আরও ২৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র আসছে-দেড় বছরে ভর্তুকি ৩০ হাজার কোটি টাকা লাগবে by সবুজ ইউনুস ও নাজমুল ইমাম
জ্বালানি তেলনির্ভর রেন্টাল বিদ্যুৎ সরকারের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিদ্যুতের জন্য তেল আমদানি করতে গিয়ে সরকার আর্থিকভাবে এক প্রকার দেউলিয়া হতে চলেছে। দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের যে দাম নির্ধারিত আছে সে হিসাবে আগামী দেড় বছরে এ খাতে লোকসান ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পিডিবির লোকসান হবে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা।
গত বছর বিপিসির (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) লোকসান হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে (২০১১-১২) এ লোকসান ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। কারণ এ বছর জ্বালানি তেল আমদানি করতে হবে ৭০ লাখ টন। বিপিসির হিসাবে গত অর্থবছরে (২০১০-১১) দেশে তেল আমদানি করা হয় মাত্র ৩৮ লাখ টন। শুধু তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রে তেল সরবরাহ করতে গিয়েই চাহিদা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
প্রতি মাসেই বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র দু'একটি করে চালু হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও সরকারের ওপর ভর্তুকির বোঝা বাড়ছে। কারণ বেসরকারি মালিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দামে কিনে কম দামে ওই বিদ্যুৎ জনগণের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ ভর্তুকির বোঝা বহন করতে গিয়ে গোটা অর্থনীতির এখন নাকাল অবস্থা। এ অবস্থার মধ্যে বর্তমান সরকারের মেয়াদে আগামী দেড় বছর আরও ২৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এর বেশিরভাগই বেসরকারি খাতের জ্বালানি তেলনির্ভর কেন্দ্র। চারটি রেন্টাল। ছয়টি কেন্দ্র সরকারি উদ্যোগে হচ্ছে। বাকিগুলো বেসরকারি খাতের আইপিপি। এরমধ্যে ১৭টিই জ্বালানি তেলনির্ভর। ৯টি কেন্দ্রে
গ্যাসের পাশাপাশি তেলে চালানোর ব্যবস্থা থাকছে। এসব কেন্দ্র তেলে চললে পিডিবি ও বিপিসির লোকসান আরও বাড়বে।
নতুন এ ২৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য সরকারকে লোকসান গুনতে হবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এ ২৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে মোট ২ হাজার ১৩৬ মেগাওয়াট। পিডিবিকে এ বিদ্যুৎ কিনতে হবে বেশি দামে। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ খাতে আগামী দেড় বছরে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, এটা প্রাথমিক হিসাব। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে। এ পতন অব্যাহত থাকলে এবং জ্বালানি তেলের দাম দেশে আরও বাড়ানো হলে বিদ্যুতে ভর্তুকির পরিমাণও বাড়বে। তবে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হলে কিছুটা সমন্বয় করা যাবে বলে সরকারি কর্মকর্তাদের ধারণা। তবে তাদের আশঙ্কা, কোনো সরকারই মেয়াদের শেষদিকে এসে তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর মতো অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে চায় না। ফলে ভর্তুকির যে হিসাব করা হয়েছে তা খুব বেশি একটা হেরফের হবে না। পিডিবি জানায়, সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে তাদের লোকসানের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। কারণ বিপিসির কাছ থেকে পিডিবি জ্বালানি তেল কিনে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের কাছে সরবরাহ করছে। আবার নির্ধারিত দামেই বেসরকারি বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে পিডিবিকে। সেখানে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।
