কল্পকথার গল্প-'সোনার চাঁদ পিতলা ঘুঘু' নয় by আলী হাবিব
যদিও 'চকচক করিলেই সোনা হয় না', তবু সোনা নিয়ে স্বপ্ন বোনা আমাদের পুরনো অভ্যাস। এককালে সোনার দামে সব কিছু বিবেচনা করা হতো। সোনার দাম বেড়ে যাওয়ার পর মানুষ অন্য ধাতুতে মনোনিবেশ করেছে। এককালে তো সোনার গয়নার বিকল্প কিছু ভাবাই যেত না।
আজকাল কত বিকল্প ধাতুর গয়না বেরিয়েছে! মাটির গয়না তো আছেই, পাশাপাশি তরমুজের বিচি দিয়েও গয়না তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সোনার বিকল্প নেই। সোনা মানেই অন্য রকম একটা ব্যাপার। সোনার খনির সন্ধান সবার ভাগ্যে হয় না। কেউ এর সন্ধান পেলে তার মতো সুখী পৃথিবীতে আর কেউ কি হবে? গল্পের আলীবাবাই যে শুধু পাহাড়ের গুহার ভেতর সোনার সন্ধান পেয়েছিল তা নয়, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সোনার খনি আছে। সেই সোনা দিয়ে তৈরি হয় গয়না। গয়নার ওজনে আমাদের অনেকের সামাজিক সম্মানের ওজন করা হয়। সোনার ব্যাপারে পুরুষের চেয়ে নারীদেরই আকর্ষণ বেশি। আমাদের জানাশোনার মধ্যে আমরা শিল্পী ও সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ীকে অনেক সোনার গয়না পরতে দেখি। সোনার গয়না সীতারও ছিল। সেই গয়নার কারণে অপহৃতা সীতাকে খুঁজে পেয়েছিলেন রামচন্দ্র। এই গল্পের পেছনে আবার প্রেমের যোগ আছে। আছে সোনার হরিণ।
লঙ্কাধিপতি রাবণের ছোট বোন শূর্পণখা। অকালবিধবা এই বোনটিকে রাবণ খুব স্নেহ করতেন। তিনি ছোট বোনকে বলেছিলেন নতুন করে কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে। রাম তখন সস্ত্রীক নির্বাসিত। ছোট ভাই লক্ষ্মণও বড় ভাইয়ের অনুগামী। পঞ্চবটীতে রামকে দেখে শূর্পণখার মনে একটু প্রেম জেগেছিল। স্বাভাবিক। রাম সুপুরুষ, রাজপুত্র।
তিনি বিবাহিত কি অবিবাহিত, সেটা ভেবে দেখার সুযোগ শূর্পণখার হয়নি। প্রেমে পড়লে অমনই হয়। হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। অমনটি যদি না হবে, তাহলে আর প্রেম কেন? কিন্তু শুরুতেই বিপত্তি। রাম সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে দিলেন শূর্পণখাকে। কিন্তু শূর্পণখাও তো রাজার বোন। তিনিই বা সহজে হাল ছাড়বেন কেন? লক্ষ্মণকে চোখে পড়ে গেল। কেউ কেউ বলেন, শূর্পণখার হাত থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য রামই তাঁর দৃষ্টি লক্ষ্মণের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। রামের চেয়ে বয়সে ছোট ও স্মার্ট লক্ষ্মণকে চোখে পড়াটাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু লক্ষ্মণের যে অত মেজাজ গরম, তা শূর্পণখার জানা ছিল না। রামের মতো লক্ষ্মণও শূর্পণখাকে প্রত্যাখ্যান করলেন। পর পর