তাঁদের শত্রু শত্রু খেলা by শাহজাহান কবির
২১ আগস্টের ঘটনা। আমরা দুজন মিলে গিয়েছি নিউ মার্কেটে। হঠাৎ দেখি লোকজন দ্বিগ্বিদিক দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। দোকানপাট বন্ধ করছে একের পর এক। এক মুহূর্তের মধ্যে হৈ-হুল্লোড়, ছোটাছুটিতে এক আতঙ্কজনক অবস্থা। চুমকি তখন প্রেগনেন্ট। আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম, লোকজন আমাদের ওপর প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ার জোগাড়। ওকে বললাম, তুই আমার পিছে গায়ের সঙ্গে লেগে থাক, ধাক্কা সব আমার গায়ে লাগুক।' অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবীকে বাঁচাতে কাতর ও দুঃসাহসী এই তরুণীর নাম বিউটি, ট্র্যাকে ঝড় তোলা নাজমুন নাহার বিউটি। মিথ্যে নয়, সেই ট্র্যাকেরই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী শামসুননাহার চুমকির সঙ্গেই তাঁর জানি-দোস্তি।
কদিন আগের সামার মিটেই বিউটির ২০০ মিটারের রাজত্ব ছিনিয়ে নিয়েছেন চুমকি। লড়াইয়ে ছিলেন দীর্ঘ আট বছর, রুপা জিততে জিততে দমে যাওয়ার কথা। চুমকি দমেননি। অনুপ্রেরণা ছিল ১০০ মিটার, কারণ বেশ কয়েকবারই দখল হয়েছে সেই রাজত্ব। লাল রঙা ট্র্যাকে গত এক দশকে বিউটি-চুমকির তাই 'শত্রু-শত্রু খেলা'। কিন্তু আজ সেই গল্প নয়। ট্র্যাকে 'শত্রু' কিন্তু বাইরের বান্ধবীদের নিয়েই এই আয়োজন...
সূত্র নোয়াখালী
২০০৪ সালে দুজন ইসলামাবাদ সাফ গেমসে গিয়েছেন। গেমসের ফাঁকে তাঁদের ইচ্ছে হলো পাহাড়ে চড়বেন। তো পাহাড়ে উঠতে উঠতে কাহিল বিউটি কোমরে হাত দিয়ে একসময় বসেই পড়লেন, 'আঁই আর উইঠতে হাইত্তাম ন।' হাসতে হাসতে গল্পের বাকিটা বললেন চুমকি, "বিউটি আপা 'আঁই উইঠতে হাইত্তাম ন' বলতেই শুনি 'ও আন্নেরাও নোয়াখালীত্তন আইছেননি আঁর বাড়িও তো নোয়াখালী।' লোকটা দেখি আমাদের একটু ওপরেই একটা পাথরের ওপর পা ছড়িয়ে বসে বসে হাসছে। আমরা তো রীতিমতো থ, এই পাকিস্তানেও নোয়াখালী!"
