সুজানা বললেন এটা প্রেম নয় by সিফাত হোসেন
একদিকে বাবা ক্যান্সারের রোগী, অন্যদিকে হৃদয় খানকে জড়িয়ে পত্রিকায় নানা খবর প্রকাশিত হচ্ছে সুজানাকে নিয়ে। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। সুজানার মাথা সব সময় গরম থাকারই কথা। কিন্তু না, এমন পরিস্থিতিতেও তিনি হাসিমুখে সব সামলে নিচ্ছেন। লিখেছেন সিফাত হোসেন...
একসঙ্গে দু’নৌকায় পা দেবেন না—নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে প্রথম প্রথম সুজানা এমনটিই ভেবেছিলেন। কিন্তু নাট্য পরিচালকদের একের পর এক প্রস্তাব আর কতক্ষণ ফিরিয়ে দেয়া যায়! অবশেষে এক সময় তাকে অভিনয়ের বাসিন্দা হতেই হলো। তবে একটু-আধটু নাটকে কাজ করলেও সুজানার পুরো শিল্পী সত্তায় মডেলিংয়েরই ছড়াছড়ি। সুজানা বললেন, ‘আমি মনে-প্রাণে আপাদমস্তক একজন মডেল। আমি চেয়েছিলাম, মানুষ আমাকে মডেল হিসেবেই চিনুক। মনে হয়, আমার সেই চাওয়া পূরণ হয়েছে। আমি মন থেকে বিশ্বাস করি, আমি একজন মডেল। এটাই আমার ধ্যান-জ্ঞান।’ আর এই মডেলিং নিয়েও সুজানার ভাবনা অন্যদের থেকে আলাদা। অনেকে কোনো বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্টে যেই দেখলেন তাকে বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে পারফর্ম করতে হবে, ঠিক তখনই এ ধরনের প্রস্তাবে ‘না’ বলে বসেন। কিন্তু সুজানার বক্তব্য অন্যরকম। ‘আমি কোনো বাচ্চা নিয়ে বিজ্ঞাপনের কাজ করলাম বলেই যে আমি বুড়ি হয়ে গেলাম তা নয়। আমাদের পাশের দেশের বিদ্যা বালানের কথাই বলি, তিনি কিন্তু প্রথমদিকের বিজ্ঞাপনচিত্রগুলোতে মা হিসেবেই পর্দায় এসেছেন বেশি। আমার প্রথম কাজ আফজাল হোসেনের সঙ্গে। তখন আমি একেবারে টিনএজ গার্ল। ওই বয়সেই আমাকে মা হতে হয়েছে। আফজাল হোসেন আমাকে বলতেন, তোমার চেহারাটাই এমন যে, সব চরিত্রেই তোমাকে দাঁড় করানো যায়। আমি অনেক গ্ল্যামারাস বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছি।’ এ পর্যন্ত ত্রিশটির মতো বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছেন সুজানা। তার উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর তালিকায় রয়েছে—প্রাণ টোসট্, গুঁড়ো মসলা, মার্কস দুধ এবং কেয়া কসমেটিকসের সাতটি বিজ্ঞাপনচিত্র। মডেল হিসেবে তাকে কেয়ার এই বিজ্ঞাপনচিত্রগুলোই আলোচিত করার পাশাপাশি জনপ্রিয়তাও এনে দিয়েছে। সুজানা জানিয়েছেন, তিনি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করতেই বেশি আরাম বোধ করেন। আর এ কাজে সাদিয়া ইসলাম মৌকে তার অনুসরণ করা হয়। ‘আচ্ছা, এই যে আপনি মডেল হিসেবে অনেক বিজ্ঞাপনের গুণকীর্তন করেন—এগুলো কি বাস্তবে ব্যবহার করেন?’ সুজানার সরল স্বীকারোক্তি, ‘আমি আসলে প্রায়ই বিদেশে যাই। আর এ কারণে আমি বিদেশি অনেক প্রসাধনীর ওপর ডিপেন্ড করি। আর সেগুলো আমার জন্য কমফর্টেবল বলে তা ইউজ করি। মিথ্যা বলব না, ‘কেয়ার প্রসাধনী নিজের ত্বকের জন্য আরামদায়ক না বলে তা ব্যবহার করা হয় না। একেকজনের ত্বক তো একেকরকম।’ নাটকে সুজানার অভিষেক ঘটে ‘৫১ বর্তী’ ধারাবাহিকে কাজের মধ্য দিয়ে। তার অভিনীত অন্য নাটকগুলো হচ্ছে—‘দ্বিতীয় জীবন’, ‘ছন্নছাড়া’, ‘ফিফটি ফিফটি’, ‘হাই ওয়ে টু হ্যাভেন’ ইত্যাদি। বর্তমানে এনটিভিতে প্রচারিত হচ্ছে ‘টার্মিনাল’। নাটকের বাইরে ক্যারিয়ারের প্রথম থেকেই চলচ্চিত্রে কাজের প্রস্তাব পেয়ে আসছেন সুজানা। তার কথায়, ‘আসলে এখনও অভিনয় পুরোপুরি শেখা হলো না আমার। আমি মনে করি, আমাকে অভিনয় আরও শিখতে হবে। নাটকটাই তো যথাযথভাবে করা হয়ে উঠছে না। চলচ্চিত্র তো অনেক বড় একটি মাধ্যম। পুরোপুরি অভিনয় না শিখে সে পথে হাঁটব, মাথা খারাপ!’