দু-দুটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান। শূর্পণখার মেজাজ গেল বিগড়ে। সামনে সীতাকে দেখে নিজেকে আর সংযত রাখতে পারেননি। আক্রমণ করে বসলেন। কিন্তু দেবর লক্ষ্মণ থাকতে সীতাকে আক্রমণ করা তো সহজ নয়। লক্ষ্মণ খৰাঘাতে শূর্পণখার নাক ও কান কেটে দিলেন। রাবণের এই বোনটি সব সময় ঘুরতেন দুই দেহরক্ষী নিয়ে। দেহরক্ষীরা রাম-লক্ষ্মণের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হলে বোনটি ভাইয়ের কাছে এসে কেঁদেকেটে একসা। ভাই সীতা হরণের প্রস্তুতি নিলেন। মারীচ নামের এক রাক্ষস সোনার হরিণ সেজে সীতার সামনে উপস্থিত হলে সীতা নাকি সেই হরিণ ধরে দেওয়ার জন্য বায়না ধরেন_'যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই'। সীতার বায়না ফেলতে না পেরে রাম-লক্ষ্মণ একটা বৃত্ত এঁকে সীতাকে তার বাইরে যেতে বারণ করে স্বর্ণমৃগের পিছু নিলেন। সেই অবসরে সেখানে ভিক্ষুকের বেশে গিয়ে সীতাকে হরণ করলেন রাবণ। খাঁটি সোনা ছেড়ে নকল সোনার পেছনে ছুটতে গিয়ে স্ত্রী হারালেন রাম।
স্বর্ণঘটিত আরেকটি গল্প আছে গ্রিক পুরাণে। রাজা মাইডাসের গল্প। সেখানেও বোকামির মূল্য দিতে হয়েছিল এই রাজাকে। রাজা মাইডাস ছিলেন ফ্রাইজিয়ার রাজা। সেই দেশে ছিল এক মদ্যপ বুড়ো। একদিন মদ খেয়ে সে ঢুকে পড়ে রাজার বাগানে। ঘুমিয়ে পড়ে সেখানে। রাজার প্রহরীরা তাকে সেখানে পেয়ে ফুলের সাজে সাজিয়ে নিয়ে যায় রাজদরবারে। রাজা মাইডাস তাকে সমাদর করেন। ১০ দিন প্রাসাদে আপ্যায়ন করান। ১০ দিন পর তাকে নিয়ে যান মদের দেবতা বাক্কাসের কাছে। দেবতা বাক্কাস খুশি হয়ে বর দিতে চান রাজা মাইডাসকে। বর চাইতে বললেন রাজাকে। রাজা মাইডাস একটুও চিন্তা না করে বললেন, 'আমি যা স্পর্শ করব, তা-ই যেন সোনায় রূপান্তরিত হয়।' দেবতা বললেন, 'তা-ই হবে। তথাস্তু।' এবার থেকে শুরু হয়ে গেল রাজা মাইডাসের স্বর্ণঘটিত দুর্ঘটনা। রাজা যা কিছু ধরেন, সবই সোনা হয়ে যায়। খাওয়ার জন্য টেবিলে বসলেন, খাবার সোনা হয়ে গেল। আপেল ধরেন হাত দিয়ে, সোনা হয়ে গেল। মহা বিড়ম্বনা।
পুরাণের গল্প তোলা থাক। সোনা নিয়ে শোনা কথায় কান দিয়ে কী হবে? সোনার চেয়ে খাঁটি আমাদের দেশের মাটি_এমন কথা গানে শুনি। তার পরও খ্যাপা খুঁজে ফেরে পরশপাথর। কারণ সেই পাথরের পরশে সব কিছু সোনা হয়ে যাবে। স্বর্ণঘটিত দুর্ঘটনা আজকাল খুব একটা ঘটে না। আজকাল সংবর্ধনা হয়। সংবর্ধনায় অনিবার্যভাবেই থাকে সোনা। শুধু সংবর্ধনা কেন, কোথায় নেই সোনা? বাড়িতে নতুন অতিথির আগমন? সেই আমলে গিনি দিয়ে মুখ দেখা হতো। আজকাল 'মেইড ইন দুবাই' সোনার চেইন বেরিয়েছে। সোনার বিকল্প নেই। বিয়েশাদিতে সোনার গয়না অপরিহার্য। সেই আমলে রাজদরবারে উপঢৌকন হিসেবে পাঠানো হতো সোনা। সোনার মুকুট মাথায় দিয়ে রাজা-বাদশাহরা বসতেন সিংহাসনে। অনেকের সিংহাসনও সোনার তৈরি ছিল। রূপকথার যুগে সোনার পালঙ্কে ঘুমাতেন রাজকুমার ও রাজকন্যারা। এই আমলে সাধারণ মানুষের অনেকেরই রট আয়রনও জোটে না। কিন্তু রাজকপাল নিয়ে মর্ত্যে যাঁদের আবির্ভাব, তাঁদের কপালে সোনার তিলক যেন লেগেই থাকে। পেয়ে যান তাঁরা।