বিজেএমসির মেয়েদের রিলে দলে একসময় 'চার নোয়াখালী'র প্রতিনিধিত্বর্ িছল। বিউটি, চুমকি তো ছিলেনই। হার্ডলার সুমিতা দাসও ছিলেন সেই দলে, আর ছিলেন শাহনাজ। শেষোক্তজন খেলাধুলার পাঠ চুকিয়ে এখন পাকা গৃহিণী, হার্ডলসেই মনোনিবেশ করা সুমিতা এখন বাংলাদেশ জেল-এর হয়ে খেলেন, চুমকি আনসারে, বিউটিই শুধু বিজেএমসি ছাড়েননি।
প্রথম পরিচয়
ট্র্যাকেই চোখাচোখি, সেই প্রথম, সাল ১৯৯৮। বাবা-মা হারানো বিউটির শিশুসদনে থেকে খাওয়া-পড়া চালিয়ে যাওয়ার গল্প অ্যাথলেটিকস অঙ্গনে পুরনো। বিপরীত গল্প চুমকির, মাইজদীতেই বাবা-মা, ভাই-বোনের মাঝে আদুরে এক কিশোরী। আন্তস্কুল খেলায় নাম দিয়েই যে পেয়ে গেল দীর্ঘদিনের এক প্রতিদ্বন্দ্বী। 'তখন কি জানতাম আমরা এমন বন্ধু হব! আমাকে ফার্স্ট হতে হবে এটাই ছিল চিন্তা। পাশের লেনেই দাঁড়ানো হ্যাংলা-পাতলা গড়নের চুমকিকে তখন শত্রু ছাড়া কিচ্ছু মনে হয়নি।' বিউটির গলায় দুষ্টুমি, কণ্ঠে একটু আদুরে ভাবও কিন্তু শত্রুতার রেশ নেই এক ফোঁটা।
বেড়ে ওঠা
দুজনের প্রথম সেই লড়াইয়ে জিতে যাওয়া বিউটি নজর কাড়লেন স্থানীয় কোচ রফিকউল্লাহ আক্তার মিলনের। অ্যাথলেট গড়ার নেশায় মিলন শিশু সদন থেকে বিউটিকে নিয়ে এলেন নিজের বাড়িতে। সেখান থেকে চুমকিদের বাড়ি হাঁটা দূরত্ব। 'শত্রু'র সঙ্গে বন্ধুত্ব জমতে তাই দেরি হয়নি। 'যখন তখন আমি মিলন স্যারের বাসায় চলে যেতাম, বিউটিও আসত আমাদের বাসায়। আমার আব্বা-আম্মাও খুব পছন্দ করত ওকে। সারা দিন কত কী যে গল্প করতাম, খেলতাম। তবে প্র্যাকটিসে গেলে সবকিছু আবার অন্য রকম। সেখানে তো মিলন স্যারের কঠিন শাসন।' অনুচ্চারে অ্যাথলেট তৈরির এই কারিগরের জন্য বুঝি কৃতজ্ঞতাই ঝরল চুমকির হৃদয়ে। শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে নোয়াখালীর আর সব অ্যাথলেটের সঙ্গে এই দুই বান্ধবীকেও দেশসেরা বানানোর মিশন নিয়েছিলেন ক্রীড়া পরিষদ কোচ মিলন। বাড়িতে থাকলে উঠতি অ্যাথলেটদের নিয়ে এখনো মেতে থাকেন তিনি। বিউটি এখনো মাইজদীতেই থাকেন, শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে গুরু-শিষ্যের সেশন দেখতে পাওয়াটা এই সময়েও তাই বিরল কিছু না।
তবে আলাদা হয়ে গেছেন চুমকি। মাঝখানে বিজেএমসি নাম উঠিয়ে নিল খেলাধুলা থেকে। ছাঁটাই হলেন কয়েক শ অ্যাথলেট। বিউটি বিশেষ সুযোগ পেলেও চাকরি গেল চুমকির। এর মধ্যেই বিয়ে, বছর ঘুরতেই সন্তান। নোয়াখালীতে থাকলেও চুমকির তাই অনুশীলনে যাওয়া হতো না। এরপর আনসারে যোগ দিয়েছেন, তাতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও হলো ভিন্ন। এবারের সামার মিটের আগেই যেমন বিউটি অনুশীলনে ব্যস্ত নোয়াখালীতে, চুমকি তখন আনসার দলের সঙ্গে খুলনা বিকেএসপিতে।
দুজনই যখন এগিয়ে
