বিশেষ সাক্ষাৎকার-শামীম ওসমানের সঙ্গে আমার রাজনীতি করা সম্ভব নয় by এস এম আকরাম
এস এম আকরামের জন্ম ১৯৩৯ সালে, নারায়ণগঞ্জে। পড়াশোনা করেছেন হাজী ইব্রাহিম আলমচান উচ্চবিদ্যালয়, জগন্নাথ কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৬৩ সালে তিনি পাকিস্তান সুপিরিয়র সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৯৪ সালে অতিরিক্ত সচিব থাকাকালে সরকারি চাকরি থেকে অকালীন অবসর নেন।
১৯৯৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির বিজয়ের পর এস এম আকরাম নারায়ণগঞ্জে দলকে সংগঠিত করেন। সম্প্রতি দল থেকে পদত্যাগের আগ পর্যন্ত তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছিলেন। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সমর্থন করেন এবং তাঁর নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনায় গঠিত সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হারুন আল রশিদ
প্রথম আলো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিজয়ে আপনার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। কিন্তু বিজয়ের পরই দল থেকে পদত্যাগ করলেন কেন?
এস এম আকরাম কোনো আবেগ নয়, পরিকল্পিতভাবেই আমি পদত্যাগ করেছি। পদত্যাগের জন্য একটি সুবর্ণ সময় খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। আইভীর বিজয়ের মাধ্যমে আমি সেই সময়টি খুঁজে পেয়েছি। সে জন্য বেশ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিই। ১৫ অক্টোবর পদত্যাগপত্রের খসড়া তৈরি করে পকেটে রেখে দিয়েছিলাম। ২৭ অক্টোবর কিছুক্ষণের জন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় উত্তরার বাসায় ছুটে যাই। সেখানে পদত্যাগপত্রটি কম্পিউটারে কম্পোজ করি। তারপর সেটি আবারও পকেটে পুরে নিই। ৩১ অক্টোবর তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিই।
পদত্যাগের কারণ, ২০০৮ সালের পরই আমি দল থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিলাম। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জেলায় দলের সাংগঠনিক তৎপরতা থেমে যায়। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই আবার সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু হয়। এখন মনে হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আমাকে আওয়ামী লীগের আর প্রয়োজন হবে না। জেলার নেতৃত্ব শামীম ওসমানের কাছে যাবে। সে জন্য ভাবলাম, আগেই সরে দাঁড়ানো ভালো। কারণ, আমার পক্ষে শামীম ওসমানকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করা সম্ভব নয়।
প্রথম আলো স্থানীয় কর্মীদের মতে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আপনাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেনি। সে জন্যই আপনি অভিমান করে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
এস এম আকরাম নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আমিও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলাম। নির্বাচনে কে প্রার্থী হবেন, তা নির্ধারণের জন্য সেলিনা হায়াৎ আইভী ও শামীম ওসমানকে ঢাকায় ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আমাকে তিনি ডাকেননি। হতে পারে, প্রার্থী হিসেবে তিনি আমাকে যোগ্য মনে করেননি। এই অবস্থায় একদিন দলের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য ফোন করে আমাকে জানালেন, নেত্রী আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছেন। তিনি আমাকে জানান, শামীম ওসমানই দলীয় সমর্থন পেতে যাচ্ছেন। সুতরাং আইভীকেও সরে দাঁড়াতে হবে। আমার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন ওই নেতা জানান, আইভীকে তিনি টেলিফোনে পাচ্ছেন না। যে কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ তাঁর কাছে পৌঁছানো যাচ্ছিল না। পরে তিনি আইভীকে টেলিফোনে পেয়েছিলেন কি না, তা আমার জানা নেই। এমন আরও অনেক ঘটনার মধ্য দিয়ে আইভী নির্বাচনে জিতলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে গণভবনে ডেকে নিলেন, ডেকে নিলেন শামীম ওসমানকেও। এবারও আমাকে ডাকা হয়নি। সুতরাং দলের এমন কর্মকাণ্ডে আমি বেদনাহত হব, এটাই স্বাভাবিক। এরপর আমি ধরে নিতেই পারি, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আমাকে আর আওয়ামী লীগের প্রয়োজন নেই।
প্রথম আলো সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আপনিও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। সরে দাঁড়ালেন কেন?