আমাদের দেশে সোনার ব্যবহার তো সেই সুদূর অতীত থেকেই। বিয়েতে যেমন সোনার গয়নার বিকল্প নেই, তেমনি জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সোনার ব্যবহার অপরিসীম। স্ত্রী গোসা করেছেন? সোনার গয়নার চেয়ে মোক্ষম দাওয়াই আর কিছু হতেই পারে না।
সোনালি সম্ভাবনার দেশে সোনালি সংবর্ধনা শুরু হয়েছে বেশ আগেই। সোনা-ফলা মাটির এই দেশে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় বোধ হয়। সোনার ধানের শীষ আর সোনার মুকুট দিয়ে যে স্বর্ণঘটিত সংবর্ধনা-সংস্কৃতি শুরু হয়েছিল, তার চল আজও আছে। সোনার ধানের শীষ আর মুকুটের জায়গা নিয়েছে সোনার নৌকা। সংসদ সদস্যরা পাঁচ হাজার টাকার বেশি দামের উপহার নিতে পারবেন না_এমন একটি বিল সংসদে উত্থাপিত হওয়ার পরও সোনার নৌকা উপহার নেওয়া থেমে নেই। নাটোর, ধামরাই, ময়মনসিংহ, শরীয়তপুর, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, রাজশাহী, লক্ষ্মীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সোনার নৌকা ও চাবি উপহার দেওয়ার খবর এখন পুরনো। সম্প্রতি চালকল উদ্বোধন করতে যাওয়া এক মন্ত্রী বাহাদুরের সোনার নৌকা উপহার নেওয়ার খবর বেরিয়েছে। তবে নৌকাটি সোনার, না রুপার, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ নানা জন নানা মত দিয়েছেন।
এসবের পাশাপাশি সোনার মেডেল পিতলের হয়ে যাওয়ার ঘটনাও সমাজে অহরহ ঘটছে। পদক-বাণিজ্যের হোতারা নানা রকম পুরস্কারের নামে স্বর্ণপদক প্রবর্তনের কথা বললেও সেই পদক যে সোনারঙের পদক, তা কিন্তু আয়োজকরা আগে থেকে কখনো বলেন না। এই স্বর্ণঘটিত পদক-বাণিজ্য সোনার মতো দামি নয়।
লেখক : সাংবাদিক
লঙ্কাধিপতি রাবণের ছোট বোন শূর্পণখা। অকালবিধবা এই বোনটিকে রাবণ খুব স্নেহ করতেন। তিনি ছোট বোনকে বলেছিলেন নতুন করে কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে। রাম তখন সস্ত্রীক নির্বাসিত। ছোট ভাই লক্ষ্মণও বড় ভাইয়ের অনুগামী। পঞ্চবটীতে রামকে দেখে শূর্পণখার মনে একটু প্রেম জেগেছিল। স্বাভাবিক। রাম সুপুরুষ, রাজপুত্র।
