নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন-নবনির্বাচিত মেয়র এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেশ by সৈয়দ বদরুল আহ্সান
নারায়ণগঞ্জবাসী দ্ব্যর্থহীনভাবে তাঁদের রায় দিয়ে দিয়েছেন। নবনির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী দেশবাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করবেন; তবে তাঁর এই নতুন দায়িত্ব পালনে তিনি সমগ্র নারায়ণগঞ্জবাসীর মেয়র হয়ে কাজ করবেন। নারায়ণগঞ্জের জনগণের রায় দেখে এবং নবনির্বাচিত মেয়রের বক্তব্য শুনে, আমাদের মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।
অতীতে যে আওয়ামী লীগ আমরা দেখেছি, যে আওয়ামী লীগ কোনো এক দিন জনগণের অধিকারের কথা বলত, আইভীর বিজয়ে ও তাঁর আচার-আচরণে আমরা কিছুটা হলেও সেই ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগকে খুঁজে পাই। আইভী বলেছেন, তিনি অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। তাঁর এই কথায় আমাদের মনে পুনরায় গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের প্রতি বিশ্বাস জাগে। আইভীর বিজয় ভালো মানুষের বিজয় এবং নারায়ণগঞ্জের মানুষ বাংলাদেশের সব মানুষকে জানিয়ে দিয়েছে যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে, সাহস থাকলে নতুন ধারার রাজনীতির সূচনা করা যায়।
সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিজয় আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ এ কারণে যে, তিনি তাঁর দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এবং গোটা সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন। যেমনটি করেছিলেন তাঁর বাবা আলী আহাম্মেদ চুনকা। এটা ভেবে দুঃখ লাগে যে বঙ্গবন্ধু চুনকাকে সমর্থন করেননি সেই ১৯৭৪ সালে। আর এবার শেখ হাসিনা সমর্থন দেননি আইভীকে। তবে আমাদের জানানো হয়েছে, শেখ হাসিনা আইভীর জয়ী হওয়ায় খুশি হয়েছেন। যদি হয়ে থাকেন এবং মনেপ্রাণে হয়ে থাকেন, তাহলে ভালো কথা। তবে এই প্রশ্ন জাগে, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আগে কেন উপলব্ধি করতে পারেননি যে তাঁর সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানের প্রতি বিভিন্ন কারণে মানুষের আস্থা নেই? নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ শুরু থেকেই আইভীর প্রতি তাঁদের সমর্থনের কথা বিভিন্নভাবে ব্যক্ত করে আসছিলেন।
শোনা যায়, খোদ মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য আইভীকেই প্রার্থী হিসেবে পছন্দ করেছেন। শেখ হাসিনা এসব বাস্তবতা লক্ষ করেননি। আর করে থাকলেও আমলে নেননি। ফলাফলটা প্রধানমন্ত্রীর জন্য খুব একটা সুখকর হয়নি, হওয়ার কথা নয়। শামীম ওসমানকে তিনি ছোট ভাই হিসেবে দেখেন। সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু রাজনীতিতে ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজনের কোনো ভূমিকা থাকে না বা থাকা উচিত নয়। এ কথা আমাদের দেশের রাজনীতিবিদেরা কখনো অনুভব করেছেন? জেনারেল এরশাদ যখন জাতিসংঘে ভাষণ দেন, সেই আশির দশকে; তখন তাঁর পুত্র সেই বিরাট হলে হেঁটে বেরিয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতির আজ এই দুরবস্থার কারণ—তিনি পরিবারতন্ত্রের ঊর্ধ্বে যেতে পারলেন না। আর যখন আমরা দেখি শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য জাতিসংঘে তাঁর বক্তৃতার সময় বাংলাদেশ সরকারের জন্য বরাদ্দ আসনগুলো দখল করে আছেন, তখন গোটা পৃথিবীর সামনে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যায়।
