‘আমার দেশ’ আমাদের সকলের ‘দেশ’ হোক by আমানুল্লাহ কবীর

ঙ্গলবার, রাত তখন প্রায় ১১টা হবে। জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায় এখন লেখালেখি, তা-ই করছিলাম। এমন সময় আমার মেজো ছেলে এসে বলল, তোমার দু’জন গেসল্ট এসেছেন। এত রাতে আবার কারা এলো—বলতে বলতে ড্রয়িংরুমের দরজার সামনে যেতেই অনেকটা ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম। ‘আমার দেশ’ থেকে আমার দুই সাবেক প্রিয় সহকর্মী—আতাহার খান ও সৈয়দ আবদাল আহমদ।


জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে বসতে বললাম। আবদাল বসতে বসতে বলল, আপনার জন্য একটা দাওয়াত কার্ড নিয়ে এসেছি। আগামী ১৬ তারিখ শুক্রবার আমার দেশ-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠান, আয়োজনটা অবশ্য বিলম্বিত হয়েছে—বলে কার্ড আমার হাতে তুলে দিল। খামের ওপর আমার নামের নিচে লেখা ‘প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, আমার দেশ’। বিলম্বে হলেও দেখে ভালো লাগল এ কারণে যে এ স্বীকৃতিটুকুও যেন কেউ দিতে চায় না। আমার দেশ ছেড়ে দেয়ার পর আমার বাসায় সৌজন্য কপিও বন্ব্দ করে দেয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময় নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তা আবার চালু করে। যারা কখনও নতুন পত্রিকা প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, তারা অনুভব করতে পারবেন না একটা পত্রিকা প্রকাশনার সঙ্গে মানসিক শ্রম ও আবেগ কীভাবে জড়িয়ে পড়ে। অনেকটাই মাতৃত্ব লাভের আনন্দ-বেদনার মতো।
আমার দেশ যখন প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়, তখন কেউই তা ভালো চোখে দেখেননি—সবাই নৈরাশ্যজনক মন্তব্য করেছেন। অনেকেই আমার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘ফালুর কাগজ ...।’ আবার অনেকেই বলেছেন, আরেকটি দৈনিক দিনকাল হবে। তাদের এসব মন্তব্য যেমন নৈরাশ্য সৃষ্টি করত, তেমনি জেদেরও উদ্রেগ করত। অতীতেও আমার হাত দিয়ে ‘ডেইলি সল্টার’, ‘ইন্ডিপেনডেন্ট’সহ বেশ কয়েকটি ইংরেজি দৈনিক প্রকাশিত হয়েছে; কিন্তু এবারের চ্যালেঞ্জটা মনে হলো ভিন্ন। বিশেষত ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সিল্টগমার কারণে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা সে চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়েছি—প্রকাশনার প্রথমদিনেই আমরা প্রচার সংখ্যার অর্ডার পেয়েছিলাম পৌনে ২ লাখ কপির; কিন্তু একটি মাত্র প্রিন্টিং মেশিনের কারণে তা সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। একটি মানসম্পন্ন ও বস্লল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের ব্যাপারে বিনিয়োগকারীরাও ছিলেন দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। কাজেই ‘আমার দেশ’-এর শুরুটা হয়েছিল খুবই অনুকূল পরিবেশে। জন্মলগ্নটা উত্সাহব্যঞ্জক হলেও এর পরবর্তী সময়টা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, বিশেষত ২০০৭-এর ১-১১’র পর। কোম্পানির চেয়ারম্যান ও অপর একজন ডিরেক্টর গ্রেফতার হন এবং আরেক ডিরেক্টর গ্রেফতার এড়ানোর জন্য দেশ ছেড়ে চলে যান। আমার দেশ তখনও মোটা অংকের ভর্তুকির ওপর চলছিল। চেয়ারম্যান-ডিরেক্টররা গ্রেফতারের আগে পত্রিকা চালানোর জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করে যেতে পারেননি। তবে গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে চেয়ারম্যান সাহেব (আলহাজ মোসাদ্দেক আলী) যে কাজটি করলেন, তাহলো আমার ঘাড়ে পত্রিকার সব দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে গেলেন। এত বড় একটা প্রতিষ্ঠানের খরচ জোগানো মানে হাতির খোরাক জোগানোর মতো—তার ওপর লোকসানি প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন প্রয়োজনীয় নিউজপ্রিন্ট কেনাই কঠিন হয়ে দাঁড়াল।
