শুধুই সৌজন্য সফর?

নিশ্চয়তার ক্রিকেটটা পাকিস্তানে বোধ হয় আরও বেশি অনিশ্চিত। এই বোমা ফাটে তো ওই ড্রোন হামলা! লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর হামলার পর তো আর কোনো আন্তর্জাতিক দল পাকিস্তানে যাচ্ছেই না। এই অবস্থায় আগুনে ঘি ঢালছে দেশটার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা।


এপ্রিলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফরও তাই এখনো নিশ্চিত নয়। সফরের আগে বাংলাদেশ থেকে একটা নিরাপত্তা দলের পাকিস্তান ঘুরে আসার কথা। বিসিবির ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দুজন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে দুজন এবং বিসিবি থেকে তিনজন, সম্ভাব্য মোট সাতজনের প্রতিনিধিদল আগামী ২২-২৩ জানুয়ারি দুই-তিন দিনের জন্য ইসলামাবাদ ও লাহোর সফরে যাবে।
গুঞ্জন আছে, এই সফরটা কেবলই আনুষ্ঠানিকতা। বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফরের ব্যাপারে সরকার আর বিসিবিও খুব একটা আগ্রহী নয়। চরম অনিরাপত্তা আর অস্থিতিশীলতার মধ্যে কোনো দেশই এখন পাকিস্তান সফরের ঝুঁকি নিচ্ছে না। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সেখানে পাঠানোটা তাই বিসিবির অনেকের কাছে মনে হচ্ছে বোকামি। এই সফর নিয়ে খেলোয়াড়দের মনেও রয়েছে শঙ্কা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক খেলোয়াড়ই বলেছেন, মানসিকভাবে তাঁরা পাকিস্তান সফরের জন্য প্রস্তুত নন। আগে জীবন, পরে খেলা।
তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জীবন আর খেলার বাইরেও আছে কূটনীতি। যত দূর বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা দল পাকিস্তানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যাবে সেই কূটনৈতিক সৌজন্যতার খাতিরেই। তা ছাড়া পিসিবি আইসিসির পরবর্তী সহসভাপতি হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বিসিবিকে। এই ছাড় যদি কোনো লেনদেনের শর্তে হয়, তাহলেও অন্তত শুরুতেই বিসিবি বলে দিতে পারে না যে এপ্রিলে বাংলাদেশ দল পাকিস্তানে যাবে না। কাজেই একটা নিরাপত্তা প্রতিনিধিদল তো অন্তত পাঠানো যায়ই। বলা হচ্ছে, তাদের দেওয়া প্রতিবেদনের ওপরই নির্ভর করবে বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফর।
বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফর নিয়ে যখন এই শঙ্কা আর অনিশ্চয়তার দোলাচল, তখনই ঢাকায় হাজির পিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সুবহান আহমেদ। ভদ্রলোক দুই দিনের সফরে পরশু ঢাকায় এসেছেন এবং আসার আনুষ্ঠানিক কারণটা বিসিবির প্রয়াত প্রধান নির্বাহী মনজুর আহমেদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো। কাল দুপুরে বিসিবি কার্যালয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘মনজুর সাহেব আমার ভালো বন্ধু ছিলেন। দেড় বছর ধরে চিনতাম তাঁকে। আমি এসেছি মূলত তাঁর পরিবার ও বাংলাদেশ বোর্ডের প্রতি সমবেদনা জানাতে। আজ (গতকাল) তাঁর ছেলের সঙ্গে দেখা করেছি, কবরে ফাতেহা পাঠ করেছি।’ বাংলাদেশে আসার এটাই একমাত্র কারণ বলে জানিয়েছেন সুবহান।
আনুষ্ঠানিক কারণ যাই হোক, পিসিবি সিওওর এই সময়ে বাংলাদেশে আসাটা এপ্রিলের পাকিস্তান সফরের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। সুবহান জানালেন, এখন তাঁদের অপেক্ষা শুধু বিসিবির সবুজ সংকেতের, ‘আমরা আমাদের দিক থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি অপেক্ষায় আছি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার। সেগুলো হয়ে যাওয়া মানেই আমরা সিরিজ আয়োজনের জন্য প্রস্তুত।’
কিন্তু পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কি খুব আদর্শ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সিরিজ আয়োজনের জন্য? সুবহান আহমেদ এটাকে কোনো সমস্যাই মনে করছেন না, ‘আমাদের এই অঞ্চলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এরকমই থাকে এবং এটা পরিবর্তনও হয়। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আমরা বাংলাদেশের নিরাপত্তা দলের পাকিস্তান সফর সফল করার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়ার নিশ্চয়তা পেয়েছি সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে। আমাদের বিশ্বাস, খারাপ কিছু হবে না।’ পিসিবি সিওওর আশা, এপ্রিলে বাংলাদেশের পাকিস্তান সফরটা হবেই। এই বিশ্বাসের কারণে ভদ্রলোক বিকল্প ভেন্যুর আলোচনায় যেতেই চাইলেন না।
বাংলাদেশের পাকিস্তান সফর এবং নিরাপত্তা দলের সে দেশে যাওয়ার বিষয়টা আইসিসিকে জানিয়েছে পিসিবি। আইসিসি থেকে যেহেতু এ নিয়ে পাল্টা কিছু বলা হয়নি, পিসিবি ধরে নিচ্ছে সফরের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব নেই ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থার। ‘দ্বিপক্ষীয় সিরিজ আয়োজন মূলত দুই বোর্ডেরই ব্যাপার। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড রাজি থাকলে আইসিসি কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়’—বলেছেন সুবহান আহমেদ। তার পরও সিরিজের জন্য নেওয়া সার্বিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা আইসিসিতে পাঠাবে পিসিবি। শুধু বাংলাদেশ দল নয়, ম্যাচ অফিশিয়ালদেরও তো নিশ্চিন্ত হয়েই যেতে হবে পাকিস্তানে!

No comments

Powered by Blogger.