বিএনপি-জামায়াত লুটেরা চক্রকে প্রত্যাখ্যান করুন-মানিকগঞ্জে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী by অমরেশ রায় ও বিপ্লব চক্রবর্তী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত লুটেরা চক্রকে প্রত্যাখ্যান করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যারা দুর্নীতি ও লুটপাট করে জনগণের সম্পদ লুটে নিতে চায়, অত্যাচার-নির্যাতন করে মানুষকে দরিদ্র করতে চায়_ বাংলার মানুষ আর তাদের ভোট দেবে না। জনগণ লুটেরাদের আর ক্ষমতায় দেখতেও চায় না। এদের সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।


আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরও বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া এতিমদের নামে বিদেশ থেকে টাকা এনে দুর্নীতি করেছেন, নিজের নামে জমি কিনেছেন। এতিমের টাকা নিয়ে দুর্নীতি করবেন আর তার বিচার হবে না_ এত আহ্লাদ চলবে না। কাউকে এমন আহ্লাদ করতেও দেওয়া হবে না। এতিমের টাকা আত্মসাৎকারীদের বিচার না হলে এতিমদের বাঁচানো যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় এসব কথা বলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এ বিচার দেশের জনগণ ও

যুবসমাজের দাবি। একাত্তরে যারা গণহত্যা, লুটপাট, অগি্নসংযোগ ও ধর্ষণ করেছে সেসব মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচার বাংলার মাটিতে অবশ্যই হবে।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক, তা বিরোধীদলীয় নেতা চান না। এ কারণে যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তিনি এদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তবে খালেদা জিয়ার এ ষড়যন্ত্র সফল হবে না।
মহাজোট সরকারের তিন বছরে মানিকগঞ্জে প্রথমবারের মতো আয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর এ জনসভাকে ঘিরে গোটা নগরীতে আনন্দমুখর পরিবেশ ও উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। বিকেল ৩টায় এ জনসভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুরের আগে থেকেই মানিকগঞ্জ জেলার সবক'টি উপজেলা ছাড়াও ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জনসভাস্থলে আসতে শুরু করেন। এদের সঙ্গে যোগ দেন স্বতঃস্ফূর্ত সাধারণ মানুষ। বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ও হেঁটে মিছিলসহকারে জনসভায় উপস্থিত হন তারা। অনেকেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা ও ব্যান্ডপার্টি নিয়ে জনসভায় যোগ দেন। বিকেল নাগাদ মানুষের ভিড় জনসভাস্থল ছাড়িয়ে বাসস্ট্যান্ড, পূর্ব দাসাড়া, সদর হাসপাতাল ও পশ্চিম শেওতা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এসব এলাকার বিভিন্ন রাস্তা ও উঁচু ভবনের ছাদে উঠেও মানুষ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছেন।
এদিকে জনসভাস্থলের আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাগানো কয়েকশ' মাইকে জনসভার কার্যক্রম প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে গোটা শহরকে অসংখ্য তোড়ন, ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লাকার্ডে সাজিয়ে তোলা হয়। এর পাশাপাশি জনসভা মাঠের চারপাশসহ গোটা এলাকায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিও শোভা পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর যাত্রাপথে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ হাত নেড়ে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। জবাবে শেখ হাসিনাও হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন। বিকেল পৌন ৪টার কিছু পরে প্রধানমন্ত্রী জনসভামঞ্চে পেঁৗছলে লাখো জনতা বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে অভিনন্দন জানালে জনতাও হাততালি দিয়ে স্বাগত জানান তাকে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে মানিকগঞ্জ পেঁৗছে শিবালয়ের পুরাতন আরিচা ঘাটে বিআইডবি্লউটিএর তিনটি ড্রেজার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্যাপিটাল (পাইলট) ড্রেজিং কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর মানিকগঞ্জ সার্কিট হাউসে জেলার সার্বিক উন্নয়ন বিষয়ে জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে জনসভায় যোগ দেন তিনি। সন্ধ্যায় হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় ফিরে যান।
