দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো অপরাধ by আকরামুল ইসলাম
লোকে বলে, দেয়ালেরও কান আছে। প্রাণহীন দেয়ালের অগোচরীয় কান থাকলেও চোখ দিয়ে দেখার, মুখ দিয়ে বলার, কিংবা হাত দিয়ে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা নেই। সুযোগসন্ধানী হিসেবে সামান্যতম সুযোগের সদ্ব্যবহার করা থেকে আমরা পিছপা হতে রাজি নই।
বোধ করি, সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করণার্থেই পরের নির্মিত দেয়ালকে নিজের ক্যানভাস মনে করে রাতের অন্ধকারে মালিকের অগোচরে রং-তুলির ছোঁয়ায় আমরা ফুটিয়ে তুলি নিজের সুপ্ত শিল্পকর্ম (!) কিংবা সেঁটে দিই প্রযুক্তির কল্যাণে মুদ্র্রিত বিভিন্ন রংচটা পোস্টার। লোকে আদর করে আবার এই শিল্পকর্মের নাম দিয়েছে ‘চিকা মারা’, ভিন দেশে যা ‘গ্রিফিতি’ নামে পরিচিত। দেয়াল যদি সত্যিই দেখতে পেত তার ওপর চলছে কী মধুর নির্যাতন, তবে আত্মচিৎকারের ধ্বনিতে মানুষ হতো বিহ্বল কিংবা হাত থাকলে একসময় নিজের সৌন্দর্য রক্ষায় নিজেই গড়ে তুলত প্রতিরোধ। বাড়ি কিংবা প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে মনের মতো করে রং করিয়ে নেন নিজের সীমানা কিংবা বাসস্থানের দেয়াল, সঙ্গে আবার ছোট্ট করে সাইনবোর্ড লিখে নোটিশ জারি করেন, এখানে লেখা বা পোস্টার লাগানো নিষেধ। কিন্তু সুযোগসন্ধানীরা থোড়াই কেয়ার ভাব নিয়ে সবার আগে সেই সাইনবোর্ডটিই আড়াল করে মনোনিবেশ করেন নিজের শিল্পকর্মে। ভাবখানা এমন যে নোটিশটি তাঁর নজরেই পড়েনি কিংবা দেখলেও নোটিশ তো তাঁকে দেখছে না। বর্তমান সময়ে নগরের অধিকাংশ দেয়ালই ব্যবহূত হচ্ছে কোনো না কোনো কোচিং সেন্টার, বিউটি পারলার, হারবাল সেন্টার বা দাওয়াখানা, কুংফু কারাতে প্রশিক্ষণ বা সিনেমা হল মালিকদের প্রচার-মুখপত্র হিসেবে। আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার শুভেচ্ছাবাণী, আন্দোলনের দাবিদাওয়া, রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ, স্লোগান বা নির্বাচনের প্রচারণার কাজেও বহুকাল ধরে বহুল জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবেও দেয়ালের ব্যবহার স্বীকৃত। এদিকে সাম্প্র্রতিক সময়ে শহরের অভিজাত এলাকাগুলোতে দেয়ালে রং করে বিভিন্ন নামধারী গ্রুপ নিজেদের জয়গান করে আওয়াজ দিচ্ছে আমরাও আছি। মাঝেমধ্যেই আবার নগরের রাস্তাঘাট ছেয়ে যায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশ উপলক্ষে নির্মিত তোরণ বা ব্যানারের আড়ালে। নগরের এই সৌন্দর্যহানি সৌন্দর্যপিয়াসী যেকোনো বাসিন্দার চোখেই রীতিমতো পীড়াদায়ক। মাঝেমধ্যে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এসব দেয়াললিখন, পোস্টার, তোরণ, ব্যানার অপসারণ করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পর আবার ‘যেই লাউ সেই কদু’।
বর্তমান সময়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সামনে, তাই নগর আবার ছেয়ে গেছে বিভিন্ন মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের প্রচারণা, শুভেচ্ছা পোস্টার ও ব্যানারে। নির্বাচন কমিশনের আচরণ বিধিমালায় দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানোয় সীমাবদ্ধতা থাকলেও বেসরকারি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই বিধিমালার আওতাবহির্ভূত হওয়ায় তাদের পণ্য বিপণন, সেবা প্রদান ও অন্যান্য বাণিজ্যিক বিষয়ে যত্রতত্র পোস্টার লাগানো হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই যত্রতত্র দেয়ালে লেখা, পোস্টার লাগানো দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও আমাদের দেশে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন ছিল না। তবে সম্প্র্রতি নগরের সৌন্দর্য রক্ষায় দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণকল্পে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ডের বিধান রেখে পাস করা হয়েছে দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১২। এ আইনে দেয়াল অর্থে বাসস্থান, অফিস, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাকেন্দ্র, শিল্পকারখানা, দোকান বা অন্য কোনো স্থাপনার ভেতরের বা বাইরের দেয়াল কিংবা সীমানা নির্ধারণকারী বেড়া এবং বৃক্ষ, বিদ্যুতের খুঁটি, খাম্বা, সড়কদ্বীপ, সড়ক বিভাজন, ব্রিজ, কালভার্ট, সড়কের উপরি ভাগ ও বাড়ির ছাদকে বোঝানো হয়েছে। দেয়াললিখন অর্থে প্রচারের উদ্দেশ্যে যেকোনো রঙের কালি, চুন বা কেমিক্যাল দ্বারা দেয়াল অথবা যানবাহনে কোনো কিছু লেখা, মুদ্রণ, ছাপচিত্র বা চিত্র আঁকা এবং পোস্টার অর্থে কোনো কাগজ, কাপড়, রেক্সিন বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমসহ যেকোনো মাধ্যমে প্রস্তুত করা কোনো প্রচারপত্র, বিজ্ঞাপনপত্র, বিজ্ঞাপনচিত্র কিংবা যেকোনো ধরনের ব্যানার ও বিলবোর্ডকে বোঝানো হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ (ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন) প্রশাসনিক আদেশ দ্বারা স্থান নির্ধারণ করে দেবে এবং ওই নির্ধারিত স্থানে দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো যাবে। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে নির্ধারিত স্থানের বাইরে বিধি দ্বারা নির্ধারিত শর্ত ও পদ্ধতিতে এবং ফি দিয়ে দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো যাবে।
কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই বিধান লঙ্ঘন করলে শাস্তি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা এবং অনাদায়ে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, কোনো সুবিধাভোগীর অনুকূলে বিধান লঙ্ঘন করে দেয়াললিখন বা পোস্টার লাগানো হলে ওই সুবিধাভোগীর বিরুদ্ধে সর্বনিম্ন ১০ হাজার ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা যাবে এবং অনাদায়ে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া যাবে। বিচারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগ পাওয়া গেলে মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯ অনুযায়ী বিচার হবে। সুবিধাভোগীর ক্ষেত্রে অভিযোগ পাওয়া গেলে ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮ অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার হবে। কোনো কোম্পানি যদি এই আইন লঙ্ঘন করে, তবে ওই কোম্পানির প্রত্যেক পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব, অংশীদার, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই অপরাধ সংঘটন করেছেন বলে ধরা হবে। বিদ্যমান আইনের বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন পরিচালিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ কোনো স্থানীয় নির্বাচনে, নির্বাচনী প্রচারণাসংক্রান্ত দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিবিধান এবং এ উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারি করা নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে। আরও বলা হয়েছে, অন্য কোনো নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন নিয়ে অনুমোদিত স্থানে নির্ধারিত শর্তে নির্বাচনী প্রচারণাসংক্রান্ত দেয়াললিখন বা পোস্টার লাগানো যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে যে নির্বাচন শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে ওই দেয়াললিখন বা পোস্টার অপসারণ করতে হবে। এই আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী বিদ্যমান দেয়াললিখন বা পোস্টার মুছে ফেলা ও অপসারণের জন্য সরকার গেজেটের দ্বারা সময়সীমা নির্ধারণ করে দেবে এবং ওই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তা অপসারণ ও মুছে ফেলতে হবে।
যদি এই সময়সীমার মধ্যে তা অপসারণ না করা হয়, তবে সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তা অপসারণের ব্যবস্থা নেবে এবং এর জন্য আনুষঙ্গিক ব্যয়ের সমুদয় অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সুবিধাভোগীর কাছ থেকে আদায় করতে পারবে। সম্প্র্রতি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের অননুমোদিত হোর্ডিং, পোস্টার, ব্যানার, তোরণ, দেয়াললিখন ও প্রচারণা-সংক্রান্ত অন্যান্য প্রদর্শনী ও নির্মাণকাজ ১০ দিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া জনগণের ও ব্যক্তিগত সম্পদের ওপর দৃশ্যদূষণকারী এ ধরনের প্রচারণা রোধ ও নিয়ন্ত্রণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।
আমাদের দেশে অনেক আইন করা হয়, কিন্তু তার প্রয়োগ সামান্যই। তবে আইনের দ্বারা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সবার আগে দরকার সচেতনতা। আমার দেশ, আমার শহর পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আমারও রয়েছে। তাই সবাই যদি অন্তত নিজের দেয়ালটি পরিচ্ছন্ন রাখি এবং অন্যের দেয়াল নষ্ট করার মানসিকতা বদলে ফেলি, তবেই আমাদের প্রিয় নগর ফিরে পাবে তার হারানো সৌন্দর্য।
বর্তমান সময়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সামনে, তাই নগর আবার ছেয়ে গেছে বিভিন্ন মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের প্রচারণা, শুভেচ্ছা পোস্টার ও ব্যানারে। নির্বাচন কমিশনের আচরণ বিধিমালায় দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানোয় সীমাবদ্ধতা থাকলেও বেসরকারি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই বিধিমালার আওতাবহির্ভূত হওয়ায় তাদের পণ্য বিপণন, সেবা প্রদান ও অন্যান্য বাণিজ্যিক বিষয়ে যত্রতত্র পোস্টার লাগানো হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই যত্রতত্র দেয়ালে লেখা, পোস্টার লাগানো দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও আমাদের দেশে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন ছিল না। তবে সম্প্র্রতি নগরের সৌন্দর্য রক্ষায় দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণকল্পে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ডের বিধান রেখে পাস করা হয়েছে দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১২। এ আইনে দেয়াল অর্থে বাসস্থান, অফিস, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাকেন্দ্র, শিল্পকারখানা, দোকান বা অন্য কোনো স্থাপনার ভেতরের বা বাইরের দেয়াল কিংবা সীমানা নির্ধারণকারী বেড়া এবং বৃক্ষ, বিদ্যুতের খুঁটি, খাম্বা, সড়কদ্বীপ, সড়ক বিভাজন, ব্রিজ, কালভার্ট, সড়কের উপরি ভাগ ও বাড়ির ছাদকে বোঝানো হয়েছে। দেয়াললিখন অর্থে প্রচারের উদ্দেশ্যে যেকোনো রঙের কালি, চুন বা কেমিক্যাল দ্বারা দেয়াল অথবা যানবাহনে কোনো কিছু লেখা, মুদ্রণ, ছাপচিত্র বা চিত্র আঁকা এবং পোস্টার অর্থে কোনো কাগজ, কাপড়, রেক্সিন বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমসহ যেকোনো মাধ্যমে প্রস্তুত করা কোনো প্রচারপত্র, বিজ্ঞাপনপত্র, বিজ্ঞাপনচিত্র কিংবা যেকোনো ধরনের ব্যানার ও বিলবোর্ডকে বোঝানো হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ (ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন) প্রশাসনিক আদেশ দ্বারা স্থান নির্ধারণ করে দেবে এবং ওই নির্ধারিত স্থানে দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো যাবে। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে নির্ধারিত স্থানের বাইরে বিধি দ্বারা নির্ধারিত শর্ত ও পদ্ধতিতে এবং ফি দিয়ে দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো যাবে।
কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই বিধান লঙ্ঘন করলে শাস্তি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা এবং অনাদায়ে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, কোনো সুবিধাভোগীর অনুকূলে বিধান লঙ্ঘন করে দেয়াললিখন বা পোস্টার লাগানো হলে ওই সুবিধাভোগীর বিরুদ্ধে সর্বনিম্ন ১০ হাজার ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা যাবে এবং অনাদায়ে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া যাবে। বিচারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগ পাওয়া গেলে মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯ অনুযায়ী বিচার হবে। সুবিধাভোগীর ক্ষেত্রে অভিযোগ পাওয়া গেলে ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮ অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার হবে। কোনো কোম্পানি যদি এই আইন লঙ্ঘন করে, তবে ওই কোম্পানির প্রত্যেক পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব, অংশীদার, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই অপরাধ সংঘটন করেছেন বলে ধরা হবে। বিদ্যমান আইনের বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন পরিচালিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ কোনো স্থানীয় নির্বাচনে, নির্বাচনী প্রচারণাসংক্রান্ত দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিবিধান এবং এ উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারি করা নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে। আরও বলা হয়েছে, অন্য কোনো নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন নিয়ে অনুমোদিত স্থানে নির্ধারিত শর্তে নির্বাচনী প্রচারণাসংক্রান্ত দেয়াললিখন বা পোস্টার লাগানো যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে যে নির্বাচন শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে ওই দেয়াললিখন বা পোস্টার অপসারণ করতে হবে। এই আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী বিদ্যমান দেয়াললিখন বা পোস্টার মুছে ফেলা ও অপসারণের জন্য সরকার গেজেটের দ্বারা সময়সীমা নির্ধারণ করে দেবে এবং ওই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তা অপসারণ ও মুছে ফেলতে হবে।
যদি এই সময়সীমার মধ্যে তা অপসারণ না করা হয়, তবে সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তা অপসারণের ব্যবস্থা নেবে এবং এর জন্য আনুষঙ্গিক ব্যয়ের সমুদয় অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সুবিধাভোগীর কাছ থেকে আদায় করতে পারবে। সম্প্র্রতি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের অননুমোদিত হোর্ডিং, পোস্টার, ব্যানার, তোরণ, দেয়াললিখন ও প্রচারণা-সংক্রান্ত অন্যান্য প্রদর্শনী ও নির্মাণকাজ ১০ দিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া জনগণের ও ব্যক্তিগত সম্পদের ওপর দৃশ্যদূষণকারী এ ধরনের প্রচারণা রোধ ও নিয়ন্ত্রণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।
আমাদের দেশে অনেক আইন করা হয়, কিন্তু তার প্রয়োগ সামান্যই। তবে আইনের দ্বারা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সবার আগে দরকার সচেতনতা। আমার দেশ, আমার শহর পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আমারও রয়েছে। তাই সবাই যদি অন্তত নিজের দেয়ালটি পরিচ্ছন্ন রাখি এবং অন্যের দেয়াল নষ্ট করার মানসিকতা বদলে ফেলি, তবেই আমাদের প্রিয় নগর ফিরে পাবে তার হারানো সৌন্দর্য।
No comments