এস এম আকরাম বেশ কিছু কারণ আছে। প্রথমত, দলীয় প্রধানের নির্দেশ। দ্বিতীয়ত, আমি সরে না দাঁড়ালে প্রার্থী হিসেবে বিএনপির তৈমুর আলম খন্দকার এগিয়ে থাকতেন। কারণ, বন্দর এলাকায় (নারায়ণগঞ্জ-৫) আইভী যে পরিমাণ ভোট পেয়েছেন, সেই ভোট আমার মার্কায় চলে যেতে পারত। আমার আশঙ্কা হচ্ছিল, আমি প্রার্থী থাকলে আমরা তিনজনই হেরে যাব। উল্টো জিতে যাবেন তৈমুর আলম। কিন্তু আমি দলের জেলা কমিটির আহ্বায়ক, অথচ আমার কারণে দল হেরে যাবে, এটা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।
প্রথম আলো নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সমর্থন দিলেন কেন?
এস এম আকরাম শামীম ওসমান ২০০১ সালে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগকে অরক্ষিত রেখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ২০০৭ সালের বাতিল হয়ে যাওয়া নির্বাচনের আগমূহূর্তে তিনি দেশে ফিরে দলীয় মনোনয়ন পান। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হলো না। নতুন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আবারও পালিয়ে যান। যদিও দল ক্ষমতায় আসার পর তিনি অনেকটা বীরের বেশে দেশে ফেরেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছিল, তিনি জিততে পারবেন না। আমি নিশ্চিত ছিলাম, আমি সমর্থন দিলে আইভী জিতবেন। সংগত কারণে তাঁকেই সমর্থন দিলাম। তা ছাড়া, পদত্যাগের আগে দলের জন্য কিছু একটা করার বাসনা থেকেই আইভীকে সমর্থন দিই।
প্রথম আলো ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। রাজনীতিতে এলেন কীভাবে?
এস এম আকরাম ১৯৯৪ সালে আমি সরকারের অতিরিক্ত সচিব ছিলাম। আমার অবসরে যাওয়ার তখনো দুই বছর বাকি। ক্ষমতায় বিএনপি। আমি বুঝতে পারলাম, অবসরে যাওয়ার আগে অন্তত আমার কোনো পদোন্নতি হবে না। কারণ, বিএনপি আমাকে আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাই দুই বছর আগেই চাকরি থেকে অবসর নিই। তারপর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের অনুরোধেই আওয়ামী লীগে যোগদান করি। সব শেষে দলীয় প্রধানের অনুরোধে ১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচন করেছি এবং জিতেছি। বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে আমার রাজনীতিতে আসা এবং তিনিই আমাকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেন।
প্রথম আলো ২০০৮ সালের নির্বাচনে আপনি মনোনয়ন পেলেন না কেন?
এস এম আকরাম ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে শুরুতে আমাকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। পরে ক্ষমতা নিশ্চিত করতে কিংবা হতে পারে নির্বাচনের কৌশল হিসেবে বন্দর এলাকা থেকে জাতীয় পার্টির নাসিম ওসমানকে মহাজোটের মনোনয়ন দেওয়া হয়। তখন মনোনয়ন পাওয়ার জন্য নাসিম ওসমানের পক্ষে জাতীয় পার্টির নেতারা যে পরিমাণ চেষ্টা-তদবির করেছিলেন, আমার পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা তা করেননি। যে কারণে আমি মনোনয়ন পাইনি। দুঃখজনক হলো, আমি যে মনোনয়ন পাচ্ছি না, বা নাসিম ওসমানের জন্য আমাকে যে আসনটি ছেড়ে দিতে হবে, দল বা দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা একবারও সে বিষয়টি আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করেননি।
প্রথম আলো ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর দলের অবস্থা কেমন ছিল?
