলাস হকের তৎপরতা অনেকেরই মনে থাকার কথা। গোলাম আযমের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য তাঁর ঢাকায় অবস্থান অনেককেই চিন্তিত করেছে। প্রচার করা হচ্ছে, এ দেশে ইসলামী দল ও সেই দলের কর্মীদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে তাদের জীবন বিপন্ন। তাই তারা বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানপন্থী ও রাজাকার বাঙালি অধ্যাপক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেনের গ্রন্থের (দি ওয়েস্ট অব টাইম) রেফারেন্স দিয়ে যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ পবিত্র কোরআন শরিফের ব্যাখ্যা দিয়ে নিরপরাধ বলেছেন যুদ্ধাপরাধীদের। লন্ডনপ্রবাসী এক বাঙালি অনুকম্পা দেখিয়েছে জানুয়ারির ৪ তারিখে 'ওয়ার ক্রাইম ফিলিং কেবিনেট' শিরোনামে পোস্ট লিখে; যেখানে যুদ্ধাপরাধের ডকুমেন্টের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়েছে। ড. কামাল হোসেন, শাহরিয়ার কবিরের ভূমিকা নিয়ে এখানেও ব্যঙ্গ করা হয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর ২০১১ একটি পোস্টে আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট হিসেবে আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে বলেও মন্তব্য প্রকাশ করা হয়। অপপ্রচারের মাধ্যমে 'ক্যাঙ্গারু কোর্ট' বলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক আদালতকে। কারণ, কুখ্যাত রাজাকাররা নাকি ন্যায্য বিচার পাচ্ছে না। ফলে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তারা গালগল্প সৃষ্টি করছে। মূলত যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় বাংলাদেশে মৌলবাদীদের ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। এ জন্যই বিশ্বব্যাপী সেই ইন্ধনদাতাদের আঁত জ্বলে উঠেছে।
[RTF bookmark start :] BM7693507025804289796 [RTF bookmark end :] BM7693507025804289796 ২০১০ সালের ২ এপ্রিল বিএনপি বলেছিল, সরকার নির্বাচনী অঙ্গীকারের বাইরে যুদ্ধাপরাধী ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত। গত বছরের ৫ অক্টোবর খালেদা জিয়া বলেছেন, '৪০ বছর পর বিচারের নামে জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করে দিচ্ছে সরকার।' গত বছর ডিসেম্বরে দলের পক্ষ থেকে এই বিচারপ্রক্রিয়ায় সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক মহলকে অনুরোধ জানান তিনি। আদালত সম্পর্কেও তাঁদের অনাস্থার কথা বলেন। তাঁদের বিবৃতি যে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কম ধারণা রাখা মানুষের কাছেও অবিবেচনাপ্রসূত, তা উল্লেখ না করলেও চলে। এ কারণে পত্রিকাগুলোর অনলাইন সংস্করণে এই সংবাদের নিচে অজস্র মতামত পোস্ট হয়; যার অধিকাংশই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে। ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর একটি পোস্ট ছিল এ রকম_We are not surprised of BNP's demand. It is open secret that BNP does not want trial of war criminals. But the young generation will not let the venal agenda a success. ইতিমধ্যে ২০১০ সালের ২৪ মার্চ হেগের আন্তর্জাতিক আদালত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রচেষ্টাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। গণহত্যা, মাবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার শেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ বিরল সম্মানের অধিকারী হতে যাচ্ছে, তা-ও বলা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত প্রথম থেকে এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছে; যদিও তারা সেই তৎপরতা বজায় রেখেছে।
বিএনপি প্রচার করে, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের সাধারণ ক্ষমা করেছেন। এটিকে অন্যতম মিথ্যা প্রচারণা বলা যায়। এ জন্য অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল থেকে ২০১০ সালের ২০ অক্টোবর বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার চান সবাই। বিএনপি বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ করতে বলার মাধ্যমে শহীদদের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করেছে। তারা যখন লোক দেখানো মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার আয়োজন করে, সেটাও হাস্যকর হয়ে ওঠে। কারণ সেই অধিকার তারা হারিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামী লীগ সরকারের একক ইস্যু নয়; এটা সমগ্র বাঙালির প্রাণের দাবি। এ জন্য ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে; বিচারের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা যেন অসমাপ্ত থেকে না যায়।