আর দশজান তারকার মতো সুজানাকেও মাঝে মাঝে ভক্তদের নানা বিড়ম্বনা সহ্য করতে হয়। গেল ১৩ জানুয়ারি সাভার গলফ ক্লাবে ‘মিডিয়া পিকনিক-এ সুজানাকে কাছে পেয়ে তার ভক্তরা ঘিরে ধরে। প্রিয় তারকার সঙ্গে ছবি তোলা, অটোগ্রাফ নেয়া, আরও কতো কি! সুজানা একে একে তার ভক্তদের সব দাবিই পূরণ করলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওদের জন্যই আমি তারকা। হোক না ভক্তদের একটু-আধটু দুষ্টুমি, তাতে ক্ষতি কি, আমি বরং তা বেশ উপভোগ করি।’ এদিকে সুজানার বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে গেল কয়েক মাস তিনি নতুন কোনো কাজ করেননি। সারাক্ষণ বাবার পাশে পাশে তার থাকা চাই-ই চাই। এর কারণ, সুজানা যে বাবা ও বড় ভাইকে অনেক ভালোবাসেন। তাদের জন্য সব কিছুই করতে তিনি রাজি। বাবার এই মরণঘাতী অসুখে কেউ তার পাশে এসে দাঁড়াবেন তা না করে তার আর সঙ্গীত শিল্পী হৃদয় খানের সম্পর্ক নিয়ে চারদিকে শুরু হয়েছে মুখরোচক নানা গুঞ্জন। এটা যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। ‘আচ্ছা, হৃদয়ের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের বিষয়টি একটু খোলাসা করুন?’ কোনো রকম রাখঢাক না করে সুজানা বললেন, ‘হৃদয় খান আমার খুবই ভালো একজন বন্ধু। ও আমাকে অনেক পছন্দ করে। আমিও ওকে পছন্দ করি। তবে এই সম্পর্ককে ‘প্রেম বলা যাবে না’। আর মিডিয়ার কেউ কেউ তো আমাকে দু’বার মিথ্যা বিয়ে দিয়েছে।’ ‘তারকাদের কেউ কেউ নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে তো প্রথম প্রথম এমনটি বলেই থাকেন, পরে প্রকাশিত খবরের সত্যতাও পাওয়া যায়—আপনারাও কি সেই পথ অনুসরণ করছেন?’ সুজানা বোধ হয় এবার একটু রাগবেন, কিন্তু না সে পথে না গিয়ে বিনীত সুরেই বললেন, ‘দেখুন, আমি আবারও বলছি, হৃদয় খান ও আমি একে অপরকে পছন্দ করি। আমাকে পছন্দ করার মাত্রাটা হৃদয়েরই বেশি। আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের একটু ওপরে। হয়তো এটা প্রেমের পথে যাবে বা যাবে না। ভবিষ্যতের কথা তো আমরা কেউ বলতে পাির না। আমি ও হৃদয় আজ যে সম্পর্কের ভেলায় ভাসছি, তা আগামী বছর ডুবেও যেতে পারে। আবার এমনও হতে পারে, আমাদের প্রেম হবে, বিয়ে হবে। আর এটা হলে আমরা মিডিয়াকে জানিয়ে দেব। এতে লুকোচুরি করার কী আছে। আমি সত্যকে লুকাতে পছন্দ করি না। আমি এর আগে একজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। আমাদের সেই সংসার টেকেনি। কই আমি তো তা লুকাইনি। আমার সঙ্গে কথা না বলে বা আমার বক্তব্যকে একটু পরিবর্তন করে পত্রিকায় প্রকাশ করে কী লাভ আপনাদের বলুন? হৃদয় আমার ভালো বন্ধু। নিজেদের মতো করে চলতে দিন না আমাদের, দেখুন না কী হয়...।
ছবি : আশীষ সেনগুপ্ত
No comments