সে যা-ই হোক। মোট কথা হলো, প্রধানমন্ত্রী তাঁর ‘ছোট ভাই’কে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে সমর্থন করে খুব একটা ভালো করেননি। হ্যাঁ, নির্বাচন যে সুষ্ঠু হয়েছে এবং কোনো গোলযোগ যে হয়নি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেনাবাহিনী তলব করা হয়নি এবং তাতেও যে নির্বাচন ভালো হয়েছে, এটা আনন্দের কথা। শামীম ওসমান যেই জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করেছিলেন, সেটাও বাস্তবতায় পরিণত হয়নি। তবে এখানে আমাদের মনে রাখতে হবে যে এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হওয়ার পেছনে বিশেষ কতগুলো কারণ ছিল: প্রথমত, সেলিনা হায়াৎ আইভীর দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস। দ্বিতীয়ত, নারায়ণগঞ্জবাসীর পরিষ্কার রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা। তৃতীয়ত, নির্বাচন কমিশনের যোগ্য নেতৃত্ব দ্বারা নির্বাচন পরিচালনা এবং চতুর্থত, গোটা বাংলাদেশের মিডিয়ার এই নির্বাচনের প্রতি কড়া নজরদারি। আইভীর প্রতিপক্ষ কোনো সুযোগই পাইনি নির্বাচনকে বানচাল করার। আর ফল হলো যে একজন ভালো ও সৎ এবং পরীক্ষিত মানুষ মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
শেখ হাসিনা ও সেলিনা হায়াৎ আইভী সাক্ষাতে মিলিত হয়েছেন। কিন্তু এই সাক্ষাৎটি যতটা সুন্দর হতে পারত, অর্থবহ হতে পারত, ততটা হয়নি এবং হয়নি এই কারণে যে, প্রধানমন্ত্রী আইভী ও শামীমকে মিলেমিশে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। এই পরামর্শদানের ফলে জনমনে বেশ কতগুলো প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। আইভী নির্বাচিত হয়েছেন। শামীম ওসমান পরাজিত। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো উদাহরণ নেই যে সেই পরাজিত রাজনীতিবিদ বিজয়ী রাজনীতিবিদের সঙ্গে কাজ করার স্বপ্ন দেখেছেন বা সুযোগ পেয়েছেন। পাকিস্তানে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর জুলফিকার আলী ভুট্টো বিজয়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টি দ্বারা গঠিত একটি কোয়ালিশন সরকারের ব্যাপারে। বঙ্গবন্ধু স্বাভাবিকভাবেই ভুট্টোর এই ভ্রান্ত চিন্তা নাকচ করে দিয়েছিলেন। এখন যখন শেখ হাসিনা চাচ্ছেন, আইভী ও শামীম একসঙ্গে কাজ করুন, তার অর্থ একটাই দাঁড়ায় এবং সেটা হলো, নবনির্বাচিত মেয়রকে হয়তো স্বাধীনভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হবে না। হয়তো আমাদের সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হলো যে নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, শামীমকে বাদ দিয়ে কোনো কিছু করা যাবে না। আইভী আমাদের বলেছেন, তিনি সমগ্র নারায়ণগঞ্জের উন্নতি সাধন করবেন, গডফাদারদের কার্যকলাপ বরদাশত করবেন না। সেই কাজগুলো করতে হলে তাঁকে স্বাধীনভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির আবরণে অনেক গডফাদার তাদের অপরাধজগৎ পরিচালনা করে আসছে বহু বছর ধরে। আইভী দৃঢ় থাকলে ওই সব ব্যক্তিকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ওসমানের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে বলেছেন। তিনি অত্যন্ত ভদ্রভাবে কথাটি শুনেছেন। এখন তাঁর দায়িত্ব হবে প্রতিমুহূর্তে স্মরণে রাখা যে নারায়ণগঞ্জের জনগণ তাঁকে মেয়র পদে নির্বাচন করেছেন, শামীমকে নয়। এবং সেই বাস্তবতাকে উপলব্ধি করেই তাঁকে এগিয়ে যেতে হবে। অপরাধ সিন্ডিকেটগুলো ভাঙতে হবে। চাঁদাবাজ, সে যতই শক্তিশালী হোক, এদের দমন করতে হবে। যেসব তথাকথিত রাজনীতিবিদ স্বয়ং নিজ এলাকার নির্বাচিত সাংসদদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের প্রতি হুমকি ছুড়ে মারে, এরা যাতে আর আমাদের জীবনে ফিরে না আসতে পারে, সেই লক্ষ্যে আইভীকে কাজ করতে হবে। নবনির্বাচিত মেয়রের দায়িত্ব হলো নারায়ণগঞ্জের আপামর মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করা—তাঁর পরাজিত ও বিতর্কিত প্রতিপক্ষের সঙ্গে নয়।
