বিদ্যুতের দাবিতে আ.লীগের বিক্ষোভ, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি

বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে গতকাল শনিবার পাবনা ও খুলনায় সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে। পাবনায় বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এক নেতা। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় মসজিদে মসজিদে বৃষ্টির জন্য করা হচ্ছে মোনাজাত।


নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে গতকাল চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।
অবরোধ ও বিক্ষোভ: প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘন ঘন লোডশেডিং বন্ধ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে গতকাল সকাল ১০টার দিকে পাবনা-চাটমোহর সড়কে আটঘরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় এলাকাবাসী মানববন্ধন করেন। একপর্যায়ে মানববন্ধনটি বিক্ষোভ মিছিলে রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও সমাবেশ করেন। এ সময় সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সমাবেশে বক্তব্য দেন শহীদুল ইসলাম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার জহুরুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল গফুর মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহায়মিন হোসেন ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম প্রমুখ। পরে পুলিশ এসে সমাবেশকারীদের অনুরোধ জানালে তাঁরা সড়ক অবরোধ তুলে নেন।
এ প্রসঙ্গে শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ১৭ দিন ধরে প্রতিদিন প্রায় ২৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে এলাকাবাসী, সাধারণ কৃষক ও ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। বিদ্যুতের অভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে সেচব্যবস্থা। পানির অভাবে প্রায় পাঁচ হাজার বিঘা বোরো জমির আবাদ হুমকির মধ্যে পড়েছে।
শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় আন্দোলনে নেমেছি। লোডশেডিং বন্ধ করে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ না করা হলে আগামী ৪ এপ্রিল চাটমোহর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।’
আটঘরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শ মানুষ সড়কে নেমে আসায় কিছুক্ষণ যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি ৩০ পয়সা মূল্যবৃদ্ধি এবং অব্যাহত লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে গতকাল বেলা ১১টায় খুলনা নাগরিক সমাজের উদ্যোগে বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে। মিছিলের আগে নগরের শহীদ হাদিস পার্কে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তারা ভয়াবহ লোডশেডিং বন্ধ ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির তীব্র প্রতিবাদ জানান। তাঁরা আরও বলেন, সরকার ঠিকমতো বিদ্যুৎ দিতে পারছে না। কিন্তু দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। এ ছাড়া বিদ্যুতের এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। তাঁরা অবিলম্বে বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবি জানান।
নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব ফিরোজ আহমেদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন অধ্যাপক জাফর ইমাম, সৈয়দা রেহানা ইসা, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, কবি রুহুল আমিন সিদ্দিকী, চিকিৎসক নাসির উদ্দিন প্রমুখ।
বৃষ্টির জন্য মোনাজাত: মসজিদে মসজিদে বৃষ্টির জন্য করা হচ্ছে বিশেষ মোনাজাত। উপজেলার মার্কাজ মসজিদের ইমাম মাওলানা কাওসার আহমেদ ও পৌর বাজার মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা ঈসা খান জানান, বৃষ্টির জন্য বিভিন্ন এলাকার মসজিদে মোনাজাত করা হয়েছে।
ঈশ্বরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহফুজা আক্তার, সাফায়েত হোসেন, পারভেজ মিয়া জানায়, লোডশেডিংয়ের জন্য তারা পড়ালেখা করতে পারছে না।
ঈশ্বরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, চাহিদামাফিক বিদ্যুৎ না পাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি: বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। চেম্বারের সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম এ ব্যাপারে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৩৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট। সরবরাহ করা হচ্ছে গড়ে মাত্র ২২০ মিলিয়ন ঘনফুট। পর্যাপ্ত গ্যাস ও গ্যাস সংযোগের অভাবে এ অঞ্চলের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাত, সিএনজি ফিলিং স্টেশন, আবাসন, স্টিল ও রি-রোলিং মিলগুলোতে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে এসেছে। এতে এ খাতের উদ্যোক্তাদের হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ, মূলধনি যন্ত্রপাতি বিনষ্ট হচ্ছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সমপ্রতি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ কারণে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন বন্ধের কারণে শিল্পমালিকদের বিপুল আর্থিক ক্ষতি, প্রতিযোগিতামূলক বাজার হারানো, ব্যবসায়িক সুনাম বিনষ্টসহ কর্মচারীদের বেতন ও ব্যাংক-ঋণের মাশুল গুনতে হচ্ছে।
জীবনযাত্রা দুর্বিষহ: বগুড়ায় বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আগে টানা দুই ঘণ্টা লোডশেডিং করার পর বিদ্যুৎ এলেও এখন তা তিন ঘণ্টা পর্যন্ত করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ আসার ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পর আবার চলে যাচ্ছে। এতে করে শহরের মানুষ যেমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, তেমনি গ্রামাঞ্চলে বোরোর জমিতে সেচ দিতে বিঘ্ন ঘটছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাও বিপাকে পড়েছে। এই ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে নাগরিক জীবনে দুর্ভোগের পাশাপাশি কল-কারখানায় উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বগুড়া বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্র-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, বগুড়ায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৫০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ৩৬ থেকে ৪০ মেগাওয়াট।
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পেতে তিন ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। বোরো চাষে পানি দিতে পারছেন না স্থানীয় সেচযন্ত্র ব্যবহারকারী কৃষকেরা।
মহেশখালী পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও সদরের আংশিক এলাকায় দুই মাস ধরে ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। এতে টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, জেনারেটর ও বাল্ব নষ্ট হচ্ছে।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও বগুড়া, পাবনা ও খুলনা অফিস এবং ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ), মহেশখালী (কক্সবাজার) প্রতিনিধি)

No comments

Powered by Blogger.