বিশেষ সাক্ষাৎকার: মাহবুবুর রহমান ও হারুন-অর-রশিদ-র্যাব ভেঙে দেওয়া সমর্থন করি না by মাহবুবুর রহমান
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক দুই সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ও লে. জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশিদের সাক্ষাৎকার ছাপা হলো।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: মশিউল আলম ও ফারুক ওয়াসিফ
প্রথম আলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ র্যাবকে ‘খুনে বাহিনী’ বলে বর্ণনা করে বাহিনীটি ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
মাহবুবুর রহমান র্যাব যে বেআইনি হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে, সে বিষয়ে একমত। কিন্তু র্যাব ভেঙে দেওয়ার পক্ষে নই। বরং এর বিপরীতে আমি বলতে চাই র্যাবের সংস্কারের কথা।
প্রথম আলো কিন্তু র্যাব তো বিতর্কিত, জনগণের কাছে এবং বিশ্বেও এর ভাবমূর্তি খুবই খারাপ।
মাহবুবুর রহমান আমরা উদ্বিগ্ন যে তারা হত্যা করছে। সেসব হত্যাকাণ্ডের কোনো স্বচ্ছতা নেই, দায়দায়িত্বও তারা নিচ্ছে না। এর মাধ্যমে র্যাব আইনের ঊর্ধ্বে উঠে আইনকে হত্যা করছে। কিন্তু অপরাধীর শাস্তি তো দেবে আইন। র্যাবের ‘খতম’ অভিযান একটা ফ্যাসিবাদী মনোভাবের প্রকাশ। এটা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। অথচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি জেনেভায় বিদেশি সাংবাদিকদের সামনে বলেছিলেন, র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ (সহ্য করা হবে না) করা হবে। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন র্যাবের যেকোনো কাজের পক্ষে সাফাই গাইছেন। বলা হচ্ছে, র্যাব আত্মরক্ষার্থে গুলি করে। এ কথাগুলো মানুষ আর বিশ্বাস করে না।
প্রথম আলো অভিযোগ রয়েছে যে র্যাবকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা হয়।
মাহবুবুর রহমান হ্যাঁ, যখন যারা সরকারে থাকে, তখন তারা র্যাবকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে অথবা তাদের ওপর অন্য ধরনের ‘প্রভাব’ থাকে। কিন্তু র্যাবকে অবশ্যই রাজনীতির ঊর্ধ্বে ও বাইরের সব প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে ‘বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তাদের উচিত ছিল ওই প্রতিশ্রুতিকে কাজে পরিণত করায় সংকল্পবদ্ধ থাকা। তা না করে র্যাবের বেলায় সর্বোচ্চ ছাড় দিচ্ছে সরকার।
প্রথম আলো লিমনের ওপর গুলি চালানোর পর সমালোচনার মুখে র্যাবের ডিজি ভুল স্বীকার করে বলেছিলেন, লিমন অবস্থার শিকার। কিন্তু তার পরও লিমনকে হয়রানি করা হচ্ছে।
মাহবুবুর রহমান র্যাবের ডিজির ভুল স্বীকারের পরও লিমনকে অপরাধী বানিয়ে জেলে নেওয়া হলো। এটা পরিষ্কারভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। কাউকে নিরপরাধ বলে মন্তব্য করে সেই অবস্থান থেকে সরে আসা সুবিধাবাদ। র্যাবের ডিজি যখন দায়িত্বশীল পদে থেকে মন্তব্য করেন, তখন তাঁর তো ওই মন্তব্যের দায়িত্ব নেওয়া উচিত।
প্রথম আলো র্যাবের সংস্কার বলতে আপনি কী প্রস্তাব করছেন?
মাহবুবুর রহমান র্যাবের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে। কৃতিত্বের পুরস্কার আর অপরাধের শাস্তির বিষয়টা স্পষ্ট করতে হবে। অথচ ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে সরকারই তাদের শৃঙ্খলাহানি ঘটাচ্ছে। সব প্রতিষ্ঠানেরই একটা করণীয় ও নিষিদ্ধের তালিকা থাকে, থাকে দায়িত্ব ও কর্তব্যের পরিধি। র্যাবের বেলায় এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা এবং তা মান্য করা উচিত। জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদের ধারাগুলো র্যাবের প্রশিক্ষণে থাকা উচিত। এসব বিষয়ে র্যাবের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত অনুপ্রেরণা থাকতে হবে। গুরুতর অপরাধ করলে গুরুতর শাস্তি দিতে হবে। এর জন্য পুলিশ প্রশাসনের মতো সাধারণ শাস্তির ব্যবস্থা থাকলে চলবে না। বিজিবি (পুনর্গঠিত বিডিআর) বা সেনাবাহিনীর মতো কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে।
প্রথম আলো র্যাবের যাবতীয় পরিভাষা তথা ‘ক্রসফায়ার’, ‘এনকাউন্টার’, ‘অ্যাকশন’ সবই যুদ্ধের পরিভাষা। এসব শব্দ ব্যবহারের কারণ কী?