তিনি বিবাহিত কি অবিবাহিত, সেটা ভেবে দেখার সুযোগ শূর্পণখার হয়নি। প্রেমে পড়লে অমনই হয়। হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। অমনটি যদি না হবে, তাহলে আর প্রেম কেন? কিন্তু শুরুতেই বিপত্তি। রাম সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে দিলেন শূর্পণখাকে। কিন্তু শূর্পণখাও তো রাজার বোন। তিনিই বা সহজে হাল ছাড়বেন কেন? লক্ষ্মণকে চোখে পড়ে গেল। কেউ কেউ বলেন, শূর্পণখার হাত থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য রামই তাঁর দৃষ্টি লক্ষ্মণের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। রামের চেয়ে বয়সে ছোট ও স্মার্ট লক্ষ্মণকে চোখে পড়াটাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু লক্ষ্মণের যে অত মেজাজ গরম, তা শূর্পণখার জানা ছিল না। রামের মতো লক্ষ্মণও শূর্পণখাকে প্রত্যাখ্যান করলেন। পর পর দু-দুটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান। শূর্পণখার মেজাজ গেল বিগড়ে। সামনে সীতাকে দেখে নিজেকে আর সংযত রাখতে পারেননি। আক্রমণ করে বসলেন। কিন্তু দেবর লক্ষ্মণ থাকতে সীতাকে আক্রমণ করা তো সহজ নয়। লক্ষ্মণ খৰাঘাতে শূর্পণখার নাক ও কান কেটে দিলেন। রাবণের এই বোনটি সব সময় ঘুরতেন দুই দেহরক্ষী নিয়ে। দেহরক্ষীরা রাম-লক্ষ্মণের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হলে বোনটি ভাইয়ের কাছে এসে কেঁদেকেটে একসা। ভাই সীতা হরণের প্রস্তুতি নিলেন। মারীচ নামের এক রাক্ষস সোনার হরিণ সেজে সীতার সামনে উপস্থিত হলে সীতা নাকি সেই হরিণ ধরে দেওয়ার জন্য বায়না ধরেন_'যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই'। সীতার বায়না ফেলতে না পেরে রাম-লক্ষ্মণ একটা বৃত্ত এঁকে সীতাকে তার বাইরে যেতে বারণ করে স্বর্ণমৃগের পিছু নিলেন। সেই অবসরে সেখানে ভিক্ষুকের বেশে গিয়ে সীতাকে হরণ করলেন রাবণ। খাঁটি সোনা ছেড়ে নকল সোনার পেছনে ছুটতে গিয়ে স্ত্রী হারালেন রাম।
স্বর্ণঘটিত আরেকটি গল্প আছে গ্রিক পুরাণে। রাজা মাইডাসের গল্প। সেখানেও বোকামির মূল্য দিতে হয়েছিল এই রাজাকে। রাজা মাইডাস ছিলেন ফ্রাইজিয়ার রাজা। সেই দেশে ছিল এক মদ্যপ বুড়ো। একদিন মদ খেয়ে সে ঢুকে পড়ে রাজার বাগানে। ঘুমিয়ে পড়ে সেখানে। রাজার প্রহরীরা তাকে সেখানে পেয়ে ফুলের সাজে সাজিয়ে নিয়ে যায় রাজদরবারে। রাজা মাইডাস তাকে সমাদর করেন। ১০ দিন প্রাসাদে আপ্যায়ন করান। ১০ দিন পর তাকে নিয়ে যান মদের দেবতা বাক্কাসের কাছে। দেবতা বাক্কাস খুশি হয়ে বর দিতে চান রাজা মাইডাসকে। বর চাইতে বললেন রাজাকে। রাজা মাইডাস একটুও চিন্তা না করে বললেন, 'আমি যা স্পর্শ করব, তা-ই যেন সোনায় রূপান্তরিত হয়।' দেবতা বললেন, 'তা-ই হবে। তথাস্তু।' এবার থেকে শুরু হয়ে গেল রাজা মাইডাসের স্বর্ণঘটিত দুর্ঘটনা। রাজা যা কিছু ধরেন, সবই সোনা হয়ে যায়। খাওয়ার জন্য টেবিলে বসলেন, খাবার সোনা হয়ে গেল। আপেল ধরেন হাত দিয়ে, সোনা হয়ে গেল। মহা বিড়ম্বনা।