বিউটির কাছে জানতে চাওয়া হলো চুমকির সেরা গুণ কী? চুমকির কাছেও একই প্রশ্ন। উত্তরে যা পাওয়া গেল, তাতে ইচ্ছে হবে দুজনের মিশেলে একজন স্প্রিন্টার বানিয়ে ট্র্যাকে নামিয়ে দিতে। 'চুমকির স্টার্টিংটা খুব ভালো। 'খট' করে বেরিয়ে যায়। পঞ্চাশ-ষাট (মিটার) পর্যন্ত তো খুবই ভালো দৌড়ায়।' চুমকির কথা, "শেষটায় গিয়ে আমি আর পারি না। বিউটির ফিনিশিং দেখার মতো। খুলনায় গত মাসতিনেক আমি শুধু তাই 'এন্ডিওরেন্স' (সহ্যক্ষমতা বাড়ানোর অনুশীলন) ট্রেনিংই করে গেছি।" সামার মিটে তার সুফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। উল্টোটা হয়েছে বিউটির বেলায়, বর্ষার কাদাজলে পর্যাপ্ত অনুশীলন না পেয়ে ১০০ ও ২০০ মিটারের দুটো সোনাই খুইয়েছেন চুমকির কাছে।
বিউটির দুশ্চিন্তা
না, এখন ট্র্যাক নিয়ে খুব আর দুশ্চিন্তা করেন না বিউটি। চুমকিকে নিয়েই বরং ভয় হয় তাঁর, 'আমার ক্যারিয়ার এখন শেষের দিকে। সামনে ডিগ্রি পরীক্ষা। পড়াশোনাটা শেষ করে ভালো কোনো একটা স্কুলে ক্রীড়া শিক্ষকের চাকরি পেলেও আমার ভবিষ্যৎটা দাঁড়িয়ে যাবে। কিন্তু চুমকির কথা ভেবেই মাঝেমধ্যে দুশ্চিন্তা হয়। ও তো পড়াশোনাটাও আর করল না।' বান্ধবীর এমন দুশ্চিন্তায় ট্র্যাকের নতুন রানির কিন্তু পরোয়াই নেই। 'পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছি তা কিন্তু ঠিক না। দুইবার ম্যাট্রিক ফেল... এই তো! কিন্তু আমি আবার পরীক্ষা দেব, পড়াশোনাও করব। তা ছাড়া এখন অনুশীলনেও বেশি বেশি মনোযোগ দিচ্ছি, কারণ অন্তত আরো বছর কয়েক আমি স্প্রিন্ট নিয়েই ভাবব।'
তাতে বন্ধুত্বের ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না নিশ্চিত, বছর দশেকের লড়াইয়েও যা হয়নি, বাস্তবতার কশাঘাতে কি তা ভাঙে!
বিউটি : দোকানপাট বন্ধ করছে একের পর এক। এক মুহূর্তের মধ্যে হৈ-হুল্লোড়, ছোটাছুটিতে এক আতঙ্কজনক অবস্থা। চুমকি তখন প্রেগনেন্ট। আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম, লোকজন আমাদের ওপর প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ার জোগাড়। ওকে বললাম, তুই আমার পিছে গায়ের সঙ্গে লেগে থাক, ধাক্কা সব আমার গায়ে লাগুক।
চুমকি : যখন তখন আমি মিলন স্যারের বাসায় চলে যেতাম, বিউটিও আসত আমাদের বাসায়। আমার আব্বা-আম্মাও খুব পছন্দ করত ওকে। সারা দিন কত কী যে গল্প করতাম, খেলতাম। তবে প্র্যাকটিসে গেলে সবকিছু আবার অন্য রকম। সেখানে তো মিলন স্যারের কঠিন শাসন।
সূত্র নোয়াখালী
২০০৪ সালে দুজন ইসলামাবাদ সাফ গেমসে গিয়েছেন। গেমসের ফাঁকে তাঁদের ইচ্ছে হলো পাহাড়ে চড়বেন। তো পাহাড়ে উঠতে উঠতে কাহিল বিউটি কোমরে হাত দিয়ে একসময় বসেই পড়লেন, 'আঁই আর উইঠতে হাইত্তাম ন।' হাসতে হাসতে গল্পের বাকিটা বললেন চুমকি, "বিউটি আপা 'আঁই উইঠতে হাইত্তাম ন' বলতেই শুনি 'ও আন্নেরাও নোয়াখালীত্তন আইছেননি আঁর বাড়িও তো নোয়াখালী।' লোকটা দেখি আমাদের একটু ওপরেই একটা পাথরের ওপর পা ছড়িয়ে বসে বসে হাসছে। আমরা তো রীতিমতো থ, এই পাকিস্তানেও নোয়াখালী!"