এস এম আকরাম নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ প্রায় নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে। স্থানীয় সাহসী কিছু নেতা-কর্মীকে নিয়ে আমিই প্রায় আট বছর দলকে আগলে রেখেছিলাম। ২০০৫ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এই জেলায় সব আন্দোলন-সংগ্রামই আমার নেতৃত্বে হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। তখন নাজমা রহমানকে জেলার সভাপতি এবং শামীম ওসমানকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের দিন দল হেরে যাচ্ছে বুঝতে পেরে শামীম ওসমান সেদিন রাতেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে শুনেছি, তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সভাপতি নাজমা রহমানও এলাকায় আসা বন্ধ করে দেন। তাঁর আশঙ্কা, বিএনপির কর্মীরা তাঁকে অপদস্থ করতে পারে। সে জন্য তিনি ঢাকার সোহাগ কমিউনিটি সেন্টারে জেলা আওয়ামী লীগের সভা আয়োজন করে বেশ আলোচিত হন। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে তখন নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। তখন অনেকটা বাধ্য হয়েই দলের প্রধান শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জের জেলা কমিটি ভেঙে দেন এবং আমাকে ডেকে জেলার আহ্বায়কের দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানান। দলীয় প্রধানের অনুরোধ মানেই নির্দেশ, আমি তাঁর অনুরোধে রাজি হয়ে যাই। এর পর থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সক্রিয়ভাবেই দায়িত্ব পালন করেছি।
প্রথম আলো নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে সেলিনা হায়াৎ আইভীর উত্থানকে আপনি কীভাবে দেখছেন? স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মতে, তাঁর উঠে আসার পেছনে আপনার অবদানই বেশি।
এস এম আকরাম ২০০২ সালে সভানেত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শেই আমরা পৌর নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। দলের অবস্থা তখনো ভঙ্গুর। মূলত পৌর নির্বাচনের মধ্য দিয়েই জেলার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়ায়। অথচ এর আগ পর্যন্ত বিএনপির সন্ত্রাসীদের ভয়ে জেলায় আওয়ামী লীগের নেতাদের একসঙ্গে বসে বৈঠক করার সাহস ছিল না। আমার মনে আছে, পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর জেলার নেতাদের আমার বাসায় আসার অনুরোধ করেছিলাম। অনেকেই ভয়ে আসেননি। শেষে জামতলায় এক ব্যবসায়ীর বাসায় আমরা বৈঠক করি। সেখানেই আমরা সেলিনা হায়াৎ আইভীকে পৌর নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আইভী এর কিছুদিন আগে নিউজিল্যান্ড থেকে দেশে ফিরেছেন মাত্র। নির্বাচন করার ব্যাপারে তাঁর আগ্রহও ছিল। সেই নির্বাচনে বর্তমান শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনও প্রার্থী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন। সদ্য শেষ হওয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি আইভীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত সততার সঙ্গে। যা হোক, পৌর নির্বাচনে আইভী জেতার পর থেকেই নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ সক্রিয় হতে শুরু করে। সব শেষে তিনি যোগ্য প্রার্থী হিসেবেই সিটির মেয়র হলেন।
প্রথম আলো আহ্বায়ক থাকা অবস্থায় জেলার সম্মেলন করেননি কেন?
এস এম আকরাম ১০ বছরেও জেলার জন্য দলকে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারিনি, এটা আমার ব্যর্থতা। সম্মেলন করতে কেন্দ্রের অনুমোদন লাগে। আমি বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছি। দিনক্ষণও ঠিক ছিল। কিন্তু কেন্দ্রের অনুমোদন না পাওয়ায় আমি সম্মেলন করতে পারিনি।
প্রথম আলো কেন্দ্র কেন অনুমোদন দেয়নি?
