ইতি-নেতি-জনগণই সরকারের শেষ গন্তব্য by মাসুদা ভাট্টি
আগস্ট মাস এলেই বড় ধরনের ভয় কাজ করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে ভয়ের সংস্কৃতি শুরু হয়েছিল, তা থেকে আজও মুক্তি মেলেনি আমাদের। ২০১১ সালের আগস্ট মাসে এই ভয়ের সংস্কৃতিতে নতুন উপসর্গ যোগ করে গেলেন চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনীর।
যদিও বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা খুব স্বাভাবিক ও নিত্য নৈমিত্যিক ঘটনা, প্রতিদিনই অসংখ্য দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর প্রকাশিত হয় সংবাদ মাধ্যমে, কিন্তু এগুলোর প্রতিকার কিংবা প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। প্রশ্নের উত্তর কখনোই খুঁজে পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশে প্রতিদিনকার এসব অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ খুব কম। কারণ, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মতো এসব অস্বাভাবিকতা আমাদের জাতীয় জীবনের অন্য অনেক অস্বাভাবিকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমাদের এই দেশ আয়তনগতভাবে বেশ ছোট_এই সত্য আমরা স্বীকার করেও এই আয়তনের সঙ্গে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারকে ঠিক রাখতে পারিনি। পারিনি, কারণ, আমাদের সন্তানদের 'আল্লাহ' খাওয়াবেন_এই চিন্তা-চেতনা থেকে আমরা একের পর এক সন্তান জন্ম দেই। এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্র এত মানুষের সঙ্কুলান করতে পারবে কি না, সেই ভাবনা আমরা কেউই ভাবি না। ব্যক্তি পর্যায়ের এই ঔদাসীন্য একেবারে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত, যে কারণে বিগত সরকারের আমলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আর এর ফলে আমরা মাত্র ১০ বছরে কলেবরে বেড়েছি প্রায় দ্বিগুণ, যদিও কোনো বিচিত্র কারণে আমাদের আদমশুমারির কর্মকর্তারা স্বীকার করতে চান না এই বাড়তি জনসংখ্যার কথা। তাঁরা পারলে সংখ্যাটা কমিয়ে দেখান, যেহেতু সংখ্যা লেখার জন্য শুধু কলম আর কালির বেশি আর কিছুই প্রয়োজন নেই।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঠেকানোর অপ্রস্তুতির সঙ্গে যোগ করতে পারি এই বিপুল জনসংখ্যাকে 'ম্যানেজ' করার ক্ষেত্রে আমাদের অদক্ষতাকে। বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমিকদের বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও শুধু অদক্ষতা আর অব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশ হারায় বিপুল পরিমাণ অর্থের শ্রমবাজার। কিন্তু দেশের ভেতরও জনসংখ্যার এই অব্যবস্থাপনা যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা আমরা ক্রমেই বুঝতে শুরু করেছি। কেবল রাজধানী ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও যে এই অব্যবস্থাপনা আমাদের জাতীয় জীবনে বড় ধরনের বিপদে ফেলতে যাচ্ছে, তা দেশের সরকার বুঝতে না পারলেও সাধারণ মানুষ যে বুঝতে পারছে, এতে কোনোই সন্দেহ নেই।
দেশের সামগ্রিক অবস্থা যে মোটেই ভালো নেই, এ কথা বোঝার জন্য ব্যাপক জ্ঞান রাখার প্রয়োজন নেই। যেদিকেই নজর দেওয়া যাক না কেন, প্রতিটি দিকেই অব্যবস্থাপনার নজির লক্ষ করা যায়। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ নাজুক অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে। জনগণের নিরাপত্তা যেন জিম্মি হয়ে আছে ভাগ্যের ওপর। কারণ, একজন মানুষ সকালে ঘর থেকে বেরোলে সন্ধ্যায় যে সুস্থভাবে পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরতে পারবে, সেই নিশ্চয়তা আসলে কেউ দিতে পারছে না। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ ভালো। তাহলে জননিরাপত্তা কেন বিঘি্নত হচ্ছে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে কোথায় মানুষ?