বিজেএমসির মেয়েদের রিলে দলে একসময় 'চার নোয়াখালী'র প্রতিনিধিত্বর্ িছল। বিউটি, চুমকি তো ছিলেনই। হার্ডলার সুমিতা দাসও ছিলেন সেই দলে, আর ছিলেন শাহনাজ। শেষোক্তজন খেলাধুলার পাঠ চুকিয়ে এখন পাকা গৃহিণী, হার্ডলসেই মনোনিবেশ করা সুমিতা এখন বাংলাদেশ জেল-এর হয়ে খেলেন, চুমকি আনসারে, বিউটিই শুধু বিজেএমসি ছাড়েননি।
প্রথম পরিচয়
ট্র্যাকেই চোখাচোখি, সেই প্রথম, সাল ১৯৯৮। বাবা-মা হারানো বিউটির শিশুসদনে থেকে খাওয়া-পড়া চালিয়ে যাওয়ার গল্প অ্যাথলেটিকস অঙ্গনে পুরনো। বিপরীত গল্প চুমকির, মাইজদীতেই বাবা-মা, ভাই-বোনের মাঝে আদুরে এক কিশোরী। আন্তস্কুল খেলায় নাম দিয়েই যে পেয়ে গেল দীর্ঘদিনের এক প্রতিদ্বন্দ্বী। 'তখন কি জানতাম আমরা এমন বন্ধু হব! আমাকে ফার্স্ট হতে হবে এটাই ছিল চিন্তা। পাশের লেনেই দাঁড়ানো হ্যাংলা-পাতলা গড়নের চুমকিকে তখন শত্রু ছাড়া কিচ্ছু মনে হয়নি।' বিউটির গলায় দুষ্টুমি, কণ্ঠে একটু আদুরে ভাবও কিন্তু শত্রুতার রেশ নেই এক ফোঁটা।
বেড়ে ওঠা
দুজনের প্রথম সেই লড়াইয়ে জিতে যাওয়া বিউটি নজর কাড়লেন স্থানীয় কোচ রফিকউল্লাহ আক্তার মিলনের। অ্যাথলেট গড়ার নেশায় মিলন শিশু সদন থেকে বিউটিকে নিয়ে এলেন নিজের বাড়িতে। সেখান থেকে চুমকিদের বাড়ি হাঁটা দূরত্ব। 'শত্রু'র সঙ্গে বন্ধুত্ব জমতে তাই দেরি হয়নি। 'যখন তখন আমি মিলন স্যারের বাসায় চলে যেতাম, বিউটিও আসত আমাদের বাসায়। আমার আব্বা-আম্মাও খুব পছন্দ করত ওকে। সারা দিন কত কী যে গল্প করতাম, খেলতাম। তবে প্র্যাকটিসে গেলে সবকিছু আবার অন্য রকম। সেখানে তো মিলন স্যারের কঠিন শাসন।' অনুচ্চারে অ্যাথলেট তৈরির এই কারিগরের জন্য বুঝি কৃতজ্ঞতাই ঝরল চুমকির হৃদয়ে। শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে নোয়াখালীর আর সব অ্যাথলেটের সঙ্গে এই দুই বান্ধবীকেও দেশসেরা বানানোর মিশন নিয়েছিলেন ক্রীড়া পরিষদ কোচ মিলন। বাড়িতে থাকলে উঠতি অ্যাথলেটদের নিয়ে এখনো মেতে থাকেন তিনি। বিউটি এখনো মাইজদীতেই থাকেন, শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে গুরু-শিষ্যের সেশন দেখতে পাওয়াটা এই সময়েও তাই বিরল কিছু না।
তবে আলাদা হয়ে গেছেন চুমকি। মাঝখানে বিজেএমসি নাম উঠিয়ে নিল খেলাধুলা থেকে। ছাঁটাই হলেন কয়েক শ অ্যাথলেট। বিউটি বিশেষ সুযোগ পেলেও চাকরি গেল চুমকির। এর মধ্যেই বিয়ে, বছর ঘুরতেই সন্তান। নোয়াখালীতে থাকলেও চুমকির তাই অনুশীলনে যাওয়া হতো না। এরপর আনসারে যোগ দিয়েছেন, তাতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও হলো ভিন্ন। এবারের সামার মিটের আগেই যেমন বিউটি অনুশীলনে ব্যস্ত নোয়াখালীতে, চুমকি তখন আনসার দলের সঙ্গে খুলনা বিকেএসপিতে।
