৪৮৭ অবৈধ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাজ্যের তাগিদ by রাহীদ এজাজ

যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে বসবাসের দায়ে আটক ৪৮৭ জন বাংলাদেশিকে দ্রুত ফিরিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছে ডেভিড ক্যামেরুনের সরকার। তা না হলে যুক্তরাজ্য আগামী মার্চ থেকে তাঁদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে। কয়েক বছর ধরে অবৈধভাবে বসবাসের দায়ে আটক এসব লোক বৈধ বাংলাদেশিদের জীবিকার জন্য হুমকি তৈরি করছেন বলে মনে করে যুক্তরাজ্য।


উচ্চপর্যায়ের একটি সরকারি সূত্র গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে জানিয়েছে, সম্প্রতি ঢাকা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে আলোচনায় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তোলেন যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী অ্যান্ড্রু মিচেল। এ ছাড়া সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে যাওয়া লোকজনের সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার হারও বাড়ছে। এটিও যুক্তরাজ্যকে উদ্বিগ্ন করছে বলে অ্যান্ড্রু মিচেল বাংলাদেশের নেতাদের জানান।
যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীর বরাত দিয়ে কূটনৈতিক একটি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে আটক শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়াসহ ১২টি দেশের অবৈধ লোকজনকে ফেরত পাঠাতে তাঁরা বিমানও ভাড়া করে ফলেছেন। ওই দেশগুলো নিজেরা তাদের লোক না নিয়ে গেলে যুক্তরাজ্য জোর করেই তাদের পাঠিয়ে দেবে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ৪৮৭ জনকে ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। তা না হলে আগামী মাস থেকে তাঁদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করবে যুক্তরাজ্য।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, অ্যান্ড্রু মিচেলের এই ব্যাখ্যার পর এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাজ্যকে।
যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী অ্যান্ড্রু মিচেল গত ১৪ জানুয়ারি তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। এসব আলোচনায় অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি তোলেন মিচেল। পাশাপাশি তিনি পরিসংখ্যানের উল্লেখ করে বলেন, সাম্প্রতিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে ৬০ থেকে ৮০ জন বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যে বিমানবন্দরে অবতরণের পর পর রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করছেন। এ প্রবণতা সে দেশের সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে।
ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কোনো কর্মকর্তা। তবে অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত লোকজনের ব্যাপারে সে দেশের সীমান্ত এলাকায় অভিবাসন ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকারী সংস্থা ইউকে বর্ডার এজেন্সির কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করেন এক কর্মকর্তা।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, অ্যান্ড্রু মিচেল যে ৪৮৭ অবৈধ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনার কথা উল্লেখ করেছেন, তাঁরা ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ধরা পড়েন। তাঁদের মধ্যে গুটি কয়েকের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজে জড়ানোর অভিযোগ আছে। অন্যরা মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পর অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে অবস্থানের কারণে গ্রেপ্তার হন।
ঢাকা সফরের সময় তাঁদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ২০০৯ সালের মে মাসে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সই করা বাংলাদেশের একটি সম্মতপত্রের উল্লেখ করেন অ্যান্ড্রু মিচেল। ওই পত্রে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ হাইকমিশন আটক ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত করলে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। প্রচলিত নিয়ম হলো, কোনো দেশে বাংলাদেশি আটক হলে তথ্য পাওয়ার পর পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) বাড়িঘরে গিয়ে তদন্ত করে তাঁদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে এবং তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়।

No comments

Powered by Blogger.