মাহবুবুর রহমান ক্রসফায়ার বলি বা এনকাউন্টার—যে নামেই ডাকি, তারা অ্যাকশনে যাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে তাদের উদ্দেশ্য হতে হবে হত্যা নয়, আটক করা। র্যাব সামরিক সংগঠন নয়, এলিট বাহিনী। সব দেশেই এ রকম বাহিনী আছে। জটিল অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা-পরিস্থিতি মোকাবিলা, শক্তিশালী সন্ত্রাসী চক্রকে দমনের জন্য এ রকম বাহিনীর প্রয়োজন রয়েছে। র্যাব যে সামরিক সংগঠন নয়, তার প্রমাণ র্যাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়।
প্রথম আলো কিন্তু র্যাবের যোগ্যতা নিয়েও তো প্রশ্ন উঠছে। লিমনের বেলায়ও তারা অযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। সুতরাং অপরাধ দমনে এমন বাহিনীর কার্যকারিতা কতটুকু?
মাহবুবুর রহমান জঙ্গিবাদ দমনে র্যাবের সাফল্য দেশে-বিদেশে আলোচিত হয়। দেশের বড় বড় সন্ত্রাসী চক্রকে তারা দমন করেছে। এ ছাড়া অনেক আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীও তাদের হাতে ধরা পড়েছে। এসব কাজ সাধারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে বাংলাদেশের অনেকেই র্যাবকে রক্ষীবাহিনীর সঙ্গে তুলনা করছে। র্যাবের সংস্কার এ কারণেই দরকার।
প্রথম আলো র্যাব থেকে সেনাসদস্যদের প্রত্যাহার করার দরকার মনে করেন কি? র্যাবের কারণে কি সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে না?
মাহবুবুর রহমান আমি তা মনে করি না। জটিল ও বিপজ্জনক নিরাপত্তা-পরিস্থিতির এই যুগে উচ্চ প্রশিক্ষিত, সাহসী ও বুদ্ধিমান অফিসার প্রয়োজন। তা ছাড়া র্যাবের সন্ত্রাস দমনে সব বাহিনীর সমন্বিত অভিজ্ঞতাও দরকার। র্যাবে যেমন সেনাসদস্যরা আছেন, তেমনি পুলিশ-বিজিপি-নেভিসহ আনসার-ভিডিপির লোকেরাও আছেন। প্রশ্ন সেখানে নয়, র্যাবে অযোগ্য অফিসারদের পাঠালে র্যাব বখে যাবে। এমন ধারণা যেন না থাকে যে সেনাবাহিনী থেকে কাউকে সেখানে পাঠানো মানে তাকে অবজ্ঞা করা। বরং উল্টোটা, যোগ্যদের যেমন পাঠাতে হবে, তেমনি র্যাবে ভালো ভূমিকা পালন করে থাকলে সেনাবাহিনীতে তাকে পুরস্কৃতও করতে হবে। সেনাসদস্যদের ভাবা উচিত যে তাঁরা একটি হত্যাবাহিনীর অংশীদার হবেন না। কেউ যদি সে রকম করেন, তবে সামরিক আইনে তাঁর বিচার করতে হবে। র্যাবে সেনাসদস্যদের প্রয়োজন ভারসাম্য বজায় রাখা এবং বাহিনীটির দক্ষতা বাড়ানোর জন্য।
প্রথম আলো র্যাবের বিরুদ্ধে হত্যাসহ যত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে, সেসব বিষয়ে কী করণীয়?