সরকার যে কর্মক্ষম নয়, এমন কথা সরকারের শত্রুও বলবে না। বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, এ কথা সবাই স্বীকার করছেন। কিন্তু দেশের ভেতরকার পরিস্থিতি ক্রমেই যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, সরকার তা কতটা বুঝতে পারছে, কে জানে? মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব সাংবাদিকদের সামনে যেটুকু তথ্য হাজির করেন, তার বাইরে সরকারের 'কমিউনিকেশন স্ট্র্যাটেজি'র কোনো প্রমাণ আমরা দেখি না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যে বিষয়টি নিয়ে সরকারের শুভানুধ্যায়ীরা সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা হলো, সরকারের কমিউনিকেশন স্ট্র্যাটেজি। এমনিতেই যে ক্ষয়িষ্ণু সময়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল, সেখানে দাঁড়িয়ে রাতারাতি অবস্থার পরিবর্তন করাটা শুধু দুঃসাধ্যই ছিল না, ছিল অসম্ভব একটি কাজও। এরপর সরকার ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র মাসখানেকের মাথায় ঘটে যায় বিডিআর ট্র্যাজেডি। সুতরাং সরকারের চলার পথ মসৃণ ছিল না মোটেই। একই সঙ্গে সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া কার্যকর করাসহ বেশ কিছু পুরনো পাপ মোচনের কাজে হাত দেয়। এ ছাড়া বেশ কিছু রাজনৈতিক পদক্ষেপ, যেমন_তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলসহ পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের আলোকে সংবিধান সংশোধন ইত্যাদি সরকারকে রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল করলেও অভিজ্ঞ মহল সরকারকে দোষ দিয়েছে জনগণের কল্যাণে সময় কম দেওয়ার দোষে। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে না রাখার দায় সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রীর হলেও সামগ্রিকভাবে সরকার তা থেকে মুক্ত নয়। কিন্তু এই সর্বক্ষেত্রেই সরকার থেকে জনগণের দূরত্ব অসীম ছিল বলে অনেকেই মনে করেন। বিশেষ করে সরকার ও জনগণের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারকদের অনীহা ছিল স্পষ্ট।
সর্বশেষ সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কিছু কর্মকাণ্ড জনমনে এমন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে যে জনগণের নিরাপত্তা আসলে কার হাতে নিরাপদ? এখন যেকোনো জায়গায় মানুষের আলোচনার বিষয়বস্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপকর্ম এবং তা গিয়ে সরাসরি জমা পড়ছে সরকারের ব্যর্থতার খাতায়। আমি নিশ্চিত, যোগাযোগ খাতের এই অব্যবস্থাপনা এবং সর্বত্র যোগাযোগব্যবস্থার এই যে সমালোচনা, তা সম্পূর্ণ গিয়ে যোগ হবে সরকারের সমালোচনায়। বাংলাদেশ সীমিত সম্পদের দেশ। কিন্তু তাই বলে এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়, এ কথা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। আজ দেশের ভেতর যেসব অপকর্ম সংঘটিত হচ্ছে, তার সবটার জন্য দায়ী এই অব্যবস্থাপনা। সরকারকে অবিলম্বে এই অব্যবস্থাপনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং শক্ত হাতে এই সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা একটি সরকারের বয়স তিন বছর না পেরোতেই দেশের ভেতরে এবং বাইরে তাকে নিয়ে যে ধরনের অপপ্রচার শুরু হয়েছে, তাতে এই ভয় অমূলক নয় যে, এই মিলিত বিরুদ্ধ শক্তি সরকারকে বাকি দুই বছরও শান্তিতে থাকতে দেবে না। কিন্তু এতে কেবল বিরুদ্ধ শক্তির সমালোচনা করলেই চলবে না, সরকারকেও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে এবং বিরুদ্ধ শক্তির চেয়ে বুদ্ধিতে কয়েক কদম এগিয়ে থাকতে হবে। আর এর জন্য নিশ্চিতভাবেই জনগণকে সরকারের কাছে রাখতে হবে। এটাও সত্য, চোখের সামনে এভাবে দেশের সূর্যসন্তানদের মৃত্যুবরণ করতে দেখলে জনগণ সরকারের ওপর আস্থা হারাবে। আর সেই অনাস্থার সুযোগ নিতে বিরুদ্ধ শক্তি বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না। সরকার এবং বিরুদ্ধ শক্তির দ্বন্দ্বে সরকার নিজেকে যত শুভকর প্রমাণ করতে পারবে, জনগণ ততই সরকারের পক্ষে জোটভুক্ত হবে।
