বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
২৮৮ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। মো. আমিন উল্লাহ, বীর প্রতীক মাইনের আঘাতে পা হারান তিনি মো. আমিন উল্লাহ যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টর এলাকায়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এক যুদ্ধে তিনি আহত হন। মাইনের আঘাতে তাঁর বাঁ পায়ের হাঁটু পর্যন্ত উড়ে যায়। সহযোদ্ধারা তাঁকে উদ্ধার করে ফিল্ড হাসপাতালে পাঠান। পরে তাঁর চিকিৎসা হয় ভারতের মাদ্রাজ ও মুম্বাইয়ে। পুরোপুরি সুস্থ হননি।
মো. আমিন উল্লাহর বয়স এখন ৭৫-৭৬। প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালের কথা তাঁর মনে নেই। বিশেষত, কোন কোন স্থানে যুদ্ধ করেছেন, মাস-সময়, সহযোদ্ধা ও দলনেতার নাম, সাব-সেক্টরের নাম—কোনো কিছুই তাঁর এখন মনে পড়ে না।
মো. আমিন উল্লাহর সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলে মুক্তিযুদ্ধের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা জানা সম্ভব হয়নি। তবে এলোমেলো অনেক কথার মধ্যে তাঁর আহত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে কিছুটা তথ্য পাওয়া গেল। তা হলো, কুমিল্লা রেলস্টেশন থেকে আখাউড়া অভিমুখ তিন স্টেশন পর এক স্থানে একদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বড় রকমের সংঘর্ষ হয়। সেদিন মো. আমিন উল্লাহ মুক্তিবাহিনীর যে দলে (সেকশন) ছিলেন, সেই দলের দলনেতা আহত হন। তখন তিনি দলের দলনেতার দায়িত্ব নেন। যুদ্ধের একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের তীব্রতা মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের পাশাপাশি ব্যাপক গোলাবর্ষণ করছিল। এতে যুদ্ধক্ষেত্রে টিকে থাকা তাঁদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় মো. আমিন উল্লাহ সহযোদ্ধাদের নিয়ে কিছুটা পিছু হটে অবস্থান নেন। এরপর তিনি সহযোদ্ধাদের সেখানে রেখে অধিনায়কের সঙ্গে পরামর্শ করতে যান। কিছুক্ষণ পর ফিরে দেখেন, তাঁর দলের তিনজন মুক্তিযোদ্ধা আবার সামনে এগিয়ে বিপদজনক স্থানে গেছেন। এদিকে অধিনায়ক তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের তীব্রতা না কমা পর্যন্ত নিরাপদ স্থানে থাকার। তীব্রতা কমলে আবার পাল্টা আক্রমণ শুরু হবে। সে জন্য তিনি তাঁর তিন সহযোদ্ধাকে ফিরিয়ে আনতে সামনে যান। তাঁদের নিয়ে ফিরে আসার পথে ভূমিতে পাকিস্তানি সেনাদের পেতে রাখা একটি মাইনের ওপর তাঁর পা পড়ে। শরীরের চাপে মাইনটি বিস্ফোরিত হয়ে তাঁর বাঁ পায়ের হাঁটু পর্যন্ত উড়ে যায়। তিনি মাটিতে পড়ে যান। মাইনটি বিস্ফোরিত হলে প্রথমে তিনি বুঝতে পারেননি তাঁর পা উড়ে গেছে। একটু পর ওঠার চেষ্টা করলে বুঝতে পারেন তাঁর বাঁ পা নেই। পরে সহযোদ্ধারা উদ্ধার করে তাঁকে ফিল্ড হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
মো. আমিন উল্লাহ চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। মার্চে সম্ভাব্য ভারতীয় আগ্রাসনের কথা বলে এই রেজিমেন্টের বেশির ভাগ সেনাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেটের শমসেরনগর পাঠানো হয়। অল্প কিছু সেনা সেনানিবাসের ভেতর অবস্থান করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য মো. আমিন উল্লাহকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ১৩৪।
মো. আমিন উল্লাহর পৈতৃক বাড়ি নোয়াখালী জেলার কবিরহাট উপজেলার (ডাক: চাপরাশিরহাট) রামেশ্বরপুর গ্রামে। বর্তমানে এখানেই বসবাস করেন। তাঁর বাবার নাম রমজান আলী, মা আফিজা খাতুন। স্ত্রী হাজরা খাতুন। তাঁদের দুই মেয়ে।
সূত্র: প্রথম আলোর নোয়াখালী প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান ও ফখরুল ইসলাম (নোয়াখালী)।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