ক্ষমতায় গেলে বর্তমান সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে বিরোধীদলীয় নেতার এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এ সরকারের আমলে করা সব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেশকে আবারও অন্ধকারে ঠেলে দিতে চান। আমরা ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাস, বোমাবাজি ও জঙ্গিবাদ বন্ধ করেছি। বিরোধীদলীয় নেতা কী আবারও সন্ত্রাস ও বোমাবাজি সৃষ্টি করে মানুষের জীবন নিরাপত্তাহীন করতে চান? দেশের মানুষ শান্তিতে থাকলে তিনি অশান্তিতে থাকেন। তবে মানুষ আর সেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদীদের শাসন দেখতে চায় না।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছরের দুঃশাসনের বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, দুর্নীতি-সন্ত্রাস-লুটপাট-জঙ্গিবাদই হচ্ছে বিএনপি। বাংলাদেশকে তারা সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদের দেশে পরিণত করেছিল। ক্ষমতায় থাকতে তারা দেশের উন্নয়নে কিছু করেনি। কেবল লুটপাট ও দুর্নীতি করে জনগণের সম্পদ লুটে খেয়েছে।
মহাজোট সরকারের তিন বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উল্লেখ করে তিনি বলেন, চালের দাম কমেছে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আছে, আইন-শৃঙ্খলারও উন্নতি হয়েছে। তিন বছরে দারিদ্র্য কমেছে, বেড়েছে মানুষের আয়।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সময় অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনই ছিল কারচুপির নির্বাচন। আর বর্তমান সরকার আমলের সবক'টি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেছিলাম। এখন নির্বাচন হচ্ছে ডিজিটাল মেশিনে। এতে ভোট কারচুপি কিংবা ফল পাল্টে দেওয়ার সুযোগ নেই। আগামী দিনে আর ব্যালট ছিনতাই, বাক্স নিয়ে কাড়াকাড়ি এবং 'দশটি হোন্ডা, বিশটি গুন্ডা, নির্বাচন ঠাণ্ডা'_ এ ধরনের নির্বাচন চলবে না।
তিনি বলেন, আগামী দিনে জেলার উন্নয়নে পাওয়ার প্লান্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, ফসল ও তরিতরকারি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা ও অর্থনৈতিক জোন স্থাপন, সদর হাসপাতালকে আড়াইশ' শয্যায় উন্নীত করে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হবে। সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য বাস প্রদানসহ রাস্তাঘাট উন্নয়নের আশ্বাসও দেন তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, জাহিদ মালেক স্বপন এমপি, মমতাজ বেগম এমপি, অপু উকিল এমপি, এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, মঞ্জুর আলম শাহীন, অ্যাডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, গাজী কামরুল হুদা সেলিম, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম, রমজান আলী, অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ ফটো, অ্যাডভোকেট দীপক বোস, সুদেব সাহা, নীনা রহমান, লক্ষ্মী চ্যাটার্জি, রোমেনা আক্তার প্রমুখ। এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম আলম হানিফ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকও উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে আরিচায় ড্রেজার ও ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকার যেসব উন্নয়নের পদক্ষেপ নিয়েছিল, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দিয়েছে। একটি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে কমপক্ষে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন বলে মত ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলো সচল রাখতে সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে মৃতপ্রায় এসব নদীর নাব্যতা পুনরুদ্ধার, নিষ্কাশন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও নদীভাঙন রোধ করা হবে। উদ্ধারকৃত জমিতে বসতভিটা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, শিল্প কারখানা স্থাপন এবং বনায়নেরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, যমুনা নদীতে পাইলট ক্যাপিটাল ড্রেজিং সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্ট ও বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাশের গাইড বাঁধ হুমকিমুক্ত হবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান, নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন এমপি, ইঞ্জিনিয়ার এবিএম আনোয়ারুল হক এমপি, পানিসম্পদ সচিব সৈয়দ আলতাফ আলী, নৌসচিব আবদুল মান্নান হাওলাদার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক আজিজুল হক এবং বিআইডবি্লউটিএর চেয়ারম্যান ড. শামছুদ্দোহা খন্দকার।

No comments

Powered by Blogger.