সরকার এ দুরবস্থার কথা স্বীকার করেই বলছে, 'আমরা জেনেশুনেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। জনগণের বিদ্যুতের দুর্ভোগ কমাতে সক্ষম হয়েছি। যেভাবেই হোক ভর্তুকি নিয়ে বিরূপ পরিস্থিতি আমরা মোকাবেলা করব।' পিডিবির চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবির সমকালকে বলেন, আগামী মাসের প্রথমার্ধের পর আর কোনো রেন্টাল (ভাড়াভিত্তিক) বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে না। এরপর যেগুলো আসবে সেগুলো সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র (আইপিপি)। রেন্টালের দাম অনেক বেশি। সে তুলনায় আইপিপি থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে বিদ্যুৎ কেনা যাবে। তিনি আরও জানান, রেন্টাল কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি ৩ থেকে ৫ বছর মেয়াদি। এ মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ভর্তুকির পরিমাণও কমে আসবে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপকভাবে বাড়ছে। চাহিদা থাকলে যেভাবেই হোক বিদ্যুৎ কিনতে হবে। ফলে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নবায়ন করে ওই রেন্টাল বিদ্যুৎ ভবিষ্যতেও আংশিক কিনতে হতে পারে। এর আগেও চুক্তি নবায়ন করে রেন্টাল বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের পক্ষে অব্যাহতভাবে ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব হবে না। আবার আগামী নির্বাচনের বিষয়টিও সরকারকে মাথায় রাখতে হবে। এ সত্ত্বেও ভর্তুকি কমাতে সরকারকে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হতে পারে। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। রাজনৈতিক অস্থিরতাও বাড়তে পারে। জানতে চাইলে আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ও গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ক্রমাগত ভর্তুকি দেওয়ার মতো অবস্থা সরকারের নেই। তাই আগামীতেও সরকারকে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির মতো অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া বিকল্প থাকবে না।
আগামী ছয় মাসে যে কেন্দ্রগুলো চালু হবে : সরকারি হিসাবে চলতি অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) নয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। এগুলো চালু হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে ৭৫৭ মেগাওয়াট। কেন্দ্রগুলোর মধ্যে চারটিই রেন্টাল কেন্দ্র। এগুলো হলো_ চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা (৫০ মেগাওয়াট), ঢাকার কেরানীগঞ্জ (১০০ মেগাওয়াট), রাজশাহীর কাটাখালী (৫০ মেগাওয়াট) এবং চট্টগ্রামের জুলদা (১০০ মেগাওয়াট)। সবই ফার্নেস অয়েলনির্ভর। এ কেন্দ্রগুলোর বেশিরভাগই এখন পরীক্ষামূলক উৎপাদনে রয়েছে। আরও যে পাঁচটি কেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে সেগুলো হচ্ছে_ পিডিবির কাটাখালী ৫০ মেগাওয়াট পিকিং প্লান্ট (গ্যাস), চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট (গ্যাস), সান্তাহার ৫০ মেগাওয়াট পিকিং প্লান্ট (ফার্নেস অয়েল/গ্যাস) ও সিলেট ১৫০ মেগাওয়াট (গ্যাস) কেন্দ্র। বাকি কেন্দ্র হলো আরপিসিএলের ৫০ মেগাওয়াট গাজীপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র (ফার্নেস অয়েল/গ্যাস)।