লেখক : সম্পাদক, একপক্ষ
editor@ekpokkho.com
বাংলাদেশে প্রতিদিনকার এসব অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ খুব কম। কারণ, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মতো এসব অস্বাভাবিকতা আমাদের জাতীয় জীবনের অন্য অনেক অস্বাভাবিকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমাদের এই দেশ আয়তনগতভাবে বেশ ছোট_এই সত্য আমরা স্বীকার করেও এই আয়তনের সঙ্গে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারকে ঠিক রাখতে পারিনি। পারিনি, কারণ, আমাদের সন্তানদের 'আল্লাহ' খাওয়াবেন_এই চিন্তা-চেতনা থেকে আমরা একের পর এক সন্তান জন্ম দেই। এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্র এত মানুষের সঙ্কুলান করতে পারবে কি না, সেই ভাবনা আমরা কেউই ভাবি না। ব্যক্তি পর্যায়ের এই ঔদাসীন্য একেবারে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত, যে কারণে বিগত সরকারের আমলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আর এর ফলে আমরা মাত্র ১০ বছরে কলেবরে বেড়েছি প্রায় দ্বিগুণ, যদিও কোনো বিচিত্র কারণে আমাদের আদমশুমারির কর্মকর্তারা স্বীকার করতে চান না এই বাড়তি জনসংখ্যার কথা। তাঁরা পারলে সংখ্যাটা কমিয়ে দেখান, যেহেতু সংখ্যা লেখার জন্য শুধু কলম আর কালির বেশি আর কিছুই প্রয়োজন নেই।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঠেকানোর অপ্রস্তুতির সঙ্গে যোগ করতে পারি এই বিপুল জনসংখ্যাকে 'ম্যানেজ' করার ক্ষেত্রে আমাদের অদক্ষতাকে। বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমিকদের বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও শুধু অদক্ষতা আর অব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশ হারায় বিপুল পরিমাণ অর্থের শ্রমবাজার। কিন্তু দেশের ভেতরও জনসংখ্যার এই অব্যবস্থাপনা যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা আমরা ক্রমেই বুঝতে শুরু করেছি। কেবল রাজধানী ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও যে এই অব্যবস্থাপনা আমাদের জাতীয় জীবনে বড় ধরনের বিপদে ফেলতে যাচ্ছে, তা দেশের সরকার বুঝতে না পারলেও সাধারণ মানুষ যে বুঝতে পারছে, এতে কোনোই সন্দেহ নেই।
দেশের সামগ্রিক অবস্থা যে মোটেই ভালো নেই, এ কথা বোঝার জন্য ব্যাপক জ্ঞান রাখার প্রয়োজন নেই। যেদিকেই নজর দেওয়া যাক না কেন, প্রতিটি দিকেই অব্যবস্থাপনার নজির লক্ষ করা যায়। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ নাজুক অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে। জনগণের নিরাপত্তা যেন জিম্মি হয়ে আছে ভাগ্যের ওপর। কারণ, একজন মানুষ সকালে ঘর থেকে বেরোলে সন্ধ্যায় যে সুস্থভাবে পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরতে পারবে, সেই নিশ্চয়তা আসলে কেউ দিতে পারছে না। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ ভালো। তাহলে জননিরাপত্তা কেন বিঘি্নত হচ্ছে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে কোথায় মানুষ?