সব শেষে একটি প্রশ্ন, যখন সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন, তখন শামীম ওসমানের সেখানে উপস্থিত থাকাটা কি জরুরি ছিল? আরেকটি কথা, প্রশ্ন নয়: একজন ভদ্রলোক ও গুণী ব্যক্তি এস এম আকরাম আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে চলে গেলেন। শেখ হাসিনার এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া হলো কি না, আমরা জানতে পারলাম না। আমরা কি তাহলে ধরে নেব, আওয়ামী লীগে ভালো মানুষের কোনো স্থান নেই? দলের ভবিষ্যতের জন্য এগুলো ভালো নয়।
সৈয়দ বদরুল আহ্সান: সাংবাদিক।
সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিজয় আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ এ কারণে যে, তিনি তাঁর দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এবং গোটা সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন। যেমনটি করেছিলেন তাঁর বাবা আলী আহাম্মেদ চুনকা। এটা ভেবে দুঃখ লাগে যে বঙ্গবন্ধু চুনকাকে সমর্থন করেননি সেই ১৯৭৪ সালে। আর এবার শেখ হাসিনা সমর্থন দেননি আইভীকে। তবে আমাদের জানানো হয়েছে, শেখ হাসিনা আইভীর জয়ী হওয়ায় খুশি হয়েছেন। যদি হয়ে থাকেন এবং মনেপ্রাণে হয়ে থাকেন, তাহলে ভালো কথা। তবে এই প্রশ্ন জাগে, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আগে কেন উপলব্ধি করতে পারেননি যে তাঁর সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানের প্রতি বিভিন্ন কারণে মানুষের আস্থা নেই? নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ শুরু থেকেই আইভীর প্রতি তাঁদের সমর্থনের কথা বিভিন্নভাবে ব্যক্ত করে আসছিলেন।
শোনা যায়, খোদ মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য আইভীকেই প্রার্থী হিসেবে পছন্দ করেছেন। শেখ হাসিনা এসব বাস্তবতা লক্ষ করেননি। আর করে থাকলেও আমলে নেননি। ফলাফলটা প্রধানমন্ত্রীর জন্য খুব একটা সুখকর হয়নি, হওয়ার কথা নয়। শামীম ওসমানকে তিনি ছোট ভাই হিসেবে দেখেন। সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু রাজনীতিতে ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজনের কোনো ভূমিকা থাকে না বা থাকা উচিত নয়। এ কথা আমাদের দেশের রাজনীতিবিদেরা কখনো অনুভব করেছেন? জেনারেল এরশাদ যখন জাতিসংঘে ভাষণ দেন, সেই আশির দশকে; তখন তাঁর পুত্র সেই বিরাট হলে হেঁটে বেরিয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতির আজ এই দুরবস্থার কারণ—তিনি পরিবারতন্ত্রের ঊর্ধ্বে যেতে পারলেন না। আর যখন আমরা দেখি শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য জাতিসংঘে তাঁর বক্তৃতার সময় বাংলাদেশ সরকারের জন্য বরাদ্দ আসনগুলো দখল করে আছেন, তখন গোটা পৃথিবীর সামনে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যায়।
সে যা-ই হোক। মোট কথা হলো, প্রধানমন্ত্রী তাঁর ‘ছোট ভাই’কে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে সমর্থন করে খুব একটা ভালো করেননি। হ্যাঁ, নির্বাচন যে সুষ্ঠু হয়েছে এবং কোনো গোলযোগ যে হয়নি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেনাবাহিনী তলব করা হয়নি এবং তাতেও যে নির্বাচন ভালো হয়েছে, এটা আনন্দের কথা। শামীম ওসমান যেই জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করেছিলেন, সেটাও বাস্তবতায় পরিণত হয়নি। তবে এখানে আমাদের মনে রাখতে হবে যে এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হওয়ার পেছনে বিশেষ কতগুলো কারণ ছিল: প্রথমত, সেলিনা হায়াৎ আইভীর দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস। দ্বিতীয়ত, নারায়ণগঞ্জবাসীর পরিষ্কার রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা। তৃতীয়ত, নির্বাচন কমিশনের যোগ্য নেতৃত্ব দ্বারা নির্বাচন পরিচালনা এবং চতুর্থত, গোটা বাংলাদেশের মিডিয়ার এই নির্বাচনের প্রতি কড়া নজরদারি। আইভীর প্রতিপক্ষ কোনো সুযোগই পাইনি নির্বাচনকে বানচাল করার। আর ফল হলো যে একজন ভালো ও সৎ এবং পরীক্ষিত মানুষ মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