মাহবুবুর রহমান সব অপরাধের তদন্ত করে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রয়োজন। বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার হলে দোষীরা শাস্তি পাবে ঠিক, তবে এতে র্যাবও উপকৃত হবে। তার নৈতিক জোর ফিরে আসবে, শৃঙ্খলা ভঙ্গের বেলায় সদস্যদের মধ্যে পরিণতির দায় বহনের চিন্তা আসবে। র্যাবের ভিত্তিমূলে আইনকে স্থাপন করতে হবে। তার জন্যই দোষীদের শাস্তি এবং র্যাবের শিকারদের ক্ষতিপূরণ হওয়া উচিত।
প্রথম আলো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মাহবুবুর রহমান ধন্যবাদ।
প্রথম আলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ র্যাবকে ‘খুনে বাহিনী’ বলে বর্ণনা করে বাহিনীটি ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
মাহবুবুর রহমান র্যাব যে বেআইনি হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে, সে বিষয়ে একমত। কিন্তু র্যাব ভেঙে দেওয়ার পক্ষে নই। বরং এর বিপরীতে আমি বলতে চাই র্যাবের সংস্কারের কথা।
প্রথম আলো কিন্তু র্যাব তো বিতর্কিত, জনগণের কাছে এবং বিশ্বেও এর ভাবমূর্তি খুবই খারাপ।
মাহবুবুর রহমান আমরা উদ্বিগ্ন যে তারা হত্যা করছে। সেসব হত্যাকাণ্ডের কোনো স্বচ্ছতা নেই, দায়দায়িত্বও তারা নিচ্ছে না। এর মাধ্যমে র্যাব আইনের ঊর্ধ্বে উঠে আইনকে হত্যা করছে। কিন্তু অপরাধীর শাস্তি তো দেবে আইন। র্যাবের ‘খতম’ অভিযান একটা ফ্যাসিবাদী মনোভাবের প্রকাশ। এটা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। অথচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি জেনেভায় বিদেশি সাংবাদিকদের সামনে বলেছিলেন, র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ (সহ্য করা হবে না) করা হবে। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন র্যাবের যেকোনো কাজের পক্ষে সাফাই গাইছেন। বলা হচ্ছে, র্যাব আত্মরক্ষার্থে গুলি করে। এ কথাগুলো মানুষ আর বিশ্বাস করে না।
প্রথম আলো অভিযোগ রয়েছে যে র্যাবকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা হয়।
মাহবুবুর রহমান হ্যাঁ, যখন যারা সরকারে থাকে, তখন তারা র্যাবকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে অথবা তাদের ওপর অন্য ধরনের ‘প্রভাব’ থাকে। কিন্তু র্যাবকে অবশ্যই রাজনীতির ঊর্ধ্বে ও বাইরের সব প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে ‘বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তাদের উচিত ছিল ওই প্রতিশ্রুতিকে কাজে পরিণত করায় সংকল্পবদ্ধ থাকা। তা না করে র্যাবের বেলায় সর্বোচ্চ ছাড় দিচ্ছে সরকার।
প্রথম আলো লিমনের ওপর গুলি চালানোর পর সমালোচনার মুখে র্যাবের ডিজি ভুল স্বীকার করে বলেছিলেন, লিমন অবস্থার শিকার। কিন্তু তার পরও লিমনকে হয়রানি করা হচ্ছে।
মাহবুবুর রহমান র্যাবের ডিজির ভুল স্বীকারের পরও লিমনকে অপরাধী বানিয়ে জেলে নেওয়া হলো। এটা পরিষ্কারভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। কাউকে নিরপরাধ বলে মন্তব্য করে সেই অবস্থান থেকে সরে আসা সুবিধাবাদ। র্যাবের ডিজি যখন দায়িত্বশীল পদে থেকে মন্তব্য করেন, তখন তাঁর তো ওই মন্তব্যের দায়িত্ব নেওয়া উচিত।
প্রথম আলো র্যাবের সংস্কার বলতে আপনি কী প্রস্তাব করছেন?
মাহবুবুর রহমান র্যাবের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে। কৃতিত্বের পুরস্কার আর অপরাধের শাস্তির বিষয়টা স্পষ্ট করতে হবে। অথচ ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে সরকারই তাদের শৃঙ্খলাহানি ঘটাচ্ছে। সব প্রতিষ্ঠানেরই একটা করণীয় ও নিষিদ্ধের তালিকা থাকে, থাকে দায়িত্ব ও কর্তব্যের পরিধি। র্যাবের বেলায় এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা এবং তা মান্য করা উচিত। জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদের ধারাগুলো র্যাবের প্রশিক্ষণে থাকা উচিত। এসব বিষয়ে র্যাবের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত অনুপ্রেরণা থাকতে হবে। গুরুতর অপরাধ করলে গুরুতর শাস্তি দিতে হবে। এর জন্য পুলিশ প্রশাসনের মতো সাধারণ শাস্তির ব্যবস্থা থাকলে চলবে না। বিজিবি (পুনর্গঠিত বিডিআর) বা সেনাবাহিনীর মতো কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে।
প্রথম আলো র্যাবের যাবতীয় পরিভাষা তথা ‘ক্রসফায়ার’, ‘এনকাউন্টার’, ‘অ্যাকশন’ সবই যুদ্ধের পরিভাষা। এসব শব্দ ব্যবহারের কারণ কী?