১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্তকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। ওই বিচারে বাধা দেওয়ার ষড়যন্ত্রে জামায়াত-বিএনপি জড়িত বলে একাধিক তথ্যপ্রমাণও উপস্থাপিত হয়েছে। বর্তমানে জামায়াতের ছয় নেতা এবং বিএনপির এক সংসদ সদস্য বিচারের সম্মুখীন। এ বিচার বানচাল করতে বিদেশে অনেক সংগঠন কাজ করছে; সাক্ষীদের কিনতে চাচ্ছে; তদন্ত কর্মকর্তাদের হুমকি দিচ্ছে। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, গোলাম আযমের পক্ষে 'ভারতের জামায়াতে ইসলামী হিন্দ' দুঃখ ও হতাশা প্রকাশ করেছে এবং তাঁকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিবৃতিও দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের ফলে ভারতের এই মৌলবাদী দলের মাথাব্যথার কারণ দেখা দিয়েছে। রাজাকারকে ইসলামের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার এই চেষ্টা সত্যিই অভিনব। তবে আরব বিশ্ব ও পাকিস্তানে তাদের নেটওয়ার্ক শক্ত। ইদানীং লন্ডনভিত্তিক ইসলামী দলের তৎপরতাও লক্ষণীয়। গোলাম আযম গ্রেপ্তার হওয়ার পর মৌলবাদীদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সম্পর্কে আমরা সচেতন হয়েছি; তহবিলসহ তাদের অর্থের জোগান সম্পর্কেও আমরা ওয়াকিবহাল। আশা করা যায়, ওয়েবসাইট ও মিডিয়ার অপপ্রচার শেষ পর্যন্ত বিচারপ্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারবে না। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত 'আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে'র সাফল্য কামনা করছি।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
dr.miltonbis@yahoo.com
১৭ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি সংবাদ হলো, 'পেইড লবিস্ট'রা মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।' আইনমন্ত্রীর বরাত দিয়ে বলা হয়, এই বিচারের উদ্দেশ্য রাজনৈতিকভাবে কাউকে হেনস্তা করা নয়, বরং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু কিছু ব্যক্তি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করছে। বিচারিক কাজে নিয়োজিতদের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই। এই বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হলে বিশ্বের কাছে একটি আদর্শ উদাহরণ হয়ে থাকবে। এ জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্র্রদায়ের সাহায্য প্রত্যাশিত। অথচ কেউ কেউ এর ভেতরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য খুঁজে ফিরছেন। ৪ মার্চ বেবি মওদুদ সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইট ও বিভিন্ন ব্লগে অপপ্রচার চালাচ্ছে; মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছে। ফেসবুকে ও অন্যান্য ব্লগে কাল্পনিক কেচ্ছা তৈরি করছে এই বিচারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে। এই অপপ্রচার বন্ধে সরকারের ভূমিকা প্রত্যাশা করেন এবং গণতন্ত্রের ধারা ব্যাহতকারীদের রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি একটি ব্লগে (posted by Fugstar) সরাসরি কুখ্যাত গোলাম আযমের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে পোস্ট দিয়েছেন জনৈক লেখক। দেশের যাঁরা প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ, তাঁদের প্রতি ব্যঙ্গ করা হয়েছে। শাহরিয়ার কবিরের প্রতি বিষোদ্গার করে সাইটের মাধ্যমে হিতাকাঙ্ক্ষীদের কাছে নৈতিক, বৌদ্ধিক, আর্থিক সহায়তা এবং রাজনৈতিক চাপের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। বিপুল অর্থ ব্যয় করে চ্যানেল এস, পিস টিভি, আলজাজিরা এবং চ্যানেল ফোরে অপপ্রচার চলছে। ইতিমধ্যে গোলাম আযমের ছেলের সাক্ষাৎকার দেখে থাকবেন অনেকে। আলজাজিরা টিভির সাংবাদিক নিকোলাস হকের তৎপরতা অনেকেরই মনে থাকার কথা। গোলাম আযমের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য তাঁর ঢাকায় অবস্থান অনেককেই চিন্তিত করেছে। প্রচার করা হচ্ছে, এ দেশে ইসলামী দল ও সেই দলের কর্মীদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে তাদের জীবন বিপন্ন। তাই তারা বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানপন্থী ও রাজাকার বাঙালি অধ্যাপক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেনের গ্রন্থের (দি ওয়েস্ট অব টাইম) রেফারেন্স দিয়ে যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ পবিত্র কোরআন শরিফের ব্যাখ্যা দিয়ে নিরপরাধ বলেছেন যুদ্ধাপরাধীদের। লন্ডনপ্রবাসী এক বাঙালি অনুকম্পা দেখিয়েছে জানুয়ারির ৪ তারিখে 'ওয়ার ক্রাইম ফিলিং কেবিনেট' শিরোনামে পোস্ট লিখে; যেখানে যুদ্ধাপরাধের ডকুমেন্টের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়েছে। ড. কামাল হোসেন, শাহরিয়ার কবিরের ভূমিকা নিয়ে এখানেও ব্যঙ্গ করা হয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর ২০১১ একটি পোস্টে আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট হিসেবে আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে বলেও মন্তব্য প্রকাশ করা হয়। অপপ্রচারের মাধ্যমে 'ক্যাঙ্গারু কোর্ট' বলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক আদালতকে। কারণ, কুখ্যাত রাজাকাররা নাকি ন্যায্য বিচার পাচ্ছে না। ফলে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তারা গালগল্প সৃষ্টি করছে। মূলত যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় বাংলাদেশে মৌলবাদীদের ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। এ জন্যই বিশ্বব্যাপী সেই ইন্ধনদাতাদের আঁত জ্বলে উঠেছে।