দুজনই যখন এগিয়ে
বিউটির কাছে জানতে চাওয়া হলো চুমকির সেরা গুণ কী? চুমকির কাছেও একই প্রশ্ন। উত্তরে যা পাওয়া গেল, তাতে ইচ্ছে হবে দুজনের মিশেলে একজন স্প্রিন্টার বানিয়ে ট্র্যাকে নামিয়ে দিতে। 'চুমকির স্টার্টিংটা খুব ভালো। 'খট' করে বেরিয়ে যায়। পঞ্চাশ-ষাট (মিটার) পর্যন্ত তো খুবই ভালো দৌড়ায়।' চুমকির কথা, "শেষটায় গিয়ে আমি আর পারি না। বিউটির ফিনিশিং দেখার মতো। খুলনায় গত মাসতিনেক আমি শুধু তাই 'এন্ডিওরেন্স' (সহ্যক্ষমতা বাড়ানোর অনুশীলন) ট্রেনিংই করে গেছি।" সামার মিটে তার সুফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। উল্টোটা হয়েছে বিউটির বেলায়, বর্ষার কাদাজলে পর্যাপ্ত অনুশীলন না পেয়ে ১০০ ও ২০০ মিটারের দুটো সোনাই খুইয়েছেন চুমকির কাছে।
বিউটির দুশ্চিন্তা
না, এখন ট্র্যাক নিয়ে খুব আর দুশ্চিন্তা করেন না বিউটি। চুমকিকে নিয়েই বরং ভয় হয় তাঁর, 'আমার ক্যারিয়ার এখন শেষের দিকে। সামনে ডিগ্রি পরীক্ষা। পড়াশোনাটা শেষ করে ভালো কোনো একটা স্কুলে ক্রীড়া শিক্ষকের চাকরি পেলেও আমার ভবিষ্যৎটা দাঁড়িয়ে যাবে। কিন্তু চুমকির কথা ভেবেই মাঝেমধ্যে দুশ্চিন্তা হয়। ও তো পড়াশোনাটাও আর করল না।' বান্ধবীর এমন দুশ্চিন্তায় ট্র্যাকের নতুন রানির কিন্তু পরোয়াই নেই। 'পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছি তা কিন্তু ঠিক না। দুইবার ম্যাট্রিক ফেল... এই তো! কিন্তু আমি আবার পরীক্ষা দেব, পড়াশোনাও করব। তা ছাড়া এখন অনুশীলনেও বেশি বেশি মনোযোগ দিচ্ছি, কারণ অন্তত আরো বছর কয়েক আমি স্প্রিন্ট নিয়েই ভাবব।'
তাতে বন্ধুত্বের ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না নিশ্চিত, বছর দশেকের লড়াইয়েও যা হয়নি, বাস্তবতার কশাঘাতে কি তা ভাঙে!
বিউটি : দোকানপাট বন্ধ করছে একের পর এক। এক মুহূর্তের মধ্যে হৈ-হুল্লোড়, ছোটাছুটিতে এক আতঙ্কজনক অবস্থা। চুমকি তখন প্রেগনেন্ট। আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম, লোকজন আমাদের ওপর প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ার জোগাড়। ওকে বললাম, তুই আমার পিছে গায়ের সঙ্গে লেগে থাক, ধাক্কা সব আমার গায়ে লাগুক।
চুমকি : যখন তখন আমি মিলন স্যারের বাসায় চলে যেতাম, বিউটিও আসত আমাদের বাসায়। আমার আব্বা-আম্মাও খুব পছন্দ করত ওকে। সারা দিন কত কী যে গল্প করতাম, খেলতাম। তবে প্র্যাকটিসে গেলে সবকিছু আবার অন্য রকম। সেখানে তো মিলন স্যারের কঠিন শাসন।
No comments