এস এম আকরাম কেন্দ্র থেকে বারবারই বলা হয়েছে, শামীম ওসমানকে সাধারণ সম্পাদক রেখে আমি যেন সভাপতি হই। আমি এই প্রস্তাবে রাজি ছিলাম না। আমরা অনেকেই জানি, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সম্মেলন হলে শামীম ওসমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন না। কারণ, বর্তমানের নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী। সম্ভবত সে জন্যই কেন্দ্র সম্মেলনের অনুমোদন দেয়নি। তবে জেলার অন্যান্য কমিটি আমরা ঠিকই করতে পেরেছি।
প্রথম আলো সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, অনেক যোগ্য নেতা থাকা সত্ত্বেও আপনাকে জেলার আহ্বায়ক করা হয়েছে।
এস এম আকরাম পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদ একটি জাতীয় দৈনিককে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, দল থেকে আমাকে নাকি অনেক মূল্যায়ন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে অনেক বড় বড় নেতা থাকা সত্ত্বেও আমাকে দলের আহ্বায়ক করা হয়েছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, এ ধরনের মন্তব্য করার অধিকার হাছান মাহমুদকে কে দিয়েছে? তিনি কি দলের নীতিনির্ধারক? দলের শীর্ষ কোনো নেতা এমন মন্তব্য করলে মেনে নেওয়া যেত। তাঁর এ ধরনের বক্তব্য অনধিকার চর্চা বলেই মনে করি।
২০০১ সালের নির্বাচনের পর নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের বড় নেতারা কোথায় ছিলেন! সবাই যে পালিয়ে ছিলেন, তা প্রতিমন্ত্রীর অজানা থাকার কথা নয়।
প্রথম আলো আওয়ামী লীগ ছেড়েছেন। রাজনীতি ছাড়বেন কি না?
এস এম আকরাম আমি আওয়ামী লীগ ছেড়েছি। ব্যাপারটা এমন নয় যে, আমি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি, কারও অনুরোধে সেটি প্রত্যাহার করে নিলাম। তবে আওয়ামী লীগ ছাড়লেও রাজনীতি ছাড়ছি না। একটি কথা বলব, আমি কোনো কিছু পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ করিনি। আমি যখন দলে যোগ দিই, আওয়ামী লীগ তখন বিরোধী দলে। আর আজ আমি যখন আওয়ামী লীগ ছাড়ছি, তখন দল ক্ষমতায়। আমি দল ছাড়লেও রাজনীতি ছাড়ছি না। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা যে সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ গঠন করেছি, তা জিইয়ে রাখব। বলা যায়, আমাদের কাজ শুরু হলো। প্রয়োজনে সারা দেশেই আমাদের কার্যক্রম চলবে। এই সংগঠন জাতির বিবেক হিসেবে কাজ করতে পারে।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
এস এম আকরাম ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হারুন আল রশিদ
প্রথম আলো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিজয়ে আপনার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। কিন্তু বিজয়ের পরই দল থেকে পদত্যাগ করলেন কেন?
এস এম আকরাম কোনো আবেগ নয়, পরিকল্পিতভাবেই আমি পদত্যাগ করেছি। পদত্যাগের জন্য একটি সুবর্ণ সময় খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। আইভীর বিজয়ের মাধ্যমে আমি সেই সময়টি খুঁজে পেয়েছি। সে জন্য বেশ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিই। ১৫ অক্টোবর পদত্যাগপত্রের খসড়া তৈরি করে পকেটে রেখে দিয়েছিলাম। ২৭ অক্টোবর কিছুক্ষণের জন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় উত্তরার বাসায় ছুটে যাই। সেখানে পদত্যাগপত্রটি কম্পিউটারে কম্পোজ করি। তারপর সেটি আবারও পকেটে পুরে নিই। ৩১ অক্টোবর তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিই।