[RTF bookmark start :] BM7693507025804289796 [RTF bookmark end :] BM7693507025804289796 ২০১০ সালের ২ এপ্রিল বিএনপি বলেছিল, সরকার নির্বাচনী অঙ্গীকারের বাইরে যুদ্ধাপরাধী ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত। গত বছরের ৫ অক্টোবর খালেদা জিয়া বলেছেন, '৪০ বছর পর বিচারের নামে জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করে দিচ্ছে সরকার।' গত বছর ডিসেম্বরে দলের পক্ষ থেকে এই বিচারপ্রক্রিয়ায় সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক মহলকে অনুরোধ জানান তিনি। আদালত সম্পর্কেও তাঁদের অনাস্থার কথা বলেন। তাঁদের বিবৃতি যে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কম ধারণা রাখা মানুষের কাছেও অবিবেচনাপ্রসূত, তা উল্লেখ না করলেও চলে। এ কারণে পত্রিকাগুলোর অনলাইন সংস্করণে এই সংবাদের নিচে অজস্র মতামত পোস্ট হয়; যার অধিকাংশই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে। ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর একটি পোস্ট ছিল এ রকম_We are not surprised of BNP's demand. It is open secret that BNP does not want trial of war criminals. But the young generation will not let the venal agenda a success. ইতিমধ্যে ২০১০ সালের ২৪ মার্চ হেগের আন্তর্জাতিক আদালত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রচেষ্টাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। গণহত্যা, মাবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার শেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ বিরল সম্মানের অধিকারী হতে যাচ্ছে, তা-ও বলা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত প্রথম থেকে এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছে; যদিও তারা সেই তৎপরতা বজায় রেখেছে।
বিএনপি প্রচার করে, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের সাধারণ ক্ষমা করেছেন। এটিকে অন্যতম মিথ্যা প্রচারণা বলা যায়। এ জন্য অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল থেকে ২০১০ সালের ২০ অক্টোবর বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার চান সবাই। বিএনপি বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ করতে বলার মাধ্যমে শহীদদের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করেছে। তারা যখন লোক দেখানো মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার আয়োজন করে, সেটাও হাস্যকর হয়ে ওঠে। কারণ সেই অধিকার তারা হারিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামী লীগ সরকারের একক ইস্যু নয়; এটা সমগ্র বাঙালির প্রাণের দাবি। এ জন্য ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে; বিচারের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা যেন অসমাপ্ত থেকে না যায়।
১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্তকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। ওই বিচারে বাধা দেওয়ার ষড়যন্ত্রে জামায়াত-বিএনপি জড়িত বলে একাধিক তথ্যপ্রমাণও উপস্থাপিত হয়েছে। বর্তমানে জামায়াতের ছয় নেতা এবং বিএনপির এক সংসদ সদস্য বিচারের সম্মুখীন। এ বিচার বানচাল করতে বিদেশে অনেক সংগঠন কাজ করছে; সাক্ষীদের কিনতে চাচ্ছে; তদন্ত কর্মকর্তাদের হুমকি দিচ্ছে। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, গোলাম আযমের পক্ষে 'ভারতের জামায়াতে ইসলামী হিন্দ' দুঃখ ও হতাশা প্রকাশ করেছে এবং তাঁকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিবৃতিও দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের ফলে ভারতের এই মৌলবাদী দলের মাথাব্যথার কারণ দেখা দিয়েছে। রাজাকারকে ইসলামের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার এই চেষ্টা সত্যিই অভিনব। তবে আরব বিশ্ব ও পাকিস্তানে তাদের নেটওয়ার্ক শক্ত। ইদানীং লন্ডনভিত্তিক ইসলামী দলের তৎপরতাও লক্ষণীয়। গোলাম আযম গ্রেপ্তার হওয়ার পর মৌলবাদীদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সম্পর্কে আমরা সচেতন হয়েছি; তহবিলসহ তাদের অর্থের জোগান সম্পর্কেও আমরা ওয়াকিবহাল। আশা করা যায়, ওয়েবসাইট ও মিডিয়ার অপপ্রচার শেষ পর্যন্ত বিচারপ্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারবে না। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত 'আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে'র সাফল্য কামনা করছি।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
dr.miltonbis@yahoo.com
No comments