পুরাণের গল্প তোলা থাক। সোনা নিয়ে শোনা কথায় কান দিয়ে কী হবে? সোনার চেয়ে খাঁটি আমাদের দেশের মাটি_এমন কথা গানে শুনি। তার পরও খ্যাপা খুঁজে ফেরে পরশপাথর। কারণ সেই পাথরের পরশে সব কিছু সোনা হয়ে যাবে। স্বর্ণঘটিত দুর্ঘটনা আজকাল খুব একটা ঘটে না। আজকাল সংবর্ধনা হয়। সংবর্ধনায় অনিবার্যভাবেই থাকে সোনা। শুধু সংবর্ধনা কেন, কোথায় নেই সোনা? বাড়িতে নতুন অতিথির আগমন? সেই আমলে গিনি দিয়ে মুখ দেখা হতো। আজকাল 'মেইড ইন দুবাই' সোনার চেইন বেরিয়েছে। সোনার বিকল্প নেই। বিয়েশাদিতে সোনার গয়না অপরিহার্য। সেই আমলে রাজদরবারে উপঢৌকন হিসেবে পাঠানো হতো সোনা। সোনার মুকুট মাথায় দিয়ে রাজা-বাদশাহরা বসতেন সিংহাসনে। অনেকের সিংহাসনও সোনার তৈরি ছিল। রূপকথার যুগে সোনার পালঙ্কে ঘুমাতেন রাজকুমার ও রাজকন্যারা। এই আমলে সাধারণ মানুষের অনেকেরই রট আয়রনও জোটে না। কিন্তু রাজকপাল নিয়ে মর্ত্যে যাঁদের আবির্ভাব, তাঁদের কপালে সোনার তিলক যেন লেগেই থাকে। পেয়ে যান তাঁরা।
আমাদের দেশে সোনার ব্যবহার তো সেই সুদূর অতীত থেকেই। বিয়েতে যেমন সোনার গয়নার বিকল্প নেই, তেমনি জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সোনার ব্যবহার অপরিসীম। স্ত্রী গোসা করেছেন? সোনার গয়নার চেয়ে মোক্ষম দাওয়াই আর কিছু হতেই পারে না।
সোনালি সম্ভাবনার দেশে সোনালি সংবর্ধনা শুরু হয়েছে বেশ আগেই। সোনা-ফলা মাটির এই দেশে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় বোধ হয়। সোনার ধানের শীষ আর সোনার মুকুট দিয়ে যে স্বর্ণঘটিত সংবর্ধনা-সংস্কৃতি শুরু হয়েছিল, তার চল আজও আছে। সোনার ধানের শীষ আর মুকুটের জায়গা নিয়েছে সোনার নৌকা। সংসদ সদস্যরা পাঁচ হাজার টাকার বেশি দামের উপহার নিতে পারবেন না_এমন একটি বিল সংসদে উত্থাপিত হওয়ার পরও সোনার নৌকা উপহার নেওয়া থেমে নেই। নাটোর, ধামরাই, ময়মনসিংহ, শরীয়তপুর, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, রাজশাহী, লক্ষ্মীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সোনার নৌকা ও চাবি উপহার দেওয়ার খবর এখন পুরনো। সম্প্রতি চালকল উদ্বোধন করতে যাওয়া এক মন্ত্রী বাহাদুরের সোনার নৌকা উপহার নেওয়ার খবর বেরিয়েছে। তবে নৌকাটি সোনার, না রুপার, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ নানা জন নানা মত দিয়েছেন।
এসবের পাশাপাশি সোনার মেডেল পিতলের হয়ে যাওয়ার ঘটনাও সমাজে অহরহ ঘটছে। পদক-বাণিজ্যের হোতারা নানা রকম পুরস্কারের নামে স্বর্ণপদক প্রবর্তনের কথা বললেও সেই পদক যে সোনারঙের পদক, তা কিন্তু আয়োজকরা আগে থেকে কখনো বলেন না। এই স্বর্ণঘটিত পদক-বাণিজ্য সোনার মতো দামি নয়।
লেখক : সাংবাদিক
No comments