মাঝে-মধ্যেই নিউজপ্রিন্ট ধার করার জন্য বিভিন্ন পত্রিকার কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিতে হতো। এমনও দিন গেছে নিউজপ্রিন্টের অভাবে পত্রিকা প্রকাশিত হবে কি না তা নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হয়েছে। একদিন উপায়ান্তর না দেখে মঞ্জু ভাইকে (ইত্তেফাক-এর মালিক-সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী) সেল ফোনে ধরার জন্য অপারেটরকে বললাম। তিনি ফোন ধরে বললেন : ‘কবীর সাব কী খবর ... আমি তো কা’বা শরীফে।’ তখন তার কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর উপায় থাকে না। ক্ষমা চেয়ে হতাশ হয়ে ফোন রেখে দিলাম। আর্থিক টানাটানির কারণে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পত্রিকার প্রচারসংখ্যা কমাতে হয়েছে, অপরদিকে বিজ্ঞাপনের পরিমাণও হ্রাস পাচ্ছে। ১/১১’র উত্থানের মাধ্যমে সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দীন সরকার কেবল গণতন্ত্রই হরণ করেনি, তাদের হাতে দেশের অর্থনীতিও নাজুক পরিস্থিতিতে পড়ে। সব বেসরকারি খাত বস্তুত অচল হয়ে পড়ে। একদিকে সরকারের জন্য ভয়, অপরদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামার ফলে বিজ্ঞাপনদাতারা কোন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেবে বা দেবে না, সে ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করে এবং সঙ্কোচন নীতি গ্রহণ করে। আমার দেশ-এ বিজ্ঞাপন হ্রাসের বড় কারণ, ১/১১’র পর আমার দেশ যে সম্পাদকীয় নীতি গ্রহণ করে তা ‘প্রথম আলো’সহ অন্যান্য দৈনিকের মতো সরকারের অনুকূলে ছিল না। ১/১১’র পরপরই সামাদ ভাইসহ (তত্কালীন উপদেষ্টা সম্পাদক আতাউস সামাদ) সিনিয়র সাংবাদিকদের এক বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নেই আমার দেশ-এর নীতি হবে গণতন্ত্রের সপক্ষে অর্থাত্ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পক্ষে সম্পাদকীয় নীতি পরিচালিত হবে। ইংরেজি দৈনিক ‘নিউ এজ’ ছাড়া বাংলা পত্রিকাগুলোর মধ্যে সম্পাদকীয় নীতির ক্ষেত্রে আমার দেশই ছিল একমাত্র ব্যতিক্রম। আমার দেশ-এর এই সাহসী ভূমিকা ব্যবসায়ীসহ সব মহলে প্রশংসিত হলেও তারা সরকারের ভয়ে বিজ্ঞাপন দিত না। সরকার-সমর্থক পত্রিকাগুলোকে বিজ্ঞাপন দেয়াই তারা নিরাপদ মনে করত। আবার এসব পত্রিকার বিরুদ্ধে তারা নিজেরাই আমাদের নানা তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করত অথবা অভিযোগ করত। যাই হোক, এই অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পত্রিকা প্রকাশনা অব্যাহত রেখে সাংবাদিক-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-ভাতা প্রদান করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তত্কালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (আলহাজ হাসমত আলী যিনি কোম্পানির অন্যতম ডিরেক্টরও) অসহায়ের মতো এ পরিস্থিতি দেখতে হয়। পত্রিকার আর্থিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে যখন বিএসইসি ভবন, যেখানে আমার দেশ অফিস অবস্থিত ছিল, তাতে আগুন ধরে। আমার দেশ-এর বেশ বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও আমার দেশ-এর প্রকাশনা একদিনের জন্যও বন্ব্দ থাকেনি। কাওরান বাজার থেকে সাময়িকভাবে অফিস স্থানান্তরিত করে নিয়ে যাওয়া হয় তেজগাঁও (নিজস্ব) প্রিন্টিং প্রেসে। এমন দুর্ঘটনার পরও কখনও সহকর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়তে দেখিনি। অবশেষে মেরামত কাজ শেষে কয়েক মাস পর আমরা আবার বিএসইসি ভবনে ফিরে আসি। এটা নিঃসন্দেহে আমাদের সাফল্য ছিল, যা আমাদের দৃঢ় মনোবলের স্বাক্ষর বহন করে।