শেখ হাসিনা ও সেলিনা হায়াৎ আইভী সাক্ষাতে মিলিত হয়েছেন। কিন্তু এই সাক্ষাৎটি যতটা সুন্দর হতে পারত, অর্থবহ হতে পারত, ততটা হয়নি এবং হয়নি এই কারণে যে, প্রধানমন্ত্রী আইভী ও শামীমকে মিলেমিশে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। এই পরামর্শদানের ফলে জনমনে বেশ কতগুলো প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। আইভী নির্বাচিত হয়েছেন। শামীম ওসমান পরাজিত। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো উদাহরণ নেই যে সেই পরাজিত রাজনীতিবিদ বিজয়ী রাজনীতিবিদের সঙ্গে কাজ করার স্বপ্ন দেখেছেন বা সুযোগ পেয়েছেন। পাকিস্তানে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর জুলফিকার আলী ভুট্টো বিজয়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টি দ্বারা গঠিত একটি কোয়ালিশন সরকারের ব্যাপারে। বঙ্গবন্ধু স্বাভাবিকভাবেই ভুট্টোর এই ভ্রান্ত চিন্তা নাকচ করে দিয়েছিলেন। এখন যখন শেখ হাসিনা চাচ্ছেন, আইভী ও শামীম একসঙ্গে কাজ করুন, তার অর্থ একটাই দাঁড়ায় এবং সেটা হলো, নবনির্বাচিত মেয়রকে হয়তো স্বাধীনভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হবে না। হয়তো আমাদের সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হলো যে নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, শামীমকে বাদ দিয়ে কোনো কিছু করা যাবে না। আইভী আমাদের বলেছেন, তিনি সমগ্র নারায়ণগঞ্জের উন্নতি সাধন করবেন, গডফাদারদের কার্যকলাপ বরদাশত করবেন না। সেই কাজগুলো করতে হলে তাঁকে স্বাধীনভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির আবরণে অনেক গডফাদার তাদের অপরাধজগৎ পরিচালনা করে আসছে বহু বছর ধরে। আইভী দৃঢ় থাকলে ওই সব ব্যক্তিকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ওসমানের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে বলেছেন। তিনি অত্যন্ত ভদ্রভাবে কথাটি শুনেছেন। এখন তাঁর দায়িত্ব হবে প্রতিমুহূর্তে স্মরণে রাখা যে নারায়ণগঞ্জের জনগণ তাঁকে মেয়র পদে নির্বাচন করেছেন, শামীমকে নয়। এবং সেই বাস্তবতাকে উপলব্ধি করেই তাঁকে এগিয়ে যেতে হবে। অপরাধ সিন্ডিকেটগুলো ভাঙতে হবে। চাঁদাবাজ, সে যতই শক্তিশালী হোক, এদের দমন করতে হবে। যেসব তথাকথিত রাজনীতিবিদ স্বয়ং নিজ এলাকার নির্বাচিত সাংসদদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের প্রতি হুমকি ছুড়ে মারে, এরা যাতে আর আমাদের জীবনে ফিরে না আসতে পারে, সেই লক্ষ্যে আইভীকে কাজ করতে হবে। নবনির্বাচিত মেয়রের দায়িত্ব হলো নারায়ণগঞ্জের আপামর মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করা—তাঁর পরাজিত ও বিতর্কিত প্রতিপক্ষের সঙ্গে নয়।
সব শেষে একটি প্রশ্ন, যখন সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন, তখন শামীম ওসমানের সেখানে উপস্থিত থাকাটা কি জরুরি ছিল? আরেকটি কথা, প্রশ্ন নয়: একজন ভদ্রলোক ও গুণী ব্যক্তি এস এম আকরাম আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে চলে গেলেন। শেখ হাসিনার এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া হলো কি না, আমরা জানতে পারলাম না। আমরা কি তাহলে ধরে নেব, আওয়ামী লীগে ভালো মানুষের কোনো স্থান নেই? দলের ভবিষ্যতের জন্য এগুলো ভালো নয়।
সৈয়দ বদরুল আহ্সান: সাংবাদিক।
No comments