চিকিৎসা-গ্রাম ডাক্তারদের স্বার্থ দেখতে হবে by আবদুস সাত্তার
এ দেশে পাস করা ডাক্তারদের ইতিহাস অর্ধ শতাব্দীর। এসব বিষয়ে আমাদের চিকিৎসা বিষয়ে গবেষকদের অবশ্যই জানা আছে। গ্রাম ডাক্তারদের ধ্বংস না করে তাদের গ্রাম ডাক্তার পরিচয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করার সুযোগ দিলে তৃণমূল চিকিৎসকরা বেঁচে থাকতে পারবেন।
২০১০ সালের বিএমডিসির মাধ্যমে গ্রাম ডাক্তারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, যা তারা বিশ্বাসই করতে পারেননি ২০১০ সালে সংসদে বিএমডিসি ২০১০ পাস করা হয়েছে। ফলে দেশের ৫ লাখ গ্রাম ডাক্তার, পল্লী চিকিৎসকসহ ১০ লাখ তৃণমূল ডাক্তার এখন আর ডাক্তার পরিচয় দিতে পারবেন না। শুধু তাই নন, অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসাও করতে পারবেন না। করলে ২ লাখ টাকা জরিমানা এবং ২ বছরের জেল। দরিদ্র গ্রাম ডাক্তারদের ধরে নিলে জেল খাটতে পারবেন; কিন্তু ২ লাখ টাকা জরিমানা দেবেন কেমন করে!
দেশের ৫০ হাজার পাস করা ডাক্তারের স্বার্থ রক্ষায় আইনটি পাস করে তৃণমূল ডাক্তারদের পথে বসানো হয়েছে। গ্রাম ডাক্তাররা ডাক্তার পরিচয় দিলে পাস করা ডাক্তারদের এমন কী ক্ষতি হয়? গ্রাম ডাক্তারদের প্রতি কারও কারও এলার্জি আছে জানি। গ্রাম ডাক্তারদের ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে তার সমাধান করা যেত। তাদের বিধির আওতায় আনা যেত। দুইশ', পাঁচশ' এবং হাজার টাকা ফি দিয়ে আমাদের দেশের দরিদ্র মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে পারবে না। তা ছাড়া এ তৃণমূল ডাক্তাররা কোথায় যাবেন?
গ্রাম ডাক্তাররা দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবা দেন। তারা নিজেরাও গরিব। তাদের নেই কোনো ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার। স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষণ সনদপত্র দিয়েছে। তাদের জন্য প্রশিক্ষণ পুস্তকও প্রকাশ করা হয়েছিল। ১৯৮০ সাল থেকে দেশের সব স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রাম ডাক্তারদের সম্মেলনে অতিথি হয়ে তাদের দাবি সমর্থন করেছেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী গ্রাম ডাক্তারদের দাবি সমর্থন করেছেন; কিন্তু হঠাৎ করে এমন কী কারণ ঘটল যে, গ্রাম ডাক্তারদের পেশা ছাড়া করতে হলো? বিএমডিসি পাস হওয়ার পর দেশের একমাত্র ব্যক্তি জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম ছাড়া আর কেউ গ্রাম ডাক্তারদের পক্ষে কোনো বক্তব্য দেননি। কোনো জাতীয় পত্রিকা, সাংবাদিক ও কলাম লেখক এ গ্রাম ডাক্তারদের পক্ষে এক কলমও লেখেননি।
গ্রাম ডাক্তাররা এখনও ভরসা রাখছেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ওপর। কারণ তিনি গ্রাম ডাক্তারদের একাধিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে সদয় উপস্থিত থেকে তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। গ্রাম ডাক্তার আমাদের জাতীয় কৃষ্টি, কালচার ও ঐতিহ্যের প্রতীক। যখন একজনও পাস করা ডাক্তার ছিলেন না, তখন থেকে এই গ্রাম ডাক্তাররাই আমাদের বাংলার মানুষের চিকিৎসা দিয়েছেন। আমাদের জাতীয় অধ্যাপক ডাক্তার নুরুল ইসলাম স্বীকার করেছেন, তিনিও গ্রাম ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসা লাভ করেছেন। তিনি বিএমডিসির ২০১০ সালের পরিবর্তনও চান। ১৮ শতকে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। গত শতকের প্রথমদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়, এর আগে পাস করা ডাক্তার তো খুঁজেও পাওয়া যেত না। এ দেশে পাস করা ডাক্তারদের ইতিহাস অর্ধ শতাব্দীর। এসব বিষয়ে আমাদের চিকিৎসা বিষয়ে গবেষকদের অবশ্যই জানা আছে। গ্রাম ডাক্তারদের ধ্বংস না করে তাদের গ্রাম ডাক্তার পরিচয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করার সুযোগ দিলে তৃণমূল চিকিৎসকরা বেঁচে থাকতে পারবেন। ২০১০ সালের বিএমডিসির মাধ্যমে গ্রাম ডাক্তারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, যা তারা বিশ্বাসই করতে পারেননি। কারণ ২০১০ সালে দেশে স্বৈরশাসক ছিল না, ছিল না সামরিক শাসক। দেশ শাসন করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। গ্রাম ডাক্তাররা বিশ্বাস করলেন তখন, যখন দেখা গেল চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় গ্রাম ডাক্তারদের ডাক্তার লেখার অপরাধে গ্রেফতার করা হচ্ছে, জরিমানা করা হচ্ছে, থানায় এসে ডাক্তার লেখার অনুমতি কাগজপত্র দেখাতে ওসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য নোটিশ প্রদান করছে।
এতে আমাদের পাস করা ডাক্তারদের কতটুকু উপকার হবে জানি না, তবে এটা জানি, দেশে অপচিকিৎসা বাড়বে। তাবিজ, কবজ, ঝাড়ফুঁকসহ মুদি দোকানে ওষুধ চলে যাবে। গ্রাম ডাক্তারদের সংগঠন বাংলাদেশ গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতির সদস্যরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখবেন। তারা প্রাথমিক চিকিৎসক হিসেবে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি পাবেন।
আবদুস সাত্তার : সভাপতি, বাংলাদেশ
গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতি
No comments