পদত্যাগের কারণ, ২০০৮ সালের পরই আমি দল থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিলাম। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জেলায় দলের সাংগঠনিক তৎপরতা থেমে যায়। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই আবার সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু হয়। এখন মনে হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আমাকে আওয়ামী লীগের আর প্রয়োজন হবে না। জেলার নেতৃত্ব শামীম ওসমানের কাছে যাবে। সে জন্য ভাবলাম, আগেই সরে দাঁড়ানো ভালো। কারণ, আমার পক্ষে শামীম ওসমানকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করা সম্ভব নয়।
প্রথম আলো স্থানীয় কর্মীদের মতে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আপনাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেনি। সে জন্যই আপনি অভিমান করে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
এস এম আকরাম নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আমিও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলাম। নির্বাচনে কে প্রার্থী হবেন, তা নির্ধারণের জন্য সেলিনা হায়াৎ আইভী ও শামীম ওসমানকে ঢাকায় ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আমাকে তিনি ডাকেননি। হতে পারে, প্রার্থী হিসেবে তিনি আমাকে যোগ্য মনে করেননি। এই অবস্থায় একদিন দলের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য ফোন করে আমাকে জানালেন, নেত্রী আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছেন। তিনি আমাকে জানান, শামীম ওসমানই দলীয় সমর্থন পেতে যাচ্ছেন। সুতরাং আইভীকেও সরে দাঁড়াতে হবে। আমার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন ওই নেতা জানান, আইভীকে তিনি টেলিফোনে পাচ্ছেন না। যে কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ তাঁর কাছে পৌঁছানো যাচ্ছিল না। পরে তিনি আইভীকে টেলিফোনে পেয়েছিলেন কি না, তা আমার জানা নেই। এমন আরও অনেক ঘটনার মধ্য দিয়ে আইভী নির্বাচনে জিতলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে গণভবনে ডেকে নিলেন, ডেকে নিলেন শামীম ওসমানকেও। এবারও আমাকে ডাকা হয়নি। সুতরাং দলের এমন কর্মকাণ্ডে আমি বেদনাহত হব, এটাই স্বাভাবিক। এরপর আমি ধরে নিতেই পারি, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আমাকে আর আওয়ামী লীগের প্রয়োজন নেই।
প্রথম আলো সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আপনিও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। সরে দাঁড়ালেন কেন?
এস এম আকরাম বেশ কিছু কারণ আছে। প্রথমত, দলীয় প্রধানের নির্দেশ। দ্বিতীয়ত, আমি সরে না দাঁড়ালে প্রার্থী হিসেবে বিএনপির তৈমুর আলম খন্দকার এগিয়ে থাকতেন। কারণ, বন্দর এলাকায় (নারায়ণগঞ্জ-৫) আইভী যে পরিমাণ ভোট পেয়েছেন, সেই ভোট আমার মার্কায় চলে যেতে পারত। আমার আশঙ্কা হচ্ছিল, আমি প্রার্থী থাকলে আমরা তিনজনই হেরে যাব। উল্টো জিতে যাবেন তৈমুর আলম। কিন্তু আমি দলের জেলা কমিটির আহ্বায়ক, অথচ আমার কারণে দল হেরে যাবে, এটা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।
প্রথম আলো নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সমর্থন দিলেন কেন?
এস এম আকরাম শামীম ওসমান ২০০১ সালে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগকে অরক্ষিত রেখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ২০০৭ সালের বাতিল হয়ে যাওয়া নির্বাচনের আগমূহূর্তে তিনি দেশে ফিরে দলীয় মনোনয়ন পান। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হলো না। নতুন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আবারও পালিয়ে যান। যদিও দল ক্ষমতায় আসার পর তিনি অনেকটা বীরের বেশে দেশে ফেরেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছিল, তিনি জিততে পারবেন না। আমি নিশ্চিত ছিলাম, আমি সমর্থন দিলে আইভী জিতবেন। সংগত কারণে তাঁকেই সমর্থন দিলাম। তা ছাড়া, পদত্যাগের আগে দলের জন্য কিছু একটা করার বাসনা থেকেই আইভীকে সমর্থন দিই।
প্রথম আলো ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। রাজনীতিতে এলেন কীভাবে?