মাহবুবুর রহমান ক্রসফায়ার বলি বা এনকাউন্টার—যে নামেই ডাকি, তারা অ্যাকশনে যাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে তাদের উদ্দেশ্য হতে হবে হত্যা নয়, আটক করা। র্যাব সামরিক সংগঠন নয়, এলিট বাহিনী। সব দেশেই এ রকম বাহিনী আছে। জটিল অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা-পরিস্থিতি মোকাবিলা, শক্তিশালী সন্ত্রাসী চক্রকে দমনের জন্য এ রকম বাহিনীর প্রয়োজন রয়েছে। র্যাব যে সামরিক সংগঠন নয়, তার প্রমাণ র্যাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়।
প্রথম আলো কিন্তু র্যাবের যোগ্যতা নিয়েও তো প্রশ্ন উঠছে। লিমনের বেলায়ও তারা অযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। সুতরাং অপরাধ দমনে এমন বাহিনীর কার্যকারিতা কতটুকু?
মাহবুবুর রহমান জঙ্গিবাদ দমনে র্যাবের সাফল্য দেশে-বিদেশে আলোচিত হয়। দেশের বড় বড় সন্ত্রাসী চক্রকে তারা দমন করেছে। এ ছাড়া অনেক আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীও তাদের হাতে ধরা পড়েছে। এসব কাজ সাধারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে বাংলাদেশের অনেকেই র্যাবকে রক্ষীবাহিনীর সঙ্গে তুলনা করছে। র্যাবের সংস্কার এ কারণেই দরকার।
প্রথম আলো র্যাব থেকে সেনাসদস্যদের প্রত্যাহার করার দরকার মনে করেন কি? র্যাবের কারণে কি সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে না?
মাহবুবুর রহমান আমি তা মনে করি না। জটিল ও বিপজ্জনক নিরাপত্তা-পরিস্থিতির এই যুগে উচ্চ প্রশিক্ষিত, সাহসী ও বুদ্ধিমান অফিসার প্রয়োজন। তা ছাড়া র্যাবের সন্ত্রাস দমনে সব বাহিনীর সমন্বিত অভিজ্ঞতাও দরকার। র্যাবে যেমন সেনাসদস্যরা আছেন, তেমনি পুলিশ-বিজিপি-নেভিসহ আনসার-ভিডিপির লোকেরাও আছেন। প্রশ্ন সেখানে নয়, র্যাবে অযোগ্য অফিসারদের পাঠালে র্যাব বখে যাবে। এমন ধারণা যেন না থাকে যে সেনাবাহিনী থেকে কাউকে সেখানে পাঠানো মানে তাকে অবজ্ঞা করা। বরং উল্টোটা, যোগ্যদের যেমন পাঠাতে হবে, তেমনি র্যাবে ভালো ভূমিকা পালন করে থাকলে সেনাবাহিনীতে তাকে পুরস্কৃতও করতে হবে। সেনাসদস্যদের ভাবা উচিত যে তাঁরা একটি হত্যাবাহিনীর অংশীদার হবেন না। কেউ যদি সে রকম করেন, তবে সামরিক আইনে তাঁর বিচার করতে হবে। র্যাবে সেনাসদস্যদের প্রয়োজন ভারসাম্য বজায় রাখা এবং বাহিনীটির দক্ষতা বাড়ানোর জন্য।
প্রথম আলো র্যাবের বিরুদ্ধে হত্যাসহ যত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে, সেসব বিষয়ে কী করণীয়?
মাহবুবুর রহমান সব অপরাধের তদন্ত করে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রয়োজন। বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার হলে দোষীরা শাস্তি পাবে ঠিক, তবে এতে র্যাবও উপকৃত হবে। তার নৈতিক জোর ফিরে আসবে, শৃঙ্খলা ভঙ্গের বেলায় সদস্যদের মধ্যে পরিণতির দায় বহনের চিন্তা আসবে। র্যাবের ভিত্তিমূলে আইনকে স্থাপন করতে হবে। তার জন্যই দোষীদের শাস্তি এবং র্যাবের শিকারদের ক্ষতিপূরণ হওয়া উচিত।
প্রথম আলো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মাহবুবুর রহমান ধন্যবাদ।
No comments