সংশোধনী: ‘তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না’ ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ক্রমিক সংখ্যায় ২৮৪-র পর ভুল হয়েছে। ১৫ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ২৮৪ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। ১৬ জানুয়ারিতেও ২৮৪ সংখ্যা ছাপা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তা হবে ২৮৫। একইভাবে ১৭ জানুয়ারি তারিখে ২৮৫-র পরিবর্তে ২৮৬, ১৮ জানুয়ারি ২৮৬-র পরিবর্তে ২৮৭ হবে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য দুঃখিত।
মো. আমিন উল্লাহর সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলে মুক্তিযুদ্ধের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা জানা সম্ভব হয়নি। তবে এলোমেলো অনেক কথার মধ্যে তাঁর আহত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে কিছুটা তথ্য পাওয়া গেল। তা হলো, কুমিল্লা রেলস্টেশন থেকে আখাউড়া অভিমুখ তিন স্টেশন পর এক স্থানে একদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বড় রকমের সংঘর্ষ হয়। সেদিন মো. আমিন উল্লাহ মুক্তিবাহিনীর যে দলে (সেকশন) ছিলেন, সেই দলের দলনেতা আহত হন। তখন তিনি দলের দলনেতার দায়িত্ব নেন। যুদ্ধের একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের তীব্রতা মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের পাশাপাশি ব্যাপক গোলাবর্ষণ করছিল। এতে যুদ্ধক্ষেত্রে টিকে থাকা তাঁদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় মো. আমিন উল্লাহ সহযোদ্ধাদের নিয়ে কিছুটা পিছু হটে অবস্থান নেন। এরপর তিনি সহযোদ্ধাদের সেখানে রেখে অধিনায়কের সঙ্গে পরামর্শ করতে যান। কিছুক্ষণ পর ফিরে দেখেন, তাঁর দলের তিনজন মুক্তিযোদ্ধা আবার সামনে এগিয়ে বিপদজনক স্থানে গেছেন। এদিকে অধিনায়ক তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের তীব্রতা না কমা পর্যন্ত নিরাপদ স্থানে থাকার। তীব্রতা কমলে আবার পাল্টা আক্রমণ শুরু হবে। সে জন্য তিনি তাঁর তিন সহযোদ্ধাকে ফিরিয়ে আনতে সামনে যান। তাঁদের নিয়ে ফিরে আসার পথে ভূমিতে পাকিস্তানি সেনাদের পেতে রাখা একটি মাইনের ওপর তাঁর পা পড়ে। শরীরের চাপে মাইনটি বিস্ফোরিত হয়ে তাঁর বাঁ পায়ের হাঁটু পর্যন্ত উড়ে যায়। তিনি মাটিতে পড়ে যান। মাইনটি বিস্ফোরিত হলে প্রথমে তিনি বুঝতে পারেননি তাঁর পা উড়ে গেছে। একটু পর ওঠার চেষ্টা করলে বুঝতে পারেন তাঁর বাঁ পা নেই। পরে সহযোদ্ধারা উদ্ধার করে তাঁকে ফিল্ড হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
মো. আমিন উল্লাহ চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। মার্চে সম্ভাব্য ভারতীয় আগ্রাসনের কথা বলে এই রেজিমেন্টের বেশির ভাগ সেনাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেটের শমসেরনগর পাঠানো হয়। অল্প কিছু সেনা সেনানিবাসের ভেতর অবস্থান করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য মো. আমিন উল্লাহকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ১৩৪।
মো. আমিন উল্লাহর পৈতৃক বাড়ি নোয়াখালী জেলার কবিরহাট উপজেলার (ডাক: চাপরাশিরহাট) রামেশ্বরপুর গ্রামে। বর্তমানে এখানেই বসবাস করেন। তাঁর বাবার নাম রমজান আলী, মা আফিজা খাতুন। স্ত্রী হাজরা খাতুন। তাঁদের দুই মেয়ে।
সূত্র: প্রথম আলোর নোয়াখালী প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান ও ফখরুল ইসলাম (নোয়াখালী)।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
সংশোধনী: ‘তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না’ ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ক্রমিক সংখ্যায় ২৮৪-র পর ভুল হয়েছে। ১৫ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ২৮৪ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। ১৬ জানুয়ারিতেও ২৮৪ সংখ্যা ছাপা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তা হবে ২৮৫। একইভাবে ১৭ জানুয়ারি তারিখে ২৮৫-র পরিবর্তে ২৮৬, ১৮ জানুয়ারি ২৮৬-র পরিবর্তে ২৮৭ হবে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য দুঃখিত।
No comments