এস এম আকরাম ১৯৯৪ সালে আমি সরকারের অতিরিক্ত সচিব ছিলাম। আমার অবসরে যাওয়ার তখনো দুই বছর বাকি। ক্ষমতায় বিএনপি। আমি বুঝতে পারলাম, অবসরে যাওয়ার আগে অন্তত আমার কোনো পদোন্নতি হবে না। কারণ, বিএনপি আমাকে আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাই দুই বছর আগেই চাকরি থেকে অবসর নিই। তারপর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের অনুরোধেই আওয়ামী লীগে যোগদান করি। সব শেষে দলীয় প্রধানের অনুরোধে ১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচন করেছি এবং জিতেছি। বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে আমার রাজনীতিতে আসা এবং তিনিই আমাকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেন।
প্রথম আলো ২০০৮ সালের নির্বাচনে আপনি মনোনয়ন পেলেন না কেন?
এস এম আকরাম ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে শুরুতে আমাকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। পরে ক্ষমতা নিশ্চিত করতে কিংবা হতে পারে নির্বাচনের কৌশল হিসেবে বন্দর এলাকা থেকে জাতীয় পার্টির নাসিম ওসমানকে মহাজোটের মনোনয়ন দেওয়া হয়। তখন মনোনয়ন পাওয়ার জন্য নাসিম ওসমানের পক্ষে জাতীয় পার্টির নেতারা যে পরিমাণ চেষ্টা-তদবির করেছিলেন, আমার পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা তা করেননি। যে কারণে আমি মনোনয়ন পাইনি। দুঃখজনক হলো, আমি যে মনোনয়ন পাচ্ছি না, বা নাসিম ওসমানের জন্য আমাকে যে আসনটি ছেড়ে দিতে হবে, দল বা দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা একবারও সে বিষয়টি আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করেননি।
প্রথম আলো ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর দলের অবস্থা কেমন ছিল?
এস এম আকরাম নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ প্রায় নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে। স্থানীয় সাহসী কিছু নেতা-কর্মীকে নিয়ে আমিই প্রায় আট বছর দলকে আগলে রেখেছিলাম। ২০০৫ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এই জেলায় সব আন্দোলন-সংগ্রামই আমার নেতৃত্বে হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। তখন নাজমা রহমানকে জেলার সভাপতি এবং শামীম ওসমানকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের দিন দল হেরে যাচ্ছে বুঝতে পেরে শামীম ওসমান সেদিন রাতেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে শুনেছি, তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সভাপতি নাজমা রহমানও এলাকায় আসা বন্ধ করে দেন। তাঁর আশঙ্কা, বিএনপির কর্মীরা তাঁকে অপদস্থ করতে পারে। সে জন্য তিনি ঢাকার সোহাগ কমিউনিটি সেন্টারে জেলা আওয়ামী লীগের সভা আয়োজন করে বেশ আলোচিত হন। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে তখন নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। তখন অনেকটা বাধ্য হয়েই দলের প্রধান শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জের জেলা কমিটি ভেঙে দেন এবং আমাকে ডেকে জেলার আহ্বায়কের দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানান। দলীয় প্রধানের অনুরোধ মানেই নির্দেশ, আমি তাঁর অনুরোধে রাজি হয়ে যাই। এর পর থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সক্রিয়ভাবেই দায়িত্ব পালন করেছি।
প্রথম আলো নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে সেলিনা হায়াৎ আইভীর উত্থানকে আপনি কীভাবে দেখছেন? স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মতে, তাঁর উঠে আসার পেছনে আপনার অবদানই বেশি।
এস এম আকরাম ২০০২ সালে সভানেত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শেই আমরা পৌর নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। দলের অবস্থা তখনো ভঙ্গুর। মূলত পৌর নির্বাচনের মধ্য দিয়েই জেলার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়ায়। অথচ এর আগ পর্যন্ত বিএনপির সন্ত্রাসীদের ভয়ে জেলায় আওয়ামী লীগের নেতাদের একসঙ্গে বসে বৈঠক করার সাহস ছিল না। আমার মনে আছে, পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর জেলার নেতাদের আমার বাসায় আসার অনুরোধ করেছিলাম। অনেকেই ভয়ে আসেননি। শেষে জামতলায় এক ব্যবসায়ীর বাসায় আমরা বৈঠক করি। সেখানেই আমরা সেলিনা হায়াৎ আইভীকে পৌর নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আইভী এর কিছুদিন আগে নিউজিল্যান্ড থেকে দেশে ফিরেছেন মাত্র। নির্বাচন করার ব্যাপারে তাঁর আগ্রহও ছিল। সেই নির্বাচনে বর্তমান শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনও প্রার্থী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন। সদ্য শেষ হওয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি আইভীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত সততার সঙ্গে। যা হোক, পৌর নির্বাচনে আইভী জেতার পর থেকেই নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ সক্রিয় হতে শুরু করে। সব শেষে তিনি যোগ্য প্রার্থী হিসেবেই সিটির মেয়র হলেন।
প্রথম আলো আহ্বায়ক থাকা অবস্থায় জেলার সম্মেলন করেননি কেন?