আগামী অর্থবছর যে সব কেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির সিরাজগঞ্জ ১৫০ (গ্যাস/ডিজেল) ও খুলনা ১৫০ মেগাওয়াট (গ্যাস/ডিজেল); আরপিসিএলের রাউজান ২৫ মেগাওয়াট (গ্যাস/ফার্নেস অয়েল); আরইবির টাঙ্গাইল ২০ (গ্যাস/ফার্নেস অয়েল) ও নারায়ণগঞ্জ ৫০ মেগাওয়াট (ফার্নেস অয়েল) এবং আইপিপিগুলো হলো চট্টগ্রামের মহরা ৫০ ও পতেঙ্গা ১০০, ঢাকার গাবতলী ১০৮, খুলনা ১০০, নাটোর ৫০, কুমিল্লার হোমনা ৫২, মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টি ৫২ ও কেরানীগঞ্জের বছিলা ১০৮। এ আইপিপিগুলো ফার্নেস অয়েলে চলবে। এছাড়া জামালপুর ৯৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রে গ্যাস ও ফার্নেস অয়েলের ব্যবস্থা থাকবে। আইপিপিগুলোর মধ্যে শুধু দুটি কেন্দ্র নরসিংদীর ঘোড়াশাল ১০০ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাসে চলবে। গ্যাস সংকটের কারণে বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র তেলনির্ভর করা হচ্ছে বলে পিডিবি সূত্র জানিয়েছে।
প্রতি মাসেই বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র দু'একটি করে চালু হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও সরকারের ওপর ভর্তুকির বোঝা বাড়ছে। কারণ বেসরকারি মালিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দামে কিনে কম দামে ওই বিদ্যুৎ জনগণের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ ভর্তুকির বোঝা বহন করতে গিয়ে গোটা অর্থনীতির এখন নাকাল অবস্থা। এ অবস্থার মধ্যে বর্তমান সরকারের মেয়াদে আগামী দেড় বছর আরও ২৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এর বেশিরভাগই বেসরকারি খাতের জ্বালানি তেলনির্ভর কেন্দ্র। চারটি রেন্টাল। ছয়টি কেন্দ্র সরকারি উদ্যোগে হচ্ছে। বাকিগুলো বেসরকারি খাতের আইপিপি। এরমধ্যে ১৭টিই জ্বালানি তেলনির্ভর। ৯টি কেন্দ্রে
গ্যাসের পাশাপাশি তেলে চালানোর ব্যবস্থা থাকছে। এসব কেন্দ্র তেলে চললে পিডিবি ও বিপিসির লোকসান আরও বাড়বে।
নতুন এ ২৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য সরকারকে লোকসান গুনতে হবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এ ২৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে মোট ২ হাজার ১৩৬ মেগাওয়াট। পিডিবিকে এ বিদ্যুৎ কিনতে হবে বেশি দামে। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ খাতে আগামী দেড় বছরে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, এটা প্রাথমিক হিসাব। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে। এ পতন অব্যাহত থাকলে এবং জ্বালানি তেলের দাম দেশে আরও বাড়ানো হলে বিদ্যুতে ভর্তুকির পরিমাণও বাড়বে। তবে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হলে কিছুটা সমন্বয় করা যাবে বলে সরকারি কর্মকর্তাদের ধারণা। তবে তাদের আশঙ্কা, কোনো সরকারই মেয়াদের শেষদিকে এসে তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর মতো অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে চায় না। ফলে ভর্তুকির যে হিসাব করা হয়েছে তা খুব বেশি একটা হেরফের হবে না। পিডিবি জানায়, সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে তাদের লোকসানের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। কারণ বিপিসির কাছ থেকে পিডিবি জ্বালানি তেল কিনে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের কাছে সরবরাহ করছে। আবার নির্ধারিত দামেই বেসরকারি বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে পিডিবিকে। সেখানে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।
সরকার এ দুরবস্থার কথা স্বীকার করেই বলছে, 'আমরা জেনেশুনেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। জনগণের বিদ্যুতের দুর্ভোগ কমাতে সক্ষম হয়েছি। যেভাবেই হোক ভর্তুকি নিয়ে বিরূপ পরিস্থিতি আমরা মোকাবেলা করব।' পিডিবির চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবির সমকালকে বলেন, আগামী মাসের প্রথমার্ধের পর আর কোনো রেন্টাল (ভাড়াভিত্তিক) বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে না। এরপর যেগুলো আসবে সেগুলো সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র (আইপিপি)। রেন্টালের দাম অনেক বেশি। সে তুলনায় আইপিপি থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে বিদ্যুৎ কেনা যাবে। তিনি আরও জানান, রেন্টাল কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি ৩ থেকে ৫ বছর মেয়াদি। এ মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ভর্তুকির পরিমাণও কমে আসবে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপকভাবে বাড়ছে। চাহিদা থাকলে যেভাবেই হোক বিদ্যুৎ কিনতে হবে। ফলে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নবায়ন করে ওই রেন্টাল বিদ্যুৎ ভবিষ্যতেও আংশিক কিনতে হতে পারে। এর আগেও চুক্তি নবায়ন করে রেন্টাল বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের পক্ষে অব্যাহতভাবে ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব হবে না। আবার আগামী নির্বাচনের বিষয়টিও সরকারকে মাথায় রাখতে হবে। এ সত্ত্বেও ভর্তুকি কমাতে সরকারকে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হতে পারে। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। রাজনৈতিক অস্থিরতাও বাড়তে পারে। জানতে চাইলে আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ও গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ক্রমাগত ভর্তুকি দেওয়ার মতো অবস্থা সরকারের নেই। তাই আগামীতেও সরকারকে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির মতো অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া বিকল্প থাকবে না।
আগামী ছয় মাসে যে কেন্দ্রগুলো চালু হবে : সরকারি হিসাবে চলতি অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) নয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। এগুলো চালু হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে ৭৫৭ মেগাওয়াট। কেন্দ্রগুলোর মধ্যে চারটিই রেন্টাল কেন্দ্র। এগুলো হলো_ চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা (৫০ মেগাওয়াট), ঢাকার কেরানীগঞ্জ (১০০ মেগাওয়াট), রাজশাহীর কাটাখালী (৫০ মেগাওয়াট) এবং চট্টগ্রামের জুলদা (১০০ মেগাওয়াট)। সবই ফার্নেস অয়েলনির্ভর। এ কেন্দ্রগুলোর বেশিরভাগই এখন পরীক্ষামূলক উৎপাদনে রয়েছে। আরও যে পাঁচটি কেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে সেগুলো হচ্ছে_ পিডিবির কাটাখালী ৫০ মেগাওয়াট পিকিং প্লান্ট (গ্যাস), চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট (গ্যাস), সান্তাহার ৫০ মেগাওয়াট পিকিং প্লান্ট (ফার্নেস অয়েল/গ্যাস) ও সিলেট ১৫০ মেগাওয়াট (গ্যাস) কেন্দ্র। বাকি কেন্দ্র হলো আরপিসিএলের ৫০ মেগাওয়াট গাজীপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র (ফার্নেস অয়েল/গ্যাস)।
আগামী অর্থবছর যে সব কেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির সিরাজগঞ্জ ১৫০ (গ্যাস/ডিজেল) ও খুলনা ১৫০ মেগাওয়াট (গ্যাস/ডিজেল); আরপিসিএলের রাউজান ২৫ মেগাওয়াট (গ্যাস/ফার্নেস অয়েল); আরইবির টাঙ্গাইল ২০ (গ্যাস/ফার্নেস অয়েল) ও নারায়ণগঞ্জ ৫০ মেগাওয়াট (ফার্নেস অয়েল) এবং আইপিপিগুলো হলো চট্টগ্রামের মহরা ৫০ ও পতেঙ্গা ১০০, ঢাকার গাবতলী ১০৮, খুলনা ১০০, নাটোর ৫০, কুমিল্লার হোমনা ৫২, মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টি ৫২ ও কেরানীগঞ্জের বছিলা ১০৮। এ আইপিপিগুলো ফার্নেস অয়েলে চলবে। এছাড়া জামালপুর ৯৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রে গ্যাস ও ফার্নেস অয়েলের ব্যবস্থা থাকবে। আইপিপিগুলোর মধ্যে শুধু দুটি কেন্দ্র নরসিংদীর ঘোড়াশাল ১০০ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাসে চলবে। গ্যাস সংকটের কারণে বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র তেলনির্ভর করা হচ্ছে বলে পিডিবি সূত্র জানিয়েছে।
No comments