একদিকে এই অর্থনৈতিক সঙ্কট, আরেকদিকে আমাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হয় সরকারের রক্তচক্ষুর নিচে। ওই সময় আমার ব্যক্তিগত ও আমার দেশ-এর অনেক শুভাকাগ্ধক্ষীই বলেছেন, এত সাহস না দেখানোই ভালো। পত্রিকা বন্ব্দ করে দিতে পারে অথবা আপনিও বিপদে পড়তে পারেন। একদিন এ ধরনের একটা বিপদ এসেই গেল। ১/১১’র কতদিন পর দিন-তারিখ ঠিক মনে নেই, তবে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সরকার ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে একটি দীর্ঘ গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দেন। আমরা সচেতনভাবেই পুরো বিবৃতিটা ছাপার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। যতদূর মনে পড়ে, ‘আমার দেশ’ ও ‘দৈনিক দিনকাল’ ছাড়া এই বিবৃতি আর কোনো পত্রিকা ছাপেনি। ছাপলেও কাটছাঁট করে নিরাপদ অংশটুকু হয়তো ছেপেছে। আমরা যা ভেবেছিলাম, পরের দিন তাই ঘটল—ডিজিএফআই থেকে সম্পাদক ও চিফ রিপোর্টারের তলব এল। আমি আর আবদাল ডিজিএফআই অফিসে গেলাম দুপুর নাগাদ নির্ধারিত সময়ে। ডিজিএফআইকে এবারই প্রথম মোকাবিলা করতে হচ্ছে না, এর আগেও পেশাগত কারণেই কয়েকবার মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমাদের নিয়ে বসানো হল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনের অফিস কক্ষে; কিন্তু তিনি সেখানে নেই। একজন কর্নেল ইন্টারোগেট করার ভঙ্গিতে প্রকাশিত বিবৃতিকে কেন্দ্র করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন। পূর্বঅভিজ্ঞতা থেকে আমি একটু কঠিন অবস্থান নিলাম। এক পর্যায়ে কর্নেল বললেন, এ বিবৃতিতে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বলা হয়েছে, তা-ও আপনারা ছেপেছেন। আমি বললাম, আপনি তাহলে বিবৃতিটা ভালো করে পড়েননি—বলে সংশ্লিষ্ট অংশটুকু তাকে পড়ে শোনালাম। তারপর বললাম, এখানে তো তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) সামরিক বাহিনীর ঐতিহ্যবাহী দেশপ্রেমিক ভূমিকার কথাই বলেছেন, বিরুদ্ধে তো কিছু বলেননি। যুক্তিতর্কের এক পর্যায়ে কর্নেল যেন দমে গেলেন। ছাড়া পেয়ে আমরা চলে এলাম। আরেকদিন সন্ব্দ্যায় অফিসে কাজ করছি। এমন সময় আবদাল টেলিফোন করে জানাল তাকে একটা রিপোর্টের জন্য সকাল থেকে ডিজিএফআই অফিসে আটকে রেখেছে। তার কাছ থেকে মোবাইল সেট কেড়ে নিয়েছে, এক কাপ চা পর্যন্ত খাওয়াইনি। পানি খেতে চেয়েছে, তাও দেয়নি। তার কণ্ঠে ছিল ক্ষোভ ও ক্লান্তি। আমি তত্ক্ষণাত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনকে টেলিফোন করে ঘটনা বললাম। কিছুক্ষণ পরই আবদাল টেলিফোন করে জানাল তাকে ছেড়ে দিয়েছে, এখন অফিসে রওনা হয়েছে। ডিজিএফআই অফিস এ ধরনের চায়ের দাওয়াত আমাদের অনেককেই দিয়েছে। একদিন চায়ের একটা খাঁটি দাওয়াতই পেলাম আবু রুশেদর (তখন ‘আমার দেশ’-এর ডিফেন্স করেসপন্ডেন্ট, বর্তমানে ডিফেন্স জার্নাল-এর সম্পাদক) মাধ্যমে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব মিডিয়ার দায়িত্বে—তারই চায়ের দাওয়াত। নেহায়েতই পরিচয়পর্ব, কারণ এর আগে তার সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি। কথায় কথায় তিনি বললেন, আপনি আসেন না; কিন্তু আর বড়-বড় সম্পাদক সবাই সকাল থেকে দিনে একবার এখানে ঘুরে যান। এক পর্যায়ে তিনি সাঁইবড় কয়েকজন সম্পাদকের নামই বলে ফেললেন। আমি বিব্রতবোধ করলাম; কিন্তু অবাক হলাম না। কারণ এর আগে দু’জন সম্পাদক তো উচ্চকণ্ঠে ঘোষণাই করেছেন, এ সরকার তারা এনেছেন—তাদের কৃতিত্ব। আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, দু’চারটে ঘটনা বাদে ডিজিএফআইয়ের সরবরাহ করা সেল্টারি আমরা ছাপিনি, যদিও পরের দিন অন্যান্য পত্রিকায় দেখতাম তা যথারীতি ছাপা হয়েছে। এ জন্য অবশ্য নানা সময় সমস্যায় পড়তে হয়েছে এবং আমি নিশ্চিত ডিজিএফআইয়ের একটা গ্রুপ আমার দেশ বন্ব্দ করা অথবা এর মালিকানা পরিবর্তনের জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিল, যা তারা আরও কয়েকটি মিডিয়ার ক্ষেত্রে করেছে। অবশ্য এর মধ্যে পত্রিকার শেয়ার বিক্রি করার জন্য নতুন বিনিয়োগকারী খোঁজা হচ্ছিল। বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীর সঙ্গে যোগাযোগও করেছি। বিষয়টি একদিন ‘আমার দেশ’-এর বর্তমান চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকেও বলেছিলাম প্রেসক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনা শেষে। অর্থনৈতিক ও পেশাগতভাবে পত্রিকার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তখন চলছে চূড়ান্ত লড়াই। সহকর্মীদের ভেতর থেকে এমনও প্রস্তাব করা হলো যে পত্রিকার প্রকাশনা কয়েকদিন বন্ব্দ রেখে ওই টাকা দিয়ে বেতন দিতে; কিন্তু পত্রিকার প্রকাশনা বন্ব্দ রাখলে যে সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপনের টাকা আসাও বন্ব্দ হয়ে যাবে, এই সহজ কথাটা সহকর্মীরা বোঝার চেষ্টা করলেন না। তারা বরং ভেতরে ভেতরে আমার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হলেন। জোট সরকারের বেনিফিশিয়ারি হিসেবে অনেকেই শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে; কিন্তু পত্রিকার জন্য ঋণ চেয়েও তাদের কারও কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলাম না। চরম দুঃসময়ে অবশ্য একজন ১০ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছিলেন। আমি সম্পাদক থাকাকালে তার ঋণের আংশিক পরিশোধ করলেও সব টাকা পরিশোধ করে আসতে পারিনি। সহকর্মীদের ১০ মাসের বেতন-ভাতা বাকি পড়ে গেছে, ফলে বেতন-ভাতার দাবিতে তাদের চাপও বাড়ছিল। ওদিকে ব্যাংকের ৩৫ কোটি টাকা পরিশোধসহ পাওনাদারদের চাপ। একমাত্র ভরসা ইন্স্যুরেন্সের টাকা। আগুনে অফিস পুড়ে যাওয়ার জন্য ইন্স্যুরেন্সের এই টাকা। পত্রিকার মহাব্যবস্থাপক যিনি চেয়ারম্যানের (মোসাদ্দেক আলী) ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, তিনি জানালেন ইন্স্যুরেন্সের টাকা কিছুদিনের মধ্যেই পাওয়া যাবে, ম্যাচিউর করে গেছে। সহকর্মীরা সে অপেক্ষায় ধৈর্য ধরলেন। নির্ধারিত দিনে, সম্ভবত ২০০৮-এর ৩ অথবা ৪ এপ্রিলের দুপুরবেলায় ইন্স্যুরেন্সের চেক ভাঙিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তোলার জন্য মহাব্যবস্থাপক অফিস থেকে বের হয়ে গেলেন। ঘণ্টাখানেক পর ব্যাংকে যাওয়ার জন্য অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও ক্যাশিয়ারকে বলে গেলেন। অফিস থেকে বের হয়েই মহাব্যবস্থাপক হাওয়া, তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। ইন্স্যুরেন্স (প্রগতি) অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেল তারা এ ধরনের কোনো চেক ইস্যু করেনি। ব্যাংকের ম্যানেজার জানাল তাদের কাছে একটি চেক জমা দেয়া হয়েছে, তবে তা তার সম্মতি ছাড়া ক্লিয়ারেন্সের জন্য পাঠাতে বারণ করা হয়েছে। পরে জানা গেল, ওই চেকটি ছিল ফলস। এদিকে এসব খবরাখবরের সঙ্গে সঙ্গে অফিসে সহকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। এর মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালকও অফিস ছেড়ে চলে গেছেন। সন্ব্দ্যার দিকে বিক্ষুব্ধ সহকর্মীদের উত্তেজনা আরো বেড়ে গেল। পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে গেলে সব ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করে চলে আসলাম। সামাদ ভাই থেকে গেলেন। যাই হোক, নতুন মালিক-কর্তৃপক্ষ আমার দেশ-এর দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই আর্থিক সঙ্কট আর নেই। এটা খুশির কথা। আমার দেশ-এর পাঁচ বছর পূর্তি হয়েছে। তার দীর্ঘায়ু ও উত্তরোত্তর অগ্রগতি কামনা করি।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, দৈনিক আমার দেশ

No comments

Powered by Blogger.