এস এম আকরাম ১০ বছরেও জেলার জন্য দলকে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারিনি, এটা আমার ব্যর্থতা। সম্মেলন করতে কেন্দ্রের অনুমোদন লাগে। আমি বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছি। দিনক্ষণও ঠিক ছিল। কিন্তু কেন্দ্রের অনুমোদন না পাওয়ায় আমি সম্মেলন করতে পারিনি।
প্রথম আলো কেন্দ্র কেন অনুমোদন দেয়নি?
এস এম আকরাম কেন্দ্র থেকে বারবারই বলা হয়েছে, শামীম ওসমানকে সাধারণ সম্পাদক রেখে আমি যেন সভাপতি হই। আমি এই প্রস্তাবে রাজি ছিলাম না। আমরা অনেকেই জানি, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সম্মেলন হলে শামীম ওসমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন না। কারণ, বর্তমানের নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী। সম্ভবত সে জন্যই কেন্দ্র সম্মেলনের অনুমোদন দেয়নি। তবে জেলার অন্যান্য কমিটি আমরা ঠিকই করতে পেরেছি।
প্রথম আলো সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, অনেক যোগ্য নেতা থাকা সত্ত্বেও আপনাকে জেলার আহ্বায়ক করা হয়েছে।
এস এম আকরাম পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদ একটি জাতীয় দৈনিককে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, দল থেকে আমাকে নাকি অনেক মূল্যায়ন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে অনেক বড় বড় নেতা থাকা সত্ত্বেও আমাকে দলের আহ্বায়ক করা হয়েছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, এ ধরনের মন্তব্য করার অধিকার হাছান মাহমুদকে কে দিয়েছে? তিনি কি দলের নীতিনির্ধারক? দলের শীর্ষ কোনো নেতা এমন মন্তব্য করলে মেনে নেওয়া যেত। তাঁর এ ধরনের বক্তব্য অনধিকার চর্চা বলেই মনে করি।
২০০১ সালের নির্বাচনের পর নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের বড় নেতারা কোথায় ছিলেন! সবাই যে পালিয়ে ছিলেন, তা প্রতিমন্ত্রীর অজানা থাকার কথা নয়।
প্রথম আলো আওয়ামী লীগ ছেড়েছেন। রাজনীতি ছাড়বেন কি না?
এস এম আকরাম আমি আওয়ামী লীগ ছেড়েছি। ব্যাপারটা এমন নয় যে, আমি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি, কারও অনুরোধে সেটি প্রত্যাহার করে নিলাম। তবে আওয়ামী লীগ ছাড়লেও রাজনীতি ছাড়ছি না। একটি কথা বলব, আমি কোনো কিছু পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ করিনি। আমি যখন দলে যোগ দিই, আওয়ামী লীগ তখন বিরোধী দলে। আর আজ আমি যখন আওয়ামী লীগ ছাড়ছি, তখন দল ক্ষমতায়। আমি দল ছাড়লেও রাজনীতি ছাড়ছি না। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা যে সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ গঠন করেছি, তা জিইয়ে রাখব। বলা যায়, আমাদের কাজ শুরু হলো। প্রয়োজনে সারা দেশেই আমাদের কার্যক্রম চলবে। এই সংগঠন জাতির বিবেক হিসেবে কাজ করতে পারে।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
এস এম আকরাম ধন্যবাদ।
No comments