সরকার যে কর্মক্ষম নয়, এমন কথা সরকারের শত্রুও বলবে না। বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, এ কথা সবাই স্বীকার করছেন। কিন্তু দেশের ভেতরকার পরিস্থিতি ক্রমেই যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, সরকার তা কতটা বুঝতে পারছে, কে জানে? মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব সাংবাদিকদের সামনে যেটুকু তথ্য হাজির করেন, তার বাইরে সরকারের 'কমিউনিকেশন স্ট্র্যাটেজি'র কোনো প্রমাণ আমরা দেখি না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যে বিষয়টি নিয়ে সরকারের শুভানুধ্যায়ীরা সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা হলো, সরকারের কমিউনিকেশন স্ট্র্যাটেজি। এমনিতেই যে ক্ষয়িষ্ণু সময়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল, সেখানে দাঁড়িয়ে রাতারাতি অবস্থার পরিবর্তন করাটা শুধু দুঃসাধ্যই ছিল না, ছিল অসম্ভব একটি কাজও। এরপর সরকার ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র মাসখানেকের মাথায় ঘটে যায় বিডিআর ট্র্যাজেডি। সুতরাং সরকারের চলার পথ মসৃণ ছিল না মোটেই। একই সঙ্গে সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া কার্যকর করাসহ বেশ কিছু পুরনো পাপ মোচনের কাজে হাত দেয়। এ ছাড়া বেশ কিছু রাজনৈতিক পদক্ষেপ, যেমন_তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলসহ পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের আলোকে সংবিধান সংশোধন ইত্যাদি সরকারকে রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল করলেও অভিজ্ঞ মহল সরকারকে দোষ দিয়েছে জনগণের কল্যাণে সময় কম দেওয়ার দোষে। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে না রাখার দায় সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রীর হলেও সামগ্রিকভাবে সরকার তা থেকে মুক্ত নয়। কিন্তু এই সর্বক্ষেত্রেই সরকার থেকে জনগণের দূরত্ব অসীম ছিল বলে অনেকেই মনে করেন। বিশেষ করে সরকার ও জনগণের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারকদের অনীহা ছিল স্পষ্ট।
সর্বশেষ সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কিছু কর্মকাণ্ড জনমনে এমন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে যে জনগণের নিরাপত্তা আসলে কার হাতে নিরাপদ? এখন যেকোনো জায়গায় মানুষের আলোচনার বিষয়বস্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপকর্ম এবং তা গিয়ে সরাসরি জমা পড়ছে সরকারের ব্যর্থতার খাতায়। আমি নিশ্চিত, যোগাযোগ খাতের এই অব্যবস্থাপনা এবং সর্বত্র যোগাযোগব্যবস্থার এই যে সমালোচনা, তা সম্পূর্ণ গিয়ে যোগ হবে সরকারের সমালোচনায়। বাংলাদেশ সীমিত সম্পদের দেশ। কিন্তু তাই বলে এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়, এ কথা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। আজ দেশের ভেতর যেসব অপকর্ম সংঘটিত হচ্ছে, তার সবটার জন্য দায়ী এই অব্যবস্থাপনা। সরকারকে অবিলম্বে এই অব্যবস্থাপনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং শক্ত হাতে এই সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা একটি সরকারের বয়স তিন বছর না পেরোতেই দেশের ভেতরে এবং বাইরে তাকে নিয়ে যে ধরনের অপপ্রচার শুরু হয়েছে, তাতে এই ভয় অমূলক নয় যে, এই মিলিত বিরুদ্ধ শক্তি সরকারকে বাকি দুই বছরও শান্তিতে থাকতে দেবে না। কিন্তু এতে কেবল বিরুদ্ধ শক্তির সমালোচনা করলেই চলবে না, সরকারকেও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে এবং বিরুদ্ধ শক্তির চেয়ে বুদ্ধিতে কয়েক কদম এগিয়ে থাকতে হবে। আর এর জন্য নিশ্চিতভাবেই জনগণকে সরকারের কাছে রাখতে হবে। এটাও সত্য, চোখের সামনে এভাবে দেশের সূর্যসন্তানদের মৃত্যুবরণ করতে দেখলে জনগণ সরকারের ওপর আস্থা হারাবে। আর সেই অনাস্থার সুযোগ নিতে বিরুদ্ধ শক্তি বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না। সরকার এবং বিরুদ্ধ শক্তির দ্বন্দ্বে সরকার নিজেকে যত শুভকর প্রমাণ করতে পারবে, জনগণ ততই সরকারের পক্ষে জোটভুক্ত হবে।
লেখক : সম্পাদক, একপক্ষ
editor@ekpokkho.com
No comments